Wednesday, December 24, 2008

উর্দুতে বন্দনা করা এটি কার বাংলাদেশ?


ইসলামিক টিভিতে এবারের বিজয় দিবস উদযাপন করা হয় বাংলা, উর্দু ও ইংরেজী মেশানো একটি অদ্ভুত গান দিয়ে। এও দেখার দিন আসল উর্দুতে আমাদের একাত্তরের কথা শুনতে হয়!

আমার এটিই জানার ইচ্ছা আমাদের দেশে উর্দু ভাষাকে কেন এখনও আমল দেয়া হচ্ছে? কেন মাদ্রাসায় এখনও উর্দু শেখানো হয়? ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে উর্দু জানা লাগে? আমাদের দেশে উর্দু শিখে কার কি লাভ হবে?

(সূত্র: আনহার্ড ভয়েসেস )

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

বাংলাদেশের নির্বাচন ২০০৮ এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার

আগামী ২৯শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ একটি বহুল প্রতিক্ষিত সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত নভেম্বরে সমাপ্ত বহুল প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল যে প্রার্থীরা সিটিজেন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা এমনকি নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। তবে বাংলদেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিত ভিন্ন কারন সাড়ে চোদ্দ কোটি লোকের শতকরা ১ ভাগেরও কম ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পান। যদিও নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে অনেকেই ব্লগ এবং ফেসবুক ব্যবহার করে পরিস্থিতির পরিবর্তনে সচেষ্ট রয়েছেন। সামহোয়্যার ইন , সচলায়তন , আমার ব্লগ , মুক্তাঙ্গন, প্রথম আলো ব্লগ ইত্যাদি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মে নির্বাচন সংক্রান্ত পোস্টে ভরে গেছে যেখানে যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্লগাররা একে অপরের মতাদর্শের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায়ও লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এসব বিতর্ক আর মতামত কি করে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে যেখানে নীতিনির্ধারকরা, যেমন রাজনৈতিক নেতারা এবং সরকারী আমলারা ডিজিটাল মিডিয়া এবং এইসব কথোপকথন থেকে আপাত:দৃষ্টিতে দূরে থাকেন। বাংলাদেশে এখনও ঐতিহ্যবাহী মূলধারার প্রচার মাধ্যমেরই প্রভাব বেশী তবে সাম্প্রতিক কালে তাদের কারও কারও একপেশে রিপোর্টিং এর কারনে তাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়েবসাইট ইন্টারঅ্যাক্টিভ নয় ফলে জনগণের মতামতকে তারা আমল দিচ্ছেন কিনা তা বোঝার উপায় নেই। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হাজারো প্রার্থীর মাত্র কয়েকজনকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচারণায় নামতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি বক্তৃতাসর্বস্ব এবং প্রচারণামূলক, খুবই কম সুযোগ আছে মূল নেতাদের সাথে কথোপকথনের এবং তাদের কাছে জবাবদিহীতা চাওয়ার। তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষদের কিছুই বলার থাকেনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। তবে জাগরী নামে বাংলাদেশের যুবাদের একটি নির্দলীয় সংগঠন ফেইসবুক এবং ব্লগ ব্যবহার করছে যুবাদের জ্ঞাত এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে যাতে তারা রাজনৈতিক এবং নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় আরও বেশী করে অবদান রাখতে পারে।


আমরা কি? ছবি: জাগরীর সৌজন্যে

জাগরী বর্তমানে একটি প্রচারণা চালাচ্ছে ‘আমাদের ভোট, আমাদের কথা নামে'। তাদের ফেইসবুক পাতা থেকে এই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।



জাগরীর পরিকল্পনা ও সঞ্চালনা সংক্রান্ত মিটিং। ছবি জাগরীর সৌজন্যে

সাম্প্রতিক কালে জাগরীর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে একটি ডকুমেন্টারী তৈরি করে বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্যে ইউটিউবে তা প্রকাশ করা।




৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ডকুমেন্টারীর লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশীরা যাতে প্রার্থী সম্পর্কে জেনেশুনে ভোট দেন। এতে স্বাক্ষাৎকার দেয়া যুবারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। তবে এই ডকুমেন্টারী যুবাদের সেই আশাকেও তুলে ধরেছে যে একটি পরিবর্তন আসবে অচিরেই।

এ বারে নির্বাচন এবং অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের উপর অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেটে। এখন প্রয়োজন বাংলাদেশীদের এইসব তথ্য সম্পর্কে জানা যাতে তারা সঠিক ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারেন।

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যরত বেসরকারী সংস্থা সুজন একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাইট পরিচালনা করছে যাতে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে বিপুল পরিমান তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই সাইটের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন সম্পর্কে বিভিন্ন সাধারণ তথ্য , নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী প্রার্থীদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং আরও অনেক কিছু। সুজনের আরও একটি বিশেষ পরিবেশনা রয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রায় ৪০০০ সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আর্কাইভ রয়েছে । নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের দুর্নীতির রেকর্ড কি রকম তা নাম অনুযায়ী খোঁজা যাবে ওই আর্কাইভ থেকে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সাইটেও নির্বাচন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যেমন ভোটার লিস্ট , পিডিএফ ফরম্যাটে প্রার্থীদের প্রোফাইল এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতি নির্দেশিকা

ই-বাংলাদেশ বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের লিন্ক প্রতিদিন প্রকাশ করছে এবং বিভিন্ন পর্যালোচনা ও তাজা খবর পরিবেশন করছে নাগরিক সাংবাদিকদের কাছ থেকে তাদের বিশেষ নির্বাচন কাভারেজে (ইংরেজী ভাষায়)। এই সাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য যেমন প্রার্থীদের তালিকা এবং বিভিন্ন দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারের লিন্ক রয়েছে। এর আরেকটি সহপরিবেশনা, বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম আমার ব্লগ ও তাদের নির্বাচনী বিশেষ পরিবেশনা শুরু করেছে বাংলা ভাষায়। এই সাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ও নাগরিক সাংবাদিকদের মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় ইংরেজী ভাষার গ্রপ ব্লগ আনহার্ড ভয়েসও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে যাচ্ছে।

সর্বাধিক বৃহৎ বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম সামহোয়ার ইন “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” ইংরেজী দৈনিক দ্যা নিউ এইজ এর সাথে যৌথভাবে নির্বাচনের উপর একটি গ্রুপ ব্লগ শুরু করেছে। নিউ এইজ সংবাদপত্রও সম্প্রতি একটি নির্বাচন পোর্টাল চালু করেছে যাতে এই গ্রুপ ব্লগ থেকে নির্বাচিত লেখা এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও তাজা খবর প্রকাশ করছে। এটিই এ দেশে প্রথম এমন উদ্যোগ, যেখানে একটি মূলধারার প্রচার মাধ্যম তাদের হাউজের বাইরে কোন ব্লগের সাথে মিলে কিছু করছে। এই সাইটটিতে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ ম্যাপ রয়েছে যেখানে পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফলকে দেখানো হয়েছে।

নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারনায় প্রযুক্তির কম ব্যবহারের এই ধারার বিপরীতে আছেন ব্লগার এবং সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান , যিনি রাজশাহী -৬ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন এবং ফেসবুক ব্যবহার করে তার নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। চট্রগ্রাম ৬ আসনের ড: হাসান মাহমুদ একটি ইলেকশন ব্লগ খুলেছেন । চট্টগ্রাম-৮ (কোতয়ালী, বাকলিয়া ও ডবলমুরিং-আংশিক) আসনে জনাব আলহ্বাজ নুরুল ইসলাম ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে একটি ক্যাম্পেইন সাইট খুলেছেন। সেই সাইটে ইউটিউব ব্যবহার করে বেশ কিছু ক্যাম্পেইন করেছেন যা অবশ্যই অনুকরনযোগ্য।

সবাই এটি এখন দেখার অপেক্ষায় যে বাংলাদেশীরা নির্বাচনের সময় ব্লগ, ভিডিও (যেমন ইউটিউব), ফটোগ্রাফ (যেমন ফ্লিকার), টুইটার ইত্যাদি বিভিন্ন নাগরিক মিডিয়া টুল কিভাবে ব্যবহার করে তাদের মতামত জানায়।

মূল: গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে ইংরেজীতে প্রকাশিত ও বাংলা লিঙ্গুয়ায় অনুবাদ হিসেবে প্রকাশিত।

Tuesday, December 16, 2008

আমাদের সংবাদপত্রের বর্তমান হাল ও আশার আলো হিসেবে ব্লগ

বিজয় দিবস এসে গেছে। পত্র পত্রিকায় বেশুমার পাতা ভরানো আর্টিকেল পাবেন দিনটিকে উপলক্ষ্য করে। কিন্তু সেগুলোতে খুব কমই দেখা যায় নতুনত্ব, গভীরতা ও সত্যের ছায়া।

একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে একটি রিপোর্ট হয়েছে যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নানা সাইট সম্পর্কে বলা হয়েছে। খুবই মহৎ উদ্যোগ। এতদিনে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গেছে বলে অভিনন্দন।

কিন্তু খটকা লাগল সাইটগুলোর বর্ণনা পড়ে:

"ইউ টিউব (http://www.youtube.com) সহ বিভিন্ন সাইট মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, ঘটনাপ্রবাহ আর মতামতে ভর্তি৷ জেনোসাইড বাংলাদেশ (http://www.genocidebangladesh.org) নামের সাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি৷"

জেনোসাইড বাংলাদেশ সাইটে জর্জ হ্যারিসনের গান ডাউনলোড করার কোন অপশন নেই। ইউটিউবে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের ভিডিও সার্চ করা যায় সেটার ব্যখ্যা প্রয়োজন ছিল। লেখাটা পড়ে মনে হয়েছে যে লেখক সাইটগুলোর ভেতরে গিয়ে কিছু পড়েন নি। তাহলে হয়ত বলতেন না:

"ইন্টারনেটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার কোনো কাজ এখনো শুরু হয় নি"

আশা করব উনি এই ত্রিশটি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সাইটগুলোর প্রতিটি পড়বেন এবং তার পর আবার মন্তব্য করবেন।



আজকাল প্রচার মাধ্যমের সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানুষের মনে। এই তো সাম্প্রতিক 'বাংলার তাজমহল' সংক্রান্ত বিতর্কে দেখা গেছে দেশী বিদেশী প্রচার মাধ্যমগুলো লোকমুখে শুনে সরেজমিনে তদন্ত না করেই অতিরন্জিত রিপোর্ট করেছে আর সামহোয়ার ইনের ব্লগাররা এই কেলেন্কারী উদঘাটন করেছে

আমাদের দেশের পেশাদারী সাংবাদিকদের অভিযোগ করতে শোনা যায় যে ব্লগে গভীর কিছু নেই, গালাগালিতে ভর্তি। যেন ব্লগে খালি গুজব ছড়ানো হয় আর প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমে সত্য রিপোর্টের ছড়াছড়ি। অথচ উপরের ঘটনাগুলো এর বিপরীত কিছুই প্রমাণ করে।

ব্লগের সুবিধা হলো এখানে কেউ পয়সার বিনিময়ে ফরমায়েসী লেখা লেখে না, মনের তাগিদেই লেখে। আর অসত্য ও মিথ্যা বলে এখানে কেউ পার পায় না। কারন কমিউনিটিই বিচার করে, যাচাই বাছাই করে সত্যতা। সাথে সাথেই কমেন্ট পড়ে। অযৌক্তিক, সূত্র ছাড়া কিছু বলে পালাবার উপায় নেই। সংবাদপত্রগুলোকে বলছি সাহস থাকলে অনলাইন সংস্করণগুলোতে কমেন্ট চালু করুন। প্রতিটি সংবাদেরই যৌক্তিকতা প্রমান হয়ে যাবে।

মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Monday, December 15, 2008

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে


"আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।"

আল বাঘদাদিয়া চ্যানেলের ইরাকী সাংবাদিক মুন্তাজের আল জাঈদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বুশের দিকে জুতো ছুড়ে প্রতিবাদ জানানোর সাহস করল এই বলে "ইরাকী জনগণের কাছ থেকে উপহার নাও"।

আপনাদের আশে পাশে রাজনৈতিক সমাবেশে যখনই কোন যুদ্ধাপরাধী মুক্তিযোদ্ধাদের হজ্জ্ব ডেলিগেশনে নিয়ে যাবার মূলো ঝুলাবে তখনই জানিয়ে দেয়া উচিৎ যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সাথে হজ্জ্বে যেতে রাজী নয় এমনকি তাদের সাথে বেহেস্তেও যাবে না । সেটা না পারলেও কি নিদেন পক্ষে কেউ কি মুন্তাজের আল জাঈদির মত সাহস দেখিয়ে পায়ের জুতোর সদ্ব্যবহার করতে পারবে?

আপনাদের আশে পাশে যখন বিশ্ব বেহায়া সমাবেশে নাটকীয় সুরে বলবে আমি শেখ হাসিনার বড় ভাই তখন ও কি কারও জাঈদির মত সাহস হবে প্রতিবাদ করার?

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Sunday, November 30, 2008

বকের ভাস্কর্য ভাঙ্গে যে সব বক ধার্মিক তাদের জন্যে

ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু জঙ্গী মৌলবাদীরা নিপাৎ যাক। আজকে বলাকার ভাস্কর্য ভেঙ্গে তারা প্রমাণ করল তাদের মত মতলববাজ, ধর্মকে ব্যবহার করে নতুন মতবাদ সৃষ্টিকারী, জালেম এই দুনিয়ায় আর নেই। তাদের জন্যে রইল মুসলিম জাহানের বিভিন্ন ভাস্কর্যের নিদর্শন। বুকের পাটা থাকলে ঐগুলি আগে ভেঙ্গে তারপর কথা বলতে আসুক।

জেদ্দায় উটের মুর্তি

সিরিয়ায় মুসলিম বীর সালাদিনের ভাস্কর্য

এখানে দুবাইয়ের মুর্তি:
Click This Link
Click This Link

এখানে কুয়েতের মুর্তি:
Click This Link


বাহরাইনের ঈগলের মুর্তি:

ইন্দোনেশিয়ার হাজারো মুর্তির একটি:
http://www.flickr.com/photos/sebr/2370290682/

পাকিস্তানে মুর্তি:
http://www.flickr.com/photos/asadk/174344040/

ঐসব দেশে যায়েজ হলে আমাদের দেশের কোন বড় ইসলামী চিন্তাবিদরা এ নিয়ে তাদের মুর্খতা দেখাতে আসে?

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Wednesday, November 26, 2008

অথ: ডিম সমাচার

ডিমের উপর ছাপানো কোড
আমার যদিও জার্মান টিভি বেশী দেখা হয় না তবে মাঝে মধ্যে কোন ডকুমেন্টারী হলে বসে চ্যানেল পাল্টানোর অভ্যাস ত্যাগ করে বসে পরি দেখতে। কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সত্যিই দুর্দান্ত হয়।

সেরকমই একটি প্রতিবেদন দেখছিলাম কাল। এদেশে (ইউরোপের অনেক দেশেই) প্রতিটি মুরগীর ডিমে একটি করে কোড সিল মারা থাকে যা থেকে বোঝা যায় কোন দেশ থেকে এটি এসেছে, কোন ফার্ম থেকে এবং এটি কিভাবে উৎপন্ন হয়েছে। চার ধরনের ডিম সাধারণত: বিক্রি হয়, খাঁচায় বদ্ধ মুরগী, আবদ্ধ যায়গায় পালা মুরগী, খোলা উঠোনে চড়া মুরগী এবং অর্গানিক ভাবে পালা মুরগী থেকে উৎপন্ন ডিম। এবং দামের হেরফেরও বেশ - খাঁচায় বদ্ধ মুরগীর ডিমের চেয়ে দ্বিগুণ দাম খোলা উঠোনে চড়ে খাওয়া মুরগীর ডিমের এবং অর্গানিক আরও বেশী। কারন অর্গানিকভাবে উৎপন্ন ডিমের জন্যে নাকি মুরগীকে ইচ্ছামত চড়তে দিয়ে খুশী রাখতে হয় আর অর্গানিক খাবার খাওয়াতে হয়। আজকাল অর্গানিক খাদ্যের প্রতি ইউরোপীয়ান লোকজনের আগ্রহের কারণে এদের বাজার খুবই রমরমা।

প্রতিবেদনে এইসব মুরগীর ডিম আসলেই ঘোষণা অনুযায়ী সঠিকভাবে উৎপন্ন হয় কি না সেটা পরখ করে দেখা হয়েছে। ইন্টারনেট থেকে একটি অর্গানিক মুরগীর ডিমের কোড থেকে তারা ফার্মটির অবস্থান বের করে সেখানে তদন্তে যায়। ফার্মটির ওয়েবসাইটে লেখা আছে প্রতিটি মুরগীর জন্যে ৪বর্গ মিটার জায়গা নিশ্চিত আছে এবং তারা সর্বদাই হাসিখুশী থাকে। অথচ সরেজমিনে দেখা গেল বিস্তীর্ণ ফার্ম এলাকার উঠোনে একটিও মুরগী নেই। বিশাল ফার্মহাউজের মধ্যে এক রুমে গাদাগাদি করে রাখা মুরগী। ফ্যাক্টরির লোকজন অপ্রস্তুত টিভি ক্যামেরা দেখে। তাদের দেখা গেল বিপুল পরিমান ডিম বিপণনের জন্যে মোড়কজাত করতে। দশ মিনিট খোঁজার পর বাইরে গুটি কয়েক মুরগি পাওয়া গেলেও তারা সুখী কিনা বোঝা গেল না। বরং দেখা গেল তাদের কয়েকটি অসুস্থ। ফার্মটির কর্মচারীরা কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করে। পরে এক লিখিত জবাবে ফার্মের মালিক বলে উঠোনে বেড়া দেওয়ার কাজের জন্যে এক সপ্তাহ ধরে মুরগীগুলোকে ফার্মের ভেতরে রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদকরা আরেকটি ফার্মে যায়। সেখানেও একই অবস্থা। বাইরে কোন মুরগী নেই। তারা বলে খারাপ আবহাওয়ার জন্যে মুরগীকে ভেতরে রাখা হয়েছে। আসে পাশের লোকদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল তারা বাইরে মুরগী চড়তে দেখে না।

ডিমের মোড়কে একটি মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সীল আছে। প্রতিবেদকরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা বলে ঠিক আছে আমরা তদন্ত করে দেখছি কারন মালিক আমাদের জানায়নি যে তাদের ওখানে কোন সমস্যার জন্যে মুরগীকে ভেতরে রাখছে। সরকারের মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে যে এইসব মান নিয়ন্ত্রণ বেসরকারী পর্যায়ে হয়ে থাকে বলে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তারাও তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

কেন যেন বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি দেখলাম পুরো ব্যাপারটিতে। তবে এই প্রতিবেদনটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পেটা আবিস্কার করেছে বার্লিনের এক ফার্মে প্রায় তিন লাখ ডিম এভাবে ভুলভাবে স্ট্যাম্প করে বেশী দামে বিক্রি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাথে পার্থক্য এখানেই, এখানে এই সব প্রকারকদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের পর হয়ত কঠিন শাস্তি হবে আর আমাদের দেশে এর চেয়েও মারাত্মক প্রতারণার ঘটনার পরেও তারা আইনের ফাঁক ফোকর গলে বাইরে বেরিয়ে আসবে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Wednesday, November 05, 2008

বিডিনিউজ২৪.কম এ ভিডিও প্রকাশ

আজকে বিডিনিউজ২৪.কম সাইটে দুটো ছোট ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াশিংটনের ডালেস এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনাকে বিদায় জানানো দেখানো হয়েছে প্রতিটি প্রায় ৮ সেকেন্ড করে (প্রায় ৩ মেগাবাইট আয়তনের) এই দুটি ভিডিওতে। বাংলাদেশের বেশীর ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর স্বল্প ব্যান্ডউইথের কথা চিন্তা করেই হয়ত ভিডিওগুলো ছোট রাখা হয়েছে।

মাল্টিমিডিয়ার এই ব্যবহার অবশ্যই একটি ভাল উদ্যোগ। আশা করব তারা ভবিষ্যতে আরও অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করবে তাদের সংবাদ কাভারেজে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Friday, October 31, 2008

বার্লিন: গল্পের শহর, অথবা শহরটা নিজেই গল্প - ২

ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস:

বিশ্বের অনেক স্থানেই আলোক উৎসব পালন করা হয় বিভিন্ন রুপে। ভারতে দিওয়ালী বা নেপালে দীপাবলী ধার্মিক উৎসব হিসেবে অনেকে দেখলেও এটি আসলে এখন সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবেরই অংশ হয়ে গেছে। ইরানের নববর্ষের (নরোজ) সময়ও তারা আলোক উৎসব করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আলোক উৎসবের মধ্যে রয়েছে ইহুদিদের হানুকা উৎসব, ফরাসীদের ফেত দে লুমিয়েখ (যা প্লেগ থেকে বাঁচতে মা মেরীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত) যেগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে উদযাপিত হয়।

জন্ডারমেনমার্কট 
জন্ডারমেনমার্কট

উপরের এই ভুমিকার কারন হচ্ছে আজকে বার্লিনের ফেস্টিভাল অফ লাইটসের কথা বলব। প্রতি বছর তারা অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগে এই আলোকসজ্জার আয়োজন করে। এর ঐতিহাসিক পটভুমি খুঁজে পেলাম না তবে আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি পর্যটন উদ্যোগ। যেমন তাদের এবারের পর্যটন স্লোগান "Be Berlin" এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে।

তবে যাই হোক জার্মানরা যা করে তা অনেক পারঙ্গমতার সাথেই করে এবং এই বৈশিষ্টই তাদের এগিয়ে যাবার কারন। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই বাসার কাছাকাছি আকাশে মেঘের গায়ে দুর থেকে সার্চ লাইট পড়তে দেখেছি। ভাবছিলাম এ আবার কি। এই ফেস্টিভ্যালের কথা খেয়াল ছিল না তবে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাওয়া হলো এক রাতে।

জিগেসজয়েলে-ভিক্টরি টাওয়ার 
জিগেসজয়েলে-ভিক্টরি টাওয়ার

শহরের সব পর্যটন আকর্ষণগুলো অপূর্ব আলোক সজ্জায় পূর্ন হয়ে গেছে। শহরের প্রধান রাস্তায় ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা যেন এখনই শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দিকে গিয়ে সার্চ লাইটের ব্যাপারটি খোলাসা হলো। ইউরোপা সেন্টারের কাছে এক উঁচু বাড়ী থেকে বিশাল সব সার্চ লাইচের আলো চারিদিকে দুরদুরান্তে ও আকাশে ফেলা হচ্ছে। সাথে সবুজ লেজার লাইট ও রয়েছে। আকাশে মেঘ ছিল বলে অপূর্ব দৃশ্য ছিল সেটি। আমার পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় এই আলোকসজ্জাগুলোর কিয়দংশও আসে নি।

ফরাসী চার্চ 
ফরাসী চার্চ

সাথে সাথে আরেক মজার ব্যাপার দেখলাম। কাধে ট্রাইপড হাতে অসংখ হবি ফটোগ্রাফাররা ছুটেছে। পরে এক জার্মান ব্লগ থেকে কিছু লিন্ক পেলাম। সেখানে উল্লেখ করা ছিল যে আপনারা এই ফেস্টিভ্যালের ছবিগুলোতে যেমন দেখছেন তেমন সুন্দর আপনি কাছে থেকে কখনই দেখতে পাবেন না। সত্যিই তাই। কারন বার্লিন ডোম ও উন্টার ডেন লিন্ডেন ছিল লোকে লোকারণ্য। ওখান থেকে কোনকিছুই ভালভাবে দেখতে পারিনি যেমন এই ফ্লিকারে আপলোড করা ছবিগুলো দেখাচ্ছে:

ফ্লিকারে বার্লিন ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস

বিশ্বজুড়ে রাতের বেশ কিছূ অসাধারন ছবি

পাতা ঝরার দিন:

শীত চলে আসছে দ্রুত। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পাতা ঝরার খেলা দেখলাম। এ সময়টা সত্যিই খুব অন্যরকম লাগে। ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যাচ্ছে আর নানা রকম ভাবে ঘুরে ঘুরে পাতাগুলো পড়ে যাচ্ছে গাছ থেকে। সবুজ, হলুদ, বাদামী ইত্যাদি রংয়ের মিশ্রনে অপূর্ব দৃশ্য। সাথে মৃদু পাতা ঝরার শব্দের দ্যোতনা। এমনিতে বোঝা যায়না। কিন্তু হঠাৎ করে খেয়াল করলে মুগ্ধ হয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে শুনি।

ঝরা পাতা 
ঝরা পাতা

আমার মেয়ের কিন্ডারগার্টেনের সামনে অনেকগুলো মেপল গাছ আছে। সেগুলো বিশাল বিশাল পাতা নীচে পড়ে এমন অবস্থা হয় যে রাস্তাঘাট সব ঢেকে যায়। প্রতিদিন তাই দেখি রাস্তার কোনায় পাতাগুলো জড়ো করে রাখা। জার্মানরা খুবই প্রযুক্তিপ্রেমী জাতি। তাই চিরাচরিত ঝাটার বদলে পাতা সরাতে তারা ব্যবহার করে শক্তিশালী ব্লোয়ার। এর পর মাঝে মাঝে বড় ট্রাক এসে সাকশন পাইপের মত আরেকটি ব্লোয়ার দিয়ে রাস্তার কোনা থেকে সেগুলো তুলে নেয়।

পড়ে থাকা আপেল 
পড়ে থাকা আপেল

এই সময়টা হচ্ছে আপেলের। এ মাসের প্রথমে জার্মানীর দক্ষিণে লেক কন্সট্যান্স এলাকায় গিয়েছিলাম এবং ওখানকার আপেল গাছের ছড়াছড়ি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। রাস্তার ধারে বাড়ীর আঙ্গিনায় আপেল গাছে টসটসে আপেল ঝুলছে, কিছু পড়ে আছে। কিন্তু হয়ত পেড়ে খাবার লোক নেই। আমরা যেখানে থাকি সেই এপার্টমেন্ট কম্প্লেক্সের পেছনে তিনটি বিল্ডিংয়ের জন্যে অনেক গাছ গাছালীতে ঘেরা বাচ্চাদের জন্যে একটি খেলার জায়গা। এই তল্লাটে মনে হয় শিশুদের সংখ্যা কম তাই সেখানে লোকজন দেখা যায়না বললেই চলে। টেবল টেনিসের টেবলটায় ছাতা পড়ে আছে, পাশে শেওলা পড়া চেয়ার। বহুকাল কেউ মাড়ায় না এ পথ। আমার মেয়ে সুইংয়ে চড়বে বলে বায়না ধরে মাঝে মাঝে তাই ইদানীং সেখানে যাওয়া হয়। মাসখানেক আগে আবিস্কার করলাম প্লে গ্রাউন্ডের পাশে একটি গাছে ছোট ছোট এক ধরনের ফল হয়ে রয়েছে। পেড়ে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা থাকলেও সেটি নিষেধ করে আবার কোন নিয়ম আছে কিনা ভেবে করা হয়নি। সেদিন দেখি ফলগুলোর অনেকগুলোই পেঁকে বেশ কিছু মাটিতে পড়ে রয়েছে। বুঝলাম এটি ছোট সাইজের এক ধরনের আপেল। বাড়ীতে এনে খেয়ে দেখলাম টক টক কিন্তু খেতে মন্দ নয়। এই বোধহয় ধনী ও গরীব দেশের মধ্যে পার্থক্য। ওখানে লোকে খেতে পায়না। এখানে খাবার পড়ে নষ্ট হয়, খাবার লোক নেই।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, October 25, 2008

বাংলাদেশের ভোট: পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি ইগভার্নেন্স সাইট

বাংলাদেশের একটি এনজিও সুজন (সুশাসনের জন্যে নাগরিক) বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যে উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছে।

বেশ কয়েক বছর আগে তারা প্রথমে অনলাইনে তুলে ধরে ২০০০ সালের ভোটার তালিকা, যাতে লোকে সার্চ করে তাদের তথ্য সঠিক আছে কিনা নিশ্চিত করতে পারে।


সম্প্রতি হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সংস্থা একটি ব্যতিক্রমী ওয়েবসাইট তৈরি করে যার নাম বাংলাদেশের ভোট। এর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে সেইসব বিষয় তুলে ধরা যা একজন ভোটারকে তাকে ভোট দেবার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে। বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল:

১) প্রার্থীর আয়কর রিটার্নের তথ্য , নির্বাচনের ব্যয়ের উৎস , এফিডেভিট
২) প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের তথ্যাদির তুলনা
৩) একটি দুর্নীতির সংবাদের আর্কাইভ (জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সন্ত্রাস, দুর্নীতি ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের সংকলন) যাতে সার্চ পদ্ধতি যোগ করা আছে, কোন প্রার্থীর প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিনা তা বের করার জন্যে।
৪) একটি আলোচনার ফোরাম
৫) বিভিন্ন দলিল

এ ছাড়াও তারা ভোটাররা কিভাবে আদর্শ প্রার্থী নির্বাচন করবে তা নিয়ে একটি শিক্ষামূলক ভিডিও প্রকাশ করে:



ঝর্ণার গান ব্লগের আফরুজ জানাচ্ছেন যে উল্লিখিত এই Votebd.org সাইটটি সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার মন্থন পুরস্কার পেয়েছে ইগভার্নেন্স ক্যাটেগরীতে।


ছবিতে সামহোয়ারইনের ব্লগার রুবনকে দেখা যাচ্ছে (ছবির উৎস )

এই সাইটটির সাথে যারা জড়িত সবাইকে অভিনন্দন। আশা করব আসন্ন নির্বাচনে এই সাইটটি প্রার্থীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশের ভোটারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Wednesday, October 08, 2008

এ যুগের ফতোয়া: বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা?

সৌদি আরবের সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রধান বিচারপতি সালেহ আল লুহাইদান এক রেডিও অনুষ্ঠানে ফতোয়া দিলেন যেহেতু টিভি চ্যানেলগুলোতে অনৈতিক অনুষ্ঠান দেখানো হয় তাই তাদের মালিকদের মেরে ফেলা জায়েজ আছে। ৭৯ বছরের এই বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ যিনি সৌদি আরবের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠত তার মুখ থেকেই যখন এরকম হুমকি বেরিয়ে আসে তখন অশিক্ষিত মৌলবাদীরা কি করবে তা আল্লাহই মালুম। তিনি অবশ্য রেডিও অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু বলেন নি। নিজে রেডিও অনুষ্ঠানে ছিলেন বলেই কি?

এইখানেই শেষ নয়, সৌদি আরবের আরেক বিশিষ্ট আলেম শেখ মুহাম্মদ আল হাবাদান নতুন এক ফতোয়া দিয়েছেন। কালো নেকাব পরা মেয়েরা যেহেতু চোখে মেকাপ লাগায় তা অনেক পুরুষকে উত্তেজিত করে কুপথে নিয়ে যেতে পারে। তাই তিনি হুকুম দিয়েছেন এখন থেকে মহিলাদের নেকাবের পাশাপাশি এক চোখ ঢাকা থাকবে।

অবশ্য উনি বলেন নি যে কোন চোখ ঢাকা থাকবে, ডান না বাম। এতে একটি সমস্যা দেখা দেবে। কেউ চোখের পাতা ফেললে যেহেতু অপর চোখটি দেখা যাবে না তাই অনেকে মনে করতে পারে যে সে চোখের বিশেষ ভঙ্গী করে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। সেটি আরও কেলেন্কারীর জন্ম দিতে পারে। তাই মনে হয় পরবর্তী ফতোয়া আসবে যে মেয়েরা দুটি চোখই আবৃত থাকবে, কারন কোনক্রমেই মেয়েদের জন্যে পুরুষদের উত্তেজিত হতে দেয়া চলবে না।

বাহরাইনের ব্লগার এস্রা শেখের ফতোয়ার জবাব দিয়েছে :

"আলেমদের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমার একটি প্রস্তাব আছে। আপনারা যদি মহিলাদের চোখ দেখে উত্তেজিত হয়ে পরেন তাহলে আপনারা আপনাদের চোখ দুটি উপড়ে ফেলুন, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মেয়েরা আপনাদের বিকৃত মানসিকতার জন্যে আর কত মূল্য দেবে?"



প্যালেস্টাইনি ব্লগার হাইতাম সাব্বাহ এক চোখ খোলা বোরখায় মহিলাদের কেমন দেখা যাবে তা চিত্রে প্রকাশ করে বোঝার চেষ্টা করছেন শেখ মুহাম্মদ কি বোঝাতে চাইছেন।

সৌদি আরব একটি পরিপূর্ণ ইসলামী শাষনভিত্তিক দেশ। সে দেশে এরকম নাটক সার্কাস হচ্ছে। অথচ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবে না।

বাংলাদেশে এখন ফতোয়া নিষিদ্ধ করা আছে যদিও অনেকে জানেনা বা মানে না। এখন আপনারাই বলেন আমাদের দেশে কি পরিপূর্ণ ইসলামী শাষনভিত্তিক প্রথা এরপরও লোকজন চাইবে?

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Sunday, September 07, 2008

বার্লিন: গল্পের শহর, অথবা শহরটা নিজেই গল্প

বার্লিন শহরে কিছু যায়গা আছে, যেগুলো অনেকের কাছে এত পরিচিত যে তারা শুধু দর্শনীয় স্থান হিসেবে নয় আরও বিশাল পরিসরে উপস্থাপিত। এদের কোনটি ইতিহাসের পর ইতিহাসের সাক্ষী, কোনটি সিনেমার লোকেশন, কোনটি মিউজিয়াম, কোনটি বা ঐতিহ্যগত বা আধুনিক স্থাপনার নিদর্শন হিসেবে লোকের মুখে মুখে ফিরে। এসব জায়গায় শহরটি নিজেই একেকটি গল্প হয়ে যায়। পর্যটকরা এই স্থানগুলিকে জানেন: ব্রান্ডেনবুর্গার গেট, উন্টার ডেন লিন্ডেন, রাইখসটাগ, পটসডামার প্লাৎস, আলেক্জান্ডার প্লাৎস ইত্যাদি। কিন্তু গল্পগুলো পুরোপুরি তাদের জানা নেই। এ শহরের বাসিন্দাদের কাছে এ স্থানগুলোর গল্পগুলো পরিচিত, অথবা নিজেরাই হয়ে যায় গল্পের একেকটি চরিত্র, নতুন নতুন গল্পের জন্ম দেয়।

বেবেলপ্লাৎসের গল্প

ব্রান্ডেনবুর্গ গেট থেকে পূবের দিকে নামকরা রাস্তা 'উন্টার ডেন লিন্ডেন' ধরে ৫০০ মিটারের মত গেলে হামবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোদিকে পড়বে বেবেলপ্লাৎস, একটি বিশাল চত্বর। একে ঘিরে রয়েছে পুরনো লাইব্রেরী, একটি ক্যাথেড্রাল ও স্টেট অপেরা যা আসলে একটি প্রাসাদ যা ১৭৪৩ সালে প্রুসিয়ার হোহেনজোলার্ন রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। এটি ওপার্ন প্লাৎস নামে পরিচিত ছিল এবং ১৯৪৭ সালে সোস্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা অগাস্ট বেবেলের নামে এর বর্তমান নামকরণ করা হয়।

এখানে নামকরা আন্তর্জাতিক এক্সিবিশন ও অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

বেবেল প্লাৎস 
বেবেল প্লাৎস    ছবি: উইকি পিডিয়ার সৌজন্যে

এখানে প্যানোরামাতে বেবেল প্লাৎসকে দেখতে পাবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিল্ডিংগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যা দেখছেন তা পরে সংস্কার করা।

বেবেলপ্লাৎসের একটি কলন্কময় ইতিহাস আছে। ১৯৩৩ সালের দশই মে হিটলারের ছাত্র-ছাত্রীদের এসোসিয়েসন (এস এ) এবং নাৎসী ইয়থ গ্রুপের সদস্যরা এখানে প্রপাগান্ডা মন্ত্রী গোবেলস এর উস্কানীতে মূলত ইহুদী লেখক, দার্শনিক, বিজ্ঞানীদের প্রায় ২০,০০০ বই পুরিয়ে দেয়। তাদের ঘোষিত অজার্মান চেতনার বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের মূল মন্ত্র ছিল ইহুদী বুদ্ধিজীবিদের হাত থেকে জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। কার্ল মার্কস, সিগমন্ড ফ্রয়েড, ম্যাক্সিম গোর্কি, হাইনরিশ হাইনে প্রভৃতি ইহুদী লেখকের বই তার মধ্যে ছিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় জার্মান নাগরিক যেমন থমাস মান, এরিক মারিয়া রেমার্ক এবং বিদেশী (আমেরিকান) লেখক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে এবং হেলেন কেলারের বইও বাদ যায়নি। সেখানে এখন বেদবাক্যের মত হাইনরিশ হাইনের একটি উক্তি (১৮২০ সালে করা) বাঁধানো আছে “তারা যেখানে বই পোড়ায়, শেষে তারা মানুষও পোড়াবে”

হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় 
হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়

রাস্তার অপরপাশে হামবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুরোন বই নিয়ে বসে থাকে লোকে বিক্রি করার জন্যে। এই অঞ্চলে এই বই পোড়ানো বিভিন্ন ভাবে স্মরণ করা হয়।

আধুনিক বই প্রকাশনা 
আধুনিক বই প্রকাশনা

আমার ক্যামেরায় বেবেলপ্লাৎসের সামনে আধুনিক বই প্রকাশনার চিন্তাধারার রুপকার গুটেনবার্গের স্মরণে স্কাল্পচার (২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সময় তোলা)

বই পোড়ানোর ৭৫ বছর পরের বেবেল প্লাৎস: আমার গল্প

বিএমডাব্লিউ কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় বেবেল প্লাটসে উন্মুক্ত ক্লাসিকাল সঙ্গীত পরিবেশিত হবে শুনে ৩০শে আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে গিয়ে হাজির হলাম। স্টেজের মাইক্রোফোন ঠিক করা হচ্ছে আর গুটিকয়েক দর্শক দেখে ভাবনায় পরে গেলাম। সামনের এক খাবার দোকানে জিজ্ঞেস করতেই জানলাম ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। সাথে এক সিনিয়র ভাই যিনি আবার পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তেমন আগ্রহী নন তবে আমাকে ভালই সঙ্গ দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে হাটতে হাটতে 'উন্টার যেন লিন্ডেন' ধরে মিউজিয়াম আইল্যান্ডের পাশ দিয়ে হাকেশার মার্কট চত্বরে চলে গেলাম সময় কাটানোর জন্যে।

লঙ নাইট অফ মিউজিয়ামসের জন্যে মানুষের ঢল 
লং নাইট অফ মিউজিয়ামসের জন্যে মানুষের ঢল

সেদিন আবার লং নাইট অফ মিউজিয়ামস শুরু হয়েছে তাই সেই অঞ্চলে লোকে গিজগিজ করছে। বছরের একটি দিন সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত মিউজিয়াম খোলা থাকে। এক টিকেটে প্রায় ১০০টি যাদুঘর, আর্কাইভ, মেমোরিয়াল, রাজপ্রাসাদ ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান দেখার ব্যবস্থা আছে। আলাদা এক বাসের বহর চালু করা হয়েছে দর্শনার্থীদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছানোর জন্যে। ৮ ঘন্টায় আর মানুষ কত দেখবে যেখানে একটি যাদুঘরেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো যায়।

আমরা ফিরে এলাম বেবেল প্লাৎসে পৌঁনে সাতটায়। চত্বরে ঢোকার আগে স্টেট অপেরার সামনে ভিড় দেখে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম। গাড়ীতে করে কেউ এসেছে এবং তাকে ঘিরে প্লেন ক্লথের সিকিউরিটি দেখে ভাবলাম কোন শিল্পী হয়ত। পরে গাড়ীর নম্বর দেখলাম ০-১ অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট এসেছেন। উনি কনসার্ট দেখতে এসেছেন বউ সাথে নিয়ে। সবাইকে হাত নাড়িয়ে অপেরা হাউজে ঢুকে গেলেন। এত কম সিকিউরিটি দেখে বিস্মিত হলাম।

জার্মান প্রেসিডেন্ট এসেছেন অপেরা দেখতে 
জার্মান প্রেসিডেন্ট এসেছেন অপেরা দেখতে

জায়গা পাওয়া নিয়ে যার পরনাই সমস্যা হল। চেয়ারের ব্যবস্থা নেই। সবাই নিজের মত বাসা থেকে টুল নিয়ে এসেছে অথবা চাদর বিছিয়ে বসেছে। কেউ কেউ আরাম করে গ্লাসে শ্যাম্পেন হাতে নিয়ে বসেছে। ক্লাসিকাল সঙ্গীত এখানে খুবই উচ্চ মার্গের একটি ব্যাপার। আমরা কোনার একদিকে একটু দাড়ানোর জায়গা পেলাম। আমার সঙ্গীটি জায়গা না পেয়ে বেশ বিরক্ত তাই ভাবলাম বেশীক্ষণ থাকা যাবে না।

সাতটার সময় বার্লিনের গে মেয়র আর বিএমডাব্লিউর প্রধান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করলেন মঞ্চে। তবে মন খারাপ হয়ে গেল যখন ঘোষনা হল যে আজকের পরিবেশনা হবে স্টেট অপেরার ভেতরে (আমন্ত্রিত দর্শকদের সামনে) এবং বিশাল টিভি স্ক্রিনে বেবেল প্লাৎসের দর্শকরা দেখবেন। আগামী কাল হবে বেথোফেনের নাইন্থ সিম্ফোনী সেটা মঞ্চে লাইভ হবে বিনামূল্যের দর্শকদের জন্যে।

মঞ্চ, বিশাল স্ক্রীন ও দর্শক শ্রোতা 
মঞ্চ, বিশাল স্ক্রীন ও দর্শক শ্রোতা

প্রায় ১০০০০ লোক উপভোগ করলেন স্টেট অপেরার নামকরা মিউজিক ডিরেক্টর ডানিয়েল বারেনবইম (একজন ইহুদি) এর পরিচালনায় বেথোফেনের অপেরা ফিডেলিও। পিন পতন নিস্তব্ধতা না হলেও কম লোকেই ফিসফিস করে কথা বলছিল আর সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিল। আমার অবশ্যি বেশীক্ষণ থাকা হলো না সঙ্গীর কথা ভেবে।

