Monday, September 28, 2009

শুভ বিজয়া

আজ (সেপ্টেম্বর ২৮) ছিল বিজয়া দশমী। বেলা বারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শারদীয় দুর্গা পুজা মন্ডপে গিয়ে দেখি বাইরে ট্রাক দাঁড়ানো - বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে। প্রবেশ পথটি মরিচা বাতি দিয়ে ছাওয়া। রাতে নিশ্চয়ই বেশ লাগে।

জগন্নাথ হলে পুজা মন্ডপ 
জগন্নাথ হলে পুজা মন্ডপ

প্রতিমার সামনে তেমন ভীড় দেখলাম না। ঢাক বেজে চলেছে এবং কিছু বাচ্চা নাচছে। অনেককেই দেখলাম প্রতিমাকে ব্যাকগ্রাউন্ডে নিয়ে নিজেদের ছবি তোলায় ব্যস্ত, ডিজিটাল ক্যামেরা, সাধারণ ফিল্ম ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনের ক্যামেরার ছড়াছড়ি।

মা দুর্গা 
মা দুর্গা

মা দুর্গা দাঁড়িয়ে সব দেখছেন। আর দেখছেন চেয়ারে বসে অনেকে।

প্রতিমা 
প্রতিমা

বিকেলে বিসর্জনের সময় ঢাকায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হল। মা দুর্গা পতি শিবের কাছে ফিরে যাবার সময় সমস্ত ঢাকাই কাঁদল।

সবাইকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Sunday, September 20, 2009

কোন এক বিকেলে ধানমন্ডিতে

সচলাড্ডায় যাব পণ করে রেখেছিলাম আগেই। কাল সকালে নজরুলকে ফোন করে বললাম আসছি। সে জানালো যে সাড়ে পাঁচটা থেকেই অনেকে থাকবে। আমার যেতে যেতে হল সাড়ে ছটা। বাবুর্চী রেঁস্তোরার দোতালা তিনতলা ঘুরেও কারও দেখা না পেয়ে আবার নজরুলকে ফোন দিলাম। সে পরিবারের সাথে তখনও রাস্তায় এবং তৎক্ষণাৎ খবর দিল উপস্থিত সচলদের। তিন তলার পাশে একটি বিশেষ জায়গায় ঠাই হয়েছে সচলদের। একে একে পরিচয় হল সবজান্তা, রণদীপম, জালাল ভাই, আনিস ভাই, সীমন, মামুন হক এবং আরও অনেকের সাথে।

খাবার ছিল মজাদার, এর বর্ণনা দিয়ে পেটে পিলে জন্মাবার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। তারপর সে তো অনেক গল্প, এক পোস্টে হবে না। তাই ছবিই কথা বলুক:

সচলায়তনের অফিসিয়াল মডেল 
সচলায়তনের অফিসিয়াল মডেল

সবজান্তা 
সবজান্তা
জালাল ভাই 
জালাল ভাই
রণদীপম বসু 
রণদীপম বসু
খাবারের কিয়দংশ 
খাবারের কিয়দংশ
'কথা কম কাজ বেশী' এই কথায় 'বিপ্লব' 
'কথা কম কাজ বেশী' এই কথায় 'বিপ্লব'
"কাবাব পরোটা ভাল হয়েছে, আর আছে কি?" - ভাস্কর 
"কাবাব পরোটা ভাল হয়েছে, আর আছে কি?" - ভাস্কর
মেয়ের সাথে আহমেদুর রশীদ 
মেয়ের সাথে আহমেদুর রশীদ
আনিস ভাই জুবায়ের ভাইয়ের স্মরণে জমায়েতের দাওয়াত দিচ্ছেন 
আনিস ভাই জুবায়ের ভাইয়ের স্মরণে জমায়েতের দাওয়াত দিচ্ছেন
এক ঝাক সচল 
এক ঝাক সচল
আরও এক ঝাক সচল 
আরও এক ঝাক সচল

Sunday, September 06, 2009

তবে কেন আমরা হব এক নম্বর?

ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের ২০০৮ সালের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা ১০ম (১৪৭) আর ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা ১৫তম (১২৬)। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ছিল যুগ্মভাবে প্রথম (১৫৮) আর ইন্দোনেশিয়া ষষ্ঠ (১৩৭)।

অর্থাৎ ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের সার্টিফিকেট অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতির অবস্থা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভাল। এখন আপনাদের আমার কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলি। ইন্দোনেশিয়ায় আসার পর আমার কিছু টার্গেট ছিল: প্রথমত: একটি ব্যান্ক একাউন্ট খোলা, ভিসা বাড়িয়ে থাকার অনুমতি যোগাড় করা, আর জার্মানী থেকে পাঠানো সংসারের কিছু সামগ্রী পোর্ট থেকে ছাড়ানো। প্রায় দুমাস হতে চলল এর একটি মাত্র করতে পেরেছি, অর্থাৎ থাকার অনুমতিটুকু (একটি বছর মেয়াদী ভিসা মাত্র), আর বাকী সব এখনও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা পড়েছে। মাল এসে পোর্টে রয়েছে - ডেমারেজ বাড়ছে, আর আমরা কোন এক সরকারী কর্মকর্তার একটি সীল ও সইয়ের জন্যে বসে আছি।

