Monday, February 19, 2007

জুটি

ব্যপারটা শুরু হয় এই দিয়ে। ভার্সিটি চত্বরে ফ্রেন্ডলি ক্রিকেট ম্যাচ, দর্শক হিসেবে অগনিত 'ফ্রেন্ড'। তারমধ্যে একজন একটু আলাদা। দেখা হলেই মুচকি হাসে। গালে কি টোল পরে? ভাবতে ভাবতে বল গলে বাউন্ডারি। "কোন দিকে ফিলডিং মারো?" টিমের ভৎসর্নার কোন জবাব দিতে পারে না বালক।

খেলার পরে 'ভয়নকর স্বেচ্ছাসেবী' বন্ধুর আবির্ভাব। "হুম কতদিন ধরে? তলে তলে এত কিছু?" বায়বীয় রঙীন ফানুস গড়ে ওঠে। বালকের সর্বনাশ হয়। এরপরের দিনগুলিতে চলে গুরুশিষ্যের সেশন, কি করিলে কি হইবে তার অগনিত অন্ক কষা। প্রেসকিপশন মোতাবেক কম্পিত গলায় বালক ফোন করে "হ্যালো কেমন আছ?"। ঘুম জড়ানো কনঠে উত্তর আসে "ও আপনি? তারপর কি মনে করে?" বালক ঘাবড়ে যায়, শেখানো বুলি মনে আসে না। কিছু একটা বলে রেখে দেয়।

এরপর ব্যাপারটি বন্ধুমহলে উত্থাপিত হয়। এক সুপুরূষ বন্ধু বলে ঠিক আছে আমি ব্যাপারটি দেখছি। এরপর বুড়িগঙা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায়। ত্রাতা আঠার মত লেগে থাকে টোল পরা বালিকার সাথে। বালক আশায় থাকে। একদিন ত্রাতা এসে বলে "হবেনারে দোস্ত"। বালকের স্বপ্নভঙ হয় । বন্ধুর প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস । একবারও জিজ্ঞেস করেনা 'কেন'?

আর বন্ধুমহলে নতুন জুটির আবির্ভাব হয়।

Friday, February 02, 2007

বাংলা ব্লগিং ও আমাদের প্রত্যাশা (2)

আমি গত লেখাতেই লিখেছি যে বাংলাদেশে ব্লগিংয়ে এক বড় বিপ্লব সামহোয়ারইন বাঙলা ব্লগ। এর অনেক সমস্যা আছে। এখনও অনেক বাগ ফিক্স হয়নি। মডারেশন একটি বড় ইস্যু। হয়ত সময় লাগবে পরিবর্তন আসতে। তারপরেও এর বর্তমান যে শক্তি রয়েছে তা দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব।

এখন আসি উন্নত বিশ্বে ব্লগিংকে কিভাবে দেখা হয়। সারা বিশ্বে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন ব্লগ রয়েছে যার প্রায় ৩৮% হচ্ছে ইংরেজী ভাষায়। এর পরে ৩৩% হচ্ছে জাপানী ভাষায়, ১০% চাউনিজ ভাষায়। আমাদের বাংলা ভাষা ব্লগের সাগরে কয়েকটি শিশির বিন্দু । আমেরিকায় ২৭% ইন্টারনেট ইউজারের ব্যক্তিগত ব্লগ আছে এবং গুরুত্বপুর্ন রাজনীতিবিদরা ব্লগ মেইনটেন করেন তার কনস্টিটুয়েন্সির লোকদের সাথে ইন্টারএকটিভ হবার জন্যে। ওদেশের নাম করা পেশাদারী ব্লগারদের রিডারশীপ মিলিয়নেরও বেশী। সেদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া অর্থাৎ সংবাদপত্র ও টেলিভিশন ব্লগকে খুব গুরুত্ব দেয়। আলাদা ব্লগ কর্নার আছে তাদের যেখানে ব্লগ থেকে বেছে নেয়া আর্টিকেল ছাপা হয়। আমেরিকার 'সানলাইট ফাউন্ডেশন ব্লগ' তদন্তমুলক লেখা ছাপিয়ে সিনেটরদের দুর্নীতি ফাস করে দিয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশে ব্লগের লেখাগুলো সংবাদপত্রের কাছে অপাংতেয়। এদেশের সাংবাদিকতার ট্রেন্ড হচ্ছে ইন্টারনেট থেকে তথ্য বা আইডিয়া সংগ্রহ করে তার ঋণ স্বীকার না করা । অথবা শুধু তারা বলেন 'ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত'। এদেশে জার্নলিজমে অনেক পরিবর্তন এসেছে। টিভিতে ঘন্টায় ঘন্টায় সংবাদ, বিডিনিউজে ২৪ ঘন্টা আপডেট, আর ব্লগগুলোর কি কোনই গুরুত্ব নেই? এগুলোতো জনগনের ভাবনারই প্রতিফলন। সামপ্রতিক জরুরি অবস্থা জারীর সময়গুলোতে সামহোয়ারইন বাঙলা ব্লগ থেকে অনেক সংবাদ পেয়েছি। অনেক সাংবাদিকই পেয়েছে, কিন্তু কেউকি তা কোথাও উল্লেখ করেছে? অথচ গার্ডিয়ান পত্রিকার নিউজ দেখুন

আসল ব্যাপার হচ্ছে ব্লগ সম্পর্কে এখনও অনেকেরই স্বচ্ছ ধারনা নেই। সংবাদপত্রের এই উদাসীনতা কাটানোরও কোন উদ্যোগ নেই।

আজকে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিন। সামহোয়ারইন বাঙলা ব্লগের নেশায় আমার বাংলায় টাইপিং শেখা হয়েছে। আমাদের যদি ভাষার প্রতি ভালবাসা থাকে তাহলে আপনার মতামত দিন কিভাবে আমরা বাংলা ব্লগিংয়ের সমপ্রসারন ও স্বীকৃতি আদায় করতে পারি।

Thursday, February 01, 2007

বাংলা ব্লগিং ও আমাদের প্রত্যাশা (১)

২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে আমি যখন প্রথম আমার ইংরেজী ব্লগ শুরু করি তখন উদ্দেশ্যবিহীন ভাবেই লিখতাম। পরে দেখলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশীদের তেমন একটা ধারনা নেই। আর বিদেশী পত্র পত্রিকায় 'বাংলাদেশ হচ্ছে আফগানিস্তান' টাইপের রিপোর্ট তো হরহামেশা হচ্ছেই। তাই আমার লেখার অনেকটা জুড়েই থাকল বাংলাদেশ আর ব্যক্তিগত মতামত। ব্লগের মজাই এটি, নিজের মত করে বক্তব্য প্রকাশ করা যায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায়।

আর বাংলাদেশের খবরের উপর চোখ রাখতে গিয়ে বাংলাদেশি ব্লগগুলো সম্পর্কেও একটি ভাল ধারনা হয়েছে আমার। গত তিন বছরে ইংরেজী ভাষার ব্লগগুলোর (একটিভ) সংখ্যা হয়েছে কয়েকশো এবং দু একটি ব্লগ আমাদের বর্তমান চিফ এডভাইজারও পড়েন বলে শুনেছি ।

কিন্তু আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বড় অর্জন সামহোয়ার ইন বাংলা ব্লগ। বাংলা ভাষাকে ইন্টারনেটে স্থান করে দেয়ার জন্যে বাংলা উইকিপিডিয়া ছাড়া কোন সফল উদ্যোগ আমাদের সামনে নেই। এই এক বছরে সামহোয়ারইনের বর্তমান ইউজার সংখ্যা প্রায় ৩৭০০, ধরলাম মাল্টিপল নিক বাদ দিয়ে প্রায় ৩০০০ ইউনিক ইউজার (যদিও নিয়মিত লেখে মাত্র কয়েকশ জন)। আর পেজ ভিউ হচ্ছে গড়পড়তা ৫০,০০০ যা এমনকি অনেক বড় বাংলা দৈনিকের অনলাইন সংস্করনেরও নেই। তুলনামুলকভাবে সবচেয়ে পঠিত ইংরেজী বাংলাদেশী ব্লগ দৃষ্টিপাত গ্রুপ ব্লগের দৈনিক গড়পড়তা পাঠক সংখ্যা মাত্র ৫০০। ইউনিকোড বাংলা ব্লগ কিছু নতুন হচ্ছে যাদের স্ট্যাটিসটিক্স আমার কাছে নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এই কিভাবে এই ব্লগটির সদ্ব্যবহার করছি? উদীয়মান বা প্রতিষ্ঠিত লেখক বা সাংবাদিককে এখানে দেখেছি তাদের লেখা সম্পর্কে গুরুত্বপুর্ন ফিডব্যাক পেতে। কারো কারো বই ছাপা হলে লেখা এত লোক পড়ত বলে মনে হয়না। রাজনীতি, ধর্ম বা অন্য যে কোন বিষয় সম্পর্কে খুবই জ্ঞানগর্ভ লেখা এখানে পড়েছি এবং সমৃদ্ধ হয়েছি। চমঃকার কিছু কবিতা বা গান পেয়েছি এখানে। কিন্তু বাঙালীদের যা স্বভাব, অত্যাধিক ব্যক্তিগত আক্রমন অনেক সময়ই লেখাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। আর ব্লগ হচ্ছে আমাদের সত্বা আমাদের ব্যক্তিত্বেরই সমপ্রসারন। একবারও ভাবছি কি যে আমরা এতগুলো পাঠকের কাছে নিজেদের কিভাবে উপস্থাপন করছি?

ভাল ও মন্দের বিষয়ে

-মূল কাহলিল জিব্রান

তোমাদের মধ্যে যা-যা ভাল, তা নিয়ে বলতে পারি শুধু
মন্দের বিষয়ে কিন্তু নয়।
'মন্দ' কি আসলে নয় নিপীরিত 'ভালো'
অন্তর্নিহিত তার ক্ষুধা ও তৃষ্নায়?
ক্ষুধার্ত 'ভাল'ই কিন্তু অন্ধকার গুহা থেকে খাদ্য খুঁজে নেয়
অপেয় জল সে পান করে নেয় আকন্ঠ তৃষ্নায়।

প্রানপন চেষ্টা করে যখন বিলিয়ে দাও যা-কিছু তোমার
তুমি ভাল অবশ্যই ভালো ।
তা বলে যখন তুমি নিজের জন্যে কিছু লাভ খোঁজ
তুমি মন্দ নও।

পুর্ন সচেতনতায় যখন বলছ তুমি কথা
তুমি ভাল, অবশ্যই ভালো।
তা বলে যখন ঘুমে অকারনে জিভ নড়ে ওঠে
তুমি মন্দ নও।
এমন কি হোঁচট-খাওয়া কথা
দুর্বল জিহ্বাকে সুস্থ করে তোলে কখনও কখনও।

যখন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে চলে যাচ্ছো দৃঢ় পদক্ষেপে
ভালো তুমি, অবশ্যই ভালো।
তা বলে যখন তুমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছো সেই দিকে
তুমি মন্দ নও!
খুঁড়িয়ে হাঁটছে যারা তারাও পশ্চাদবর্তী নয়।
কিন্তু দেখো, তোমরা যারা সমর্থ ও দ্রুতগামী
খোঁড়া দেখে খুঁড়িয়ে হেটো না-
এমন দয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

কতো যে অজস্রভাবে ভালো তুমি হতে পারো!
তা বলে যখন ভালো নও তুমি
মন্দও তো নও কোনও মতে।
শুধু কিছু দেরী হচ্ছে খানিকটা অলস তুমি বলে ।

নিজের মধ্যে এক বিরাট আকাঙ্খায় যাবতীয় ভালো
শায়িত রয়েছে;
আকাঙ্খা বিরাজ করছে তোমাদের সবার মধ্যেই
কারো ভেতর এর তীব্রতা স্রোতের মতোন
কারো ভেতরে এই আকাঙ্খার নদী গতিহীন।

(সংক্ষেপিত) - অনুবাদ অজিত মিশ্র