ড্যানিয়েল বারেনবইম 
ড্যানিয়েল বারেনবইম

৭৫ বছর আগে জার্মান জাতীয়তাবাদের যে পন্কিল অধ্যায় এখানে রচিত হয়েছিল তার ফল অনেক আগেই তারা ভোগ করেছে। আজ যেন একটি 'পোয়েটিক জাস্টিস' হলো এক ইহুদী সঙ্গীতজ্ঞ এখানে ১০০০০ জার্মান নাগরিককে বিমোহিত করার মাধ্যমে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

বাংলা ব্লগের বিবর্তন ও সম্ভাবনা

অনেকের হয়ত চোখে পরে নি আজকে ডেইলি স্টার ক্যাম্পাসের একটি আর্টিকেলে বাংলা ব্লগকে উদীয়মান মিডিয়া বলে আখ্যা দিয়েছে । 'বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ' এই রিপোর্টে ভাল ভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে এবং ব্লগ যে ঐতিহ্যবাহী মিডিয়ার বিকল্প নয় বরং সহায়ক তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ব্লগে প্রতি ছয় মিনিটে একটি নতুন পোস্ট এবং প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি কমেন্ট দেয়া হয় কাজেই এর জনপ্রিয়তা ও শক্তি নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

এখন এই শক্তির কিভাবে সুব্যবহার করা যায়? আমরা ইতোমধ্যে ব্লগে বেশ কিছু মানবিক সাহায্যের প্রয়াস দেখেছি যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বেশীরভাগ মানুষই সমাজে ভাল কিছু অবদান রাখতে দ্বিধা করে না। দরকার শুধু তাদের কাছে বিষয়টুকু তুলে ধরা ও সেই প্রক্রিয়াটাকে চালু করে দেয়া ও তার সুব্যবস্থাপনা। আমরা দেখেছি শুধু সাহায্য সংগ্রহ করাই নয় পাহাড় ধসের পর ব্লগাররা চট্টগ্রামে গিয়ে নিজের শ্রমও দিয়ে এসেছেন।

এগুলো তো অব্যাহত থাকবেই আমি সেটাই আশা করি। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী ব্লগ কেমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানলে হয়ত আরও কিছু ভাবনার খোরাক পাবেন 'বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ' কমিউনিটি।

১) উশাহিদি: ২০০৬ সালের শেষের দিকে কেনিয়াতে প্রচার মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার পর মোবাইল ফোনে পাঠানো সংবাদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৭ সালের শুরুতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা কভার করার জন্যে মোবাইল ফোনের এস এম এসের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদ ইন্টারএক্টিভ ওয়েবসাইট বা ব্লগ ব্যবহার করে উশাহিদি বিশ্বকে সংঘাতের সঠিক চিত্র জানাতে সক্ষম হয়। বিস্তারিত এখানে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে এরকম মোবাইল ফোন ও ব্লগের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিতে পারে ব্লগাররা।

২) সানলাইট ফাউন্ডেশন : আমেরিকান কংগ্রেসের দুর্নীতি উন্মোচন করতে একটি উদ্যোগ হচ্ছে সানলাইট ফাউন্ডেশন । এটি কাজ করেছে শতাধিক ব্লগারের সহায়তায় যারা নিজেরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কংগ্রেসম্যানদের দুর্নীতি উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি বা অন্য কোন অপরাধের বিরুদ্ধে সমষ্টিগতভাবে যে যার মত সহায়তা করে ব্লগাররা কার্যকরী অনেক কিছুই করতে পারে।

৩) উন্নত বিশ্বের এনজিওদের জন্যে তো ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ন টুল । অবকাঠামোর অভাব এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কম বলে বাংলাদেশে এ সংস্কৃতি এখনও গেড়ে বসেনি। অথচ ফান্ড রেইজিং এর মত অনেক কাজ কিন্তু এর সাহয্যে সহজেই করা সম্ভব।

চিন্তা করে দেখেন যখন বাংলাদেশের এনজিওদের জন্যে ব্লগিং এবং সোশাল মিডিয়া টুলগুলোর প্রয়োগ অবশ্য পালনীয় হয়ে যাবে তখন তাদের প্রচুর পরিমানে ব্লগিংএ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক দরকার হবে এবং এই উদীয়মান ব্লগাররাই সেই চাহিদা পূরণ করবে।

৪) ফেসবুকের জনপ্রিয়তা: প্রায় লাখেরও বেশী বাংলাদেশী ফেসবুকের সদস্য। আপনার ব্লগের লেখা বা অন্য কোন ভাল লেখা সম্পর্কে অন্যকে জানাতে চান? ফেসবুক ব্যবহার করেন।

৫) আরএসএস ফিড ব্যবহার করুন: আপনি এত পোস্টের ভীড়ে ভাল লেখা খুঁজে পাচ্ছেন না? সামহোয়ারইন আরএসএস ফিড সাপোর্ট করে। আপনার পছন্দের ব্লগগুলো যখনই নতুন পোস্ট করবে তখন তা আরএসএস ফিড রিডারে চলে আসবে। আপনার বার বার তাদের পেজে গিয়ে দেখতে হবে না যে তারা নতুন কিছু লিখেছে কি না।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Saturday, September 06, 2008

একটি অপরাধের কাহিনী

ঘটনাটি ছিল খুবই সাধারণ। ম্যাকডোনাল্ডসে খাবারের অর্ডার দেয়ার পরে ক্যাশ মেশিনে উঠল ৬.৪০ ইউরো। কয়েন খুঁজে পেতে দেরী হচ্ছে দেখে লাইনের পেছনের ছেলেটার চেহারায় দেখলাম অস্বস্তির ভাব। পাঁচ ইউরোর নোট, এক ইউরো ও পঞ্চাশ সেন্টের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার পরে ট্রেতে চেন্জ ও খাবার গুলো দিল ক্যাশের মেয়েটি। 'ডান্কে শোন' বলতে বলতেই শুনি সে পেছনের জনকে বলছে '..নেখস্টে বিটে'।

খালি যায়গা খুঁজে খেতে বসে খুঁচরোগুলো পকেটে পুরতে গিয়ে দেখি তিনটি ২০ সেন্টের কয়েন। বিলে লেখা আছে সেই ৬.৪০ ইউরো। তারপর বসে বসে ভাবলাম আমি কি তাকে ৭ ইউরো দিয়েছি? সে তো হবার নয় কারন অনেক খুঁজে পেতে কয়েনগুলো দিয়েছি। কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করার চিন্তা হলো কিন্তু বিশাল লাইন দেখে ভাবলাম 'কি দরকার'। এরপর থেকেই সমস্যাটি শুরু হল।

বাসায় ফিরে বার বার মাথায় ঘুরতে লাগল ব্যাপারটি - আমি কেন তাকে পয়সাটুকু ফেরত দিলাম না। কেন একে স্বাভাবিক মনে হল।

অথচ এই আমিই কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক বাজার করার পর পার্কিং লটে এসে কি কারনে বিলের দিকে তাকিয়ে দেখি ১১ প্যাকেট দুধের বদলে ৬টির দাম রেখেছে। আবার গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে বাকী পাঁচটির দামটুকু শোধ করে এসেছি।
আসলে আমাদের সবার ভেতরেই একটি দ্বৈত সত্তা কাজ করে। আমাদের সবারই একটি অপরাধপ্রবণতা রয়েছে যা মাঝে মধ্যে বের হয়ে পরে, অজান্তেই হয়ত। এবং আমারও হয়ত এমন আরও অপরাধবোধ রয়েছে যা হয়ত কোনদিন প্রকাশ করা হবে না।

কয়েক বছর আগে ঢাকার গুলশান এক নম্বরের এক এটিএম বুথে ঢুকেই দেখি আগের কেউ তার কার্ড ভেতরে রেখে চলে গেছে। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে "Would you like another transaction?" কয়েকটি বোতাম টিপলেই অন্যের বেশ কিছু টাকা হস্তগত হয়ে যেত। কিন্তু আমি কার্ডটি বের করে গার্ডের কাছে দিয়ে দেই কারন আমি জানতাম এটিএম এ ভিডিও ক্যামেরা থাকে এবং সেই অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পরবে। ভিডিও ক্যামেরা যদি না থাকত তাহলে আমি কি সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতাম? খুবই ভেবে দেখার বিষয়।

মাঝে মাঝে নিজের অক্ষমতা নিয়ে খুবই হতাশ হই। হতে পারলাম না আদর্শ কোন মানুষ অথবা আদর্শ কোন ক্রিমিনাল যার অপরাধবোধ নেই।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Thursday, August 14, 2008

উপমহাসাগরীয় অঞ্চলে আধুনিক দাসত্ব

অতি সম্প্রতি বাহরাইন ও কুয়েতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিয়ে যেসব লন্কাকান্ড হয়ে গেল এসব নিয়ে আরব দেশগুলোর অবস্থান কিন্তু নমনীয় না। তাদের মনোভাব এমন যে এভাবে থাকতে হলে থাকো না হলে চলে যাও।

এনিয়ে আমরা পত্রপত্রিকাতে পরস্পর-বিরোধী অনেক কথা শুনেছি। কোনটিই কিন্তু এসম্পর্কে সঠিক পরিপ্রক্ষিত দেয় না। বর্তমানে সিটিজেন জার্নালিজম ও ব্লগের যুগে আমি আশা করব আমাদের এইসব নির্যাতিত ভাইবোনেরা ব্লগের মাধ্যমে তাদের দু:খকষ্টের কথা জানাবেন।

আরব দেশগুলোর সরকারী মনোভাব এমন হলেও সাধারণ লোকজন কি ভাবছে সেটা আমাদের জানার তেমন সুযোগ নেই। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে কিছু আরব ব্লগারদের মতামত পড়ে মনে হয়েছে যে তাদের অনেকে হয়ত এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কাজের অনুমতি দেয়াতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সে দেশী ব্লগার খালিদ বলেছেন :

সম্প্রতি, বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী একটা ডিক্রি জারি করেছেন বাংলাদেশীদের নতুন কাজের অনুমোদন না দেয়ার জন্য!! এটা একজন বাংলাদেশীর জঘন্য অপরাধ করার কারনে!! এখানে আমি জানতে চাই: এই আইন করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য কি? এর আইনী দিক গুলো কি? একটা অপরাধ হলে, তদন্ত হবে আর বিচার ব্যবস্থাও আছে তার জন্য। তাহলে বাংলাদেশের লোকের উপর এই নিষেধাজ্ঞা কেন? আর এই পক্ষপাতিত্ব কেন? আর কোন আইনের আওতায় একজন বা একদলের অপরাধের জন্য একটা গোটা জাতিকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? আমরা আইনের দেশে আছি না? এই সিদ্ধান্ত কি ঠিক? অবশ্যই না আর এটা একটা গুরুতর ভুল। আজকে সবাই এমন ভাবে বলছে যেন সব বাংলাদেশী অপরাধী আর খুনী, যাদেরকে বের করে দেয়া উচিত।

(বিস্তারিত গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় )

দুইশোরও বেশী বাংলাদেশী শ্রমিককে কুয়েত থেকে বহিস্কার প্রসঙে সৌদি ব্লগার আহমাদ লিখেছেন :

আমি নিশ্চিত শুধু কুয়েত নয় গাল্ফ অঞ্চলের আমরা সবাই এশিয়ার শ্রমিকদের নীচু করে দেখি। তাদের কোন ধরনের প্রশংসা বা সম্মান তো করিই না, পশুর মত ব্যবহার করি। আমাদের নাগরিকরা তাদের সাথে এমনভাবে ব্যবহার করে যেন তারা মানুষ নয়, আর কোম্পানিরাতো তাদের সাথে আরও খারাপ ব্যবহার করে, কম বেতন দেয়া থেকে শুরু করে। আমি জানি যে ১২০ আমেরিকান ডলার (৪৫০ রিয়াল) হয়ত বাংলাদেশে উঁচু মাসিক বেতন অনেকের জন্যে, কিন্তু এই বেতনে রিয়াদ, দুবাই বা কুয়েতে কোন শ্রমিক জীবনধারণ করতে পারবে না, কোন টাকা জমানো তো দুরে থাক। আমরা যদি দৈনিক তিন বেলা খাবারের কথা চিন্তা করি, শ্রমিকদের কমপক্ষে ১২ রিয়াল ব্যয় করতে হবে প্রতিদিন। এবং তার মানে তাদের ৩৬০ রিয়াল খাবারের পেছনেই ব্যয় হবে, কাপড়, যাতায়াত ও অন্যান্যর কথা বাদই দিলাম।

গাল্ফ অঞ্চলের শ্রম মন্ত্রণালয়রা দেশের নাগরিকদের কাজের ব্যাপারেই শুধু চিন্তা করে এবং এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগায় বিভিন্ন কোম্পানি। তারা শ্রমিকদের উপর তাদের শয়তানি চাল চালে কম বেতন, অতিরিক্ত কাজ, নিকৃষ্ট বাসস্থান ইত্যাদি দিয়ে এবং সব ধরণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। যদিও কাজের সময় নয় ঘন্টার বেশী হবার কথা নয় আমরা দেখছি যে নির্মানশিল্পে এমনকি রেস্টুরেন্টে সারাদিন ধরে শ্রমিকরা কাজ করছে। তারপরেও আমরা রেগে যাই যখন মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাল্ফ অঞ্চলে দাসত্বের অভিযোগ তুললে।

সরকারী বড় বড় প্রকল্পের পাওনা যখন পরিশোধ করতে সরকার দেরী করে, অনেক কোম্পানিরাই শ্রমিকদের বেতন দেয়া বন্ধ রাখে। যখন শ্রমিকরা প্রতিবাদ শুরু করে এবং তাদের কণ্ঠ তাদের দেশের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে, ঐসব কোম্পানীরা তাদের কাছে বলে যে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে না বলে তারা দিতে পারছে না। অথচ হয়ত তাদের প্রাপ্যের কিছু পরিমাণই বাকী আছে যা হয়ত সাত-আট মাস পরে পাওয়া যাবে। এর সাথে শ্রমিকদের কোন সম্পর্ক না থাকলেও তারা এ দিয়ে শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখে। তাদের আট মাস ধরে বেতন দেয়া হয় না - তারপরেও আমরা রেগে যাই যখন তারা অপরাধ ও চুরি চামারী বেছে নেয়।

যখন আমি শ্রমিকদের দু:খ দুর্দশার আসল ঘটনাগুলো শুনি, আমার এটাই বুঝতে পারি যে তাদের দাসের মতই ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কোন কোম্পানি তাদের রেসিডেন্স পার্মিট নবায়নের জন্যে একমাসের বেতন কাটে, আরেক কোম্পানি শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি থেকে বঞ্চিত করে। তাদের ছুটির জন্যে কোন ওজর শোনা হয় না, এমনকি অসুস্থ অবস্থায়ও তাদের কাজ করতে হয়। একজন শ্রমিক বলেছে যে সে তিন বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করছে কিন্তু একবারও হজ্জ্ব করতে পারেনি কারন তার কোম্পানি তাকে দুদিনেরও ছুটি দেয়নি।

এইসব খারাপ দিকগুলোর প্রভাব বাসার কাজেও পড়েছে। সমস্ত উপমহাসাগরীয় দেশগুলিতে বাসার কাজের লোক বা ড্রাইভার ১৮ ঘন্টা একনাগারে কাজ করে, এবং এদের অনেকেরই ঠিকমত শোয়ার যায়গা নেই। কারও কারও শোয়ার জায়গা মিলে রান্নাঘরে, ফ্রিজ এবং ওভেনের মাঝামাঝি যায়গায়। একদা আমার এক বন্ধু বলেছিল (গর্ব সহকারে) যে সে তার কাজের মেয়েকে উঠান ঝাড়ু দিতে দেয় না কারন সে হয়ত পড়শীর ড্রাইভারের ফোন নম্বর জেনে যেতে পারে। তাই সে কখনও বাড়ীর বাইরে যাবার সুযোগ পায় নি এবং হয়ত কোনদিন সুর্যরশ্মির স্পর্শ পায় নি ছাদে কাপড় শুকানোর সময় ছাড়া। আমার বন্ধুটি বলেছিল যে তাকে পরিবারের সাথে দোকান বা রেস্টুরেন্টেও যেতে বাধা দেয়া হয় অন্যান্য কাজের লোকের সাথে পরিচিত হবে এই ভয়ে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সে কি জেলে বন্দী?' সে বলল, ‘কিন্তু এই কাজের মেয়ে তো সুখেই আছে!'

আমাদের সবচয়ে বড় সমস্যা ইসলাম ধর্ম নিয়ে নয়, অবশ্যই; আমরা আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের ইসলামিক রীতি নিয়ে গর্ব করি কিন্তু সেগুলো পালন করি না। যে কোন দিন একটি নির্মান স্থানের সামনের ট্রাফিক লাইটে থেমে দেখবেন, কিভাবে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে, শ্রমিকরা একটি যন্ত্রপাতির (অথবা ভেড়া বহনের) ট্রাকে গাদাগাদি করে আছে। কিন্তু কোম্পানির মালিকের লালসা বড়, তাদের বাসস্থান থেকে কার্যস্থলে আনা নেয়ার জন্যে বাস কেনে না, যা কিনতে হয়ত মাত্র ৪০,০০০ রিয়াল খরচ হত। যদি এই বিষয়টি আমার হাতে থাকত, ট্রাকে করে শ্রমিক বহনকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতাম, এবং বিচারে রায় হত মালিককে এক সপ্তাহ এভাবে যাতায়াত করতে হবে। (শুধুই আমার স্বপ্নে!)

আপনারাই বলেন, কখন আপনি আপনার ড্রাইভার বা কাজের লোকের জন্যে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনেছেন? এবং আপনি ড্রাইভারকে কি আপনার মোবাইল ফোন দেন তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্যে? আর আপনার কাজের মেয়ের বেলায় কি হয়? সে কি এখনও পরিবারকে চিঠি লিখে পোস্টে পাঠায়?

এটি যে দাসত্ব এ ব্যাপারে আপনার কোন সন্দেহ আছে?


(সূত্র গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলা )

Monday, August 11, 2008

বাংলা ব্লগ ও ব্লগ পলিটিক্স

সেদিন এক সৃহৃদ বাংলা ব্লগারের সাথে কথা বলার সময় সে জানাল "আর বলেন না ব্লগ পলিটিক্স নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম"। এই কথাটি ইদানিং প্রায় শোনা যায় দেশী ব্লগারদের মধ্যে নানা ভাবে।

বাংলা ব্লগের উৎপত্তি ও স্বরুপ বিশ্লেষনে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে জর্ন বার্জার প্রথম ওয়েব্লগ শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৯৮ সালে আমেরিকায় ওপেন ডায়রি প্রথম ব্লগ প্লাটফর্ম হিসেবে জন্ম নেয়। পরের বছরই লাইভ জার্নাল, ডায়রিল্যান্ড ইত্যাদি চালু হয়। লক্ষণীয় যে এগুলো ছিল বর্তমান বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোর আদলে অর্থাৎ এদের (হয়ত কিছুটা ভিন্নভাবে) একটি এগ্রেগেটর বা প্রথম পাতা ছিল যেখানে সবার লেখা আসত। পরে এই ডিজাইনের বিবর্তন শুরু হয় এবং মনে হয় ব্লগার (ব্লগস্পট) প্লাটফর্ম থেকেই ব্লগগুলো স্বকীয়তা পাওয়া শুরু করে। পরবর্তী বছরগুলোতে প্রফেশনালরা নিজস্ব ডোমেইন ব্যবহার করা শুরু করে এবং মুভেবল টাইপ ও ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি ব্লগিং প্লাটফর্ম করে নিজেরাই একেকটি আইকন হয়ে যায়।

ইংরেজী ব্লগের বিস্ফোরণ শুরু হয় ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমণের সময়, ঘটনা চক্রে সে বছরই আমি ইংরেজীতে ব্লগিং শুরু করি। কিন্তু বাংলা ব্লগ তখনও ছিল দুর অস্ত। কারন বাংলা লেখার প্লাটফর্মের সমস্যা। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতার দেবাশীস ও সুকন্যা ব্লগস্পটে বাংলা ব্লগ শুরু করেন ও খুঁজে খুঁজে আগ্রহীদের আমন্ত্রণ জানান ও সাহায্য করেন শুরু করার জন্যে। আমার নিজের ইউনিকোড ও অন্যান্য বাংলা লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। আমার কম্পিউটারে তখন লেখো নামে একটি ইউনিকোড এডিটার ইনস্টল করে ব্লগে বাংলা লেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু সেটি বেশ জটিল ছিল তাই আগানো সম্ভব হয় নি।

২০০৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ (সামহোয়ার ইন) আত্মপ্রকাশ করলে বাংলা ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে নবদিগন্ত রচিত হয়। হাসিন ও এমরান বাংলার প্লাটফর্ম সমস্যার প্রথম বাঁধাটি ভাঙ্গে এমবেডেড এডিটর ব্যবহার করে। অনেকেই বাংলা টাইপিং জ্ঞান ও বাংলা কিবোর্ড ছাড়া ফোনেটিকে সহজে লিখতে সমর্থ হয়। ২০০৬ সালে ব্লগটি ইউনিকোড হলে পূর্ণতা পায়। এর সাথে সাথে কিন্তু ব্লগস্পট ও অন্যান্য প্লাটফর্মে অনেকে লেখা শুরু করে ইউনিকোডের মাধ্যমে।

সেসময় বাংলা ব্লগের লেখক সংখ্যা পাঁচশর মত থাকলেও ততদিনে পূরো ব্লগোস্ফিয়ারে বিপ্লব ঘটে গেছে। ২০০৬ এর আগস্টে ডেভিড সিফরি টেকনোরাতির (ব্লগ সার্চ ইন্জিন) এক জরীপে দেখান যে বিশ্বে পাঁচ কোটি ব্লগ রয়েছে।


সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ব্লগগুলো কোন ভাষায় সেই পরিসংখ্যানটি। এই বিপুল পরিমাণ ব্লগের মধ্যে মাত্র ৩৯% ইংরেজী ভাষায়। জাপানী ভাষা ৩১% নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এবং চাইনিজ ১২%। এই ভাষা বৈচিত্র দেখায় যে মানুষ তার মাতৃভাষাতে কথোপকথনে বেশী উৎসাহী। কিন্তু বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে কথিত ভাষা বাংলায় তখন ব্লগ ছিল হাতে গণা।

আমাদের জনসংখ্যার দিকে তাকালে দেখব আমাদের দেশে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন ১% এরও কম অথচ এশিয়ার গড়পড়তা পেনিট্রেশন ১৪% (সূত্র )। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তুলনায় আমাদের বাংলা ব্লগারদের সংখ্যা খুবই কম।

গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্লগের সংখ্যা এগারো কোটিতে ঠেকেছিল এবং এবছরে নিশ্চয়ই বিশ কোটির কাছাকাছি হবে। কিন্তু বাংলা ব্লগ কি সেই পরিমানে বেড়েছে?

গত দুই বছরে বাংলা ব্লগ অনেক এগিয়েছে, বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম হয়েছে, ইউজার বাড়ছে এবং স্বাতন্ত্র্য গড়ে উঠেছে এদের মধ্যে। অভ্রের মত ওপেনসোর্স বাংলা ইনপুট সিস্টেমের কারনে বাংলা লেখা এখন অনেক সহজ। তবে কেউ কেউ আশন্কা প্রকাশ করছেন যে হারে বাংলা ব্লগ বাড়ছে তাহলে বাংলা ব্লগের পরিণতি কি হবে ভবিষ্যতে?

যারা এই প্রশ্নটি করছেন এবং যারা বাংলা ব্লগ প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে এইসব পলিটিক্সে ব্যস্ত তারা আসলে এর বিশাল চিত্রটি দেখতে পাচ্ছেন না। সরকার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিটি স্কুলে পিসি ও ইন্টারনেট দেয়া হবে। যখন এই সব স্কুলের ছেলেরা ব্লগিং করা শুরু করবে তখন আমাদের আরও গোটা কুড়ি ব্লগিং প্লাটফর্ম লাগবে।

আর কে কোথায় ব্লগিং করবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। ব্লগিংয়ের ব্যাপারটিও বেশ সাম্প্রদায়িক এবং সামাজিক। আমরা ব্যাক্তি জীবনেও নিশ্চয়ই কিছু নির্দিষ্ট লোকের সাথে বন্ধুত্ব করি, কিছু পছন্দের পত্রিকা পড়ি। ব্লগের ক্ষেত্রেও এমনই, বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন পছন্দ থাকতে পারে। কাজেই অমুক নাক উঁচু, অমুকের মডারেশন নাই ইত্যাদি অভিযোগের তেমন ভিত্তি নেই বলেই মনে করি। সবাইকে তাদের স্বকীয়তা নিয়ে থাকতে দেয়াই উত্তম।

অনেককেই দেখি অহেতুক অন্য প্লাটফর্মের বিরুদ্ধে লেগে থাকতে, এর ওর বদনাম করতে। মনে রাখতে হবে একটি দুটি প্লাটফর্মই বাংলা ব্লগের সবকিছু নয়। বেশ কটি প্রতিশ্রুতিমুলক প্লাটফর্ম চালু হয়েছে ভবিষ্যতে আরও হবে। অনেকে হয়ত ভবিষ্যতে স্বতন্ত্র ব্লগে লিখতে পছন্দ করবে। লোকে তাদের পছ্ন্দমতই তাদের কমিউনিটি ঠিক করবে। কয়েকদিন পরে ব্লগ এগ্রেগেটর ও বেস্ট অফ ব্লগস এর মত উদ্যোগ জনপ্রিয় হবে।

বাংলা ব্লগের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ লাখের মত। অদুর ভবিষ্যৎে যখন এই হার দশগুণ হবে তখন দেখবেন দেশে বাংলা কন্টেন্ট এর আকাল পড়বে। দেশের বাংলা সংবাদপত্রগুলোর অধিকাংশই ইউনিকোড না তাই গুগল সার্চ ইন্জিনে সেসব আসে না। আপনি যা এই ব্লগে লিখেছেন তার থেকে একটি বাক্য সার্চ দিয়ে দেখেন গুগলে আসে কি না। এটি আজ থেকে দশ বছর পরেও থাকবে (ব্লগ মুছে না ফেললে)। কাজেই কি অমিত শক্তি আপনার লেখায় রয়েছে কল্পনা করতে পারছেন?

কাজেই যে যে ব্লগেই লিখুন না কেন হাত খুলে লিখে যান, আপনার সুখদু:খের কথা, মজার অভিজ্ঞতা ভ্রমণ ইত্যাদি যা ভাল লাগে তাই।

গণতন্ত্রের মূল বিষয় হচ্ছে ব্যক্তি পছন্দ ও মতামত প্রকাশের অধিকার। একে অপরের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে এই মতামতকে জোড়ালো করে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়া যায় যা পরে মেজরিটিতে পরিণত হয়। ব্লগের মাধ্যমে সহজেই এটি করা সম্ভব।

বিদ্যমান ব্লগ পলিটিক্সে জড়ানোর দরকার নেই। আপনারা নিজেরাই নতুন ইতিহাস ও রাজনীতি তৈরি করুন।

গ্রাফ: সিফরি'জ এলার্টসের সৌজন্যে

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Thursday, July 24, 2008

আমরাও পারি: গণহত্যা আর্কাইভের জন্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন

সুবিনয় মুস্তফী এবং নিঝুমের পোস্টের দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে আপনাদের কাছে একটি আব্দার নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ গণহত্যা আর্কাইভ একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক সম্মিলিত উদ্যোগ

এই সাইটটিকে আরও তথ্যবহুল করার জন্যে আপনাদের সকলের সাহায্য প্রয়োজন। যে যে ক্ষেত্রে কাজ করা দরকার তা হলো:

× প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ যোগাড় করে লিপিবদ্ধ করা।
× বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সাময়িকীতে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত লেখার স্ক্যান্ড কপি বা (অনলাইনে হলে) লিন্ক যোগ করা।
× আরও ছবি যোগ করা, ফটোগ্রাফারদের পরিচয় সহ। ইতিমধ্যে প্রকাশিত ছবিগুলোর ফটোগ্রাফারদের পরিচয় জেনে তা যোগ করা।
× বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত ডকুমেন্টারির ভিডিও যোগ করা। চলচ্চিত্রের ট্রেইলার যোগ করা।
× বিভিন্ন তথ্যবহুল সাইটের লিন্ক আছে এতে। কিন্তু সাইটের মালিকদের সাথে অনেক ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা যায় নি। আমরা চাই যে তাদের অনুমতি নিয়ে ঐসব সাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলোর ব্যাকআপ রাখা যাতে ডোমেইন এক্সপায়ার হয়ে তাদের তথ্য হারিয়ে না যায়। পারলে এই সাইটে তাদের জন্যে হোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করা। এ জন্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করলে খুব উপকার হয়।
× আমাদের দরকার ইতিহাসবিদ, সমালোচক, যারা এই সাইটের কন্টেন্ট বিশ্লেষন করে ত্রুটিমুক্ত করবে এবং যে সব তথ্য অনুপস্থিত তা যোগ করবে।
× বিতর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও গবেষণা এবং বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে সত্য তথ্য উপস্থাপন।
× এর প্রচারের জন্যে আপনাদের সহায়তা দরকার। পত্রিকায় সংযোগ আছে যাদের তারা এটি নিয়ে আর্টিকেল ছাপাতে পারেন।