বাংলাদেশই দুর্নীতির আখড়া এই বিশ্বাস যাদের আছে তাদের জন্যে আমার গল্প বলি। স্বল্প মেয়াদী থাকার অনুমতি পত্র (কিতাস) এর ফর্ম ফিল আপ করে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি ও ছবি সহ জমা দেবার পরে সেটা আবার ফেরত আসল। কারণ নতুন ফর্ম এসেছে। তো আমাদের কেন পুরোনো ফর্ম দেয়া হল আগে? জানা গেল ওটি ঠিক জায়গা থেকে আনা হয় নি। কিছু অসাধু লোক পুরোনোটি বিক্রি করে তাই দুর্নীতি দমনের জন্যে নতুন ফর্ম ছাপানো হয়েছে যা দেয়া হচ্ছে বিনা পয়সায়। এরপর তা জমা দেবার পর ফেরত এল কারণ ছবি নাকি ঠিক হয় নি, লাল ব্যাকগ্রাউন্ড লাগবে (আগেরবার জমা দেবার সময় বললেই পারত)। আবার ছবি তৈরি করে দিয়ে আসা হল, এভাবে এক সপ্তাহ পা্র হয়ে গেল। তার পর সব চুপচাপ। মেসেন্জারকে পাঠানো হয় খোঁজ নিতে আর বলে তারা নাকি জানাবে। কিন্তু সেই পাথর তো আর নড়ে না। এবার শরণাপন্ন হলাম স্থানীয় প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছে। তারা বলল পয়সা ছাড়া তো কিছু হবে না।
এখানে কোন কাজ করানোর জন্যে ইন্দোনেশীয়ার ভাষা জানা খুবই জরুরী - কারন অনেকেই ইংরেজী জানে না। তাই ইন্দোনেশিয়ান মেসেন্জারকেই টাকা দিয়ে পাঠালাম। সে এরপর দিনে দিনে ফিরিস্তি দেয় কিভাবে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল নড়ে। প্রথমে আপনি একটি ফাইল কিনে এক টেবিলে জমা দেবেন। সাথে থাকবে একটা সাদা খামে গিফ্ট। তারপর হুজুরের মর্জি হলে (আর ক্রমাগত ফলোআপের পরে) সে আপনার কাগজের উপর কাজ করে পাশের টেবিলে স্থানান্তরের জন্যে একটি চিঠি দেবে। সেটি টাইপ করতে নিশ্চয়ই অনেক কাজ কারণ মেসেন্জার তা করানোর জন্যে সারাদিন সেখানেই বসে থাকে। তারপর সেই চিঠি পাশের টেবিলে না গিয়ে মেসেন্জারের কাছে আসে। সে এনে আমাদের দেখায় যে কাজ হচ্ছে। পরের দিন আবার পাশের টেবিলে নতুন ফাইল কিনে খামসহ কাগজপত্র জমা পরে। এভাবেই কাজ আগাতে থাকে ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব গতিতে। সবশেষে প্রায় মাসখানেক পার করে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ আসল যখন একজন পরিচিতজন সেই অফিসে কি কাজে গিয়েছিলেন - তিনি জায়গা মত কিছু টাকা দিয়ে বের করে নিয়ে আসলেন ভিসাটুকু। তার বক্তব্য আমাদের মেসেন্জার নিশ্চয়ই পর্যাপ্ত টাকা দেয় নি, কিছু পকেটে পুরেছে, না হলে এত সময় লাগার কথা নয়।

ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতির ব্যাপারটি বুঝতে হলে একটু পেছনের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। দেশটিতে এতকাল শাসন করে গেছে ঔপনিবেশিক শাসকদের হাতের পুতুল, সামরিক নেতা ও কিছু স্বৈরশাসক, এবং তাদের সর্ব শেষজন, সুহার্তো যিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত শাসন করে গেছেন। সুহার্তোকে ধরা হয় বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ নেতা হিসেবে।

দেশটিতে পাবলিক সার্ভিসের কোন ধারণাই ছিল না এত দিন এবং গণতান্ত্রিক দেশ এবং জনগণই সর্ব ক্ষমতার উৎস এই সংস্কৃতি এখনও লোকজনের রক্তে গেড়ে বসে নি। দেশটিতে সরকারী চাকুরি মানে হচ্ছে খুবই মর্যাদার ব্যাপার এবং এর সাথে অনেক সুবিধা আপনা আপনি আসে। এই সব সুবিধার মধ্যে আছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের কাছ থেকে উপঢৌকন (মনে রাখবেন ঘুষ কিন্তু ওরা কখনও বলে না, বলে গিফ্ট), এবং সরকারী সম্পদ নয়ছয় করার অব্যক্ত অধিকার।

সুহার্তোর সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার হচ্ছে এই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া। না দিয়েও উপায় ছিল না। তার শাসনামলে তার নিকট আত্মীয় থেকে দুরতম আত্মীয় পর্যন্ত সবাইকে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে বসানো হয়েছিল । বিভিন্ন বেদরকারী মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকারী অনুমোদনের আওতায় এনে তিনি তার আত্মীয় স্বজনকে প্রভূত অর্থ কামানোর সুযোগ করে দেন। সুহার্তো পুত্রের যে সব দুর্নীতির কথা এবং তার বিদেশে থকা সম্পদের কথা শুনেছি সে তুলনায় আমাদের দেশের রাজকুমারেরা ছিঁচকে চোর।

১৯৯০ সালে তার ঘোষিত নিউ অর্ডার এর বৈশিষ্ট্য ছিল সিভিল সোসাইটির প্রভাব কমানো, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমলাতন্ত্রের ভেতরে ঢুকানো ইত্যাদি। আর ঐতিহ্যগতভাবে দেশটিতে আমলাদের সাধারণ মনোভাব হচ্ছে দেশের অন্যান্য লোকদের চেয়ে তারা বেশী মর্যাদাপূর্ণ। যত উঁচু আমলা তত বেশী মর্যাদার, তত বেশী ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তার কাছে কোন সেবা চাওয়া তার কাছে ভিক্ষা চাওয়ার মত এবং অবশ্যই তার কাছে সেই অনুরোধের সাথে আপনার সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী একটি গিফ্ট কাম্য (একটি খামভর্তি টাকা সেই গিফটের সাধারণ ধরণ)। আপনি যদি কোন উপঢৌকনের প্রস্তাব না করেন তাহলে সেটি অবমাননাকর হিসেবে ধরা হবে এবং আপনার কাজে প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে সেই প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হবে।

আমাদের দেশের মতই এদেশেও দাড়ি টুপীর ছড়াছড়ি না থাকলেও অনেকেই ধর্মীয় আচারে রত (নামাজ রোজা) এবং প্রচুর মসজিদ। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম রোজার সময় হয়তো ওরা ঘুষ নেবে না, তাহলে কি এ মাসে কোন কাজ হবে না। উত্তর মিলেছে আরে ঘুষ কেন বলেন? এটি তো ওদের কাছে গিফ্ট মাত্র, আপনি খুশী হয়ে আপনার কাজের জন্যে দিচ্ছেন, ওরা তো চাচ্ছে না! এটিতে ধর্মে কি বাঁধা(??) ?

সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপারটি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে এই উপঢৌকনের সংস্কৃতিকে মেনে নেয়। একজন সরকারী কর্মচারীকে একটি রুটিন কাজের জন্যে উপঢৌকন না দেয়াকে তাকে অসম্মান করা মনে করে। আমার এখনও জানা হয় নি ওদের সরকারী কর্মকর্তাদের মূল বেতন কি স্ট্যান্ডার্ডের। কিন্তু এদেশে অনেকেরই লাইফস্টাইল দেখে মনে হয় বেতনভোগী কর্মচারীরা এই জীবনযাত্রা কোনদিনই পোষাতে পারবে না। এখানে ১০ টাকার নুডলস খেয়ে কারও একবেলা কাটে আর কেউ ফ্রেস জ্যুস খায় ১৫০ টাকা দিয়ে।

ইন্দোনেশিয়াতে এখনও পুলিশের চাকুরী পাওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করে বাবা-মার সচ্ছলতার উপর (অবশ্য এটি ভাল ইনভেস্টমেন্ট, দ্রুতই টাকা উঠে আসে)।

তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে যে দুর্নীতি দমনের প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে সুহার্তো পরবর্তী সরকারগুলো। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন (কেপিকে) বেশ কিছু উচ্চপদস্থ আমলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু এর পরিচালককে এক মার্ডার কেসে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিশোধ হিসেবে।

এখানে বৈদ্যুতিক মিটার রিডিং নেয়া হয় ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে। বেশ কিছু সরকারী অফিসে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো আছে উপঢৌকন সংস্কৃতি রোধের জন্যে (যদিও শুনেছি সেসব স্থানে কাজ দ্রুত আদায় হয় বাড়ীতে উপঢৌকন পৌঁছানোর মাধ্যমে)।

আমাদের দেশেও দুর্নীতি আছে কিন্তু সেটি কি এই লেভেলে? কিন্তু ট্রান্সপ্যারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের মতে গত দশকে বাংলাদেশ বারংবার দুর্নীতিতে ১ নম্বর হয়েছে। আমার কিন্তু তাদের স্ট্যাটিস্টিক্সে একদম ভরসা উঠে গেছে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন