Thursday, August 14, 2008

উপমহাসাগরীয় অঞ্চলে আধুনিক দাসত্ব

অতি সম্প্রতি বাহরাইন ও কুয়েতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিয়ে যেসব লন্কাকান্ড হয়ে গেল এসব নিয়ে আরব দেশগুলোর অবস্থান কিন্তু নমনীয় না। তাদের মনোভাব এমন যে এভাবে থাকতে হলে থাকো না হলে চলে যাও।

এনিয়ে আমরা পত্রপত্রিকাতে পরস্পর-বিরোধী অনেক কথা শুনেছি। কোনটিই কিন্তু এসম্পর্কে সঠিক পরিপ্রক্ষিত দেয় না। বর্তমানে সিটিজেন জার্নালিজম ও ব্লগের যুগে আমি আশা করব আমাদের এইসব নির্যাতিত ভাইবোনেরা ব্লগের মাধ্যমে তাদের দু:খকষ্টের কথা জানাবেন।

আরব দেশগুলোর সরকারী মনোভাব এমন হলেও সাধারণ লোকজন কি ভাবছে সেটা আমাদের জানার তেমন সুযোগ নেই। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে কিছু আরব ব্লগারদের মতামত পড়ে মনে হয়েছে যে তাদের অনেকে হয়ত এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কাজের অনুমতি দেয়াতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সে দেশী ব্লগার খালিদ বলেছেন :

সম্প্রতি, বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী একটা ডিক্রি জারি করেছেন বাংলাদেশীদের নতুন কাজের অনুমোদন না দেয়ার জন্য!! এটা একজন বাংলাদেশীর জঘন্য অপরাধ করার কারনে!! এখানে আমি জানতে চাই: এই আইন করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য কি? এর আইনী দিক গুলো কি? একটা অপরাধ হলে, তদন্ত হবে আর বিচার ব্যবস্থাও আছে তার জন্য। তাহলে বাংলাদেশের লোকের উপর এই নিষেধাজ্ঞা কেন? আর এই পক্ষপাতিত্ব কেন? আর কোন আইনের আওতায় একজন বা একদলের অপরাধের জন্য একটা গোটা জাতিকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? আমরা আইনের দেশে আছি না? এই সিদ্ধান্ত কি ঠিক? অবশ্যই না আর এটা একটা গুরুতর ভুল। আজকে সবাই এমন ভাবে বলছে যেন সব বাংলাদেশী অপরাধী আর খুনী, যাদেরকে বের করে দেয়া উচিত।

(বিস্তারিত গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় )

দুইশোরও বেশী বাংলাদেশী শ্রমিককে কুয়েত থেকে বহিস্কার প্রসঙে সৌদি ব্লগার আহমাদ লিখেছেন :

আমি নিশ্চিত শুধু কুয়েত নয় গাল্ফ অঞ্চলের আমরা সবাই এশিয়ার শ্রমিকদের নীচু করে দেখি। তাদের কোন ধরনের প্রশংসা বা সম্মান তো করিই না, পশুর মত ব্যবহার করি। আমাদের নাগরিকরা তাদের সাথে এমনভাবে ব্যবহার করে যেন তারা মানুষ নয়, আর কোম্পানিরাতো তাদের সাথে আরও খারাপ ব্যবহার করে, কম বেতন দেয়া থেকে শুরু করে। আমি জানি যে ১২০ আমেরিকান ডলার (৪৫০ রিয়াল) হয়ত বাংলাদেশে উঁচু মাসিক বেতন অনেকের জন্যে, কিন্তু এই বেতনে রিয়াদ, দুবাই বা কুয়েতে কোন শ্রমিক জীবনধারণ করতে পারবে না, কোন টাকা জমানো তো দুরে থাক। আমরা যদি দৈনিক তিন বেলা খাবারের কথা চিন্তা করি, শ্রমিকদের কমপক্ষে ১২ রিয়াল ব্যয় করতে হবে প্রতিদিন। এবং তার মানে তাদের ৩৬০ রিয়াল খাবারের পেছনেই ব্যয় হবে, কাপড়, যাতায়াত ও অন্যান্যর কথা বাদই দিলাম।