আপনারা হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন এই আর্কাইভের কেন দরকার। আমাদের চারপাশে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রচুর ম্যাটেরিয়াল আছে, আছে বই, দলিলপত্র। কিন্তু সেগুলো কি সহজে আপনারা পান যখন আপনার দরকার? অনলাইনে তথ্য থাকার একটি সুবিধা হচ্ছে আপনি মুহূর্তেই কোন তথ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। এই সাইটে আমরা শক্তিশালী সার্চ ফিচার এবং ট্যাগিং যোগ করেছি (এর প্রয়োগ পরবর্তীতে দেখতে পাবেন) যার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তথ্য থেকে আকাঙ্খিত বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে।

এই সাইটটি যেন ভবিষ্যতের গবেষকদের, সত্যান্বেষীদের জন্যে একটি তথ্য ভান্ডার হয়ে উঠতে পারে সেটিই আমাদের লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত বিতর্ক এত রাজনীতি সম্ভব হয় কারন একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারের অভাবে যে কেউ নতুন নতুন তথ্য প্রচার করে সবাইকে বোকা বানাতে পারে। পরবর্তীতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা পেলে ইচ্ছে আছে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের একটি সমৃদ্ধ ডাটাবেজ তৈরি করার।

আপনারা আপনাদের বক্তব্য ও উপদেশ মন্তব্যের স্থানে জানাতে পারেন। অথবা দয়া করে আমাকে ইমেইলে জানাতে পারেন। আমরা একটি গ্রুপমেইলের মাধ্যমে জানব ও আলোচনা করব এ সংক্রান্ত আপনার সাজেশন ও সবাই মিলে কি করে কাজগুলোকে এগিয়ে নেয়া যায় তা।

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ওবামার জনপ্রিয় স্লোগানটি আমি ধার নিচ্ছি এই দৃঢ় আশা প্রকাশ করার জন্যে যে 'আমরাও পারব'। এই বিশ্বাসটিই আসল। আশা করছি আপনাদের সাথে পাব। ধন্যবাদ।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Wednesday, July 23, 2008

ইন্টারনেট কি সুশীলদের দখলে?

বুদাপেস্টে গ্লোবাল ভয়েসেস সামিটের একটি সেশনে তুলে ধরা হয়েছিল যে ব্লগিং কিভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরছে। সেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাইজিং ভয়েসেসের কার্যক্রম যা বিশ্বব্যাপী প্রান্তীক ও দরিদ্র-সুযোগবিহীন সমাজকে ওয়েব ২.০ (ব্লগিং, চিত্র, ভিডিও, পডকাস্ট) ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সুখ-দু:খের কাহিনী প্রকাশ করার কাজে রত বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষূদ্র অনুদান ও প্রশিক্ষন ইত্যাদি সাহায্য প্রদান করে।

গ্লোবাল ভয়েসেসের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের (পশ্চিমা দেশগুলো বাদ দিয়ে) ব্লগারদের কন্ঠ ও তাদের মতামত তুলে ধরা যা প্রচলিত প্রচার মাধ্যম ছাড়া আরেকটি পরিপ্রক্ষিত দেবে ঐসব অঞ্চল সম্পর্কে জানার জন্যে। কিন্তু কিছূ দিন পরে দেখা গেল যে উন্নয়নশীল বিশ্বে সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরাই বেশী ব্লগিং করে। ফলে বিশ্ব যেন তাদের কন্ঠই বেশী শুনতে পায়। বিপুল পরিমাণ যে সুবিধাহীন জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া এইসব কথপোকথন অর্থহীন। সে অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যেই রাইজিং ভয়েসেস গত এক বছর ধরে কাজ করছে এবং ইতিমধ্যে এর ১৬টি প্রকল্প সফল ভাবে কাজ করছে।

এই প্রকল্পগুলোর এক একটি বিষয় বৈচিত্রে অভূতপূর্ব। নেইবারহুড ডায়রিজ কলকাতার বউবাজার অঞ্চলের (পতিতাপল্লীর) শিশূদের সিটিজেন জার্নালিস্ট হওয়া শেখাচ্ছে। বাংলাদেশের নারী জীবন ঢাকার কর্মজীবি নারীদের কারিগরী প্রশিক্ষনের পাশাপাশি ব্লগিংও শেখাচ্ছে এবং তারা আজ গল্প, কবিতা, রিপোর্টের মাধ্যমে তাদের অব্যক্ত কথাগুলো, তাদের ভাললাগাগুলো প্রকাশ করতে পারছে

এই বাংলাদেশী নারীরা ব্লগে লিখেন। আপনি কি তাদের লেখা পড়েন?

জামাইকার প্রিজন ডায়রিজ জেলের কয়েদিদের ব্লগিংয় শেখাচ্ছে ও তাদের কথা প্রকাশ করতে সাহায্য করছে - কোন পরিস্থিতিতে তারা এখানে আসলো, কেন অপরাধ করল, ভবিষ্যতে কি করবে ইত্যাদি। কেনিয়ার রিপ্যাক্টেড অগাস্তো বোয়ালের ইনভিজিবল থিয়েটার বা থিয়েটার অফ দ্যা অপ্রেসড এর আদলে অংশগ্রহণমূলক ম্যাগনেট থিয়েটার এবং আইসিটি ব্যবহার করে স্থানীয় ক্যাম্পের তরুণ-তরুণীদের বিহেভিয়ার চেন্জ সংক্রান্ত কাজ করছে।

এরকম প্রতিটি প্রকল্পই স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। এই প্রকল্পগুলো নিয়ে বানানো একটি ভিডিও ট্রেইলার দেখুন

সামিটে রাইজিং ভয়েসেসের প্রকল্পগুলো থেকে যে কয়েকজন এসেছিল (বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত নারী জীবনের তসলিমা ভিসা জটিলতার জন্যে আসতে পারে নি) তার মধ্যে একজনের কথাই বলব, ক্রিস্টিনা কিসবার্ট বলিভিয়ার প্রত্যন্ত অন্চলে থাকা একজন আদিবাসী মেয়ে যার নিকটবর্তী এল আল্টো শহরে যেতে ৫ ঘন্টা লাগে। সে তার ব্লগের মাধ্যমে আদিবাসী সমাজের সুখ, দু:খ ও সমস্যার কথা তুলে ধরছে। বলিভিয়ার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী প্রায় ত্রিশটি আদীবাসী সমাজ নিয়ে গঠিত অথচ সেদেশের প্রচার মাধ্যম তাদের গুরুত্ব দেয়না - কারন প্রচার মাধ্যম তো শিক্ষিত এলিটদের।

এই পরিস্থিতি আমাদের দেশেও বিদ্যমান আমাদের দেশেও অনেক আদিবাসী আছে, আছে অনেক গরীব লোক। তাদের সম্পর্কে আমাদের জানতে হচ্ছে বড়লোকদের, রাজনীতির মুখপাত্র প্রচার মাধ্যমের মাধ্যমে। তাদের বলার কোন প্লাটফর্ম আমরা দিচ্ছি না।

সামহোয়্যার ইন ব্লগে আমি গুটিকয়েক আদিবাসী ব্লগার দেখেছিলাম যাদের একজন মার্মা ভাষায় কবিতা প্রকাশের জন্যে কটুক্তির শিকার হয়েছিল। সেও ব্লগ পলিটিক্সেরই স্বীকার। হ্যা শব্দটি ইদানিং বেশ শোনা যাচ্ছে। আমরা রাস্তার সস্তা পলিটিক্সকেও ব্লগে টেনে আনছি।

যে কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশের মূল বিষয়টি যেটি দরকার সেটি হচ্ছে সমাজের প্রতিটি মানুষের বাক স্বাধীনতার অধিকার। যে কোন কিছূতে একমত হবার জন্যে দরকার মুক্ত আলোচনা ও উন্মুক্ত তথ্য প্রবাহ. দরকার ভিন্নমতকে সম্মান করা। সেটি যত্ক্ষণ না করতে পারছি ততক্ষণ আমরা সুষ্ঠু গণতন্ত্র পাব না।

বাংলাদেশের গরিব লোকেরা ব্লগিং করে মনের ভাব প্রকাশ করবে এমনটি এখনও সায়েন্স ফিকশন শোনালেও নিশ্চয়ই ফকিরের হাতে মোবাইল থাকবে এটি দশ বছর আগে এমনই শোনাত। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে আমাদের বিপুল সংখক এনজিও ব্যাস্ত ও এ নিয়ে নাম নিজেরাই কামাচ্ছে। তবে যাদের জন্যে এ উদ্যোগ তারা কেমন আছে, তাদের ফিডব্যাক কি এসব কিন্তু গণমাধ্যমে আসে না (আসে হয়ত শেষ পর্যায়ে তারা সর্বসান্ত হলে বা সাফল্যমন্ডিত হলে)। তাদেরওকি মুক্তভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দিতে পারে না এইসব এনজিওগুলো ব্লগিং বা অন্য কোন ভাবে?

কিন্তু এই অপাংতেয়দের দাবিয়ে রাখতে পারলেই তো সুশীল সমাজের লাভ। আমরাতো এমনই দেখে আসছি। এ অবস্থার পরিবর্তন কি হবে?

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Tuesday, July 22, 2008

দানিয়ুবের মুক্তো, ব্লগারদের সম্মিলন এবং ই-বুক

দানিয়ুবের পারে বুদাপেস্ট

বুদাপেস্টে হাজির হয়েছিলাম গ্লোবাল ভয়েসেস সম্মিলনে অংশ নিতে। এয়ারপোর্ট শাটল (মাইক্রোবাস) এ চেপে হোটেলে পৌঁছে মাল পত্র রেখে ভর দুপুরে ঘুরতে বের হলাম। মনে হলো এতো ধুসর গোধুলি, হিমু, সুবিনয়দের দেশ। চারিদিকে লোকেরা স্বল্প বসনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী ক্ষীনকায় সুন্দরী ললনারাই তার মধ্যে বেশ চোখে পরছে। তাপমাত্রা তখন ত্রিশ ডিগ্রি - তাদের জন্যে তালপাকা গরম। সেটিও কারন হতে পারে তাদের এমন খোলামেলা পোশাকের জন্যে। ইউরো কাপের খেলা দেখে ম্যারাথন আড্ডা জমিয়ে দল বেধে রাত বারটার দিকে হোটেল ফিরতে গিয়ে দেখি বুদাপেস্টের রাস্তাঘাট তখনও ভরা হাট। তরুণ-তরুণীরা তখনও পার্টি মেজাজে। ভেনেজুয়েলার ব্লগার হুলিয়ানা রিন্কন মন্তব্য করল আগে জানতাম আমাদের ল্যাটিন সংস্কৃতি বেশ খোলামেলা, তবে এদের কাছে তা নস্যি।

বুদাপেস্টে কারা যায়বুদাপেস্টে কারা যায়

সম্মিলনে অংশ নিতে এসেছিল বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্লোবাল ভয়েসেসের প্রায় একশ কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী লেখক, অনুবাদক, শুভানুধ্যায়ী ও বন্ধূরা এবং এদের সবার মধ্যে একটিই মিল আছে সেটি হচ্ছে সবাই ব্লগার। সম্মিলনে আরও এসেছিল বিভিন্ন প্যানেল আলোচক, ইন্টারনেট জগতের পরিচিত কিছু তারকা, সাংবাদিক যারা আরও প্রায় শ খানেক হবে। নানা দেশের লোক মিলে বেশ কলকাকলী মুখর একটি ব্যাপার হলো।

সামিটে অংশগ্রহণকারীসামিটে অংশগ্রহণকারী

সম্মিলনের প্রথম তিনদিনের সূচীপত্রে ইন্টারনেট সিকিউরিটি, ব্লগারদের নিরাপত্তার মত গুরুগম্ভীর ব্যাপার থাকলেও (সে নিয়ে পরে আলাপ করব) পরবর্তী দুই দিন গ্লোবাল ভয়েসেস নিজস্ব মিটিঙে নানানরকম সংস্কৃতি বিনিময় আর অনানুষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা বিনিময় সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সম্পাদক নেহা খুবই মজার মেয়ে। সে সবাইকে দিয়ে বলিউডের নাচ নাচিয়ে ছাড়ল এক সেসনে।

গ্লোবাল পানীয়গ্লোবাল পানীয়

আরেকটি পর্ব ছিল পানীয় বিনিময়। বলা হয়েছিল সবাই যার যার দেশ থেকে একটি করে পানীয় নিয়ে আসবে। কেনিয়ার ব্লগার দাউদি ফ্লাইট আগে ছিল তাই চলে গিয়েছিল দুই বোতল হাতে ধরিয়ে এই বলে যে এগুলো কেনিয়ানরা জেলে গেলে খায়। বলাই বাহুল্য সবাই তাদের কড়া জিনিষ নিয়ে এসেছিল এবং সমাপনী পার্টিতে ওগুলো খোলা হলো। লেবাননের মুসা আর রাজানের পাল্লায় পরে ওদের পানীয় কিছুটা গলধ:করন করলাম। পানি দেয়ার সাথে সাথে ওটি কেমন সাদা হয়ে গেল। পান করার পরে বুঝলাম কি জিনিষ। কতক্ষন বসে ছিলাম। গায়ে আরবী লেখা দেখে বুঝতে পারিনি। পরে ভাল করে ছোট অক্ষরের লেবেল পড়ে দেখি আরাক - ৫৩% এলকোহল। এরকম ল্যাটিন আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া, ইউরোপীয়ান অনেক নাম না জানা (স্ট্রঙ!) পানীয় ছিল সেখানে।

উপহার বিনিময়ও হলো। বলিভিয়া থেকে এডি আভিলা তৈরি করে এনেছে স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি কাপড় দিয়ে বানানো ল্যাপটপ ব্যাগ। আর পেরু থেকে হুয়ান আরেলানো এনেছে বিশালাকার সামুদ্রিক মাছের আঁশের উপর পেইন্টিং করা চাবির রিং।

দানিয়ুবের পারে বুদাপেস্টদানিয়ুবের পারে বুদাপেস্ট

এবার আসি দানিয়ুবের মুক্তো নামে অভিহিত বুদাপেস্ট শহরের পরিচয় পর্বে। দানিউব যে চারটি দেশের রাজধানী ( ভিয়েনা, ব্রাতিস্লাভা, বুদাপেস্ট আর বেলগ্রেড) দিয়ে গেছে সেগুলোর সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য খুবই উল্লেখযোগ্য। দানিয়ুবের এক পাড়ে বুদা ও ওবুদা (ওল্ড বুদা) এবং অপর পারে পেস্ট শহর। এ তিন মিলেই ১৮৭৩ সাল থেকে হাঙেরীর রাজধানী বুদাপেস্ট। এখানে ভাষা নিয়ে পর্যটকদের খুব সমস্যা হয়- ইংরেজী অনেকে জানে না। তবে দেখা গেল জার্মান বললে কিছূটা কাজ হয়। কারন হয়ত হাঙেরী কিছু সময় অস্ট্রিয়ার নিয়ন্ত্রনে ছিল যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অবসান হয়। আরেকটি কারন হতে পারে যে অনেক জার্মান পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে।

নতুন বুদাপেস্টনতুন বুদাপেস্ট

লম্বা সামিট শুরু হওয়া পর অবসর সময় কম ছিল বলে সামিটের সেশন ফাঁকি দিয়েও কিছু পর্যটন হলো। তবে অতৃপ্তি থেকেই গেল। আসলে দানিয়ুবের পারে বসে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়া যায়।

ভেনেজুয়েলার আরেক ব্লগার লরা ভিদাল সাহিত্যের ছাত্রী। অরুন্ধতী রায়ের উপর একটি ডিসার্টেশন জমা দিতে হয়েছে বলে সে ভারত উপমহাদেশের উপর বেশ পড়াশোনা করেছে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সে জানতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু (রবীন্দ্রনাথ ছাড়া) সে বাংলা কোন সাহিত্যই পড়ে নি। আমাকে পেয়ে তার প্রশ্নবাণ শুরু হলো। আমি তাকে বাংলাদেশের ব্লগিংয়ের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে বললাম। সে খুবই অবাক এবং সাথে সাথে আনন্দিতও হলো যে আমাদের অনলাইন রাইটার্স ফোরাম রয়েছে এবং (সচলায়তনে) নিয়মিত সাহিত্যের উপর ইবুক প্রকাশিত হয়। সে আক্ষেপ প্রকাশ করল যে তাদের সাহিত্য সংক্রান্ত বিচ্ছিন্ন ব্লগ থাকলেও এমন উদ্যোগ তাদের বিশাল ব্লগোস্ফিয়ারে কেউ নেয় নি।

সচলায়তনের বছর পূর্তি উপলক্ষে এর পেছনের সৃহৃদদের অভিনন্দন জানিয়ে বলছি যে আপনাদের কষ্ট বৃথা যায় নি। অবশ্যই বলে বেড়ানোর মতো কিছু অর্জন হয়েছে।



প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Monday, July 14, 2008

বাংলা গানের বিশ্বজয়

পলবাশা সিদ্দিক হচ্ছে ১৭ বছরের এক বাংলাদেশী তরুণী এবং আমেরিকার মিনিয়াপলিস সাউথওয়েস্ট হাই স্কুলে পড়ে। তার ডাক পড়ল ভিডিও গেইম মেকার ম্যাট হার্ডিংয়ের একটি ভিডিও "ড্যান্সিং ২০০৮" বা "হোয়্যার দ্যা হেল ইজ ম্যাট " এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে কন্ঠ দেবার জন্যে। সে আধুনিক স্টাইলে একটি রবীন্দ্রসংগীত গাইল এবং তার পর তো ইতিহাস। তার মায়াবী কন্ঠ ও ভিডিওটির অভিনবত্বের কারনে এটি একটি সফল ইন্টারনেট ভিডিও হিসেবে সবার দ্বারা সমাদৃত হয়েছে।

গত ২০শে জুন এটি প্রকাশের পরে প্রথম দুদিনেই এটি ১ মিলিয়ন হিট পেল। সবাই এত পছন্দ করল যে এটিকে ফেসবুক, মাইস্পেস বা ইমেইলের মাধ্যমে বন্ধুদের কাছে পাঠাতে লাগল। এই ড্যান্সিং ভিডিওটি ইতিমধ্যে ৪ মিলিয়নবার দেখা হয়েছে বিশ্বজুড়ে।

সাড়ে চার মিনিটের এই ভিডিওটি ১৪ মাস ধরে বিশ্বের ৪২টি দেশে শুট করা হয়েছে হাজারেরও অধিক কাস্ট নিয়ে। এই ভিডিওটি সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাবেন এখান থেকে । ভিডিওটি দেখুন ও গানটি শুনুন।



পলবাশার আরেকটি গান শুনুন এখানে

[ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা: পলবাশা এবং মিনপোস্ট] 

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Tuesday, May 27, 2008

আরিফকে কি সবাই ভুলে গেছে?

আমাদের সমাজে অনেক কিছু বিষয়েই আমরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। কিন্তু আমাদের দৌড় ঐ মৌখিক আস্ফালন পর্যন্তই। কার্যকারনে দেখা যায় যে আমরা আশা করে থাকি যে অন্য কেউ আমাদের হয়ে কাজগুলো করে দেবে।
কার্টুনিস্ট আরিফ নিয়ে যে সব নাটক অনুষ্ঠিত হল আমাদের দেশে এবং এ নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত নেই যে ছেলেটি শুধু শুধু পরিস্থিতির শিকার হয়ে মিথ্যে অপবাদ নিয়ে এতদিন জেলে থাকল। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে আরিফ নিয়ে একটিও উল্লেখযোগ্য রিপোর্ট পড়ি নি। কোন অদৃশ্য কাঠির ইশারায় সবাই তাকে এড়িয়ে গেছেন চাচা আপন বাঁচা বলে।

একমাত্র ব্যতিক্রম আজ দেখলাম। বিশিষ্ট সচল এবং সাংবাদিক অমি রহমান পিয়াল আরিফের একটি স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ইংরেজী ভাষায় এটি প্রকাশিত হয়েছে ই বাংলাদেশে

স্বাক্ষাৎকারটি পড়ে আমার অনেক গুলো অনুভূতি হয়েছে: ছেলেটির অসহায়ত্ব দেখে বুক কান্নায় ভরে উঠেছে, জেলে জেএমবি দ্বারা আক্রান্ত হবার ঘটনা পড়ে ক্রোধে ফেটে পরেছি (এই কি তাকে সেইফ কাস্টডিতে রাখা?), মঈনুল হোসেনের কারনেই কি তার এই ভোগান্তি সে চিন্তায় মগ্ন হয়েছি। তার জেলের সঙ্গী আরাফাত রহমান কোকোর ভণ্ড মুখোশ দেখে হেসেছি। সবচেয়ে কষ্টের কারন এই ছিল অমি রহমান পিয়ালের আগে কোন সাংবাদিক আরিফের স্বাক্ষাৎকার নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।

আমাদের সমাজকে প্রশ্ন করতে হবে কিসের ভয়ে আমরা সব সময় থাকি? কেন আমাদের ধর্মের মুখোশ পড়ে এই ভণ্ডামি গুলো করতে হয়?

আপনারা স্বাক্ষাৎকারটি পড়ে নেবেন। অমি রহমানের প্রতি রইল শ্রদ্ধা আর সহস্র কোটি ধন্যবাদ।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Monday, May 26, 2008

যে যায় লন্কায়

বাংলাদেশের বহুল পঠিত দৈনিক ডেইলি স্টারের স্পষ্টবাদী হিসেবে কিছুটা হলেও যা সুনাম ছিল বর্তমানে তা অবনতির দিকে।

এই বিবর্তনটা যেন আমাদের চোখের সামনেই হল। এই তত্তাবধায়ক সরকার গত বছর এগারই জানুয়ারী এলেন। এর পর ১৫ তারিখের ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তেই মাহফুজ আনাম বাণী দিলেন "আমাদের দমানোর চেষ্টা চালালেও আমরা চুপ করে থাকব না।" তিনি বলে গেলেন গত ১৬ বছরে এই প্রথম তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফোন পেয়েছেন এবং দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।

তারপর জানুয়ারী ১৯, ২০০৭ এ ডেইলি স্টারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদককে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রেস সচিব করা হল। এর পর থেকেই ক্রমান্বয়ে আমরা দেখেছি এই পত্রিকার নতুন চেহারা।

ডেইলি স্টারের তাসনিম খলিল এবং প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের উপর যে নির্যাতন চলল তার বিপক্ষে তাদের মালিকপক্ষ কোন বলিষ্ঠ অবস্থান নেয় নি। বরং তাদের পানিতেই ফেলে দিয়েছে ও ত্যাজ্য করেছে।

ওদিকে আমরা দেখেছি তাদের "১৭ বছরের নির্ভীক ও স্বজনপ্রীতি ছাড়া সাংবাদিকতার বড়াই করতে।" অথচ ডেইলি স্টারের একজন সাংবাদিক বলছেন:

"প্রচার মাধ্যমের মুখ এখনও বাঁধা। আমরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন মন্তব্যই করতে পারি না। এক বছরেরও বেশী সময় ধরে এটি চলছে। তাসনিম খলিল ও আরিফুর রহমানের কেইস দুটোর পেছনে বড় কারন রয়েছে।"
সম্প্রতি আব্দুল হান্নান (পিচ্চি না জামাতি?) নামে একজন ফ্রিল্যান্স লেখকের একটি মন্তব্য সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারে যেখানে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন (৪র্থ প্যারায়) যে "দেশে জরুরী অবস্থা থাকা সত্বেও প্রচার মাধ্যমের কন্ঠরোধের কোন উদ্যোগ নেই। এই প্রথম কোন সাংবাদিক হয়রানি বা দমন নীতির মুখে পরে নি।"

সেন্সরশীপ নিয়ে নিউ এইজের সাম্প্রতিক বলিষ্ঠ অবস্থানের জন্যে এবং রেহনুমা আহমেদের চোখ খুলে দেয়া আর্টিকেলের জবাবে হান্নান বলেছেন (৭ম প্যারা):
"এক শ্রেনীর সংবাদপত্র, বিশেষ করে একটি প্রধান সারির ইংরেজী দৈনিক তাদের সম্পাদকীয়তে সরকারের প্রতিটি কার্যকারনের প্রতিবাদ ও হেয় করে আসছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করানোর জন্যে।" সরকারের ফোন কল এবং উপদেশকে উনি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মানছেন না।
অসিফ ইউসুফের ঢাকা শহর ব্লগে এই লেখার প্রতিবাদে ডেইলি স্টারের সম্পাদককে গণ ইমেইল করতে বলা হয়
সেই ব্লগে ডেইলি স্টার থেকে জাফর (?) নামে একজন মন্তব্য করেন:
১) এটি ফ্রিল্যান্স কন্ট্রিবিউটরের বক্তব্য, ডেইলি স্টারের নয়।
২) কাজের চাপে এবং লোক স্বল্পতায় এই লেখাটার সত্যতা যাচাই করা যায় নি।
৩) পাঠকরা নিশ্চয়ই জানেন যে এই সেকশনটি সংবাদ নয় তাই এর যথার্থতা আশা করা ঠিক নয়। এবং এই ব্লগারকে উপদেশ দেয়া হয়েছে কিছু ভদ্রচিতভাবে তার বক্তব্য ডেইলি স্টারে পাঠাতে, সেটি ছাপানো হবে।
এটি ভাল যে ডেইলি স্টার তার মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন হয়েছে এবং ব্লগে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটি যদি এমন দুর্বল যুক্তি না দিয়ে তাদের কাজকর্মে প্রতিফলিত হত তাহলে সবারই মঙ্গল হত।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Wednesday, May 14, 2008

বেগুন কি ফল?

ছোট্ট ঈশান ধানমন্ডির এক নামকরা ইংরেজী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তার মা তার পড়াশোনা ও রেজাল্ট নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। এবার সে অন্তর্বর্তী কালীন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে সে নিয়ে তার আক্ষেপের সীমা নেই। ছেলেটি কবে যে ফার্স্ট হবে!

বাসায় যখন খাতা আনা হল তখন দেখা গেল সে অন্য কয়েকটির মধ্যে একটি সহজ প্রশ্ন ভুল করেছে। প্রশ্নটি ছিল "বেগুন কি ফল না সব্জী"। সে লিখেছে সব্জী তাই পেয়েছে শুণ্য। তার মা এতে খুবই বিস্মিত হল। তার মনে পড়ল বইয়ে এরকম কিছু ছিল যে বেগুন ও টমেটো ফল। কিন্তু এ নিয়ে কনফিউশন থাকায় তিনি তা ঈশানকে পড়ান নি। হতচ্ছাড়া ছেলেটা নিশ্চয়ই ক্লাসে এটি মন দিয়ে পড়ে নি। এখন তিনি আক্ষেপ করতে লাগলেন কেন ঈশানকে বলেন নি যে এরকম প্রশ্ন আসলে বেগুন আর টমেটোকে ফল হিসেবে লিখতে।

ঈশান কে ভৎসর্না করায় তার গায়ে লাগল ব্যাপারটি খুব। সে নানীকে এসে জিজ্ঞেস করল, "নানী বলত বেগুন ফল না সব্জি"? নানী বলল "তোদের ব্যাপার স্যাপার কিচ্ছু বুঝি না। সারা জীবন ভাতের সাথেই তো আমরা বেগুন খেলাম। ছোট কাল থেকে এটিকে সব্জি হিসেবেই জানি। এটাকে আবার ফল কে বানাল?" ঈশান উল্লাস করে উঠল "ইয়াইইই!" বাবাকে বিচার দিলো "দেখো বাবা টিচার আমার নাম্বার কেটে দিয়েছে এইজন্যেই তো ফার্স্ট হতে পারলাম না। মা পেছন থেকে বলল "না বইয়ে আছে এটা ফল।" বাবা বলল মাকে "আচ্ছা ও যখন বলছে তুমি একটু টিচারকে জিজ্ঞেস করো।"

পরের দিন স্কুলে গিয়ে মা টিচারের সাথে আলাপ করল এই ব্যাপারটি নিয়ে। টিচার বলল "বইয়ে তো আছে সে অনুযায়ী ও নাম্বার পেয়েছে"। মা বলল "না ছোট বাচ্চা তো অনেক সময় অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাই ওকে কি বুঝিয়ে বলব বলেন"। টিচার বলল "আমি শুনেছি অনেক দেশে এটাকে কাঁচা খায় তাই এটি ফল"।

ঈশানকে বাসায় এসে তা বলতে সে চিৎকার করে উঠল। বাবাকে বলল "তুমি না বলেছ যে বইয়ে ভুল থাকে। এই যে আমাদের সোশ্যাল সাইন্সের বইতে লেখা আছে যে জাতীয় পতাকা ১৯৪৭ সালে তৈরি সেটা শুনে তুমি বলেছিলে যে না আমাদের পতাকা ১৯৭১ সালের।" বাবা বলল হ্যা সেটা তো ঠিকই। কিন্তু পরীক্ষায় নাম্বার পেতে হলে তো বইয়েরটাই লিখতে হবে।

তাহলে কি দাড়াল? বেগুন কি একটি ফল?

(উপরের উদাহরণ গুলো সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। তবে এই লেখকের উদ্দেশ্য বেগুন এবং টম্যাটো কি ফল তা নির্ধারণ করা নয়। গুগল সার্চ দিলেই পাওয়া যায় যে উদ্ভিদবিদ্যা অনুযায়ী এ দুটো ফল। কারন তারা ফুল থেকে হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে বিচি ধারণ করে। তবে এদের সব্জী হিসেবেই খাওয়া হয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে।)

কোন কিছু ফল না সব্জী তা নির্ধারণের সর্বজন স্বীকৃত উপায় হচ্ছে সেগুলোকে কাচা হিসেবে ডেজার্টে খাওয়া যায় কি না তা প্রশ্ন করা। বেগুনকে আমাদের দেশে কাঁচা খেতে নিশ্চয়ই কেউ শোনে নি। তবে এখানে সমস্যা হচ্ছে পাঠ্য বইয়ে (কোন দেশের নকল?) এদেশের চল নিয়ে কোন ধরনের ব্যাখ্যা নেই।

এখন আমরা পরিস্থিতিটির বিশ্লেষণ করব একটু তাত্বিক দিক দিয়ে। আমেরিকান মনস্তত্ববিদ লরেন্স কোহলবার্গ মানুষের নৈতিক জ্ঞানলাভের ধাপগুলো নিয়ে একটি থিওরি আবিস্কার করেছেন (Kohlberg's stages of moral development)। এখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন মানুষের জীবনের বুদ্ধিবৃত্তি উন্নয়নের তিনটি স্তরে (প্রতিটিতে দুটি করে) ছয়টি ধাপের কথা।

প্রথম স্তর হচ্ছে শিশু-কৈশোর স্তর যেখানে মানুষ তার উর্ধ্বতনের কথা শোনে ও শাস্তি এড়াতে চায়। সে কোন কিছু করার আগে দেখে এতে তার পাবার কি আছে। এই সব দিয়েই কোন কিছুর সত্যতা ও নৈতিকতা বিবেচনা করা হয়। কোন শিশুকে ধমকের ভয় দেখিয়ে বা চকলেট দেয়ার লোভ দেখিয়ে কোন কিছু বিশ্বাস করানো যায়, সে এর ভাল মন্দ বিবেচনা করবে সেভাবেই কারন তাকে সেটাই বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক স্তর যেখানে মানুষ তেমনটিই করে যা তার সহযোগী বা ওপরওয়ালা তার কাছ থেকে আশা করে। যেমন বন্ধু বা বস যদি কোন কিছু বলে তাহলে সেটাই মেনে নেয়। এবং এর দ্বিতীয় ধাপে মানুষ তাদের কাছের লোক ছাড়াও সমাজের কথাও বিবেচনা করে। সমাজের অধিকাংশ লোক যেটাকে সত্যি বলে মানে সেটিই মানা হয়।
তৃতীয় স্তর হচ্ছে সেই স্তর যেখানে মানুষ তার বিচার বুদ্ধি, ন্যায় নীতি ও সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী কোন কিছুকে সত্য বলে মানে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। এর আরও একটি চরম ধাপ আছে (ষষ্ঠ ধাপ) যেখানে মানুষ তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিবুত্তি দিয়ে একটি জোড়ালো মূল্যবোধ তৈরি করে নেয় এবং আশা করে যে সেটি সবাই পালন করবে।
এখন আমরা যদি ঈশানের ব্যাপারটি দেখি তাহলে সে প্রথম স্তরেই আছে তবে শিশু সুলভ আচরণে প্রশ্ন করতে গিয়ে অনেকাংশে দ্বিতীয় স্তরের সমাজের অধিকাংশ লোকের কথাকে গুরুত্ব দিয়েছে।

তার বাবা মা প্রাথমিক ভাবে প্রথম স্তর অনুযায়ীই আচরণ করেছে। তারা চিন্তা করেছে ছেলের পরীক্ষা পাশের কথা। দ্বিতীয় স্তর, যেটা অনুযায়ী নানী আচরণ করেছে সেটার ধারে কাছে তারা যায় নি।

এটিই কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবতা। সমাজের অনেক অসমতা ও অনিয়মের পেছনে আমাদের নির্লিপ্ততার পেছনে এই কারন যে আমরা কোন কিছু করার আগে ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতি আগে দেখি। আমরা শাস্তি খুব ভয় পাই। তাই পাছে বস আমাকে বের করে দেয় তাই তার দুর্নীতি চোখ বুজে সহ্য করি।

এরকম অনেক ব্যাখ্যাই দেয়া যায়। এগুলোতে প্রমান হয় আমাদের চিন্তাধারা অনেক সময়ই শিশু স্তরেই থাকে। এই আত্মকেন্দ্রিকতা ও নৈতিকতার অভাবের ফল এই সমাজ ভোগ করছে।

কোহলবার্গ বলেছেন যে এই ধাপগুলো একটির পর একটি অতিক্রম করে যেতে হবে, ডিঙ্গিয়ে যাবার উপায় নেই। তবে তিনি বলেন নি আমরা কি করে এই প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত করতে পারি। আমাদের সমাজের জন্যে তা খুব প্রয়োজন। এরকম কোন থিওরী কারও জানা থাকলে বলবেন।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Monday, May 12, 2008

বন্ধু ভাল থেকো

আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই।
বাড়ি ফিরেই খবরটি পেলাম। চ্যানেল আইতে খবরটি দেখিয়েছে। বধু বলল: "তোমাকে ওই সময় ফোন করেছিলাম এটি বলার জন্যেই কিন্তু কষ্ট পাবে বলে বলতে পারি নি। ভালই হয়েছে দেখোনি। আগের জগলুলের সাথে মৃত্যুর পূর্বের জগলুলের কোনই মিল নেই, মনে হচ্ছে বুড়ো কেউ। শুকিয়ে কাঠি, চাপা ভাঙ্গা, চোখগুলো কেমন ঠিকরে বেরিয়ে গেছে,..."। আমার কানে আর কিছু ঢুকছিল না। আমি তখন দশ বছর পূর্বে চলে গিয়েছি।

থিয়েটার স্কুলের কর্মশালায় প্রথম জগলুলের সাথে পরিচয়। তুখোড় আড্ডাবাজ ছেলে; যে কোন গম্ভীর পরিবেশ হালকা করে দিতে পারে নিমিষেই তার হাস্যরসের মাধ্যমে। আর প্রচুর ট্যালেন্টেড। ২৫ বছরের ছেলে, অথচ চুল অধিকাংশই পাকা। আমরা বলতাম ঐটি অভিজ্ঞতালব্ধ। গান গাওয়া, নাটক লেখা, মিউজিক কম্পোজ কিংবা অভিনয় যে কোন কিছুতেই সর্বেসর্বা।

ক্রিয়েটিভ কাজের প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রবল। এর ওর জন্যে প্রথমে বেগার খেটে পরে বিজ্ঞাপন ও নাটকের মিউজিক বানানোই পেশা হিসেবে নিল। মাঝখানে স্কলাস্টিকায় কিছুদিনের জন্যে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি। আর সাথে তো অভিনয় নেশা হিসেবে ছিলই।

শুধু দলের একজন কর্মী হিসেবে নয় তার সাথে বন্ধুত্বের অন্য কারন হচ্ছে আমাদের 'হুইরে' গ্রুপের কার্যক্রম। এক সাথে আমরা রাতভর আড্ডা, গান গাওয়া, ঘুরে বেড়ানো এসব কত কিছুই না করেছি। রিহার্সেল শেষে রাত নটা-বারোটা মধুমিতায় সিনেমা দেখা অথবা কোরাস গান ধরা "তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা"। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল যে অতি সহজেই সবার আপন ও প্রিয় হয়ে যেত এবং এ নিয়ে আমরা হিংসেও করতাম।

সাথী মেহেলীর সাথে তার বিবাহের পর অপার বিস্ময়ে দেখেছি জগলুলকে আলাদা সংসার সামলাতে। বাহবা এই ছন্নছাড়া নিয়ম ভাঙা ছেলে এ পর্বেও হিট।

তার পরেই শোনা গেল সেই শোক সংবাদ। তার দেহে প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বজ্রাহতের মতই আচরণ তখন আমাদের, এ মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। আমি তখন দেশ ছাড়ছি। নানা কাজে ব্যস্ত। জগলুলের সাথে অনেকদিন দেখা নেই। সে পালিয়ে বেড়ায় না আমি, বুঝতে পারি না। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়, স্বাস্থ্য বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে। ওদিকে ফান্ড রেইজিং চলছে তার চিকিৎসার বিশাল খরচ যোগাতে। প্লেনে চড়ার আগে শেষ বার যখন দেখা করতে গেলাম তাদের পেলাম না। মেহেলীকে ফোন করে বললাম চেকটি এখনও প্রেজেন্ট হয় নি কেন? জমা করে নিও।

এরপর দুর থেকে মাঝে মধ্যে তার খবর পেয়েছি। তার শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হয়েই যাচ্ছিল, ডাক্তার বলেছিল আর বেশী দিন নেই। মাঝে বেশ কয়েকদিন খবর নেয়া হয় নি। আমরা যেচে পরে দু:সংবাদ শুনতে চাই না।

৩৫ বছরের একটি উচ্ছল জীবন এভাবে ঝরে পড়ল। অনেক সম্ভাবনার ইতি ঘটল। আমি নিশ্চিত সে স্বর্গে গিয়ে নিশ্চয়ই সবাইকে আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত রাখছে। কিন্তু ধরিত্রী তো বিষাদে ছেয়ে গেল বন্ধু। তোমার স্মরণ যদিওবা মোক্ষণ করে তার কিছুটা।

ডেইলি স্টারের খবর

 প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Thursday, April 24, 2008

আধুনিক দ্বিচক্রযানে পর্যটক

সেগওয়ে 
সেগওয়ে

গত বেশ কয়েক মাস বেশ ব্যস্ত সময় কেটেছে। বেশ কিছু ভ্রমণ ও উপরি পাওনা হিসেবে ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে গুছিয়ে লিখব লিখব করে আর লেখা হয়ে উঠছে না।

তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিচ্ছিন্নভাবে অল্প অল্প করেই লিখব।

আমার প্যারিস দেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দর্শনীয় স্থান গুলোতে গিজগিজ করা পর্যটক। মনে হয় যেন এ শহরে এই সব টুরিস্ট দেখতেই এসেছি।

প্যারিসের প্লাস দো লা কনকর্ডের পাশেই রয়েছে তুইলেরি গার্ডেন যা প্রায় লুভে জাদুঘর পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানে গেটের কাছে দেখলাম একদল পর্যটক সেগওয়েতে চড়ে যাচ্ছে। আসে পাশের লোকজন ফিরে তাকাচ্ছে তবে জটলা হচ্ছে না।
সেগওয়ে নাম্নী এই আধুনিক দ্বিচক্রযানটি সম্পর্কে পড়েছিলাম আগে কিন্তু সামনা সামনি এবার দেখা হলো। দেখলে মনে হবে অণ্য জগতের কোন বাহন। সাইকেলের মত হ্যান্ডেল ধরে থেকে দুই চাকার উপর কি করে দাড়িয়ে থাকা যায় সেটি এক বিষ্ময় বটে।

তবে এর কারিগরি দিকগুলো দেখলে বোঝা যায় এটি কোন সাধারণ যন্ত্র নয়। এটি ইলেক্ট্রিক মটরে চলে ব্যাটারীর মাধ্যমে যা বাড়ীর ইলেক্ট্রিক কানেকশন দিয়ে রিচার্জ করা যায়। এটি ব্যালেন্সড অবস্থায় থাকে দুটি কম্পিউটার ও নিজস্ব উদ্ভাবিত সফ্টওয়্যার দ্বারা। এতে পাঁচটি জাইরোস্কোপ এবং দুটি হেলানো অবস্থা পরিমাপকারী সেন্সর রয়েছে। একটি সার্ভো ড্রাইভ মটর চাকা দুটিকে আগে পিছে করে ওর সমতা রক্ষা করে। কোন কারনে আরোহী সামনে বা পিছনে কাত হলে জাইরোস্কোপ ও সেন্সর এটির ব্যালেন্সড অবস্থা থেকে সরে যাওয়ার তথ্যগুলো চাকাগুলো চালানোর মটরে পাঠায়। ফলে যান্ত্রিক ভাবে আবার এটি দাড়িয়ে থাকার মত সমতায় আসে।

এটির দাম ৪০০০-৫০০০ ডলার। বেশ কিছু দেশে এটি এখনও নিষিদ্ধ কারন এটির গতি (ঘন্টায় ২০ কিমি) রাস্তায় অণ্যান্য যানবাহনের জন্যে খুব কম এবং ফুটপাতে পথচারী ও সাইকেল চালকদের জন্যে বেশী ও উদভ্রান্তি জাগানো।

দেখলেন তো শহর সম্পর্কে বর্ণনা না দিয়ে পর্যটক এবং তাদের বাহণ সম্পর্কেই বকছি। তাই মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয় প্যারিসে কি পর্যটক দেখতে গিয়েছিলাম?

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন