Monday, December 17, 2007

এই হচ্ছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি


জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বক্তব্য:

২০০৭
"বিজয় দিবস হচ্ছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার দিন। এ দিবস শুধু দলে দলে ঐক্য করে না, ধর্মে ধর্মে বিশ্বাসে বিশ্বাসেও ঐক্য করে। তাই এই দিনের চেতনায় সবাই মিলে ভেদাভেদ ভুলে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"

"বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের, আমরা একে চালাবো। সব ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সহনশীল হতে হবে। আমাদের এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।" (সুত্র)

১৯৭১

"বাইতুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্র সংস্থার বদর দিবসে রেলীতে পাকিস্তানের একাত্বতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবী জানানো হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের বক্তারা ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে অনুপ্রানিত হয়ে ইসলামের জন্যে যুদ্ধ করার জন্যে আহ্বান জানানো হয় এবং ভারতের ষড়যন্ত্রকে রুখার আহ্বান জানানো হয়।

উক্ত সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আলী আহসান মুজাহিদ বলেছেন যে এটি শুধু পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্যেই যুদ্ধ নয় সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যেও যুদ্ধ। তিনি বলেছেন বায়তুল মুকাদাদস (?) বিজিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

জনাব মুজাহিদ বলেন আজ থেকে কোন লাইব্রেরী হিন্দু লেখক বা হিন্দুদের সপক্ষে মুসলিম লেখকদের বই রাখতে পারবে না। তিনি বলেছেন বদর বাহিনীর লোকেরা এই সব বই পুড়িয়ে ফেলবে যাতে মুসলমানরা অমুসলিম ধারনা দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়।"

কাজেই একদিকে তিনি সব হিন্দু লেখকদের লেখা বই পূড়িয়ে ফেলতে বলেছেন আর এখন বলছেন সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির কথা। তিনি ইসলাম ধর্ম গেল বলে ধুয়া তুলেছেন অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে এটি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোন ব্যাপার ছিল না।
একদিকে পাকিস্তান ও ইসলাম অক্ষুন্ন রাখার জন্যে বদরের যুদ্ধের কথা তিনি একাত্তুরে বলেছেন অপর দিকে এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বলছেন বিষয়টি সবার গুরুত্বপূর্ন সহকারে ভেবে দেখাই উচিৎ।

আরও কিছু তথ্য: -  http://www.nybangla.com/Muktijoddho/Muzahid/Ali

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Friday, December 14, 2007

তাহাদের কথা

সে বছর দুই আগের কথা। কামা'র ব্লগ পড়ে আৎকে উঠেছিলাম। কামা হচ্ছে একটি বাঙালী হিন্দু মেয়ে যার বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম ও কলকাতা উভয় পরিমন্ডলে

কামা বিলেতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং একজন স্বঘোষিত দেবদাসী। তার মতে পুরুষের সাথে যৌনসংসর্গ হচ্ছে স্বর্গীয় এবং তাকে তার দেবতার কাছে নিয়ে যায়।

দেবদাসী একটি বহুকালের হিন্দু সামাজিক রীতি যেখানে কিশোরীদের দেবতার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। ঐতিহাসিকভাবে দেবদাসীরা ব্রম্হচারী হলেও অনেক স্থানেই তাদের পুস্পিত আচার অনুষ্ঠানের পর একজনের কাছে তুলে দেয়া হয় যে প্রথম রাতের জন্যে তাকে কিছু দক্ষিনাও দিয়ে থাকে। এদের অনেকে পরবর্তীতে মন্দিরে বা আশ্রমেই থাকে এবং পুজারী বা অন্যান্যদের ভোগের সামগ্রী হয় বলে কথিত আছে। ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক সংখক দেবদাসীই পরবর্তীতে দেহব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরে।

কামার গল্প কিছুটা ভিন্ন। ছোটকালে দেবদাসী হিসেবে তার অভিষেক হবার পরে সে সাধারন সমাজেই বসবাস করেছে। পরবর্তীতে সে বিলেতে এসে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করছে এবং সাথে সাথে দেহব্যবসাও শুরু করেছে। তার ওয়েবসাইটটি দেখলেই বুঝবেন কতটা গোছানো তার ব্যবসা। ফি থেকে শুরু করে লোকজনের তার সম্পর্কে অভিমত, ছবি ইত্যাদি বিবিধ কিছু রয়েছে।

ইগো ম্যাগাজিনে এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন:

উদ্ধৃতি
ব্রিটিশদের অত্যাচারে ভারতের দেবদাসীরা আরাধনার স্থান (মন্দির) থেকে সাধারনের সমাজে চলে এসেছে এবং বিয়েসাদী করে সাধারন জীবনযাপন করছেন। তাদের বেশ্যা হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে দাবিয়ে রাখার জন্যে। আমি দেবদাসী জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি অর্থনৈতিক ও যৌন স্বাধীনতা পাবার জন্যে যাতে আমি দক্ষিন এশিয়ার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বলয় থেকে বের হতে পারি।

এখন বিতর্ক হকেই পারে যে সে কোন কারনে এটি করছে এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলো যুক্তিযুক্ত কিনা। হয়ত তার কথা লোকমুখে শুনে তার সম্পর্কে আমাদের ঋণাত্ক ধারনাই হতো শুধু। তবে ব্লগ এবং নিউ মিডিয়া সম্ভব করেছে তার কথা/চিন্তাধারা সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল করতে। ব্লগের মাধ্যমে এটাও সম্ভব তাকে কোন প্রশ্ন করা এবং তার কাছ থেকে উত্তর পাওয়া।

পরিশেষে আপনাদের আরেকটি প্রকল্পের কথা জানাচ্ছি। 'কলম' হচ্ছে কলকাতার প্রান্তিক যুবাদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান যা তাদের সাহিত্য প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেয় ও তাদের লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাইজিং ভয়েসেস এর ক্ষুদ্রঋণ সহায়তায় তারা 'নেইবারহুড ডায়রীজ' নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার মাধ্যমে কলকাতার বউ বাজার এলাকার রেডলাইট এরিয়ার যুবাদের নাগরিক সাংবাদিক (সিটিজেন জার্নালিস্ট) হিসেবে গড়ে তুলবে যাতে তারা তাদের পরিবেশ/ধারনা সম্পর্কে পৃথিবীকে অবহিত করতে পারে। তাদেরও সৃজনশীরতা রয়েছে সাহিত্য সৃষ্টি করার। এখানে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে ।

হয়ত একদিন নিউ মিডিয়ার কল্যানে আমরা এইসব দুরে সরিয়ে রাখা মানুষদের আরও ভালভাবে বুঝতে পারব এবং আমাদের মাঝে আপন করে নেব।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Sunday, November 25, 2007

এই অক্ষমতাকে কোথায় রাখি

হারিকেন সিডরের দেশ জুড়ে তান্ডবের চিত্র ইথারের মাঝ দিয়ে ভেসে আসে। কম্পিউটারের স্ক্রীনে ভয়ন্কর সব সংখ্যা, তথ্য, পরিসংখ্যান দেখি, ব্লগে লিখি, মতামত দেই বা ত্রান যোগাড়ের চেষ্টা করি। তার মাঝেও দৈনন্দিন গতানুগতিক সিডিউলের কোন পরিবর্তন হয়না। প্রবাস জীবন-ঘড়ি এভাবেই চলে।

আজ কয়েকদিন পর দেশে ফোন করলাম। বাবা জানালেন বরিশাল ও ভোলা যাচ্ছেন। পুরনো কাপড় কিছু জড়ো করেছেন এবং কিছু নগদ সাহায্য দেবেন দুর্গতদের খুঁজে বের করে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকলাম তার কথা যে দুর্গত লোকজন তো কাজ করতে চায়না না খালি সাহায্যের জন্যে বসে থাকে। তিনি সেখানে উপস্থিত থেকে ওদের দিয়ে বিধ্বস্ত বাড়ীর জন্য উপকরন কিনে দিয়ে তাদের দিয়ে মেরামতের কাজ করাবেন এবং দিনের কাজ শেষে টাকা দান করবেন। আমার দেহঘড়ি রিফ্লেক্সবশত: ৭১ বছর বয়সী পিতার শারীরিক সামর্থ ও নানা রোগের কথা চিন্তা করে তাকে থামাতে চায়; বলতে চায় "তুমি কেন যাবা, কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও না। এতদিন থাকার দরকার কি?"

কিন্তু আমার তখন কন্ঠরোধ হয়ে আসে। আমি তাকে আশাহত করার মতো বেয়াদবী করতে গিয়েও করি না। আমার কিছু টাকা দান করার মত ভন্ডামিও করতে বলিনা। আমি স্পষ্ট আমার অক্ষমতাটুকু দেখতে পাই।

এই বিপুল ঘুর্ণিঝড় পীড়িত লোকদের জন্যে দরকার কিছু সাহায্যের হাত যা শুধু কিছু টাকা সদকা দিয়েই দায়িত্ব এড়াবে না, নিজের পরিশ্রম দিয়ে (যে কোন প্রকারেরই হোক) সাহায্য পৌছে দেবার কাজটি করবে ও তাদের পূনর্বাসনে সাহায্য করবে।

সেরকমটি আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকলেও না করাটা লজ্জারই বটে। সেই লজ্জাই আমাকে আজ আমার পিতা দিয়েছেন এবং অপরাধী করেছেন।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, November 10, 2007

হেমন্ত পার হয়ে মৌসুমের প্রথম তুষারপাত

আমরা জানি যে বাংলাদেশ সবুজের প্রতীক। কিন্তু জার্মানীতে আসার পর গ্রীস্মকালে এত সবুজ দেখেছি যে দেশে না থাকার কষ্ট কিছুটা হলেও ভূলে থাকা গেছে।

ইউরোপের হেমন্ত বেশ রঙ্গীন। অক্টোবর মাস জুড়ে গাছের সবুজ পাতাগুলো দ্রুত রং বদলিয়ে লাল আর হলুদের বিচিত্র দ্যোতনা সৃষ্টি করে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এরপর শুরু হয় পাতা ঝরা। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। ঝড়ো হাওয়ার পর ঝির ঝির শব্দে পাতা পড়তে থাকে। পাতাগুলো বোটার দিকে কেন্দ্র করে কেমন ঘুরতে ঘুরতে নামে থেমে দাড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।

এইসময়ে সাহেব-সুবোদের কাজ বেড়ে যায়। গাছ যতই ন্যাড়া হয় রাস্তায়, ফুটপাতে, গাড়ীতে, লনে সর্বত্র পাতার আচ্ছাদন বাড়ে। নিয়মিত পরিস্কার না করলে বৃষ্টির পানিতে পচে গন্ধ হবে। কিন্তু আমাদের অব্যর্থ অস্ত্র ঝাড়ুর কন্সেপ্টটি এদের নেই। ব্লোয়ার এবং অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে তারা কাজে নামে। প্রচুর ইলেক্ট্রিসিটি বা তেল পুড়িয়ে বহু সময় ধরে তারা এইসব ঝরাপাতা রাস্তায় কিছু পর পর জড়ো করে এবং পরে একটি ক্রেনওয়ালা ট্রাক এসে এগুলো নানা কসরতে তুলে সৎকারের জন্যে নিয়ে যায়। মিথ্যে বলছি না এটি পড়ে দেখুন

এরপর তাদের প্রতীক্ষা কখন বরফ পড়বে। ঠিকমত বরফ না পড়লে ইকলজিকাল ভারসাম্য রক্ষা হয়না। গতবারের খুবই সামান্য তুষারপাতের জন্যে এবার গ্রীষ্মে মশা ও অন্যান্য পোকা মাকড়ের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। এক বাংলাদেশী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বললেন তাদের শীত বস্ত্রের চালানের অর্ডার এবার তারা জার্মানী থেকে কম পাচ্ছেন কারন গতবারের অনেক পোষাক অবিক্রিত রয়েছে।

জার্মান আবহাওয়ার পূর্বাভাষ সাধারনত: অব্যর্থ হয়। তাই যখন শুনলাম শনিবার দিন বরফ পড়বে আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

কিন্তু সকাল থেকেই আবহাওয়া দেখলাম গত দিনগুলির বিষন্নভাবের চেয়ে ভাল। রৌদ্রের দেখা পাওয়া গেল কিছু সময়। সকালে ৫ ডিগ্রি দিয়ে শুরু হলেও রৌদ্রের দরুন ৮-৯তে পারদ উঠে গেল আর আমিও নিশ্চিন্তে ২০ কিমি দুরের তুর্কী হাটে সাপ্তাহিক বাজারে গেলাম। সাথে নেয়া মান্কী ক্যাপটি কাজে লাগলো না কারন বাতাসে চিল ফ্যাক্টর কম। ভাবলাম আবহাওয়া পূর্বাভাষ তাহলে ভুল।

দুপুর বেলায় বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে কম্পিউটারে বসেছি। হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি শুরু হলো। একটু পরেই দেখি চিৎকার "আসো আসো বরফ দেখে যাও"। জানালার বাইরে তাকালাম - খুবই ক্ষুদ্র আকারে সাদা সাদা কি যেন পড়ছে বৃষ্টির সাথে; থার্মোমিটারে তখন ৫ ডিগ্রি। দৌড়ে ব্যালকনিতে গেলাম। আস্তে আস্তে সাদার পরিমান বাড়ল এবং কিছুক্ষন পর বরফের একটি হালকা আস্তরন পড়ল সমস্ত খোলা যায়গায়। ফিরে এসে থার্মোমিটারে দেখলাম ২ ডিগ্রি।
কিছুক্ষন পরে বরফ পরা থামলো এবং আস্তে আস্তে বরফের আস্তরনগুলো গলতে শুরু করলো। এমনই মজার ছিল এই মৌসুমের প্রথম তুষারপাত।

পাতার বিবর্তন পাতার বিবর্তন      প্রথম তুষারপাত  প্রথম তুষারপাত

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Thursday, November 08, 2007

রাইজিং ভয়েসেস এর দ্বিতীয় কিস্তির অনুদানের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব আহ্বান করা হচ্ছে

গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন (একটি অলাভজনক সিটিজেন মিডিয়া প্রজেক্ট) বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সিটিজেন মিডিয়া টুলগুলো প্রসারের জন্যে ‘রাইজিং ভয়েসেস’ নামক প্রকল্প গঠন করেছে। বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে ইন্টারনেট ক্রমান্বয়ে সহজলভ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু অনেকেই ব্লগিং, ভিডিও ব্লগিং এবং পডকাস্টিং জাতীয় টুলগুলোর সুবিধা বা এগুলো কিভাবে সহজে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে জানেননা। বর্তমানে বেশীরভাগ ব্লগ, পডকাস্ট এবং ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করছে বিশ্বের বড় শহরগুলো থেকে মধ্যবিত্ত নাগরিকদের কমিউনিটি।

‘রাইজিং ভয়েসেস’ এর লক্ষ্য হচ্ছে নতুন নতুন কমিউনিটি থেকে নতুন কন্ঠগুলোকে ওয়েবের আলাপে (conversational web) নিয়ে আসা।

গত জুলাইতে মাসে প্রথম রাউন্ডে ৬০টা দেশ থেকে যে ১৪২টি দরখাস্ত এসেছিল তার থেকে ৫টি প্রকল্পকে অনুদান দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ভারত আর সিয়েরা লিওনের।

বাংলাদেশের নারী জীবন প্রকল্প রাইজিং ভয়েসেস ক্ষুদ্র অনুদানের সহায়তায় বাংলা, ইংলিশ এবং কম্পিউটার ক্লাসের মাধ্যমে বাংলাদেশী নারীদের ব্লগিং, ফটোগ্রাফী এবং ভিডিওব্লগিং করতে শেখাচ্ছেন। আপনারা ‘বাংলাদেশ ফ্রম আওয়ার ভিউ’ এই ইংরেজী ব্লগে এবং 'আমাদের কথা' নামক বাংলা ব্লগে এইসব নারীদের লেখা দেখতে পারবেন। আমি এদের নিয়ে আগেও লিখেছি।

রাইজিং ভয়েসেস তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডের ৫০০০ ইউএস ডলার পর্যন্ত মাইক্রোগ্রান্ট (ক্ষুদ্র অনুদান) সহায়তার জন্যে প্রকল্প প্রস্তাব জমা নিচ্ছে। এই অনুদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মূলত: নাগরিক মিডিয়া প্রসারের প্রকল্পগুলোর জন্য। আদর্শ প্রার্থীরা বিস্তারিত আর উদ্ভাবনমূলক প্রস্তাব দেবেন যেখানে তারা সুবিধাবন্চিত জনগনকে নাগরিক মিডিয়ার কলাকৌশল আর ব্লগিং, ভিডিও ব্লগিং পডকাস্টিং ইত্যাদি নতুন মিডিয়া টুল সম্পর্কে জানাবে ও শিক্ষা দেবে এবং তাদের কাছে এই প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য করবে যাতে তারা অন্য সবার মত নিজেদের প্রকাশ করতে পারে বিশ্বের কাছে।

বিস্তারিত গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায়

দরখাস্ত জমা দেয়ার শেষ তারিখঃ নভেম্বর ৩০, ২০০৭

Friday, October 26, 2007

অস্বীকার



জামাত বলছে যে এদেশে কোন যুদ্ধোপরাধী নেই। বিস্তারিত এখানে

Sunday, October 21, 2007

অন্য নারীদের কথা

জার্মান ব্লগগুলোতে যারা লেখালেখি করেন তাদের অনেকেরই খুব নাক উঁচু। এক শ্রেনীর ব্লগাররাতো তাদের লেখার সাহিত্যমান নিয়ে খুবই সচেতন। কারো কারো ব্লগে লেখা নিয়ে রীতিমত রিডিং সেশন হয়। একবার একজন রাস্তায় খাবার বিক্রেতা একটি ব্লগে লেখা শুরু করল এবং তা খুব জনপ্রিয় হলো। সেই ব্লগে একদিন একজন মন্তব্য করল যে এরপরে আমরা দেখব যে একজন ক্লোফ্রাউ (টয়লেট পরিস্কারকারী নারী) ব্লগিং শুরু করেছে। এই মন্তব্য জার্মান ব্লগোস্ফিয়ারকে দুভাগ করে দিল। একদল বলল আরে ভারী মজা হবে তো -শুরু হোকনা। আরেকদল নাক সিটকালো। বলল সাহিত্যমান ছাড়া আবার ব্লগ হয় নাকি? সব আনকালচারড, অশিক্ষিতের ভিড়ে ব্লগের বারোটা বাঁজতে দেরী নেই। বিতর্কটি এখনও হয়তো চলছে সেখানে। কিন্তু সেদিন টিভিতে ডকুমেন্টারী দেখলাম এক ঘানার মহিলা ক্লোফ্রাউ জার্মান একটি শহরের টয়লেটে কাজ করে তার আয় থেকে জমিয়ে তার দেশে একটি এতিমখানা চালাচ্ছে। কি উজ্জ্বল এবং অনন্য সে এসব অনেক কালচার্ড এর মাঝে থেকেও।

বাংলাদেশে ব্লগিংয়ের চিত্রটি পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় সাধারনত: মধ্যবিত্ত -উচ্চ মধ্যবিত্তরাই ব্লগায়। কারন একটাই- ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও মুল্য। উচ্চবিত্তদের বিনোদনের অন্যান্য উপায় রয়েছে। নিন্মবিত্তদের নেই কোন উপায়।

সাহিত্য চর্চা ও বইপ্রকাশনার দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে উচ্চ এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের দাপট। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করে বন্ধুদের মাঝে বিলোতে হয়। অথচ মধ্যবিত্ত অথবা নিন্ম মধ্যবিত্ত অনেক লেখক বছরের পর বছর অপেক্ষা করে একটি বই ছাপানোর সুযোগের জন্যে। ইন্টারনেট তাদের জন্যে হতে পারে একটি অপুর্ব সুযোগ। উদাহরনস্বরুপ আমি সচলায়তনের ই-বুকের কথা বলব

কিন্তু আমাদের দেশে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেনী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন প্রান্তীক ও কর্মজীবি নারীরা। এদের মধ্যে কাউকে আপনারা দেখেন সকালে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে মিছিল করে চলতে। তাদের গতিতেই দেশের গতি, বৈদেশিক মুদ্রা, অথবা মালিকের মার্সিডিজ অফরোড ভেহিকেল।

তাদের কন্ঠ কি আমরা কখনও কেউ শুনতে চেয়েছি? জানতে চেয়েছি তাদের প্রিয় চলচিত্র কি? তাদের মা কি কষ্ট করে তাদের এত বড় করেছেন? তাদের সুখদু:খ, দেশভাবনা, আশা বেদনার কথা?

ইন্টারনেট একটি খুবই উর্বর মাধ্যম। গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন হার্ভার্ড ল স্কুলের বার্কম্যান সেন্টার ফর ইন্টারনেট এন্ড সোসাইটিতে (সমাজে ইন্টারনেটের প্রভাব সম্পর্কে একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক নাগরিক মাধ্যম (সিটিজেন মিডিয়া) প্রকল্প। তাদের আরেকটি নুতন প্রকল্প হচ্ছে রাইজিং ভয়েসেস। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ওয়েবে আন্ডার রিপ্রেজেন্টেড কমিউনিটির কন্ঠগুলোকে তুলে ধরা। তাদের ৫০০০ ডলার মূল্যের মাইক্রোগ্র্যান্ট পেয়েছেন পাঁচটি সংগঠন যার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের নারী জীবন প্রকল্প

কাজী রফিক ইসলাম এবং ক্যাথি ওয়ার্ড হচ্ছেন ঢাকার নারী জীবন প্রকল্পের যথাক্রমে সমন্বয়কারী এবং নির্বাহী পরিচালক। এদের ওয়েবসাইট থেকে আপনি জানতে পারবেন তারা ঢাকার যুবনারীদের নিয়ে চোখে পড়ার মত কাজ করছেন। রাইজিং ভয়েসেস ক্ষুদ্র অনুদানের সহায়তায় তাদের বর্তমানে সেবাদানরত বাংলা, ইংলিশ এবং কম্পিউটার ক্লাসের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশী নারীদের ব্লগিং, ফটোগ্রাফী এবং ভিডিওব্লগিং করতে শেখাচ্ছেন। আপনারা ‘বাংলাদেশ ফ্রম আওয়ার ভিউ’ এই ইংরেজী ব্লগে এবং 'আমাদের কথা' নামক বাংলা ব্লগে এইসব নারীদের লেখা দেখতে পারবেন। এইখানে প্রকল্পটির অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে।

ওদের বাংলা ব্লগটি আমার মনযোগ আকর্ষন করেছে। যদিও লেখাগুলো কিছুটা সম্পাদন করা হয়েছে, তবুও এইসব নারীদের গ্রামের বধুর সৌন্দর্য নিয়ে পদ্য, মায়ের মৃত্যু, বা কর্মজীবি মহিলার সংগ্রামের কথা ওগুলো মৌলিক এবং সবই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমরা হয়ত এরকম কিছু কখনও পত্রিকায় দেখেছি রিপোর্টারের চোখে। কিন্তু এখানে তাদের নিজস্ব কথা তারা নিজেরাই টাইপ করেছে তাদের কম্পিউটার শিক্ষার অংশ হিসেবে। এরকম আরও কত গল্প রয়েছে আপনারা নিজেরা পড়ে দেখুননা।

আমি চিন্তা করছি কোনদিন কি ইন্টারনেট আমাদের সমাজে শ্রেনীভেদ ঘুঁচিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার সমান অধিকার দেবে? কোন দিন কি এদের মাঝ থেকে কোন লেখকের বই আমাদের শেল্ফে শোভা পাবে?

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Sunday, October 07, 2007

কিছু পড়ো না, কিছু শুনো না, কিছু লিখো না....

রাজাঃ আজ থেকে ইন্টারনেট বন্ধ
পারিষদঃ জী আজ্ঞা খোদা বন্দ
রাজাঃ কি নাম যেন পন্ডিতের,
তারে বলবে সে পড়িয়েছে ঢের।
পারিষদঃ ইন্টার নেট!
রাজাঃ তুমি কি গবেট?
রাজাঃ আজ থেকে ইন্টারনেট বন্ধ।
পারিষদঃ জী আজ্ঞে
রাজাঃ এরা যত বেশী পড়ে
তত বেশী জানে
তত কম মানে।
ঠিক কিনা?
পারিষদঃ ঠিক। ঠিক। ঠিক।

'হীরক রাজার দেশ' শিরোনাম দিয়ে এই কমেন্টখানি করেছেন লাল দরজা

বাকস্বাধীনতা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার। কথা বলার এবং কথা শোনার অধিকার এবং যোগাযোগের গোপনীয়তার নিশচ্য়তা দিয়েছে বাংলাদেশ সংবিধান তার ৪৩ ধারার মাধ্যমে। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনে যোগাযোগ ও কথোপকথনের নতুন নতুন টুলগুলোর উদ্ভব হয়েছে যা বাকস্বাধীনতাকে আন্তর্জাতিক মহলে প্রসারিত করেছে।

ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি যা অনেক নতুন মাধ্যম (new media) ও টুল আবিস্কার করেছে যার ফলে তথ্য ও কথোপকথন আর সেইসব লোকের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নেই যারা প্রকাশনা ও বিতরনের মাধ্যমগুলোর মালিক বা দখলদার; সেইসব সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেই যারা চিন্তা ও কথোপকথনে বাধা আরোপ করে। এখন যে কেউ প্রেস এর শক্তিকে ব্যবহার করতে পারে (যেমন নিজস্ব ব্লগে সংবাদ, ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা যায়)। যে কেউ তাদের গল্প পৃথিবী জুড়ে লোকের কাছে বলতে পারে ইমেইল বা অন্য কোন টুল দিয়ে। মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এসব টুলগুলো ব্যবহারের সার্বজনীন বাধাহীন অধিকার প্রয়োজন।

ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) হচ্ছে সেধরনের একটি প্রযুক্তি যার ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম খরচে ফোনে কথা বলা যায়। এর সুবিধা হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর দামী সলিউশনগুলোর উপর না নির্ভর করে ছোট উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সহজলভ্য এই প্রযুক্তির সুবিধা জনগনের কাছে পৌছে দেয়া যায়। আমরা বিগত দশকে যে কলিং কার্ডের উদ্ভব দেখেছি যার মাধ্যমে বিপুল সংখক প্রবাসী বাংলাদেশী দেশের সাথে কম খরচে যোগাযোগ রাখতে পারছেন তা এই ভিওআইপির কল্যানেই। বিশ্বের অনেক দেশে এর আইনগত বৈধতা দেয়া হয়েছে এবং সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে যে কেউ এটি করতে পারে। বাংলাদেশও এ প্রযুক্তির সেবা দিতে পিছিয়ে নেই। কিন্তু এতদিন সময়োপযোগী সরকারী বিধিমালার অনুপস্থিতিতে ছোটখাট অনেক ভিওআইপি অপারেটর গড়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী এইসব ব্যবসার বাংলাদেশের ব্যাকবোন হিসেবে। এগুলোর বেশীরভাগই প্রযুক্তি বিষয়ে জানা যুবক এবং কিছু পূঁজি লগ্নিকারীর ছোটোখাট উদ্যোগ। এই বাজার সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসার চাহিদা, কোন অবৈধ উদ্দেশ্য নয়। সুস্পস্ট নিয়ম নীতিমালা না থাকায়ই এরা অনেক সময় বাধ্য হয়েছে অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যবসায়িক লেনদেন করতে। কিন্তু এই ব্যবসার পরিসর এত বড় হয়ে গেছে যে অনেকেরই শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে এর উপরে।

প্রথম খোঁড়া যুক্তি হচ্ছে যে এই ভিওআইপির জন্যে বিটিটিবির রেভেনিউ কমেছে। এই কারন দেখিয়ে তারা এইসব ছোটখাটো ভিওআইপি উদ্যোগগুলোকে দমন করতে সচেষ্ট হয়েছে। বিটিটিবির রেভেনিউ হয়তো এর ফলে বেশ কয়েকগুন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার মানে হচ্ছে সাধারন ভোক্তাদের কলিং কার্ড বাদ দিয়ে সাধারন চ্যানেল ব্যবহার করে কয়েকগুন বেশী মূল্য দিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কলিংকার্ডে বাংলাদেশে আগে যে মূল্যে কথা বলা যেত এখন তার থেকে প্রায় দ্বিগুন দিতে হচ্ছে। আর এইসব ছোটখাট উদ্যোক্তাগুলো যারা পুঁজিসহ সর্বশান্ত হয়েছেন কারন তাদের পূনর্বাসনের চিন্তাতো করা হয়নি তাদের বরং তাদের অপরাধী হিসেবেই চিন্হিত করা হয়েছে।

আজকের গ্লোবালাইজেশনের যুগে যে প্রযুক্তি/ব্যবসা কম মূল্যে সেবা দেবে সেটাই তো মানুষ গ্রহন করবে। অন্যান্য দেশের লোকেরা যেখানে এই সুবিধা পাচ্ছে সেখানে এদেশের মানুষকে এ থেকে বন্চিত রাখা হচ্ছে। সরকারের উচিৎ নিজের ব্যবসায়ীক লাভের কথা শুধু না ভেবে সবাইকে প্রযুক্তির সুবিধা এবং আইনগত ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারিত করে দেয়া যেখানে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকবে এবং যাতে আইনগতভাবে সরকারকে কর দিয়েই এসব ব্যবসা হয়। ফলে লোকসানের প্রশ্ন আসছেনা।

প্রযুক্তিকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারে না। বাংলাদেশে ফ্যাক্স মেশিন যখন প্রথম আসে তখন বিটিটিবি নাকি দুই বছর ফ্যাক্স মেশিনের ব্যাবহার নিষিদ্ধ করে রেখেছিল কারণ ফ্যাক্সের কারনে নাকি তাদের টেলিগ্রাফের ব্যাবসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ৮০’র দশকের শেষের দিকে এবং ৯০এর দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ দুবার কম খরচে সাবমেরিন কেবল কন্সোর্টিয়ামের সাথে যোগ দিতে পারেনি কারন সেসময় সংশ্লিষ্ট নিয়ম নির্ধারকরা যাদের প্রযুক্তিগত ধারনা ছিলনা সরকারকে বুঝিয়েছিল যে এর ফলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরে পাঁচার হয়ে যাবে। ফলে বিপুল টাকা খরচ করতে হয়েছে গত বছরে পাওয়া সাবমেরিন কেবলের সংযোগের জন্যে। মাঝখান থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত গত প্রায় দেড় দশকে এই সাবমেরিন কেবল ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) এর কাজগুলো দেশ থেকে করে বিপুল এক জনগোস্ঠীর চাকুরীর সুযোগ করে দিয়েছে ও বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। তাই প্রযুক্তিকে জনগনের কাছে সহজলভ্য না করার ফলাফল কখনই লাভজনক হয়না।


বিটিআরসির এইসব হঠকারী নিয়ন্ত্রনকারী পদক্ষেপ বাংলাদেশে প্রযুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করেবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাদের এই পদক্ষেপগুলো নেয়ার সময় এতে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এই ব্যপারটিও বিবেচনায় রাখা হয়নি। কিন্তু তারা এই সুযোগটি নিতে পারছে কারন আমরা কি আমাদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন?

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, October 06, 2007

বিটিআরসির ইন্টারনেট মনিটরিং সংক্রান্ত একটি আপডেট

পুর্বের পোস্ট: বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভেইল্যানস এখন সময়ের ব্যাপার

বিবিসি বাংলার গতকালের প্রভাতী অনুষ্ঠানে দুজন বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলো শুনুন:

১) আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ব্রাসেলস ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক আহমেদ জিয়াউদ্দিন:

"এটি বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ ধারার সুস্পস্ট লঙ্ঘন"


Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

২) ব্যারিস্টার সুলতানা কামাল, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও ভূতপুর্ব এডভাইজার, কেয়ারটেকার সরকার :

"এমনিতেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে টেলিট্যাপিং হয়, বিভিন্ন জনের উপর নজরদারী হয় কিন্তু সেটি করা হয় সৌজন্য রেখে সরাসরি নয় কারন সেটি তাহলে অগনতান্ত্রিক হবে। এখন তো এইভাবে এই সব অগনতান্ত্রিক পদ্ধতিকে ন্যায্যতা দিয়ে দেয়া হচ্ছে।"



Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

আমি এখনো দেশী কোন সংবাদপত্রে এ নিয়ে আলোকপাত করতে দেখিনি। দেশীয় সংবাদপত্রে সংবাদটি ব্ল্যাকআউট কেন হচ্ছে কেউ কি বলতে পারেন?

আরেকটি সংবাদ হচ্ছে: স্থায়ীভাবে বাতিল হলো সিএসবি টিভি চ্যানেলের ফ্রিকোয়েন্সি। নোটিসের জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি বিটিআরসি


প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Friday, October 05, 2007

বাখ বে'থোফেনের দেশে



১.

পাশ্চাত্য ক্লাসিক্যাল সঙীত শোনায় আমার হাতেখড়ি নব্বুই দশকের প্রথম দিকে জার্মান কাল্চারাল সেন্টার লাইব্রেরী থেকে। ধানমন্ডি দুই নম্বর রোডের সেই সুন্দর বাড়ীটির (পরে বেক্সিমকো এন আইআইটি) নীচতলায় ছিল লাইব্রেরীটি। লাইব্ররিয়ান খান ভাইয়ের গম্ভীর ব্যবহারে তখন বেশ ভয়ই পেতাম। কিন্তু সেখান থেকে অডিও ক্যাসেট আর ম্যাগাজিন ধার করার জন্যে বার বার সেই ভয় ঠেলে যেতাম। পরে ওনার সাথে আমার খুবই ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়।

অডিও লাইব্ররীটিতে আমার পছন্দের ইংরেজী পপ সঙীত তেমন ছিল না। স্করপিওনস বা নিনার দুএকটি গান সহ সংকলন পেলে হাভাতের মত বাসায় নিয়ে আসতাম। আবিস্কার করলাম সেখানে পাশ্চাত্য সঙীতের এক বিশাল কালেকশন। আস্তে আস্তে বাসায় আনা শুরু করলাম বে'থোফেন, মোজার্ট ইত্যাদি কম্পোজারের মিউজিক। নিজের অজান্তেই এগুলো ভাল লাগতে শুরু করল। পরবর্তীকালে সেই উৎসাহে ভাটা পরে না শোনার কারনে কিন্তু ভাল লাগাগুলো থেকেই যায়। নব্বই দশকের শেষ দিকে একবার এক সহকর্মী কিছু ব্যবহার করা ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল সিডি বিক্রি করেছিলেন সেখান থেকে কিছু কিনেছিলাম। সেগুলো শুনলাম প্রান ভরে। এছাড়া বেশ কিছু লাইভ কনসার্ট দেখার সুযোগ হয়েছিল জার্মান কালচারাল সেন্টার ও ওসমানী মিলনায়তনে (গুটিকয়েক অতিথি শিল্পীদের দ্বারা) কিন্তু সেগুলো যে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো তা বুঝলাম অনেক পরে।

২.
জার্মানীতে আসার পর একটি জিনিসের স্বপ্ন ছিল, সত্যিকারের ক্লাসিকাল কনসার্ট শোনা। প্রথম যে শোতে গেলাম - বার্লিনের চারুকলা ইউনিভার্সিটি অডিটরিয়ামে, বুঝলাম সম্পুর্ণ অর্কেস্ট্রা কাকে বলে। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসিকাল মিউজিক অধ্যয়নরত ২৭ দেশের প্রায় শতাধিক ছাত্রছাত্রীর মেলা মন্চে। একসাথে ৪০টির অধিক ভায়োলিন -ভায়োলা, হার্প, ডাবল বেজ, বাঁশী, ইংলিশ হর্ণ, ফ্রেন্চ হর্ণ, টম্বোন, ট্রাম্পেট এবং বিচিত্র রকম পার্কাশন সাজিয়ে বসেছে তারা। সবার পড়নে মার্জিত আনুষ্ঠানিক পোষাক কালো- সাদায়। কন্ডাক্টর আসলেন, করতালি পরল। উনি হাতে ছড়ি (ব্যাটন) নিয়ে নির্দেশ দিলেন সঙীত শুরু করতে।

যদিও শিল্পীরা নামকরা কেউ নয় কিন্তু আমি সত্যিই বিভোর হয়ে ছিলাম তাদের বাজানো সঙীতের মুর্ছনায়। ছয়-সাতশো লোকের সামনে ১০০ জন পারফর্ম করছে ভেবে দেখুন। ক্যাসেটে শুনে এই আবেদন পাওয়া যায় না।

বার্লিনের অন্যতম নাম করা অর্কেস্ট্রা হচ্ছে বার্লিন ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা যারা প্রতিবছর আয়েজন করে বার্লিন মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। অস্ট্রিয়ান কন্ডাক্টর হার্বার্ট ফন কারায়ান (যার নির্দেশিত সঙীত আমি ক্যাসেটে অনেক শুনেছি) ১৯৮৯ সালে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ৩৫ বছর ধরে বার্লিন ফিলহার্মোনিকের মিউজিক ডাইরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার সম্মানে ফিলহারমোনির সামনের রাস্তাটির নাম করন করা হয় 'হার্বার্ট ফন কারায়ান স্ট্রাসে'।

এবার মিউজিক ফেস্টিভ্যালে একটি কনসার্ট দেখার ইচ্ছে ছিল। সাধারনত কনসার্টের মুল্য বেশ চড়া হয় এবং ভাল যায়গা পেতে হলে আগে থেকে বুক করতে হয়। আমার যেদিন সুযোগ হলো সেদিন প্রথম ভাগে ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত আমেরিকান কম্পোজার চার্লস ঈভস (১৮৭৪-১৯৫৪) এর সঙীত এবং বাজিয়েছে কনসার্টহাউজ অর্কেস্ট্রা বার্লিন। দ্বিতীয় ভাগে ছিল রোমান্টিক সময়কার চেক কম্পোজার আন্তোনিন দোভোরাক এর সঙীত। চার্লস ঈভসকে বেশ উচ্চকিত ও সিরিমোনিয়াল মনে হল অবশ্য তার পিসগুলোর নাম ছিল ডেকোরেশন ডে, দ্যা ফোর্থ অফ জুলাই, ওয়াশিঙটন'স বার্থডে এমন।

৩.
আমার দেখা কিছু কনসার্ট সংস্কৃতি উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছিনা। জার্মান সমাজে ক্লাসিকাল সঙীতকে খুবই উচ্চমার্গের ধরা হয় এবং এগুলোতে সমাজের উচু স্তরের লোকজনের আনাগোনা বেশী। প্রথমবার সাধারন পোষাকে গিয়ে ধরা খেয়েছিলাম। তাই ফেস্টিভ্যালে কোটটি চাপিয়ে গেলাম। কিন্তু দেখি পুরুষরা প্রায় সবাই টাই পরে আরও কেতাদুরস্ত, কিছু উচ্চবর্গীয় নারীর ডিজাইনার পোষাক পড়ে আগমন দেখলাম। অনুষ্ঠান শুরুর সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। যারা দেরী করে আসবে তাদের জন্যে বাইরে বসার ও টিভি মনিটরের ব্যবস্থা আছে। মোবাইল ফোন বন্ধ করার কোন ঘোষনা দেয়ার দরকার নেই কারন ভেতরে বিশেষ ব্যবস্থায় নেটওয়ার্ক নেই। ফলে পিন পতন নিস্তব্ধতায় কনসার্টটি চলল।

দুই ঘন্টার সঙীতে (মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি) ৮০-১০০ জনের মুল অর্কেস্ট্রার পাশাপাশি প্রায় চল্লিশ জনের একটি কয়ার গ্রুপ বসে ছিল সারাক্ষন মাঝের ২-৩ মিনিটের জন্যে কন্ঠ দেয়ার জন্যে এবং তাদের জন্যে ছিল আলাদা কন্ডাক্টর। সঙীতের কোন অংশ সম্পুর্ণ শেষ না হলে তালি দেয়ার নিয়ম নেই। ভুলে কেউ তালি দিলে আশেপাশের বেশ কয়েকটি চোখ আপনার দিকে ঘুরে যাবে। কনসার্ট শেষ হওয়ার পর তালির বহর শুরু হবে। এই তালি দেয়াটাও একটি আর্ট। প্রথমবার শিল্পীরা সবাই দাড়িয়ে বো করে কন্ডাক্টর চলে গেলেন। শিল্পীরা বসে গেলেন কিন্তু তালি থামছেনা। উনি আবার আসলেন মন্চে , এসে আবার বো করলেন। তাকে ফুল দেয়া হলো তিনি বো করে চলে গেলেন। তালি পড়তে লাগলো এবং তিনি যেন আবার আসতে বাধ্য হলেন। তারপর তার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভাল পারফর্মারের দিকে অঙুলী নির্দেশ করলেন সে উঠে দাড়ালো। তারপর তিনি চলে গেলেন। ওইদিকে তালি চলছে অবিরাম। প্রায় ৫-৬ মিনিট ধরে ছবার তিনি আসলেন গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত শিল্পীরা মন্চ থেকে নেমে গিয়ে দর্শকদের উদ্ধার করল।

৪.
বাখ ও বে'থোফেনের দেশে ইচ্ছে করলেই সঙীতে ডুবে থাকা যায়। গাড়ীতে চলতে চলতে হাত বাড়ালেই 'ক্লাসিক রাডিও' আর বাড়ীতে টিভিতে 'ক্লাসিকাল এফ এম'। এছাড়া নানা কনসার্ট অনুষ্ঠানের লাইভ সম্প্রচারতো রয়েছেই। খালি শোনার আগ্রহ দরকার। আর এখানকার জনগনকে তৈরি করা হয় সেভাবেই। তিন বছরের মেয়ে প্রি স্কুলে যাচ্ছে তো দেখলাম তাদের স্বরবর্ণ শেখার আগেই মিউজিক ক্লাস হচ্ছে। মিউজিক টিচারকে জিজ্ঞেস করলাম এরা তো কথাই ঠিকমত বোঝে না, এদের তুমি সঙীত বোঝাতে পারবে? সে বলল আমাদের প্রচেষ্টা ধ্বনির পার্থক্যগুলো সম্পর্কে তাদের ধারনা তৈরি করা। কাজেই তোমার মেয়েকে কানে হাত দিয়ে কোন কিছু মনযোগ দিয়ে শুনতে দেখলে বকা দিওনা। ওটা আমরাই শেখাচ্ছি।

আমার ছেলেবেলাটি যদি এমন হতো!

৫.
আপনাদের সবার জন্যে পাশ্চাত্য ক্লাসিক্যাল সঙীতের কিছুটা আমেজ রেখে যাচ্ছি এখানে। আমার পছন্দের কিছু সঙীতের লিন্ক:

# লুডভিগ ফান বে'থোফেন - ৫ম সিম্ফোনি৯ম সিম্ফোনি
# ইওহান সেবাস্তিয়ান বাখ - ব্রান্ডেনবুর্গ কনসার্ট
# ভোল্ফগাঙ আমাদেউস মোৎসার্ট- আইনে ক্লাইনে নাখটমুজিকসিম্ফোনি নং ৪০
# শুমান - পিয়ানো কনসার্টো নং ১
# ইগর স্ট্রাভিন্সকি - দ্যা রাইট অফ স্প্রিং
# মরিস রেভেল- বলেরো
# চায়কোভস্কি - সোয়ান লেক
# হেন্ডেল -ওয়াটার মিউজিক
# আন্তোনিন দোভোরাক - ফ্রম দ্যা নিউ ওয়ার্লড (৯ম সিম্ফোনি)

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

কেন বাংলাদেশে প্রকাশিত কার্টুন নাইজেরিয়ায় খ্রীস্টানদের মৃত্যুর কারন হয়

কারন পত্রিকার সম্পাদক ক্ষমা চাওয়ার পরেও এবং দেশের প্রধান মসজিদের খতিব এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে না বলার পরেও হিজবুত তাহরির নামের সংগঠন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর (অন্য সময় লোক পায়না) পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জারী রাখে। লন্ডনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশকে অসহনশীল একটি দেশ হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করে। তাদের প্রেস রিলিজের তিন নম্বর দাবীটির দিকে তাকালেই প্রতীয়মান হয় প্রথম দুটি ইস্যু কেন দরকার তাদের। শরীয়া এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এবং এজন্যই কার্টুন ইস্যুটি জিইয়ে রাখা তাদের দরকার। ওদিকে সরকার নাকি এইসব আদর্শ মুসলমানদের হাতে আরিফের জীবন হুমকির মুখে পরতে পারে ভেবেই তাকে নিরাপত্তার জন্যে আটকে রেখেছে। এদের নিয়ে সবার এত ভয় কেন?

নাইজেরিয়ার এক সংবাদ রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের এই কার্টুন কন্ট্রোভার্সী নাকি সেদেশে নয়জন খ্রীস্টানের মৃত্যুর কারন হয়েছে। নাইজেরিয়ার খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারী স্যামুয়েল সালিফু বলেছেন:

"তারা ইন্টারনেটে কার্টুনটি দেখল এবং জানল যে ২০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী মুসলিম সেটি এঁকেছে তখন তাদের রাগ মেটাতে তারা নিরপরাধ খ্রীস্টান এবং চার্চকে আক্রমন করল"

জানিনা সংবাদটি কতটুকু সত্যি কিন্তু হিজবুত তাহরির এর মত স্বার্থান্বেষী কিছু গোষ্ঠীর কর্মকান্ডই বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের এমন ইমেজ এনে দিচ্ছে। ওরা বাংলাদেশের এলাকায় এলাকায় প্রথম আলো প্রতিরোধ কমিটি তৈরি করছে এখন (সুত্র আমার দেশ)। এই রমজান মাসে দেশ দ্রব্যমুল্য, দুর্নীতি, বন্যা পুনর্বাসন ইত্যাদি নানা ইস্যুতে জর্জরিত থাকতে ওদের কাছে এই কার্টুন ইস্যু কেন বেশী গুরুত্বপুর্ণ হলো আপনারা নিজেই ভেবে দেখুন।

এদের কবল থেকে ইসলামকে রক্ষা করা অতীব জরুরী।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়ার ইন

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভেইল্যানস এখন সময়ের ব্যাপার

বেশ কিছু উদ্বেগজনক সংবাদ পেলাম দেশ থেকে। আমার এক পরিচিতের বাড়ীতে RAB এসেছিল চেক করতে সে ভিওআইপির ব্যবসা করে কিনা তাই। আমার খটকা লেগেছিল কারন সে একজন সাধারন ইউজার, তার সাথে কেন এমন হবে?

আজ ই-বাংলাদেশেএ নিয়ে খবর এসেছে। এমন ঘটনা আরও হয়েছে। সাধারন ইউজারের বাসায় ভিওআইপি সংক্রান্ত কিছু না পেয়ে কম্পিউটার চেক করেছে -এম এস এন মেসেন্জার ও স্কাইপের কন্টাক্ট লিস্ট চেক করেছে। সন্দেহ হচ্ছে তারা নিজেও কি নিশ্চিত কিনা তারা কোথায় কি খুঁজতে এসেছে।

উর্ধতন এক বিটিআরসির কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে বিটিআরসি সাহায্য করছে RAB কে অবৈধ ভিওআইপি অপারেটরদের ধরতে। কিন্তু সাধারন ইউজারদের বাসায় কেন যাচ্ছে তারা তা সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেন নি।

কিন্তু ব্যাপারটি আসলে এত সহজ কিছু নয়। আসলে ভিওআইপির কথা বলে হয়ত ইন্টারনেট ইউজারদের কার্যকলাপ মনিটর করা হচ্ছে। বিটিআরসি বাংলাদেশের সব আইএসপির কাছে একটি চিঠি (BTRC/E&O/ISP-Gen.(302)/2007-1697) পাঠিয়েছে যেখানে তারা চেয়েছে:
* তারা কার কাছ থেকে কত ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করছে, চুক্তির কপি সহ সেসব তথ্য।
* কর্পোরেট/ডেডিকেটেড/শেয়ার্ড ক্লায়েন্টদের নাম, ঠিকানা ও আইপি
* পুরো ব্যন্ডউইদথ এবং প্রতিটি ক্লায়েন্টের অনলাইন এমআরটিজি ইউসেজ গ্রাফ (যার মাধ্যমে কে কোন সাইটে ব্রাউজ করেছে সব তথ্য জানা যাবে), ইউআরএল এড্রেস এবং প্রতিটি ইউজারের আইডি এবং পাসওয়ার্ড
* সব ইউজারের জন্যে পরিপূর্ণ সাবস্ক্রিপশন ফর্ম
* আইএসপিকে মানা করা হয়েছে এমন ইউজারদের কানেকশন না দিতে যারা ওই ব্যন্ডউইদ্থ অন্যান্য লোকেশনের ইউজারের কাছে অর্থের বিনিময়ে শেয়ার করে।
* আইএসপিকে বলা হয়েছে প্রতিটি ইউজারদের নাম ঠিকানা সংরক্ষন করতে (স্ক্রাচ কার্ডের ক্ষেত্র কি হবে বলেনি)।

উপরোক্ত বিষয়গুলো ১৫ দিনের মধ্যে না মানলে আইএসপির লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন কি ঘটতে যাচ্ছে। তারা আইএসপির মাধ্যমে প্রতিটি ইউজারদের তথ্য সংগ্রহ করবে, এমআরটিজি গ্রাফের ইআরএল, আইডি/পাসওয়ার্ড থাকলে যে কোন স্থান থেকে এইসব ইউজারদের ইন্টারনেট কার্যক্রম মনিটর করা যাবে। আপনার ঠিকানা থাকায় আপনি থাকবেন তাদের মনিটরিং এর মধ্যেই। আপনার ইমেইল পড়ে ব্যবসার গোপন তথ্য অন্যরা জেনে যাবে।

ই-বাংলাদেশে এক আইএসপি প্রভাইডার বলেছে এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হলে এবং বাসায় সার্চ হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ভয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দেবে। আইএসপিদের ব্যবসা গুটাতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করাটাই যেন একটি অপরাধ হয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের কাছে।

এটি একটি বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিটিআরসি আ্যাক্ট ২০০১ এর একটি সংশোধনী (৯৭ ধারা) অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহীনিকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয় আড়িপাতার জন্যে। এই সংশোধনীটি অবশ্য বিটিআরসির মুল উদ্দেশ্য টেলিযোগাযোগের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার নিশ্চয়তা প্রদানকে লঙ্ঘন করে (বিটিআরসি অ্যাক্ট ২০০১ প্যারা ৩০(১)(f)

গতকাল বিবিসির পরিক্রমা অনুষ্ঠানে এ খবরের সত্যতা স্বীকার করা হয়। আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে সরকার দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ডাটাবেজ এবং আইএসপির মাধ্যমে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার মনিটরের উদ্যোগ নিয়েছে। শুনুন পরিক্রমার রিপোর্টটি।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

বাংলাদেশের সাধারন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনি কি অবস্থান নেবেন জানালে ভাল হয়।

Thursday, September 06, 2007

বাংলাদেশে আইটি শিক্ষার বর্তমান অবস্থা


সাকিবের ব্লগ থেকে আমি উচ্চ মাধ্যমিক টেক্সট বই থেকে দুটো অংশের ছবি তুলে ধরছি। আমি হতভম্ব এইসব ভুলে ভরা বিষয়গুলো আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হচ্ছে এই দেখে। এগুলো নাকি আবার টেক্সটবুক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত। বইগুলো যারা লিখে তারা মুখস্তবিদ্যা ও গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির বাইরে চিন্তা করতে পারেনা। সাকিব লিখেছে যে তার এইচএসসি জীবনে একবারই কম্পিউটার ল্যাবে গিয়েছে এবং শিক্ষক তাকে শিখিয়েছে এমএস ওয়ার্ডে কি করে ফাইল সেভ করতে হয়। প্রাকটিকাল পরীক্ষার নাম্বারের জন্য কোচিং ক্লাস বা বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষক কর্তৃক টাকা নেয়া তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি বা আইটি সাংবাদিকরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন না কেন?

প্রথম প্রকাশ সামহোয়ার ইন

Friday, August 24, 2007

লেক জেনেভা


ছবিটি যেখানে তোলা হয় তার পাশেই ছিল মেরী শেলির বাড়ী। উনি সেখানে বসেই নাকি ফ্রান্কেনস্টাইন উপন্যাসটি লিখেছেন। এরুপ সৌন্দর্যের মাঝে থেকে এমন ভীতিকর উপন্যাস লেখাটি বড়ই আশ্চর্যজনক। আর পেছনেই ছিল নামকরা কলোনী (cologny) পাড়া যেখানে বিশ্বের সব ধনীরা বাড়ী কিনে থাকতে পছন্দ করেন।

বাংলাদেশে কার্ফিউ

Get this widget | Share | Track details

বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থতি নিয়ে আমার পডকাস্ট।

(প্রথম প্রকাশ ২৩শে আগস্ট, ২০০৭ ই-বাংলাদেশে)

Monday, August 20, 2007

মধ্যপ্রাচ্যে দাসত্ব

দক্ষিন এশিয়ার প্রবাসী শ্রমিকরা (ভারতীয়, বাংলাদেশী পাকিস্তানী, শ্রীলন্কান ও নেপালী) সৌদি আরব ও পারস্য উপসাগরের অন্যান্য আরব দেশগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখছে। কিন্তু এদের প্রতি নির্যাতন ও এদের শোষনের ঘটনাগুলো খুবই ঘৃনার এবং মারাত্মক সমস্যা। এই বিদেশী শ্রমিকরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে কিন্ত এর বদলে তারা পায় পক্ষপাত, দুর্ব্যবহার, শোষন এবং সরকার তাদের রক্ষায় সচেস্ট নয়।

এদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রচুর উদাহরন রয়েছে। কিছু উদাহরন এখানে দিচ্ছি:

হাজারো শ্রমিক তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে স্বপ্নের চাকরির জন্যে মধ্যপ্রাচ্যে আসে। দৃষ্টিপাত ব্লগ রিপোর্ট করছে কিভাবে তারা সেখানে শোষিত হচ্ছে এবং সবকিছু হারিয়ে ভগ্ন হৃদয়ে দেশে ফিরে আসছে।

নিয়োগকর্তাদের কাছে ন্যায্য বেতন চাওয়ায় কাতারের শত শত নেপালী শ্রমিককে সে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ইউনাইটেড উই ব্লগ একটি নেপালী ছাত্রের খুবই চান্চল্যকর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছে যে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরছিল। সে বর্ণনা করেছে যে বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গাল্ফ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্বাসিত এই নেপালী শ্রমিকদের সাথে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় কিভাবে তাকে অমানষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।

কুয়েতে ৩০ লাখ জনসংখ্যার ৬০% হচ্ছে বিদেশী শ্রমিক। কুয়েতে এক্সপজিশনস অফ এরাবিয়া ব্লগ একজন ভারতীয় শ্রমিকের সাথে আলাপ করেছে যে বলেছে যে তাকে কিভাবে কম বেতন দেয়া হচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিদেশী শ্রমিকদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮৫% (রিপোর্ট করছে ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন)। এই দেশে ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রমিকরা ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাজ করে মাত্র ১ ডলার বেতন পায়। তাদের চুক্তিগুলোকে দাসত্বের সাথে তুলনা করা যায়। যে দেশে ধনী লোকেরা ১০০০ ডলার মূল্যের হোটেল কক্ষে থাকে সেদেশে এই বিদেশী শ্রমিকরা ভোরে আর্মি বেইজের মতো পাহারায় ঘেরা ক্যাম্পে ঘুম থেকে উঠেন এবং সপ্তাহে ছয়দিন প্রহরায় থেকে কাজ করেন। একটি মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটিতেই মাসে হাজারেরও বেশী গরমে আক্রান্ত শ্রমিকের চিকিৎসা করা হয়। সরকার চাপের মধ্যে আছেন কাজের পরিবেশের উন্নতির জন্যে এবং সেইসব নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যারা ন্যায্য বেতন দিচ্ছে না।

হিউমান রাইটস ওয়াচ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিদেশী শ্রমিক শোষনের উপর একটি রিপোর্ট বের করেছে যার শিরোনাম হচ্ছে “শ্রমিকদের প্রতারিত করে টাওয়ার নির্মান“।

সৌদি আরবে মোট জনসংখ্যার ৩৫% বিদেশী শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলন্কা ও বাংলাদেশের প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক রয়েছে। হিউমান রাইটস ওয়াচ “দু:স্বপ্ন : সৌদি আরবে বিদেশী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন ও শোষন” নামে ১৩৫ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট বের করেছে যাতে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে এইসব শ্রমিকদের সাথে দাসের মত ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই রিপোর্টের কিছু ভীতিকর ও সাংঘাতিক আবিস্কার হচ্ছে:

  • বিদেশী নারী শ্রমিকদের উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষন, কাজের ক্ষেত্র নিয়োগকর্তা দ্বারা এমনকি জেলের ভেতরেও।
  • বাংলাদেশ, ভারত এবং ফিলিপাইনসের শ্রমিকদের বাধ্য করা হয়েছে দিনে ১০ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে। এমনকি তাদের দিয়ে ওভারটাইম ছাড়া সারা রাতও কাজ করানো হয়।
  • বেতন খুবই কম (যেমন ১৬ ঘন্টা কাজ করে ১৩৩ ডলার প্রতি মাসে)
  • শতশত মহিলা শ্রমিক জেদ্দাহ হসপিটাল পরিস্কার করার কাজে লিপ্ত হয়েছেন যাদের দিয়ে দিনে বার ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করানো হয়েছে খাবার এবং বিশ্রাম ছাড়া। এবং এর পরে অবসর সময় তাদের তালাবদ্ধ বাসস্থলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
  • সৌদী বিচার ব্যবস্থার অধীনে এইসব শ্রমিক অমানুষিক আচরন পেয়েছেন।
  • আব্দল মোঘসেত বনী কামাল কাউন্টারকারেন্টস ব্লগে লিখছেন প্রবাসী শ্রমিকরা একবিংশ শতাব্দীর দাস। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে (বিশেষ করে সৌদি আরবে) পাকিস্তানী শ্রমিকদের করুন অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

    আনহার্ড ভয়েসেস: দৃষ্টিপাত ব্লগ জিজ্ঞেস করছে:

    আমরা, সাধারন নাগরিকেরা এর বিরুদ্ধে কি করতে পারি? প্রবাসী শ্রমিকদের এই সমস্যাগুলো অনেকদিন ধরেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। এদের নিয়ে ডকুমেন্টারী তৈরি করা হয়েছে, হিউমান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট বের হয়েছে কিন্তু পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।

    এই মানবাধিকার ব্লগ বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্যে কিছু করনীয়র প্রস্তাব করেছে।

    মধ্য প্রাচ্যের নাগরিকরা এ নিয়ে কি ভাবছেন? বাহরাইনি ব্লগার এসরা’আ মিড ইস্ট ইয়থে প্রকাশিত একটি লেখায় নিন্মোক্ত প্রশ্নগুলো করেছেন:

    আমাকে এটাই হতবুদ্ধি করে যে আমরা কেন বুঝতে পারিনা যদি এইসব বিদেশী শ্রমিক না থাকত তবে আমরা…আসলে কিছুই হতে পারতাম না। আমাদের কাজগুলো এদের ছাড়া কাদের দিয়ে করাতাম? আর কেউ কি নির্মান করছে? আমাদের টয়লেট কারা পরিস্কার করছে? আমাদের যখন খারাপ লাগে তখন আর কাদের উপর আমাদের ঝাল ঝাড়ি? এদের ছাড়া কাদের নিয়ে হাসাহাসি করি বা নীচু করে দেখাই? তারা খুবই পরিশ্রমী এবং তাদের শুধু ধন্যবাদই প্রাপ্য আমাদের কাছ থেকে। কিন্তু আমরা তাদের উপর নির্যাতন করি, তাদের নীচু করে দেখি এবং জেলে পুরি। সবচেয়ে জঘন্য হচ্ছে আমরা তাদের নিয়ে ঠাট্টা মসকরা করি এবং “শ্রীলন্কান” এবং “ভারতীয়” শব্দদুটোকে আমরা “বোকা” এবং “মূল্যহীন” এর সমার্থক ভাবি।



    - গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় প্রথম প্রকাশিত

    Sunday, August 05, 2007

    বিচার: ইরানী স্টাইল

    একটি সুন্দর রৌদ্রজ্বল সকাল ছিল সেদিন। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ জড়ো হয়েছেন সিকিউরিটি ব্যারিকেডের পেছনে। অনেকের হাতেই ক্যামেরা, প্রতীক্ষা কখন এই অনুষ্ঠানের তারকারা আসবেন। ছোট্ট উচ্ছল শিশুটিও দাড়িয়ে। সভ্যতার এক উজ্বল নিদর্শন দেখবে সবাই।

    একে একে আসলেন তারকারা। ওরা হাসছিলেন ও জনতার দিকে হাত নাড়াচ্ছিলেন। কি উৎসবমুখর পরিবেশ।

    শুরু হল মূল অনুষ্ঠান। একটি ট্রাকের পেছনে বড় একটি ক্রেন তৈরি ক্লাইমেক্সের জন্যে। কিছুক্ষনের মধ্যেই কালো মুখোশ পরা লোকরা মজিদ এবং হোসেন কাভুসিফারকে (চাচা-ভাতিজা) প্রকাশ্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিল। উপস্থিত জনতা খুশি হয়ে হাততালি দিল। চতুর্দিকে হাস্যরোল, ছবি তোলা। গ্লাডিয়েটর ছবির কথা মনে করিয়ে দিল -যখন সিংহ ও মানুষের যুদ্ধ দেখার জন্য কলোশিয়াম ভর্তি লোক এমন করত। কিন্তু সেতো কয়েক হাজার বছর আগে।

    মজিদ আর কাভুসিফার ২০০৫ সালে একজন জাজকে মারার জন্যে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এই জাজকে তারা দুর্নীতিপরায়ন বলেছে যিনি অনেক ইরানী বিপ্লবীকে সাজা দিয়েছিলেন (এমনকি মৃত্যুদন্ড) সরকারের ধামা ধরে। তাদেরকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার উদ্দেশ্য সরকারের বিরুদ্ধে যাতে কোনরুপ সমালোচনা না হয় তার জন্যেই। এটি সম্পুর্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাধিত।

    এখানে আমি বিচারের বিরুদ্ধে বলছি না। বলছি বিচার কার্যকরের পদ্ধতি সম্পর্কে। এই ছোট শিশুটি যে এটি দেখল তার মনে কি অনুভুতি হবে? আর বলিহারি সেইসব লোকদের যারা এটি দেখে আনন্দ করেছেন।

    প্রকাশ্যে ফাঁসির মতো বর্বরতা যেন সভ্য সমাজে আর না হয়।

    খবর ও ছবি সৌজন্যে : বিবিসি, স্কটসম্যন.কম, ইসনা

    Tuesday, July 24, 2007

    ড্রেসডেন: সংস্কৃতির প্রানকেন্দ্র

    বার্লিন থেকে মাত্র ২০০ কিমি দুরে অবস্থিত জার্মানীর পুবের সাংস্কৃতিক শহর ড্রেসডেন গত বছর ৮০০ বছর পুর্তি পালন করেছে। স্যাক্সোনীর রাজাদের এটি রাজধানী ছিল বলে সপ্তদশ ও অস্টদশ শতাব্দীতে স্থাপত্য ও কলায় এটি অনেক প্রাচুর্য লাভ করে। ব্যারোক আর্কিটেকচারে নির্মিত অনেক পুরনো স্থাপত্য ছিল এই শহরটিতে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায়। এগুলোর অনেকগুলোই এখন পূন:র্নির্মিত হচ্ছে। এই যেমন গত বছর নামকরা ফ্রাউয়েনকির্শে ("Church of Our Lady") মেরামতের পর আবার জনগনের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।

    রাজা অগাস্ট দ্যা স্ট্রন্গের (ফ্রেডেরিক অগাস্টাস ১৬৭০ -১৭৩৩) আমলে এ শহরটি ইউরোপীয় সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তার ছেলে অগাস্ট দ্য থার্ড ৎসুইঙার (Zwinger) প্যালেসে তার নিজস্ব গ্যালেরির জন্য প্রচুর পেইন্টিংস কেনেন অঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় যা ইউরোপ জুড়ে পরিচিতি লাভ করে। রাফায়েলের সিস্টিন ম্যাডোনার মত চিত্রকর্ম তিনি কিনেছিলেন গোটা একটি প্যালেসের মুল্য দিয়ে।

    পরবর্তীতে (১৭৮৯ সালে) মোৎসার্ট প্রুসিয়ার রাজা ফ্রেডেরিক টুর রাজপ্রাসাদে কোর্ট মিউজিশিয়ান হিসেবে চাকরি নেন এই ড্রেসডেনেই। আরেক নামকরা সঙীতজ্ঞ কার্ল মরিয়া ফন ওয়েবারও ড্রেসডেনেই তার শিল্পী জীবনের অধিকাংশ কাটান। ১৮৪১ সালে নির্মিত এখানকার সেমপার অপেরা হাউস বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।

    আমি ড্রেসডেনে গিয়েছি বেশ কয়েকবার কিন্তু প্রতিবারই দিনে দিনে ফিরে আসতে হয়েছে। তাই অনেককিছু দেখার ইচ্ছা থাকলেও হয়ে উঠেনি। এমাসের প্রথমদিকে যখন আবার গেলাম তখন গো ধরেছিলাম আর কেউ সঙে থাকুক বা না থাকুক আমি ৎসুইঙার প্যালেসে অবস্থিত ওল্ড মাস্টারস গ্যালারি দেখব। এখানে রয়েছে রেনেসাঁ থেকে ব্যারোক আমল পর্যন্ত ইটালীয়, জার্মান, স্পানিশ, ডাচ, ফ্লেমিশ, অস্ট্রিয়ান এবং গ্রীক মাস্টারদের ৭০০ নাম করা পেইন্টিংস যা অবিশ্বাস্য ভাবে বেচে গিয়েছিল বোমা থেকে।

    এই বোমার কথা বার বারে আসছে কারন ফেব্রুয়ারী ১৩, ১৯৪৫ সালে এলাইড ফোর্স প্রতিরোধহীন এই জার্মান শহরটিতে ১৪ ঘন্টা ধরে অগ্নিবোমা মারে যাতে প্রায় পাঁচ লাখ লোক মারা যায় এবং ড্রেসডেন শহর অনেকাংশেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ৭ লাখ ফসফরাস বোমা ফেলা হয় ১২ লাখ লোকের উপর এবং এটি ড্রেসডেন হলোকাস্ট নামে পরিচিত। জার্মান কবি কুর্ট ভনেঘট লিখছেন:

    " তোমরা শহরটিকে পুড়িয়ে ফেলেছো, একটি অগ্নিকুন্ড পরিনত করেছো। এই অগ্নিকুন্ড যত জীবন নিয়েছে তা হিরোশিমা এবং নাগাশাকি দুটোর হতভাগ্যদের চেয়েও বেশী।"

    এখন আসি আর্ট গ্যালারির কথায়। পেইন্টিংগুলো বেঁচে গিয়েছিল কারন ওগুলো মাটির নীচের (সেলারের) গুদামে রাখা ছিল। পরবর্তীতে রাশিয়ানরা এই চিত্রকর্মগুলো মস্কো নিয়ে যায়। এবং ১৯৫৫ সালে আবার সেগুলোকে ড্রেসডেনে ফেরত দেয়া হয়।

    গ্যালারিতে ঢুকেই এর বিশালত্ব দেখে চমৎকৃত হলাম। কোন কোন পেইন্টিং পুরো দেয়াল জুড়ে। দর্শকদের আগ্রহ রাফায়েলের সিস্টিন ম্যাডোনার দিকে থাকলেও ক্যানেলেটো এং বেলেট্টোর (তার শিষ্য) আকা ড্রেসডেনের বিশাল পোর্ট্রেটগুলো বেশ ভালো লাগলো। রাজা অগাস্ট তাদের ভেনিস থেকে আমন্ত্রন করে নিয়ে এসেছিলেন এবং বছর খানেক রেখেছিলেন এই ছবিগুলোর জন্য। ফলে ড্রেসডেনের সেইসময়কার জাকজমক সম্পর্কে আমরা এত শতাব্দী পরেও জানতে পারছি। একে একে দেখলাম রেম্ব্রান্ট, ড্যুরার, পিটার পল রুবেন্স, বত্তিচেলী, টিটিয়ান, রিবেরা, ক্রানাখ ইত্যাদি নামকরা চিত্রকরদের পেইন্টিংস। এদের অনেকের সাথেই আমার পরিচয় সুনীলের "ছবির দেশে কবিতার দেশে " বইটি থেকে (আমি দুবার কিনেছি বইটি এবং যথারীতি সেগুলো কেউ নিয়ে ফেরত দেয়নি)। সাথের অডিও ট্যুর যন্ত্রটি বেশ কাজের। ছবিগুলোর নম্বর টিপলেই প্লে করছে তার ইতিহাস।

    আপনারা এই গ্যালারীর কিছু ছবি এখান থেকে দেখতে পারবেন। এই বছর সবগুলো পেইন্টং নিয়ে একটি ভার্চুয়াল গ্যালারিও লন্চ করা হয়েছে।

    আমার তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হলো সবগুলো ছবি না দেখার অতৃপ্তি নিয়েই। আবার আসতে হবে এখানে।

    ড্রেসডেনের কিছু ছবি আমার ফ্লিকার থেকে।

    (প্যানোরামা ছবি - ড: টরস্টেন হেনিঙসের সৌজন্যে উইকিপিডিয়া থেকে)

    Thursday, July 19, 2007

    জন্ডারমেন মার্কট এ এক সন্ধ্যা

    ইউরোপের অন্যান্য টুরিস্ট অন্চলের থেকে বার্লিন একটু আলাদা কারন এখানে পর্যটন আকর্ষনগুলোতে লোক গিজগিজ করে না। বলাই বাহুল্য কোন উটকো ঝামেলা নেই।

    এই যেমন আজ সন্ধ্যাটা কাটালাম (সুর্য ডুবেছে রাত ১০টার দিকে) বার্লিনের সিটি সেন্টারের জন্ডারমেন মার্কট স্কয়ারে। স্কয়ারটির মাঝখানে ১৮২১ সালে নির্মিত কনসার্ট হাউজ। দুই পাশে প্রায় একই রকম দেখতে মত ১৭০০ সালের প্রথমদিকে নির্মিত জার্মান ও ফরাসি ক্যাথিড্রাল। বাধানো চত্বরটির মধ্যিখানে জার্মান কবি শিলারের একটি মুর্তি।

    চারদিকে রাস্তা এবং পাশে আধুনিক বাড়ীঘরের মাঝে এটির বিশালতা এক অনন্য আমেজ তৈরি করে দেয়। সবচেয়ে যেটা উল্লেখযোগ্য যে এখানে লাইভ সঙীত বাজানো হয় (ভায়োলিন এবং পিয়ানো)। ব্রাসেলসের সিটি সেন্টার গ্রঁ প্লাসেও লাইভ সঙীত শুনেছি তবে সেটি ছিল লোকের কোলাহলের মাঝ বেশ বাজার বাজার মনে হয়েছিল। কিন্তু জন্ডারমেন মার্কেট এদিক দিয়ে অনন্য।

    আজ পশ্চিমা ক্লাসিকাল এবং অণ্যান্য জনপ্রিয় সুর বাজাচ্ছিলেন আন্দ্রে সুর এবং মারিনা গন্টার নামে দুই ভ্রাম্যমান শিল্পী যাদের দলের নাম 'মাসুর ডুও'। লোকজন শুনছিলেন এবং কিছুক্ষনের জন্যে থমকে দাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু কখনই তাদের পাশে ভিড় করছিলেন না। আমরাও কনসার্ট হাউজের সিঁড়িতে বসে পড়লাম। কেমন একটি আবহ সৃষ্টি হচ্ছিল। একটি করে সঙীত শেষ হচ্ছিল আর কোনা কোনা থেকে হাততালির আওয়াজ আসছিল। মনোযোগী শ্রোতারা ঠিকই ছিলেন এবং মাঝে মধ্য উদয় হয়ে তারা শিল্পীদের খুচরো পয়সা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে চলছিল তাদের সিডি বিক্রি (এতেই তাদের দিন চলে বোঝা গেল)। ভায়োলিনের সুরের মুর্চ্ছনা ছড়িয়ে পরছিল সমস্ত স্কয়ার জুড়ে। মনে হচ্ছিল সারারাত বসে থাকি।

    তারপর তারা ভায়োলিনে ধরলেন কার্লো সান্তানার 'অঁ আরানজুয়ে কন তু আমর' (আরানজুয়েতে তোমার ভালবাসা সহ)। অনেক আগে ইন্সট্রুমেন্টালটি গিটারে শুনে পাগল হয়েছিলাম। আজ হলাম ভায়োলিনে শুনে। অদ্ভুত সেই বাজনা। ভালবাসার আমেজ ছড়িয়ে পড়ল চত্বর জুড়ে। যুগলরা যুথবদ্ধ হয়ে থমকে দাড়াল।

    দশটা বাজতেই শিল্পী যুগল পাততারী গোটাতে শুরু করলেন। তাদের একটি সিডি কেনা হলো স্মৃতিটুকু ধরে রাখার জন্যে।

    × ডুও মাসুরের সিডি থেকে তিনটি সঙীত পাবেন এখানে

    × কার্লো সান্তানার 'অঁ আরানজুয়ে কন তু আমর' শুনুন এখান থেকে

    Wednesday, July 18, 2007

    বাক স্বাধীনতা: এখনও ব্লগেই সম্ভব

    যেমন বিলেতী লেখক স্যামুয়েল জনসন বলেছেন:

    "প্রতিটি মানুষের সে যা সত্য মনে করে তা বলার অধিকার আছে। এবং অন্য যে কারো অধিকার আছে তাকে এর জন্যে তাকে ঘুষি মেরে ফেলে দেওয়ার। শহীদ হওয়াটাই আসল পরীক্ষা।"
    আমি ব্যক্তিগতভাবে মডারেশনের বিপক্ষে। একজন মডারেটর কিভাবে শ্লীল অশ্লীলের সংজ্ঞা নির্ধারন করবেন? কিছু ব্যাপার থাকে যার সীমানা নির্ধারন করা খুবই কঠিন। এবং যেখানেই মডারেশন সেখানেই অবিবেচক অনেক কিছু ঘটে এবং বলি হতে হয় অনেককে।

    ওইওয়ান লাম হংকংয়ের একজন ফ্রিলান্স গবেষক, অনুবাদক এবং সম্পাদক। গত বছর ডিসেম্বরে দিল্লিতে গ্লোবাল ভয়েসেস সম্মেলনে এই শান্ত-শিষ্ট মেয়েটির সাথে অনেক কথা হয়েছিল। সে যে হঠাৎ করে একটি এসটাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষনা করবে তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

    ইয়াহু গ্লোবাল মার্কেটে তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্যে স্থানীয় সরকারের সাথে আঁতাত করে বলেই সবাই জানে। ওরা এক চাইনিজ বিপ্লবির ব্লগ সেল্ফ সেন্সর করেছিল যাতে চায়নিজ সরকার পুরো ইয়াহু ব্যান না করে দেয়। ফ্লিকার হচ্ছে ইয়াহুর কিনে নেওয়া একটি কনসার্ন। আপনাদের অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে ফ্লিকারে আপলোড করা কোন কোন ছবি চায়না, সিঙাপুর, হংকং বা জার্মানী ইত্যাদি দেশগুলোর লোক দেখতে পারেন না। কারন ঐসব দেশের নগ্নতা আইন এইসব ওয়েব সাইটে প্রযোজ্য হতে পারে বিধায় ফ্লিকার এইসব ছবি ফিণ্টার করে। আপনার একাউন্ট যদি চায়না, সিঙাপুর, জার্মানী বা কোরিয়ার ইয়াহু সাইট থেকে হয় তাহলে সারা বিশ্বের লোক যা দেখতে পাবে তা হয়ত আপনি দেখতে পারবেন না। এবং এই আইন নিয়েও বহু তর্ক রয়েছে। জার্মান আইনে বলা আছে নগ্ন ছবি দেখা যাবে কিন্তু এইজ ভেরিফিকেশন লাগবে (১৮ বছরের উপরে)। অথচ ফ্লিকার এইজ ভেরিফিকেশন সিস্টেম ব্যবহারের বদলে ঝামেলা এড়ানোর জন্যে ছবিগুলোই সেন্সর করছে।

    ওইওয়ানের যুদ্ধ এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সে একটি সিটিজেন মিডিয়া ওয়েব সাইটে আর্টিস্টিক ন্যুড ছবি পোস্ট করে এর প্রতিবাদ করে। হংকংয়ের নগ্নতা সংক্রান্ত ট্রাইবুনাল তার পোস্টটিকে "ক্লাস টু ইনডিসেন্ট" হিসাবে শেনীভুক্ত করে এবং তাকে অভিযুক্ত করে। অভিযোগ প্রমানিত হলে তার সাজা হবে ৪ লাখ হংকং ডলার ফাইন অথবা ১ বছরের জেল। (বিস্তারিত এখানে)

    মনে হচ্ছে কোর্টের লড়াইটি বেশ জমবে। তবে ফ্লিকার পার পেয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে কারন তার রুলসে সে যে কোন ছবি তুলে নেয়ার অধিকার রাখে।

    অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে বাক স্বাধীনতার কথা আমরা বললেও আসলে এর প্রয়োগ কিন্তু সীমিত। পত্র পত্রিকায় এরকম এক্সপেরিমেন্ট বা ঔধ্যত্ব কল্পনা করা যায় না। একমাত্র ব্লগের জগতেই এটির প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে কিন্তু অথরিটির শ্যেন দৃষ্টি রয়েছে এর উপর। ফ্লিকারের ন্যুড ছবিটি একটি উদাহরন মাত্র। এমন যদি হয় যে বিশে্বর বিভিন্ন সরকারও শুরু করে যে ইন্টারনেট কন্টেন্ট তাদের মর্জিমাফিক সেন্সর করবে দেশের লোকের জন্যে সেটি কি ভয়ানক শাষরুদ্ধকর হবে কল্পনা করেন।

    ওইওয়ানের মত অনেক ব্লগাররাই বাক স্বাধীনতার জন্য লড়ুক নির্দিষ্ট ক্ষেত্র। শুভকামনা রইল তাদের প্রতি।

    Monday, July 02, 2007

    রবীন্দ্র সঙীতে নতুন অনুভব

    শাহানা বাজপেয়ীর নতুন অ্যলবামটি "নতুন করে পাব বলে" শুনে খুবই ভাল লেগেছিল। এটি ইদানিং দেশে খুব জনপ্রিয় হয়েছে নাকি শুনেছি। আ্যলবামটি শুনুন এখান থেকে

    তরুন বয়সীরা খুব পছন্দ করছে এই এলবামটি। কারন হয়ত শাহানার গায়কী এবং তার স্বামী অর্নবের কম্পোজিশন। দুটোই রবীন্দ্রসঙীতে এক নতুন গতির সন্চার করেছে।

    রবীন্দ্র সঙীত নিয়ে এপার বাংলা ওপার বাঙলায় কম গবেষনা হয়নি। অথচ রবীন্দ্রসঙীতের গুরুরা সব সময়ই মৌলবাদী থেকেছেন স্টাইল এবং সুর নিয়ে। স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত কর্নাটকী এবং স্কটিশ ফোক প্রভাবে দুটি অ্যলবামের জন্য গেয়েছেন। সুমন চৌধুরী অ্যাকুষ্টিক গিটার নিয়ে পুরো অ্যালবামের গান গেয়েছেন। সুদীপ ঘোষ জ্যাজ এফেক্টে ২১টি গান গেয়েছেন। (উৎস)।

    অথচ বাঙলাদেশে তেমন গবেষনার পরিমান কম। ৮ বছর আগে ফিডব্যাকের মাকসুদ রবীন্দ্রসঙীত নতুন ভাবে গেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ২০১০ সালে ক্লাবের ড্যান্সফ্লোরে রবীন্দ্রসঙীত বাজবে। কিন্তু তিনি খুব সমালোচনার মুখে পরে এ নিয়ে আগে বাড়েননি। তবে এবার শাহানাকে নিয়ে তেমন শোরগোল তোলা হচ্ছেনা। হয়ত শাহানার শান্তিনিকেতনের ব্যাকগ্রাউন্ডের কারনে। কিন্তু আড়ালে অনেকে নাকি বলাবলি করে এটি আসল রবীন্দ্রসঙীত নয়।

    শাহানা অবশ্য বলেছেন যে রবীন্দ্রসঙীতের কথা ও সুর নিয়ে গবেষনা করার স্পর্ধা তার নেই। শুধু সুরধ্বণি (sound scape) নিয়েই তার খেলা। (সুত্র)

    এখন আপনাদের কাছেই বিচারের ভার আমরা নতুনকে বরন করব না পুরনোকেই আঁকড়ে ধরে বসে থাকব।

    (এটি আসিফ সালেহ'র একটি লেখা থেকে অনুপ্রানিত এবং তার থেকে অধিকাংশ তথ্য নেয়া)

    Thursday, May 31, 2007

    বাংলা লিন্কসমুহ

    ব্লগিং প্লাটফর্ম, ডাইরেক্টরী এবং এগ্রেগেটর

    * বাঁধ ভাঙার আওয়াজ- হাজারেরও বেশী বাংলা ব্লগ নিয়ে সর্ববৃহত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম

    * এভারগ্রীন বাংলা ব্লগপেচালি আরো দুটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম

    * বাংলা ব্লগস্ - বাংলা ব্লগ ডাইরেক্টরী

    * বাংলা ইউনিকোড ব্লগ - বাংলা ব্লগ এগ্রেগেটর

    বাংলাদেশী ব্লগ:

    * উত্স সন্ধানে * ...করি বাংলায় চিত্কার... * ছেঁড়া পাতায় কথামালা * বুঝি কম * আসিফ আহমেদ অনীকের বাংলা ব্লগ * অমি আজাদ * সসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস * আমি এবং আমার পৃথিবী * পুড়ে ছাই ধ্বংসস্তুপ থেকে বেঁচে উঠি পুর্ণবার * রয়েসয়ে * নিরিখ বান্ধিলাম দুই নয়নে...... * বিবর্ণ আকাশ এবং আমি.... * ভয়েস অফ বাংলাদেশী ব্লগারস * এইটা তোমার গান * প্রাত্যহিক ভ্যাজর ভ্যাজর * কবিয়াল * অজ্ঞাতবাস * ধৃসর গোধুলী * সাধক শন্কু * বলো গো * খসড়া কবির খসড়া কবিতা * মোকাবেলা * খিচুড়ী ব্লগ * আড্ডা * আধুলি জমানোর ম্যাচবক্স * দিল কা লাড্ডু * অনন্ত ন্বপ্ন * ..খেরোখাতা.. * যাপিত চীবন * বাংলা ভাষী * সুহ্রদ সরকার
    মাহবুব সুমন ও তার অগাবগা বচন

    ভারতীয় ব্লগ:

    * স্লোগান দিতে গিয়ে * আমার কিছু বক্কা * খোলা জানালা * বিবর্ণ কবিতা * জীবনানন্দ দাশের কবিত


    বাংলায় বিবিধ টুলস

    Sunday, May 27, 2007

    একটি গ্রেফতারকৃত ল্যাপটপ এবং তা নিয়ে মুখরোচক কাহিনী

    ব্লগার তাসনীম খলিল গ্রেফতার হওয়ার সময় তার ল্যাপটপ সিজ করা হয়েছিল। সেই ল্যাপটপে কি ছিল তা যৌথ বাহিনী প্রচার মাধ্যমকে না জানালেও সাপ্তাহিক জনতা (নাম প্রথম শুনলাম) এই নিয়ে একটি কাভার স্টোরী করে। (নতুন ধারার) দৈনিক আমাদের সময় আবার সাপ্তাহিক জনতার খবরটির একটি সংক্ষিপ্ত ভার্সন ছাপে। আপনারা পড়েই বুঝবেন যে কিছু ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে শেখ হাসিনার ছেলে জয়কে জড়িয়ে একটি কনস্পিরেসী থিউরি খুঁজতেই ব্যস্ত। তবে চেষ্টাটির যুক্তিগত ভিত্তি কতটুকু ছিল তা নিন্মের বিষয়টি থেকেই প্রমান হয়।

    পেপার থেকে ফান্ড রেইজিং পর্বটির উদ্ধৃতি:

    "জনৈক আসিফ সালেহ খলিলকে লিখেন, "যে ফান্ড যোগার করেছি তা নিরাপদেই আছে। এখন কিভাবে তোমার হাতে পৌঁছাই তা জানাও। ৮মে তাসনিম লিখেছেন, তুমি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে নাঈম মোহাইমেনের কাছে পাঠাতে পার। 'আই এম প্রিটি মাচ আন্ডার সার্ভিলেন্স'। আমি তহবিল পেলে মোহম্মদপুরের লোকদের হাতে পৌঁছে দেব।"

    মানবাধিকার সংগঠন দৃষ্টিপাতের আসিফ সালেহ ও নাঈম মোহাইমেন আজ দৈনিক আমাদের সময়ে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠালে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়।

    ২০০৭ সালের ১০ই এপ্রিল মধুপুরে নিহত আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলের জন্যে দৃষ্টিপাত তহবিল সংগ্রহের আবেদন জানায়। সংগৃহিত ২৫,০০০ টাকা চলেশ রিছিলের পরিবারের কাছে পাঠানোর জন্যে তাসনিমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। আপনারা হয়ত ইতিমধ্যেই দেখছেন যে মধুপুরকে মোহাম্মদপুর বলে রিপোর্টটিকে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

    এখন উপরের ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে।

    ১) ল্যাপটপের তথ্যগুলো কি যৌথবাহিনীর নির্দেশে প্রকাশিত হয়েছে? হলে শুধু একটি পত্রিকাতে কেন?
    ২) যদি না হয় এবং এর বিষয়বস্তু কিছুটাও যদি সত্যিই হয় তবে এটি সামরিক গোপনীয় তদন্তের বিষয় তা বাইরে এল কি করে? মূল রিপোর্টে তারা ল্যাপটপের তথ্য পাবার কি সুত্র দিয়েছেন?
    ৩) তাহলে কি সজীব জয়ের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ ই তাসনিম কে গ্রফতারের কারন?
    ৪) কয়েকটি ইমেইলের কথার সুত্র খোঁজা হয়েছে কল্পনার ফানুশ মেলে। একটি দায়িত্বপুর্ন ইনভেস্টিগটিভ রিপোর্টে বিষয়গুলোর ফ্যাক্ট চেক করা দরকার আলোচিত ব্যক্তিদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে এবং রিপোর্টে তাদের প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা দরকার। নাহলেতো সেটা একপেশে প্রপাগান্ডা হয়ে যায়।

    তাই সাপ্তাহিক জনতার রিপোর্টটি বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে প্রপাগান্ডাই ছিল প্রতীয়মান হয়।

    Tuesday, May 22, 2007

    পেজফ্লেইকস সম্বন্ধে....

    পেজফ্লেইকস হচ্ছে একটি ইন্টারনেট স্টার্ট পেজ যা অনেকটা মাই ইয়াহু, গুগল পার্সোনালাইজড হোমপেজ এবং মাইক্রোসফ্ট লাইভ এর মত। এটিতে আপনার পছন্দমত মডুলস বা ফ্লেকস যোগ করতে পারবেন। আপনাদের সবার জন্যে রয়েছে এতে মজার মজার ফ্লেকস। টেক্সট, ভিডিও, টিভি, রেডিও, আর এস এস ফিড, গুগল মেইল চেকার, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি- কি নেই এতে। সবচেয়ে ভাল ব্যাপার হচ্ছে এটির বাংলা ভার্সন রয়েছে। আপনারা আপনার পাতাটি অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

    এর চিফ টেকনোলজি অফিসার হচ্ছে সামহোয়ারইনের ওমর আল জাবির মিশো। ডেভেলপার টিমে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী রয়েছে এবং বর্তমানে ১৮জন বাংলাদেশী এতে কাজ করছে। ২০০৫ সালে এটি শুরু হয় এবং পেজফ্লেক্স লিমিটেড জার্মানী থেকে এটি পরিচালিত হয়।

    আপনার ব্রাউজারে এটি সহজেই সেট করতে পারবেন। মজিলা ফায়ারফক্সে :
    Tools--> Options-->Homepage বক্সে
    অথবা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে:
    Tools--> InternetOptions-->Homepage বক্সে
    যোগ করুনhttp://www.pageflakes.com/।

    একটি স্টার্ট পেজ কেমন হতে পারে দেখার জন্য আমার পেজফ্লেকস পাতাটি দেখতে পারেন।

    Monday, May 21, 2007

    জার্মানীতে ড: মুহম্মদ ইউনুস

    আজকে বার্লিনে জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশীরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড: মুহম্মদ ইউনুসকে একটি সংবর্ধনা দেয়। জার্মানীর অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল এসপিডির অফিস উইলি-ব্রান্ডট হাউজে রাত ৭টার সময় অনুষ্ঠানটি হয়।

    ড: মুহম্মদ ইউনুস এমাসে এ নিয়ে দুবার এদেশে আসলেন। মূল কারন হচ্ছে জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য এবারের জি এইট সামিটের চেয়ারম্যান হিসাবে জার্মানীর চ্যনসেলর আন্গেলা মেরকেল আফ্রিকার নারীদের উন্নয়নে কিছু করতে চাচ্ছেন। ড: ইউনুস যেহেতু দরিদ্র নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন সে জন্যেই তার সাহায্য চেয়েছেন তিনি এবং এর প্রাক মিটিংগুলোতে ইউনুস থাকছেন।

    প্রায় শ'খানেক বাঙালিদের মাঝে ইউনুস তার স্বাভাবিক ঢংয়ের বক্তৃতা দিলেন বাংলায়। আলোচনা করলেন তার কর্ম, গ্রামীন ব্যান্ক প্রসঙে, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার অনুভুতি প্রসঙে। এগুলো আগেই পড়া বা শোনা ছিল। নতুনের মধ্যে - ভিক্ষুকদের ঋণ ছিল যে কোনো মানুষই উদ্দোক্তা হতে পারে এই সংক্রান্ত একটি এক্সপেরিমেন্ট যা পরে সফল হয়।

    আমি বসে ছিলাম প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য। সমসাময়িক প্রসঙগুলো চলে এল। উনি রাজনীতিতে আসার চেষ্টা কেন ছেড়ে দিলেন সে প্রসঙ এড়িয়ে গেলেন- 'আমি আমার চিঠিতেই সব বলেছি' এই বলে। ২২শে জানুয়ারীর প্রহসনমূলক নির্বাচনে কেন সায় ছিল তার জবাবে বললেন উনি চাচ্ছিলেন দেশে শান্ত আসুক, রক্তপাত বন্ধ হোক। নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি সেসময় আরও মারাত্মক আকার ধারন করতে পারত বলে তখন তার মনে হয়েছিল।

    গ্রামীন ব্যান্কের সুদের চড়া হারের অভিযোগ খন্ডালেন এই ভাবে:- সুদের হার ওয়েবসাইটে দেয়া আছে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছে। ৩০%, ৫০% এরুপ ফিগারগুলো শুধুই রটনা। গ্রামীন ব্যান্কে ৪ ধরনের ঋণপ্রকল্প রয়েছে। এই ঋণগুলো দেয়ার জন্য মুলধন সংগ্রহ করা হয় ঋণগ্রহীতাদেরই ডিপোজিট থেকে। ঋণগ্রহীতাদের ডিপোজিটের জন্যে ৮-১২ % স্কিমভেদে দেয়া হয়। অর্থাৎ মুলধনের মুল্য গড়ে ১০%। নিন্মলিখিত প্রকল্পগুলোতে ঋন দেয় গ্রামীন ব্যান্ক:

    ১) বাড়ীর জন্য ঋণ: - ৭% সুদ (মুলধনের গড় মুল্য থেকে কম মুল্য)
    ২) শিক্ষা ঋণ: ছাত্রাবস্থায় কোন সুদ নেই। এর পরে ৫% সুদ (মুলধনের গড় মুল্য থেকে অনেক কম মুল্য)
    ৩) ভিক্ষুক লোন: সুদমুক্ত
    ৪) সাধারন ঋণ: সর্বাধিক সুদের হার ২০% (মুলধনের সংগ্রহের গড় মুল্য থেকে ১০% বেশী)

    ড: ইউনুসের কথা হচ্ছে এই ১০% বেশী মুল্য পূর্বের তিনটি ঋণের খরচকে কাভার করে। এবং এই সুদের হার নির্ধারন করে ব্যন্কের মালিক - এর ঋনগ্রহিতা মহিলারা একটি বোর্ডের মাধ্যমে। ঋণের সুদের হার কমালে সন্চয়ের উপর তারা কম আয় পাবে - তাই তারা ২০% সুদেই সন্তুষ্ট।

    গ্রামীন ব্যন্কের কিছু কর্মচারীর ভয়ভীতি প্রদর্শন ও দুর্নিতীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বললেন হয়ত বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটতে পারে আর এটি যেহেতু সমাজেরই অংশ তাই সামাজিক দুর্নীতির কিছু প্রভাব হয়ত কোথাও পড়তে পারে। গ্রামীন ব্যান্ক চেষ্টা করছে ঋণ সংগ্রহন ও বিতরন পদ্ধতি আরও আধুনিক করতে।

    বার্লিন সিটি কাউন্সিল মেম্বার পশ্চিম বঙের ভাদুরী সাহেবের প্রশ্ন ছিল গ্রামীন ব্যান্ক রাজনীতিবিদ বা ধর্মীয় সংস্থা থেকে কিরকম প্রতিরোধ বা সাহায্য পেয়ে এসেছে। ড: ইউনুস বললেন যে নতুন কিছু ধারনা হলে সহজে লোকে মানতে চায়না। গ্রামীন ব্যান্কের বিরুদ্ধেও ভয়ভীতি ও অসহযোগ হয়েছে। আমি কখনও অভিহিত হয়েছি পুঁজিবাদের দালাল - সিআইয়ের এজেন্ট হিসাবে। আবার কখনও কমিউনিষ্ট বা ধর্মের বিরুদ্ধে (কারন নারীদের প্রাধিকার দিয়েছি)। কিন্তু গ্রামীন ব্যান্ক সবসময়েই বিতর্কের উর্দ্ধে থাকতে চেয়েছে। কোন গ্রামে অনভিপ্রত হলে গ্রামীন ব্যন্ক সেখান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু সাধারন মানুষই সমস্যার সমাধান করে তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়েছে। কারন মানুষের প্রয়োজনেই গ্রামীন ব্যান্ক- নিজের প্রয়োজনে নয়।

    একজন প্রশ্নকর্তা প্রসঙক্রমে জানালেন গত ৮ই মে হামবুর্গে কোন জার্মান সংস্থা আয়োজিত তার সংবর্ধনার টিকিট ছিল ৮০০ ইউরো। তাই তখন তারা ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। আজ সুযোগটি পেয়েছেন।

    বন থেকে ব্লগার মাসকাওয়াথ আহসান এসেছিলেন ডয়েশে ভেলের জন্য ড: ইউনুসের সাক্ষাৎকার নিতে। বেশি কথা হয়নি- যাবার সময় বলে গেলেন হাজার দুয়ারীর জন্য একটি লেখা দিতে।

    এই হল আজকে আমার ইউনুস দর্শন।

    Wednesday, April 25, 2007

    আজকের সেরা মন্তব্য

    "আমি এখন মানবাধিকার নয় নিজের অধিকার নিয়ে ভাবছি। "

    - গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা (সুত্র)

    Wednesday, April 04, 2007

    চলেশ হোক একটি বিপ্লবের নাম


    "মৃত্যুর আগে আমরা কখনও শুনিনি তাঁর নাম
    কে এই চলেশ রিছিল? আপনি কে হে?
    আপনাকে হত্যা করেছে যারা, ধরিত্রী কতটা স্নেহে
    তাদের পক্ষে দাড়ায়, তাই এখন দেখার বিষয়।
    মানুষের হাতে নির্বিচার হত্যার অধিকার,
    জানি মৃত্যু আনিবে নির্মম দেবতার।"

    -চলেশ রিছিলের জন্যে এলিজি - নির্মলেন্দু গুণ।



    ঘটনার শুরু ২০০০ সালে। টাঙাইলের মধুপুরে বাংলাদেশ সরকার যখন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যান্ক ও বিশ্বব্যান্কের অর্থে ইকোপার্ক প্রজেক্ট করার সিদ্ধান্ত নিল তখন সেখানকার আদিবাসীরা এর প্রতিবাদ শুরু করল। সাংবাদিক ব্লগার তাসনিম খলিল লিখছেন:

    "বাংলাদেশের অন্যতম চিড়িয়াখানায় আপনাদের স্বাগতম। ৪৭৮ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপি শালবনে ডিসপ্লেতে আছে ২৫০০০ কোচ ও মান্ডি আদিবাসি। একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে বলা যায় এটি একটি উন্মুক্ত ল্যাবরেটরি যেখানে আদিবাসিরা গিনিপিগ হিসাবে অসহনীয়ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।তাদের এ পরিস্থিতির জন্যে দায়ী বনবিভাগ, মালিটন্যাশনাল কোম্পানি, চার্চ, বাঙালী সেটেলার এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী।" -বিস্তারিত পড়ুন

    ইকো পার্কটির প্লান হচ্ছে এরকম - দশটি পিকনিক স্পট হবে জঙলের মাঝখানে এবং ছয়টি ব্যারাক ও বিশাল জায়গা জুড়ে এক দেয়াল। তার মানে প্রচুর গাছ কাটার প্রয়োজন এবং অসৎ বনবিভাগের অফিসারদের জন্যে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হয় না। বনবিভাগের লোকজন বহু আগে থেকেই গাছ পাচার করে আসছিল। কিন্তু আদিবাসীরা বাধ সাধায় তাদের উপর মিথ্যা ৫০০০টি কেস ঝুলছে। তাদের লক্ষ্য করে চোরাই গুলি চালিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে।

    "তারা আমেরিকা, বিলেত ও ইউরোপ থেকে এসেছে ও আমাদের ধর্ম নিয়ে গেছে।" এভাবেই বললেন জনিক নকরেক খ্রীষ্টিয় চার্চের এখানকার কর্মকান্ড সম্পর্কে। এখন মান্ডি ও কোচ আদিবাসিদের ৮৫% খ্রীস্টান, বাপ দাদার মান্ডি ধর্ম বিক্রি হয়ে গেছে জরুরী সাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার বিনিময়ে। প্রগতি তো একেই বলা যায় তাই না?

    সেখানেই আছে রসুলপুর ফায়ারিং রেনজ, বিমান বাহিনীর একটি স্থাপনা, ৫০০ একর শালবন ও ২টি মান্ডি গ্রাম উজাড় করে প্রাপ্ত।

    কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে যায় চলেশের হত্যাকান্ড। চলেশ রিছিল ছিলেন কলামিস্ট, সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ আদিবাসি সমিতির সাধারন সম্পাদক। আদিবাসীরা যে কোন সমস্যায় তার কাছে ছুটে আসতেন। তার কলম কোনদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে থেমে থাকেনি। সেটাইকি ছিল তার অপরাধ?

    ২৪এ মার্চ জয়েন্ট ফোর্সেসের হাতে গ্রেফতার হয় চলেশ। তাকে জানালার গ্রীলে ঝুলিয়ে ৯ জন প্রতিরক্ষা বাহীনির লোক টর্চার করে। নির্যাতনের কিছু বিবরন দেই: তার চোখদুটো উপরে ফেলা হয়েছে, ডান হাতের তিন আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, অন্ডকোষ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে, সারাগায়ে প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন (ছবি দ্রষ্টব্য)। ক্রসফায়ারে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ ঘোষনা দেয়।

    এশিয়ান সেন্টার ফর হিউমান রাইটস চলেশের ব্যাপারটি সার্ক মহামম্মেলনে উত্থাপন করেছে। এখানে বিস্তারিত অভিযোগপত্রটি। এ ব্যাপারে আরও সোচ্চার হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা (দৃষ্টিপাত দ্রস্টব্য) । ডেইলি স্টারের স্টার উইক এন্ডে আজ এর উপর ফিচার হয়েছে।

    ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ব্যাপারে বহু বলা হয়েছে। কিন্তু এটিকে এখনও অজানা কারনে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিচ্ছে সবাই। চলেশ হোক আমাদের গা-ছাড়া ভাবের বিরুদ্ধে একটি আঘাত । চলেশ নামটি গড়ে উঠুক একটি বিপ্লবে যাতে আর কোন মায়ের সন্তান বিনা বিচারে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনে মারা না যায়।

    আমি এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা করছি এবং সরকারের কাছে এর বিচার দাবী করছি।

    Monday, April 02, 2007

    আগ্নেয়াস্ত্র

    পুলিশ স্টেশনে ভিড়, আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরের
    সন্দিগ্ধ সৈনিক। সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষের
    শটগান, রাইফেল, পিস্তল, কার্তুজ যেন দরগার
    স্বীকৃত মানৎ। টেবিলে ফুলের মত মস্তানের হাত।
    আমি শুধু সামরিক আদেশ অমান্য করে হয়ে গেছি
    কোমল বিদ্রোহী-প্রকাশ্যে ফিরছি ঘরে, অথচ আমার সঙে
    হৃদয়ের মতো মারাত্মক একটি অগ্নেয়াস্ত্র, আমি জমা দিই নি।

    (নির্মলেন্দু গুণ)

    Friday, March 30, 2007

    হিজবুত তাহরীর কি পরবর্তী ঘাতক?

    জেএমবির ৬ কর্তাকে ফাসিতে চড়ানো হলো বেশ চুপিসারে। তারপর আজকে থেকে দেশব্যাপি সতর্কাবস্থা, যদি কোন জঙী প্রতিশোধ নিতে চায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে আরেক আশনকার জন্ম দিয়েছে। আজ গ্রেফতার হলো হিজবুত তাহিরের ২২ জন সদস্য। টিভি ফুটেজে দেখা গেল টিন এজার কিছু ছেলে জেলের মধ্যে বসে হাসাহাসি করছে। তারা দেখতে নাগরিক, আমার আপনার ছোট ভাইটির মতই। তাদের কাছে পাওয়া গেল ইরাক যুদ্ধের ভিডিও, বইপত্রাদি এবং পোস্টার যাতে বলা আছে:

    "আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আমেরিকা ও ভারত প্রীতির কারনেই দেশের আজ এই অবস্থা।" এক পুলিশ অফিসার বলল এদের মতাদর্শের সাথে জেএমবির কিছু মিল আছে।

    হিজবুত তাহরির আন্তর্জাতিক একটি ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশে কয়েকবছর আগে এটি চালু হয় এবং এর মধ্যেই নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলের মেধাবী ছাত্রদের উপর তারা প্রভাব বিসতার করতে সক্ষম হয় (উৎস) । তাদের ওয়েবসাইটটি দেখুন। বাংলাদেশের যে কোন বড় পলিটিকাল পার্টির ওয়েবসাইট থেকে এটি সমৃদ্ধ এবং আপডেটেড।

    কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। এটির 'ইসলামি ইসতেহার' অনুযায়ী গত ১৬ বছরের সরকারকে তারা ব্যর্থ গনতন্ত্র হিসাবে অভিহিত করে বাংলাদেশে শরিয়া আইন কায়েমের মাধ্যমে একটি খলিফা রাজ্য (ক্যালিফেট) প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা বিদেশীদের কোন অংশীদারিত্ব বা বিনিয়োগ চায়না এবং যে কোন মুল্যে তা রুখতে প্রস্তুত। তাদের চীফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন তারা বাংলাদেশে ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে।

    ুকছুদিন আগে হিজবুত তাহরিরের চার সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে প্রচারনা চালানোর জন্যে জরুরী আইনে গ্রেফতার হয়েছে

    হিজবুত তাহরীর পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যনড। জার্মানীতে সহিংস প্রচারনার জন্যে তারা ২০০৩ সালে ব্যন হয়।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদের ইসতেহার এবং কর্মকান্ড বাংলাদেশে তাদের ব্যন হওয়ার জন্যে যথেস্ট নয়কি? তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বরুপ জানতে ইচ্ছে করছে।

    Thursday, March 15, 2007

    এয়ারপোর্টে বসবাস

    আপনাদের "দি টার্মিনাল" ছবিটির কথা মনে আছে? টম হ্যানকস নিউইয়র্কের এক এয়ারপোর্টে বছর খানেকের জন্য আটকে যায় কারন সে ফ্লাইটে ওঠার পর তার দেশে কু হওয়ার পর আমেরিকা তার দেশকে রেকগনাইজ করা থেকে বিরত থাকে। তাকে এক বছর এয়ারপোর্টে বসবাস করতে হয় যতদিন পর্যন্ত না তার দেশে যুদ্ধ থামে। এই ছবির গল্প কিন্তু নেয়া হয়েছিল একটি সত্য ঘটনা থেকে। মেহরান করিম নাসিরি ১৯৮৮ সাল থেকে প্যারিসের দ্যা গল এয়ারপোর্টে বসবাস করে আসছে কারন পাসপোর্ট এবং ভিসা না থাকায় সে ফ্রানসে ঢুকতে পারছে না বা অন্য কোন দেশে যেতে পারছে না।

    সম্প্রতি এরুপ আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। ইরানীয়ান বিপ্লবী জাহরা কামালফার জেল থেকে তার দুই সন্তানের সাথে দেখা করার জন্যে ছাড়া পেয়ে জাল বুলগেরিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় ভাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তার প্লেনের রাশিয়া এবং জার্মানীতে বিরতি ছিল। জার্মানী ইমিগ্রেশন অথরিটি জাল পাসপোর্টের ব্যাপারটি ধরে ফেলে এবং তার পূর্ববর্তী আরোহনস্থল মস্কোতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। রাশিয়ান অথরিটি তাদের একটি রিফিউজি হোস্টেলে রাখে যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন তারা তাদের ন'মাস আগে মস্কো এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দেয়। রাশিয়ান ভিসা না থাকায় তারা শহরে ঢুকতে পারে না। জাহরা সন্তানদের নিয়ে এয়ারপোর্টেই খায় দায় ঘুমায়। রাশিয়ান এয়ারলাইনসের দয়ালু কর্মীরা তাদের প্লেনের খাবার এনে দেয়। বিস্তারিত এখানে

    তার ভাই ও কানাডার অন্যান্য ইরানীয় অধিবাসীদের সহায়তায় অবশেষে কানাডা রাজী হয়েছে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে। নাসিরি এখন কোথায় সে খবর কেউ জানে না।

    Wednesday, March 14, 2007

    উত্তীর্ন তিরিশ

    শয্যাত্যাগ, প্রাত্যরাশ, বাস, ছ'ঘন্টার কাজ, আড্ডা,
    খাদ্য, প্রেম, ঘুম, জাগরণ; সোমবার এবং মঙলবার
    বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি আর রবিবার একই
    বৃত্তে আবর্তিত আর আকাশ তো মস্ত একটা গর্ত
    সেখানে ঢুকবো নেংটি ইঁদুরের মতো। থরথর
    হৃদয়ে প্রতিক্ষা করি, স্বপ্ন দেখি আগামী কালের
    সারাক্ষন, আনেক আগামীকল্য উজিয়ে দেখেছি
    তবু থাকে আরেক আগামী কাল। সহসা আয়নায়
    নিজের ছায়াকে দেখি একদিন - উত্তীর্ন তিরিশ।

    (শামসুর রাহমান)

    ইটালীর সৌন্দর্য

    "তুমি পাহাড় ভালবাস না সমুদ্র?" আমি বলি দুটোই। ইচ্ছে ছিল পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর জায়গা আমালফী কোস্ট যাবার। হলনা কারন রোম থেকে তা বেশ দুর। হোষ্ট বলল সবসময় টুরিষ্ট স্পটেই সব সৌন্দর্য জমা আছে এমন ভাবা ঠিক নয়। অতএব সপে দিলাম ভবিষ্যত আমার এক্সপিরিয়েনসড হোষ্টের হাতেই।

    আমরা ছুটলাম রোম থেকে থেকে উত্তর দিকে উপকুলীয় রাস্তা ধরে মন্তে আর্জেন্টারিওর দিকে। সংকীর্ন পিচ ঢালা পথে গাড়ী আস্তে চলছিল যা শাপে বর হয়ে দেখা দিল। আঁকাবাকা পথ দিয়ে সমুদ্র দর্শন করতে করতে যাওয়া আর সাথে গজল শ্রবন। কেমন মিলছিল না। চটুল কোন গান জমত ভাল কিন্তু রোমে এসে.... ।

    আমরা চলে আসলাম মন্তে আজেন্তারিওর দুটি গ্রামের একটি পোর্ট স্টেফানোতে (প্রথম ছবি দ্রষ্টব্য)। এটি আসলে একটি ছোট পোর্ট। এর সৌন্দর্য আসলে আমার ক্যামেরা ঠিক ধরতে পারেনি। লোকাল পিজ্জা খেলাম, অপুর্ব স্বাদ। এরপর পেচানো রাস্তা ধরে পাহাড়ের ওপর যাত্রা। ক্লিফ এবং সমুদ্র উভয়ের সমাহারে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য পাওয়া গেল। জানলাম আমালফী কোষ্ট এমনই তবে ২৫ মাইল বিস্তৃত। পেচানো রাস্তা পাহাড়ের উপরেই শেষ হয়ে গেল। এরপর ব্যক্তিগত রাস্তা, নিশ্চয়ই বাসিন্দা বড়ই ভাগ্যবান। ফেরার পথে আবার একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি।

    রোমের কাছাকাছি এসে বিশাল জ্যামে পড়লাম। এই দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে ইটালীর খুব মিল। মন্তে আর্জেন্টারিওর সৌন্দর্য মনে গেঁথে ছিল তাই স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সময় কেটে গেল।

    Friday, March 02, 2007

    বাঙালীর চোখে ইটালী

    ঘুরে এলাম সাত পাহাড়ের শহর রোম ও স্বপ্নের শহর ভেনিস। ভেবেছিলাম বিস্তারিত ভ্রমন বৃত্মান্ত লিখব। কিন্তু সেটি তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্যে। খুব লিখতে ইচ্ছে করছে ইটালীর সাথে বাংলাদেশের মিল এবং ইটালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের কথা।

    বাংলাদেশের কথা মনে পরে গেল রোম এর একটি ঘেটো দিয়ে ঢুকতেই। বিলডিংগুলো রংজ্বলা, বারান্দায় কাপড় শুকোতে দেয়া, রাস্তার পাশে লোহার ব্যারিকেড, গাড়ীর আইন না মানা, সবকিছুতেই ঢাকার গন্ধ পাচ্ছিলাম। আর হাইওয়ে থেকে নেমে একটি ট্রাফিক সিগন্যালে এসেই দেজাভূ! রাস্তায় দুজন বাংলাদেশী খবরের কাগজ বিলি করছে। এরা ইটালীতে অবস্থানরত ১ লাখ বাংলাদেশীরই অংশবিশেষ। বলা হয় এদের মধ্যে অধিকাংশই এসছে বৃহত্তর ফরিদপুর ও নোয়াখালী থেকে এবং অনেক পথ পায়ে হেটে, পাকিসতান-ইরান-তুরস্ক হয়ে। বিদেশে এসে এখন অনেক লোকের ভীড়ে দেশী ভাইদের আরও ভালভাবে চিনতে পারি।

    ইটালীতে ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার মাত্র। কিন্তু ১৯৯০ সালের মার্ত্তেল্লী আইনের মাধ্যমে ইটালী সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বৈধ ঘোষনার সুযোগ দিলে ইটালী খুব আকর্ষনীয় যায়গা হয়ে পরে। সাধারনভাবে টুরিষ্ট হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ইটালী আসা খুব কঠিন। ঢাকায় ওদের এমব্যাসিতে ফোন করে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়, যেখানে ফোনটি অধিকাংশ সময়েই কেউই ধরেনা। সম্পদের নিক্তিতে মানুষকে মাপা হয় তাই সাধারন গ্রামের লোকের ভিসা পাওয়া খুব কঠিন। বেশীর ভাগই ইটালীতে এসেছে পরিবারের কারো বদৌলতে বা দালাল ধরে অন্য দেশ ঘুরে।

    ত্রেভি ফাউন্টেন দেখতে গেলাম রাত দশটার পরে। চিপা গলি দিয়ে হাটতে হাটতে শুনি এক কোনা থেকে বাংলা লোকসঙীত ভেসে আসছে। কাছে গিয়ে দেখি দেয়ালে হেলান দিয়ে দেশী ভাই। রোদে পোড়া চেহারা, হাতে গোলাপফুল, বিক্রির জন্যে। আরেকটু সামনে হঠাৎ হইচই। পুলিশ একদল হকারকে দৌড়াচ্ছে। ওরা দৌড়ে আমাদের দিকে আসল। আমাদের সাথে শাড়ী পরা মেয়ে, ছোট বাচ্চা। জিগ্গাসু চোখে আমাদেরকে পর্যবেক্ষন। অস্বস্তি লাগছিল তাই সরে এলাম। ট্রেভি ফাউন্টেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টুরিস্টে গিজগিজ করছে। ভীড়ের মধ্যে যুবক যুবতী জড়িয়ে বসে ঝর্নার শব্দ শুনছে ও নিজস্ব ভুবনে থাকার চেষ্টা করছে। যুবতীদের অনেকের হাতে তাজা গোলাপ। বিক্রি ভাল হওয়ার কথা। হঠাৎ দেখি পুলিশের দল সরে গেল এবং গুটি গুটি পায়ে বাঙালী ভাইদের পুন:প্রবেশ। ফুলসহ হাত পেছনে রাখা। আবার ব্যবসা হবে। চলে আসলাম ওখান থেকে তাড়াতাড়ি।

    ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটারস স্কোয়ার এবং বিভিন্ন মোড়ে গাড়ী থামিয়ে ছাতা, ব্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন পশরা বিক্রি করতে দেখলাম আরো কিছু দেশী ভাইকে। সারাদিন রোদে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে ফেরী করা নিশ্চয়ই খুব কষ্টের। এই লোকেরা হয়ত একেকজন আট দশ লাখ টাকা খরচ করে এসেছে। তাদের অনেক কষ্ট করেই দেনা শোধ করতে হবে, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কি কঠিন জীবন। পাশাপাশি এক আলবানিজ বুড়োকে দেখলাম ভিক্ষা করতে। জীবনের কি কন্ট্রাস্ট।

    ভেনিসের একটি ছোট গ্রাম মেস্ট্রেতে প্রচুর বাঙালীর দেখা পেলাম। রাস্তায় সারি সারি বাংলাদেশী দোকান, বাংলা হরফে লেখা দোকানের নাম। ইউরোপে বিলেতের পর সবচেয়ে বেশী দেশীদের বসবাস ইটালীতে। ইটালীর পুলিশকে বলা হয় ইউরোপের সবচেয়ে ভদ্র। ওরা ক্রাইম না করলে সাধারনত অবৈধদের ধরার কষ্ট করতে চায়না। তাদের গাছাড়া ভাব অনেক অবৈধ বাঙালীকে থাকার ও কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আর ৫-৬ বছর কাটাতে পারলে সুযোগ হয়ে যাচ্ছে বৈধ হয়ে যাওয়ার।

    ভেনিসে যে আত্মীয়র বাড়ীতে উঠলাম সে রেস্টুরেন্টে কাজ করে শুনে প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলাম (আমরা জানতাম অন্য চাকরি করে)। কিন্তু তার কাছেই শুনেছি ১৫-১৮ ঘন্টা একাধিক রেস্টুরেন্টে কাজ করে ৪০০০ ইউরো মাসে আয় করে সে যেখানে একজন সরকারী ইনজিনিয়ার ২০০০ ইউরোর বেশী পায় না। শিক্ষিত তিনি, ৬-৭টি ভাষা জানেন, দশ বছর ধরে আছেন এবং বাড়ী গাড়ী করেছেন। তাদের জীবন যাত্রার মানের সাথে সাধারনের চলা মুশকিল।

    ইচ্ছে করেই এদের কোন ছবি তুলিনি। এদের কষ্টের কাছে নিজের জীবন খুব অলস মনে হলো। তবে অচিরেই এরা আরও প্রতিষ্ঠিত হবে, তাদের কষ্টের স্বীকৃতি পাবে এবং মাথা তুলে বিশ্বে তাদের অবস্থান জানাবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে কষ্টের বিকল্প নেই। তাদেরকে লাল সালাম।