গাল্ফ অঞ্চলের শ্রম মন্ত্রণালয়রা দেশের নাগরিকদের কাজের ব্যাপারেই শুধু চিন্তা করে এবং এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগায় বিভিন্ন কোম্পানি। তারা শ্রমিকদের উপর তাদের শয়তানি চাল চালে কম বেতন, অতিরিক্ত কাজ, নিকৃষ্ট বাসস্থান ইত্যাদি দিয়ে এবং সব ধরণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। যদিও কাজের সময় নয় ঘন্টার বেশী হবার কথা নয় আমরা দেখছি যে নির্মানশিল্পে এমনকি রেস্টুরেন্টে সারাদিন ধরে শ্রমিকরা কাজ করছে। তারপরেও আমরা রেগে যাই যখন মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাল্ফ অঞ্চলে দাসত্বের অভিযোগ তুললে।

সরকারী বড় বড় প্রকল্পের পাওনা যখন পরিশোধ করতে সরকার দেরী করে, অনেক কোম্পানিরাই শ্রমিকদের বেতন দেয়া বন্ধ রাখে। যখন শ্রমিকরা প্রতিবাদ শুরু করে এবং তাদের কণ্ঠ তাদের দেশের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে, ঐসব কোম্পানীরা তাদের কাছে বলে যে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে না বলে তারা দিতে পারছে না। অথচ হয়ত তাদের প্রাপ্যের কিছু পরিমাণই বাকী আছে যা হয়ত সাত-আট মাস পরে পাওয়া যাবে। এর সাথে শ্রমিকদের কোন সম্পর্ক না থাকলেও তারা এ দিয়ে শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখে। তাদের আট মাস ধরে বেতন দেয়া হয় না - তারপরেও আমরা রেগে যাই যখন তারা অপরাধ ও চুরি চামারী বেছে নেয়।

যখন আমি শ্রমিকদের দু:খ দুর্দশার আসল ঘটনাগুলো শুনি, আমার এটাই বুঝতে পারি যে তাদের দাসের মতই ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কোন কোম্পানি তাদের রেসিডেন্স পার্মিট নবায়নের জন্যে একমাসের বেতন কাটে, আরেক কোম্পানি শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি থেকে বঞ্চিত করে। তাদের ছুটির জন্যে কোন ওজর শোনা হয় না, এমনকি অসুস্থ অবস্থায়ও তাদের কাজ করতে হয়। একজন শ্রমিক বলেছে যে সে তিন বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করছে কিন্তু একবারও হজ্জ্ব করতে পারেনি কারন তার কোম্পানি তাকে দুদিনেরও ছুটি দেয়নি।

এইসব খারাপ দিকগুলোর প্রভাব বাসার কাজেও পড়েছে। সমস্ত উপমহাসাগরীয় দেশগুলিতে বাসার কাজের লোক বা ড্রাইভার ১৮ ঘন্টা একনাগারে কাজ করে, এবং এদের অনেকেরই ঠিকমত শোয়ার যায়গা নেই। কারও কারও শোয়ার জায়গা মিলে রান্নাঘরে, ফ্রিজ এবং ওভেনের মাঝামাঝি যায়গায়। একদা আমার এক বন্ধু বলেছিল (গর্ব সহকারে) যে সে তার কাজের মেয়েকে উঠান ঝাড়ু দিতে দেয় না কারন সে হয়ত পড়শীর ড্রাইভারের ফোন নম্বর জেনে যেতে পারে। তাই সে কখনও বাড়ীর বাইরে যাবার সুযোগ পায় নি এবং হয়ত কোনদিন সুর্যরশ্মির স্পর্শ পায় নি ছাদে কাপড় শুকানোর সময় ছাড়া। আমার বন্ধুটি বলেছিল যে তাকে পরিবারের সাথে দোকান বা রেস্টুরেন্টেও যেতে বাধা দেয়া হয় অন্যান্য কাজের লোকের সাথে পরিচিত হবে এই ভয়ে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সে কি জেলে বন্দী?' সে বলল, ‘কিন্তু এই কাজের মেয়ে তো সুখেই আছে!'

আমাদের সবচয়ে বড় সমস্যা ইসলাম ধর্ম নিয়ে নয়, অবশ্যই; আমরা আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের ইসলামিক রীতি নিয়ে গর্ব করি কিন্তু সেগুলো পালন করি না। যে কোন দিন একটি নির্মান স্থানের সামনের ট্রাফিক লাইটে থেমে দেখবেন, কিভাবে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে, শ্রমিকরা একটি যন্ত্রপাতির (অথবা ভেড়া বহনের) ট্রাকে গাদাগাদি করে আছে। কিন্তু কোম্পানির মালিকের লালসা বড়, তাদের বাসস্থান থেকে কার্যস্থলে আনা নেয়ার জন্যে বাস কেনে না, যা কিনতে হয়ত মাত্র ৪০,০০০ রিয়াল খরচ হত। যদি এই বিষয়টি আমার হাতে থাকত, ট্রাকে করে শ্রমিক বহনকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতাম, এবং বিচারে রায় হত মালিককে এক সপ্তাহ এভাবে যাতায়াত করতে হবে। (শুধুই আমার স্বপ্নে!)

আপনারাই বলেন, কখন আপনি আপনার ড্রাইভার বা কাজের লোকের জন্যে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনেছেন? এবং আপনি ড্রাইভারকে কি আপনার মোবাইল ফোন দেন তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্যে? আর আপনার কাজের মেয়ের বেলায় কি হয়? সে কি এখনও পরিবারকে চিঠি লিখে পোস্টে পাঠায়?

এটি যে দাসত্ব এ ব্যাপারে আপনার কোন সন্দেহ আছে?


(সূত্র গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলা )

Monday, August 11, 2008

বাংলা ব্লগ ও ব্লগ পলিটিক্স

সেদিন এক সৃহৃদ বাংলা ব্লগারের সাথে কথা বলার সময় সে জানাল "আর বলেন না ব্লগ পলিটিক্স নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম"। এই কথাটি ইদানিং প্রায় শোনা যায় দেশী ব্লগারদের মধ্যে নানা ভাবে।

বাংলা ব্লগের উৎপত্তি ও স্বরুপ বিশ্লেষনে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে জর্ন বার্জার প্রথম ওয়েব্লগ শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৯৮ সালে আমেরিকায় ওপেন ডায়রি প্রথম ব্লগ প্লাটফর্ম হিসেবে জন্ম নেয়। পরের বছরই লাইভ জার্নাল, ডায়রিল্যান্ড ইত্যাদি চালু হয়। লক্ষণীয় যে এগুলো ছিল বর্তমান বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোর আদলে অর্থাৎ এদের (হয়ত কিছুটা ভিন্নভাবে) একটি এগ্রেগেটর বা প্রথম পাতা ছিল যেখানে সবার লেখা আসত। পরে এই ডিজাইনের বিবর্তন শুরু হয় এবং মনে হয় ব্লগার (ব্লগস্পট) প্লাটফর্ম থেকেই ব্লগগুলো স্বকীয়তা পাওয়া শুরু করে। পরবর্তী বছরগুলোতে প্রফেশনালরা নিজস্ব ডোমেইন ব্যবহার করা শুরু করে এবং মুভেবল টাইপ ও ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি ব্লগিং প্লাটফর্ম করে নিজেরাই একেকটি আইকন হয়ে যায়।

ইংরেজী ব্লগের বিস্ফোরণ শুরু হয় ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমণের সময়, ঘটনা চক্রে সে বছরই আমি ইংরেজীতে ব্লগিং শুরু করি। কিন্তু বাংলা ব্লগ তখনও ছিল দুর অস্ত। কারন বাংলা লেখার প্লাটফর্মের সমস্যা। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতার দেবাশীস ও সুকন্যা ব্লগস্পটে বাংলা ব্লগ শুরু করেন ও খুঁজে খুঁজে আগ্রহীদের আমন্ত্রণ জানান ও সাহায্য করেন শুরু করার জন্যে। আমার নিজের ইউনিকোড ও অন্যান্য বাংলা লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। আমার কম্পিউটারে তখন লেখো নামে একটি ইউনিকোড এডিটার ইনস্টল করে ব্লগে বাংলা লেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু সেটি বেশ জটিল ছিল তাই আগানো সম্ভব হয় নি।

২০০৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ (সামহোয়ার ইন) আত্মপ্রকাশ করলে বাংলা ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে নবদিগন্ত রচিত হয়। হাসিন ও এমরান বাংলার প্লাটফর্ম সমস্যার প্রথম বাঁধাটি ভাঙ্গে এমবেডেড এডিটর ব্যবহার করে। অনেকেই বাংলা টাইপিং জ্ঞান ও বাংলা কিবোর্ড ছাড়া ফোনেটিকে সহজে লিখতে সমর্থ হয়। ২০০৬ সালে ব্লগটি ইউনিকোড হলে পূর্ণতা পায়। এর সাথে সাথে কিন্তু ব্লগস্পট ও অন্যান্য প্লাটফর্মে অনেকে লেখা শুরু করে ইউনিকোডের মাধ্যমে।

সেসময় বাংলা ব্লগের লেখক সংখ্যা পাঁচশর মত থাকলেও ততদিনে পূরো ব্লগোস্ফিয়ারে বিপ্লব ঘটে গেছে। ২০০৬ এর আগস্টে ডেভিড সিফরি টেকনোরাতির (ব্লগ সার্চ ইন্জিন) এক জরীপে দেখান যে বিশ্বে পাঁচ কোটি ব্লগ রয়েছে।


সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ব্লগগুলো কোন ভাষায় সেই পরিসংখ্যানটি। এই বিপুল পরিমাণ ব্লগের মধ্যে মাত্র ৩৯% ইংরেজী ভাষায়। জাপানী ভাষা ৩১% নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এবং চাইনিজ ১২%। এই ভাষা বৈচিত্র দেখায় যে মানুষ তার মাতৃভাষাতে কথোপকথনে বেশী উৎসাহী। কিন্তু বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে কথিত ভাষা বাংলায় তখন ব্লগ ছিল হাতে গণা।

আমাদের জনসংখ্যার দিকে তাকালে দেখব আমাদের দেশে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন ১% এরও কম অথচ এশিয়ার গড়পড়তা পেনিট্রেশন ১৪% (সূত্র )। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তুলনায় আমাদের বাংলা ব্লগারদের সংখ্যা খুবই কম।

গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্লগের সংখ্যা এগারো কোটিতে ঠেকেছিল এবং এবছরে নিশ্চয়ই বিশ কোটির কাছাকাছি হবে। কিন্তু বাংলা ব্লগ কি সেই পরিমানে বেড়েছে?

গত দুই বছরে বাংলা ব্লগ অনেক এগিয়েছে, বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম হয়েছে, ইউজার বাড়ছে এবং স্বাতন্ত্র্য গড়ে উঠেছে এদের মধ্যে। অভ্রের মত ওপেনসোর্স বাংলা ইনপুট সিস্টেমের কারনে বাংলা লেখা এখন অনেক সহজ। তবে কেউ কেউ আশন্কা প্রকাশ করছেন যে হারে বাংলা ব্লগ বাড়ছে তাহলে বাংলা ব্লগের পরিণতি কি হবে ভবিষ্যতে?

যারা এই প্রশ্নটি করছেন এবং যারা বাংলা ব্লগ প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে এইসব পলিটিক্সে ব্যস্ত তারা আসলে এর বিশাল চিত্রটি দেখতে পাচ্ছেন না। সরকার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিটি স্কুলে পিসি ও ইন্টারনেট দেয়া হবে। যখন এই সব স্কুলের ছেলেরা ব্লগিং করা শুরু করবে তখন আমাদের আরও গোটা কুড়ি ব্লগিং প্লাটফর্ম লাগবে।

আর কে কোথায় ব্লগিং করবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। ব্লগিংয়ের ব্যাপারটিও বেশ সাম্প্রদায়িক এবং সামাজিক। আমরা ব্যাক্তি জীবনেও নিশ্চয়ই কিছু নির্দিষ্ট লোকের সাথে বন্ধুত্ব করি, কিছু পছন্দের পত্রিকা পড়ি। ব্লগের ক্ষেত্রেও এমনই, বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন পছন্দ থাকতে পারে। কাজেই অমুক নাক উঁচু, অমুকের মডারেশন নাই ইত্যাদি অভিযোগের তেমন ভিত্তি নেই বলেই মনে করি। সবাইকে তাদের স্বকীয়তা নিয়ে থাকতে দেয়াই উত্তম।

অনেককেই দেখি অহেতুক অন্য প্লাটফর্মের বিরুদ্ধে লেগে থাকতে, এর ওর বদনাম করতে। মনে রাখতে হবে একটি দুটি প্লাটফর্মই বাংলা ব্লগের সবকিছু নয়। বেশ কটি প্রতিশ্রুতিমুলক প্লাটফর্ম চালু হয়েছে ভবিষ্যতে আরও হবে। অনেকে হয়ত ভবিষ্যতে স্বতন্ত্র ব্লগে লিখতে পছন্দ করবে। লোকে তাদের পছ্ন্দমতই তাদের কমিউনিটি ঠিক করবে। কয়েকদিন পরে ব্লগ এগ্রেগেটর ও বেস্ট অফ ব্লগস এর মত উদ্যোগ জনপ্রিয় হবে।

বাংলা ব্লগের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ লাখের মত। অদুর ভবিষ্যৎে যখন এই হার দশগুণ হবে তখন দেখবেন দেশে বাংলা কন্টেন্ট এর আকাল পড়বে। দেশের বাংলা সংবাদপত্রগুলোর অধিকাংশই ইউনিকোড না তাই গুগল সার্চ ইন্জিনে সেসব আসে না। আপনি যা এই ব্লগে লিখেছেন তার থেকে একটি বাক্য সার্চ দিয়ে দেখেন গুগলে আসে কি না। এটি আজ থেকে দশ বছর পরেও থাকবে (ব্লগ মুছে না ফেললে)। কাজেই কি অমিত শক্তি আপনার লেখায় রয়েছে কল্পনা করতে পারছেন?

কাজেই যে যে ব্লগেই লিখুন না কেন হাত খুলে লিখে যান, আপনার সুখদু:খের কথা, মজার অভিজ্ঞতা ভ্রমণ ইত্যাদি যা ভাল লাগে তাই।

গণতন্ত্রের মূল বিষয় হচ্ছে ব্যক্তি পছন্দ ও মতামত প্রকাশের অধিকার। একে অপরের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে এই মতামতকে জোড়ালো করে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়া যায় যা পরে মেজরিটিতে পরিণত হয়। ব্লগের মাধ্যমে সহজেই এটি করা সম্ভব।

বিদ্যমান ব্লগ পলিটিক্সে জড়ানোর দরকার নেই। আপনারা নিজেরাই নতুন ইতিহাস ও রাজনীতি তৈরি করুন।

গ্রাফ: সিফরি'জ এলার্টসের সৌজন্যে

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন