Wednesday, January 28, 2009

বদলে গেছে ঢাকা

কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকা: ছবি: বসুন্ধরা শপিং মল থেকে তোলা। 
কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকা: ছবি: বসুন্ধরা শপিং মল থেকে তোলা।

দেশে এসেছি বেশ কদিন হল। দুই বছর পর আসছি বলে কেমন একটা হোম সিকনেস কাজ করছিল। বিমান বন্দর থেকে বের হয়েই কেমন একটি ঘোরের মধ্যে পড়ে গেছি। সেই চেনা ভীড়, সেই মানুষের ঢল। কিন্তু কোথাও যেন কিছু মিলছে না। প্রথমত: ট্রাফিক জ্যাম আগের মত থাকলেও বাতাস অনেক বিশুদ্ধ। কারন শহরের ৭০% গাড়ি এখন গ্যাসে চলে। পেট্রোল পাম্পগুলোর চেহারাই বদলে গেছে! অনেক চেনা স্থাপনাগুলোই এখন গ্যাস পাম্প।

তাই বলে খুশি হবার কিছু নেই। রাস্তার যানবাহন চলাচলে আগের যে কোন সময়ের থেকে বেশী অরাজকতা। কে কার আগে যাবে তার প্রতিযোগীতা চলছে। রাস্তায় নতুন ট্রাফিক লাইট দেখে ভাল লাগল কিন্তু খারাপ লাগল কেউ সেগুলো মানে না বলে। কিছু রাস্তায় রিক্সা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে উল্টোপথে রিক্সাওয়ালারা দ্রুত চলে যায়। গলির মোড়ে সিকিউরিটি গার্ড (ট্রাফিক পুলিশ মনে হল না) তাদের থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাদের দেখে মনে হলো যে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে। 'বাঁচলে গাজী' বলে রিক্সাওয়ালারা মোড়ে তেড়ে যায়। ক্রসিংয়ে একটা গাড়ী রিক্সার সাথে লাগতে লাগতেও অ্যাকশন মুভির মত কেমন পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রিক্সাযাত্রীর কি অবস্থা হলো দেখার কারো সময় নেই।
আসলে এটিই ব্যাপার সবাই কেমন বেপরোয়া হয়ে গেছে। সবাই বিপদজনকভাবেই বাঁচার চেষ্টা করছে।

এর কারনটি কি মুদ্রাস্ফীতি? দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি? আনুপাতিক হারে আয় না বাড়া? অথবা আমাদের সামাজিক জীবনেও কি পরিবর্তন আসছে? আমরাও কি খুবই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি?

বাড়ীর পাশের সেই চেনা গলিগুলোকে মেলাতে পারছি না। ছোট দোতলা বাড়ীগুলো হয় ছয়তলা এপার্টমেন্টে রুপান্তরিত হয়ে গেছে নাহলে নির্মীয়মান কংক্রীটের স্তুপ বিশ্রীভাবে মুখ ভেংচে রয়েছে। নি:শ্বাস ফেলার অভাব বড়। পাড়ার কাঠাল গাছ, বড়ই গাছগুলো সব অদৃশ্য। চারিদিকে সব নতুন মুখের ভীড়ে নিজেকেই খুব উড়ে এসে জুড়ে বসা মনে হলো।
যে বন্ধুটির সাথে দিনে একবার দেখা না হলে থাকা যেত না তার সাথে দেখা হল আসার বেশ কয়েকদিন পরে। সবাই ব্যস্ত; জীবিকা, পরিবার, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে। এমন ঢাকাকে আমি আর চিনতে পারিনা। ঢাকা বদলে গেছে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, January 10, 2009

আমার এক জোড়া জুতা দরকার

শেয়ার করুন:                   Facebook


এই সেই জগৎ বিখ্যাত মডেলের জুতা যার নতুন নাম দেয়া হয়েছে "বাই বাই বুশ"। জিন্জিরা পার্টি কেউ আছেন? তাড়াতাড়ি এই মডেল দেশে বাইর করেন। দেশী পণ্য হলে (সবধরনের) ব্যবহার করে শান্তি।

সূত্র: (ডেয়ার স্পিগেল )

এইবার কোকোকে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস বাংলাদেশের কয়েক রাজনীতিবিদ ও সরকারী আমলাকে দেয়া ৩ মিলিয়ন ডলার ঘুষের টাকা বাজেয়াপ্ত করার জন্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমেরিকান সরকারের প্রেস রিলিজ অনুযায়ী জার্মান সিমেন্স আক্টিয়েন গেজেলশাফ্ট এবং চীনের হারবার ইন্জিনীয়ারিং কোম্পানীকে কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেয়ার জন্যে এই টাকার অধিকাংশ বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র কোকোকে দেয়া হয়। এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ব্রান্চ এই অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পায়।

"Siemens Aktiengesellschaft (Siemens AG), a German corporation, and three of its subsidiaries pleaded guilty on Dec. 15, 2008, to violations of and charges related to the Foreign Corrupt Practices Act (FCPA). Specifically, Siemens Bangladesh admitted that from May 2001 to August 2006, it caused corrupt payments of at least $5,319,839 to be made through purported business consultants to various Bangladeshi officials in exchange for favorable treatment during the bidding process on a mobile telephone project. At least one payment to each of these purported consultants was paid from a U.S. bank account. "

দেখা যাক এখন আর বাকী ২.৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারের হদিশ মেলে কি না এবং সেগুলো কার পেটে গিয়েছে।

বিস্তারিত ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ওয়েবসাইট

এ নিয়ে আরও সংবাদ:

* US Seeks $3 Million In Accounts Used To Bribe Bangladesh Officials

* US moves to seize Singapore funds linked to bribery scandal

প্রথম প্রকাশ: আমার ব্লগ

Monday, January 05, 2009

ভোটের সময় নিয়ে রঙ্গ

বিএনপি সম্প্রতি অভিযোগ করেছে যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশী ভোট পড়েছে তাহলে প্রতি ভোটারের মাত্র ৫৫ সেকেন্ড হাতে থাকে ভোট দেয়ার জন্যে। তাই ভোটে কারচুপি হয়েছে।

ব্লগার সাদা কালো হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছেন:

১) ৩৫,০০০ পোলিং স্টেশন আছে বাংলাদেশে
২) ৮.১ কোটি ভোটার, যার ৮৭% মানে প্রায় ৭ কোটি ভোটার ভোট দিয়েছেন
৩) পোলিং স্টেশন ৮ ঘণ্টা মানে ৪৮০ মিনিট খোলা ছিল
৪) নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ১৭৭, ৭০৭টি পোলিং বুথ ছিল
৫) প্রতি পোলিং বুথে গড়পরতা ভোট পড়েছে ৭ কোটি/১৭৭১০১ = ৩৯৫ ভোট। কাজেই প্রতিটি ভোটে সময় লেগেছে (৪৮০/৬০)/৩৯৫ = ৭২ সেকেন্ড
উনি হিসেব করে দেখিয়েছেন যে ২০০১ সালে গড়পড়তা প্রতিটি ভোটে সময় লেগেছে ৭৬ সেকেন্ড। গতবারের চেয়ে এবারে চার সেকেন্ড কম লেগেছে। এর কারণ হচ্ছে ছবি সহ ইউনিক নম্বর যুক্ত ন্যাশনাল আইডি যার মাধ্যমে পরিচয় নির্ধারণে কম সময় লেগেছে (বাবার নাম ঠিকানা ইত্যাদি জিজ্ঞেস না করে)।

কাজেই বিএনপির যুক্তি ধোপে টিকছে না কারণ এই সময়কে প্রশ্নবিদ্ধ করলে ২০০১ সালের ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। যেমন তাদের নির্বাচনে কারচুপী হয়েছে এই মন্তব্য প্রায় সব আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাই নাকচ করে দিয়েছেন। দেলোয়ার হোসেনকে দেখলাম বলতে যে এটি বিএনপিকে হটানোর মহা ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এর সাথে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউএন ইত্যাদি সবাই যুক্ত আছে। কোন প্রমাণ ছাড়া কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি তার এরকম ঢালাও অভিযোগে অবাক হলাম।

রাজনীতিবিদের মুখের কোন ট্যাক্স লাগে না। যা ইচ্ছা তাই বলে দিলেই হয়। এই সংস্কৃতি কবে বদলাবে? কবে জনগণ জবাবদিহীতা চাইবে প্রতিটি কর্মকান্ডের?

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, January 03, 2009

গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, আমরা কি চুপ করে থাকব?

গত ডিসেম্বরে সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সাথে ইজরায়েলের ৬ মাস ব্যাপী যুদ্ধ বিরতি শেষ হবার পরে গত ২৭শে ডিসেম্বর থেকে ইজরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স গাজা স্ট্রীপে হামাস অধিকৃত স্থান গুলোতে বোমা ফেলে যাচ্ছে। এতে হামাসের সন্ত্রাসীরা নিহত হবার পাশাপাশি প্রায় ৪০০ লোকের বেশী মারা গেছেন যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি শিশু। এদের দুর্দশা অবর্ণনীয়। ইজরায়েলের অবরোধের ফলে এমনিতেই এখানকার জনগণ খুব কষ্টে ছিল। তারপর মৃত্যুদুতের মত ইজরায়েলের এই বোমা আক্রমণ। এই দিনটিকে ১৯৬৭ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পর সবচেয়ে রক্তাক্ত মনে করা হয় । বোমা হামলা এখনও চলছে।

তবে এই অবস্থার পেছনে হামাস সংগঠনের কার্যকলাপও অনেকাংশে দায়ী। গত আট বছরে তারা ৪ হাজারেরও বেশী করে রকেট আর মর্টার ইজরায়েলের বেসামরিক এলাকায় ফেলেছে।



তাদের এইসব কর্মকান্ডের ফলে ইজরায়েল এখন বোঝাতে চাইছে যে তাদের জনগণ বিপন্ন তাই হামাসকে থামানোই তাদের লক্ষ্য। প্যালেস্টাইনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস এবং তার দল ফাতাহর সাথে হামাসের দ্বন্দ্ব থাকায় তারাও এখন নিশ্চুপ রয়েছে। গত বছর আব্বাস হামাসের সশস্ত্র শাখাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ওদিকে মিশরও এবারে চুপ কারন হামাসের সাথে তাদেরও হয়ত কোন বনিবনা হচ্ছে না। অধিকাংশ আরব মোড়ল দেশ (যেমন সৌদি আরব) এবং পশ্চিমা দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র্র, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি চুপ এইসব নির্বিচারে হত্যার ব্যাপারে।

তবে এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী জনমনে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আজ দেখলাম বৃটেনের বাংলা টিভিতে ফান্ড রেইজিং চলছে, লোকজন দেদারসে সাহায্য করে যাচ্ছে। পপ গায়িকা এনি লেনক্স প্যালেস্টাইনীদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমবে কি?

ইজরায়েলের বোমা হামলার প্রতিবাদে বেসামরিক লোকের উপর পাল্টা বোমা হামলার স্ট্রাটেজী কোনক্রমেই ধোপে টিকে না তাই এ নিয়ে প্রচার মাধ্যমে নানা রকম গল্প ফাঁদা হচ্ছে। তারা বলছে যে প্যালেস্টাইনিরা বাড়িয়ে বলছে। আর এদিকে আরব প্রচার মাধ্যমগুলোও ইজরায়েলের লোকদের শয়তানের প্রতিমুর্তি বানাতে ব্যস্ত। আরব অঞ্চলের কজন হামাসের বোমা হামলার প্রতিবাদ করেছে? এছাড়া ইজরায়েলে সামনে নির্বাচন। সরকার এই স্টান্ট দেখিয়ে ভোট জয়ের চেষ্টা করছে এবং সাধারণ ইজরায়েলীদের বোকা বানাচ্ছে। সবখানেই প্রপাগান্ডা, পক্ষপাতিত্ব ছাড়া কোন রিপোর্টই পাবেন না।

আপনাদের তাই অনুরোধ করব গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কাভারেজ পাতার পোস্টগুলো পড়তে যেখানে ফিলিস্তিনি ও ইজরায়েলী ব্লগাররা এ নিয়ে তাদের প্রত্যক্ষ্যদর্শী রিপোর্ট ও দৃষ্টিভঙ্গী জানাচ্ছেন। গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় বেশ কিছু আর্টিকেল বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে -সেগুলোও পড়তে পারেন।

এই ইজরায়েলী যুবকের কথাই ধরুন যে তার সরকারের অভিযানের সমালোচনা করে বলছে আমি যদি আজ একজন ফিলিস্তিনি হতাম তাহলে আমি ইজরায়েলীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতাম, এমন কি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েও। কাজেই ইজরায়েলের বর্তমান অভিযান আরও কিছু সুইসাইড বোম্বার আর সন্ত্রাসীদের সৃষ্টি করবে।

আমাদের সত্যগুলো জানা দরকার এবং চিহ্নিত করা দরকার কারা ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ঐ অঞ্চলে শান্তির বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। একে অপরের প্রতি ঢালাও বিষোদগার না ছড়িয়ে আমাদের সত্যকে তুলে ধরে এই রকমের ঘটনা প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়া উচিৎ।

আরও কিছু ব্লগের লিন্ক রইল এখানে:
এন্থনী লোয়েনস্টাইন
ফিলিস্তিনি ব্লগার হাইতাম সাব্বাহ
দ্যা অবজার্ভার্স

[উপরের গ্রাফ এই রিপোর্ট] থেকে গৃহীত

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন