Sunday, September 07, 2008

বার্লিন: গল্পের শহর, অথবা শহরটা নিজেই গল্প

বার্লিন শহরে কিছু যায়গা আছে, যেগুলো অনেকের কাছে এত পরিচিত যে তারা শুধু দর্শনীয় স্থান হিসেবে নয় আরও বিশাল পরিসরে উপস্থাপিত। এদের কোনটি ইতিহাসের পর ইতিহাসের সাক্ষী, কোনটি সিনেমার লোকেশন, কোনটি মিউজিয়াম, কোনটি বা ঐতিহ্যগত বা আধুনিক স্থাপনার নিদর্শন হিসেবে লোকের মুখে মুখে ফিরে। এসব জায়গায় শহরটি নিজেই একেকটি গল্প হয়ে যায়। পর্যটকরা এই স্থানগুলিকে জানেন: ব্রান্ডেনবুর্গার গেট, উন্টার ডেন লিন্ডেন, রাইখসটাগ, পটসডামার প্লাৎস, আলেক্জান্ডার প্লাৎস ইত্যাদি। কিন্তু গল্পগুলো পুরোপুরি তাদের জানা নেই। এ শহরের বাসিন্দাদের কাছে এ স্থানগুলোর গল্পগুলো পরিচিত, অথবা নিজেরাই হয়ে যায় গল্পের একেকটি চরিত্র, নতুন নতুন গল্পের জন্ম দেয়।

বেবেলপ্লাৎসের গল্প

ব্রান্ডেনবুর্গ গেট থেকে পূবের দিকে নামকরা রাস্তা 'উন্টার ডেন লিন্ডেন' ধরে ৫০০ মিটারের মত গেলে হামবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোদিকে পড়বে বেবেলপ্লাৎস, একটি বিশাল চত্বর। একে ঘিরে রয়েছে পুরনো লাইব্রেরী, একটি ক্যাথেড্রাল ও স্টেট অপেরা যা আসলে একটি প্রাসাদ যা ১৭৪৩ সালে প্রুসিয়ার হোহেনজোলার্ন রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। এটি ওপার্ন প্লাৎস নামে পরিচিত ছিল এবং ১৯৪৭ সালে সোস্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা অগাস্ট বেবেলের নামে এর বর্তমান নামকরণ করা হয়।

এখানে নামকরা আন্তর্জাতিক এক্সিবিশন ও অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

বেবেল প্লাৎস 
বেবেল প্লাৎস    ছবি: উইকি পিডিয়ার সৌজন্যে

এখানে প্যানোরামাতে বেবেল প্লাৎসকে দেখতে পাবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিল্ডিংগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যা দেখছেন তা পরে সংস্কার করা।

বেবেলপ্লাৎসের একটি কলন্কময় ইতিহাস আছে। ১৯৩৩ সালের দশই মে হিটলারের ছাত্র-ছাত্রীদের এসোসিয়েসন (এস এ) এবং নাৎসী ইয়থ গ্রুপের সদস্যরা এখানে প্রপাগান্ডা মন্ত্রী গোবেলস এর উস্কানীতে মূলত ইহুদী লেখক, দার্শনিক, বিজ্ঞানীদের প্রায় ২০,০০০ বই পুরিয়ে দেয়। তাদের ঘোষিত অজার্মান চেতনার বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের মূল মন্ত্র ছিল ইহুদী বুদ্ধিজীবিদের হাত থেকে জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। কার্ল মার্কস, সিগমন্ড ফ্রয়েড, ম্যাক্সিম গোর্কি, হাইনরিশ হাইনে প্রভৃতি ইহুদী লেখকের বই তার মধ্যে ছিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় জার্মান নাগরিক যেমন থমাস মান, এরিক মারিয়া রেমার্ক এবং বিদেশী (আমেরিকান) লেখক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে এবং হেলেন কেলারের বইও বাদ যায়নি। সেখানে এখন বেদবাক্যের মত হাইনরিশ হাইনের একটি উক্তি (১৮২০ সালে করা) বাঁধানো আছে “তারা যেখানে বই পোড়ায়, শেষে তারা মানুষও পোড়াবে”

হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় 
হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়

রাস্তার অপরপাশে হামবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুরোন বই নিয়ে বসে থাকে লোকে বিক্রি করার জন্যে। এই অঞ্চলে এই বই পোড়ানো বিভিন্ন ভাবে স্মরণ করা হয়।

আধুনিক বই প্রকাশনা 
আধুনিক বই প্রকাশনা

আমার ক্যামেরায় বেবেলপ্লাৎসের সামনে আধুনিক বই প্রকাশনার চিন্তাধারার রুপকার গুটেনবার্গের স্মরণে স্কাল্পচার (২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সময় তোলা)

বই পোড়ানোর ৭৫ বছর পরের বেবেল প্লাৎস: আমার গল্প

বিএমডাব্লিউ কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় বেবেল প্লাটসে উন্মুক্ত ক্লাসিকাল সঙ্গীত পরিবেশিত হবে শুনে ৩০শে আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে গিয়ে হাজির হলাম। স্টেজের মাইক্রোফোন ঠিক করা হচ্ছে আর গুটিকয়েক দর্শক দেখে ভাবনায় পরে গেলাম। সামনের এক খাবার দোকানে জিজ্ঞেস করতেই জানলাম ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। সাথে এক সিনিয়র ভাই যিনি আবার পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তেমন আগ্রহী নন তবে আমাকে ভালই সঙ্গ দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে হাটতে হাটতে 'উন্টার যেন লিন্ডেন' ধরে মিউজিয়াম আইল্যান্ডের পাশ দিয়ে হাকেশার মার্কট চত্বরে চলে গেলাম সময় কাটানোর জন্যে।

লঙ নাইট অফ মিউজিয়ামসের জন্যে মানুষের ঢল 
লং নাইট অফ মিউজিয়ামসের জন্যে মানুষের ঢল

সেদিন আবার লং নাইট অফ মিউজিয়ামস শুরু হয়েছে তাই সেই অঞ্চলে লোকে গিজগিজ করছে। বছরের একটি দিন সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত মিউজিয়াম খোলা থাকে। এক টিকেটে প্রায় ১০০টি যাদুঘর, আর্কাইভ, মেমোরিয়াল, রাজপ্রাসাদ ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান দেখার ব্যবস্থা আছে। আলাদা এক বাসের বহর চালু করা হয়েছে দর্শনার্থীদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছানোর জন্যে। ৮ ঘন্টায় আর মানুষ কত দেখবে যেখানে একটি যাদুঘরেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো যায়।

আমরা ফিরে এলাম বেবেল প্লাৎসে পৌঁনে সাতটায়। চত্বরে ঢোকার আগে স্টেট অপেরার সামনে ভিড় দেখে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম। গাড়ীতে করে কেউ এসেছে এবং তাকে ঘিরে প্লেন ক্লথের সিকিউরিটি দেখে ভাবলাম কোন শিল্পী হয়ত। পরে গাড়ীর নম্বর দেখলাম ০-১ অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট এসেছেন। উনি কনসার্ট দেখতে এসেছেন বউ সাথে নিয়ে। সবাইকে হাত নাড়িয়ে অপেরা হাউজে ঢুকে গেলেন। এত কম সিকিউরিটি দেখে বিস্মিত হলাম।

জার্মান প্রেসিডেন্ট এসেছেন অপেরা দেখতে 
জার্মান প্রেসিডেন্ট এসেছেন অপেরা দেখতে

জায়গা পাওয়া নিয়ে যার পরনাই সমস্যা হল। চেয়ারের ব্যবস্থা নেই। সবাই নিজের মত বাসা থেকে টুল নিয়ে এসেছে অথবা চাদর বিছিয়ে বসেছে। কেউ কেউ আরাম করে গ্লাসে শ্যাম্পেন হাতে নিয়ে বসেছে। ক্লাসিকাল সঙ্গীত এখানে খুবই উচ্চ মার্গের একটি ব্যাপার। আমরা কোনার একদিকে একটু দাড়ানোর জায়গা পেলাম। আমার সঙ্গীটি জায়গা না পেয়ে বেশ বিরক্ত তাই ভাবলাম বেশীক্ষণ থাকা যাবে না।

সাতটার সময় বার্লিনের গে মেয়র আর বিএমডাব্লিউর প্রধান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করলেন মঞ্চে। তবে মন খারাপ হয়ে গেল যখন ঘোষনা হল যে আজকের পরিবেশনা হবে স্টেট অপেরার ভেতরে (আমন্ত্রিত দর্শকদের সামনে) এবং বিশাল টিভি স্ক্রিনে বেবেল প্লাৎসের দর্শকরা দেখবেন। আগামী কাল হবে বেথোফেনের নাইন্থ সিম্ফোনী সেটা মঞ্চে লাইভ হবে বিনামূল্যের দর্শকদের জন্যে।

মঞ্চ, বিশাল স্ক্রীন ও দর্শক শ্রোতা 
মঞ্চ, বিশাল স্ক্রীন ও দর্শক শ্রোতা

প্রায় ১০০০০ লোক উপভোগ করলেন স্টেট অপেরার নামকরা মিউজিক ডিরেক্টর ডানিয়েল বারেনবইম (একজন ইহুদি) এর পরিচালনায় বেথোফেনের অপেরা ফিডেলিও। পিন পতন নিস্তব্ধতা না হলেও কম লোকেই ফিসফিস করে কথা বলছিল আর সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিল। আমার অবশ্যি বেশীক্ষণ থাকা হলো না সঙ্গীর কথা ভেবে।

ড্যানিয়েল বারেনবইম 
ড্যানিয়েল বারেনবইম

৭৫ বছর আগে জার্মান জাতীয়তাবাদের যে পন্কিল অধ্যায় এখানে রচিত হয়েছিল তার ফল অনেক আগেই তারা ভোগ করেছে। আজ যেন একটি 'পোয়েটিক জাস্টিস' হলো এক ইহুদী সঙ্গীতজ্ঞ এখানে ১০০০০ জার্মান নাগরিককে বিমোহিত করার মাধ্যমে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

বাংলা ব্লগের বিবর্তন ও সম্ভাবনা

অনেকের হয়ত চোখে পরে নি আজকে ডেইলি স্টার ক্যাম্পাসের একটি আর্টিকেলে বাংলা ব্লগকে উদীয়মান মিডিয়া বলে আখ্যা দিয়েছে । 'বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ' এই রিপোর্টে ভাল ভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে এবং ব্লগ যে ঐতিহ্যবাহী মিডিয়ার বিকল্প নয় বরং সহায়ক তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ব্লগে প্রতি ছয় মিনিটে একটি নতুন পোস্ট এবং প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি কমেন্ট দেয়া হয় কাজেই এর জনপ্রিয়তা ও শক্তি নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

এখন এই শক্তির কিভাবে সুব্যবহার করা যায়? আমরা ইতোমধ্যে ব্লগে বেশ কিছু মানবিক সাহায্যের প্রয়াস দেখেছি যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বেশীরভাগ মানুষই সমাজে ভাল কিছু অবদান রাখতে দ্বিধা করে না। দরকার শুধু তাদের কাছে বিষয়টুকু তুলে ধরা ও সেই প্রক্রিয়াটাকে চালু করে দেয়া ও তার সুব্যবস্থাপনা। আমরা দেখেছি শুধু সাহায্য সংগ্রহ করাই নয় পাহাড় ধসের পর ব্লগাররা চট্টগ্রামে গিয়ে নিজের শ্রমও দিয়ে এসেছেন।

এগুলো তো অব্যাহত থাকবেই আমি সেটাই আশা করি। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী ব্লগ কেমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানলে হয়ত আরও কিছু ভাবনার খোরাক পাবেন 'বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ' কমিউনিটি।

১) উশাহিদি: ২০০৬ সালের শেষের দিকে কেনিয়াতে প্রচার মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার পর মোবাইল ফোনে পাঠানো সংবাদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৭ সালের শুরুতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা কভার করার জন্যে মোবাইল ফোনের এস এম এসের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদ ইন্টারএক্টিভ ওয়েবসাইট বা ব্লগ ব্যবহার করে উশাহিদি বিশ্বকে সংঘাতের সঠিক চিত্র জানাতে সক্ষম হয়। বিস্তারিত এখানে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে এরকম মোবাইল ফোন ও ব্লগের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিতে পারে ব্লগাররা।

২) সানলাইট ফাউন্ডেশন : আমেরিকান কংগ্রেসের দুর্নীতি উন্মোচন করতে একটি উদ্যোগ হচ্ছে সানলাইট ফাউন্ডেশন । এটি কাজ করেছে শতাধিক ব্লগারের সহায়তায় যারা নিজেরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কংগ্রেসম্যানদের দুর্নীতি উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি বা অন্য কোন অপরাধের বিরুদ্ধে সমষ্টিগতভাবে যে যার মত সহায়তা করে ব্লগাররা কার্যকরী অনেক কিছুই করতে পারে।

৩) উন্নত বিশ্বের এনজিওদের জন্যে তো ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ন টুল । অবকাঠামোর অভাব এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কম বলে বাংলাদেশে এ সংস্কৃতি এখনও গেড়ে বসেনি। অথচ ফান্ড রেইজিং এর মত অনেক কাজ কিন্তু এর সাহয্যে সহজেই করা সম্ভব।

চিন্তা করে দেখেন যখন বাংলাদেশের এনজিওদের জন্যে ব্লগিং এবং সোশাল মিডিয়া টুলগুলোর প্রয়োগ অবশ্য পালনীয় হয়ে যাবে তখন তাদের প্রচুর পরিমানে ব্লগিংএ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক দরকার হবে এবং এই উদীয়মান ব্লগাররাই সেই চাহিদা পূরণ করবে।

৪) ফেসবুকের জনপ্রিয়তা: প্রায় লাখেরও বেশী বাংলাদেশী ফেসবুকের সদস্য। আপনার ব্লগের লেখা বা অন্য কোন ভাল লেখা সম্পর্কে অন্যকে জানাতে চান? ফেসবুক ব্যবহার করেন।

৫) আরএসএস ফিড ব্যবহার করুন: আপনি এত পোস্টের ভীড়ে ভাল লেখা খুঁজে পাচ্ছেন না? সামহোয়ারইন আরএসএস ফিড সাপোর্ট করে। আপনার পছন্দের ব্লগগুলো যখনই নতুন পোস্ট করবে তখন তা আরএসএস ফিড রিডারে চলে আসবে। আপনার বার বার তাদের পেজে গিয়ে দেখতে হবে না যে তারা নতুন কিছু লিখেছে কি না।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Saturday, September 06, 2008

একটি অপরাধের কাহিনী

ঘটনাটি ছিল খুবই সাধারণ। ম্যাকডোনাল্ডসে খাবারের অর্ডার দেয়ার পরে ক্যাশ মেশিনে উঠল ৬.৪০ ইউরো। কয়েন খুঁজে পেতে দেরী হচ্ছে দেখে লাইনের পেছনের ছেলেটার চেহারায় দেখলাম অস্বস্তির ভাব। পাঁচ ইউরোর নোট, এক ইউরো ও পঞ্চাশ সেন্টের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার পরে ট্রেতে চেন্জ ও খাবার গুলো দিল ক্যাশের মেয়েটি। 'ডান্কে শোন' বলতে বলতেই শুনি সে পেছনের জনকে বলছে '..নেখস্টে বিটে'।

খালি যায়গা খুঁজে খেতে বসে খুঁচরোগুলো পকেটে পুরতে গিয়ে দেখি তিনটি ২০ সেন্টের কয়েন। বিলে লেখা আছে সেই ৬.৪০ ইউরো। তারপর বসে বসে ভাবলাম আমি কি তাকে ৭ ইউরো দিয়েছি? সে তো হবার নয় কারন অনেক খুঁজে পেতে কয়েনগুলো দিয়েছি। কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করার চিন্তা হলো কিন্তু বিশাল লাইন দেখে ভাবলাম 'কি দরকার'। এরপর থেকেই সমস্যাটি শুরু হল।

বাসায় ফিরে বার বার মাথায় ঘুরতে লাগল ব্যাপারটি - আমি কেন তাকে পয়সাটুকু ফেরত দিলাম না। কেন একে স্বাভাবিক মনে হল।

অথচ এই আমিই কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক বাজার করার পর পার্কিং লটে এসে কি কারনে বিলের দিকে তাকিয়ে দেখি ১১ প্যাকেট দুধের বদলে ৬টির দাম রেখেছে। আবার গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে বাকী পাঁচটির দামটুকু শোধ করে এসেছি।
আসলে আমাদের সবার ভেতরেই একটি দ্বৈত সত্তা কাজ করে। আমাদের সবারই একটি অপরাধপ্রবণতা রয়েছে যা মাঝে মধ্যে বের হয়ে পরে, অজান্তেই হয়ত। এবং আমারও হয়ত এমন আরও অপরাধবোধ রয়েছে যা হয়ত কোনদিন প্রকাশ করা হবে না।

কয়েক বছর আগে ঢাকার গুলশান এক নম্বরের এক এটিএম বুথে ঢুকেই দেখি আগের কেউ তার কার্ড ভেতরে রেখে চলে গেছে। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে "Would you like another transaction?" কয়েকটি বোতাম টিপলেই অন্যের বেশ কিছু টাকা হস্তগত হয়ে যেত। কিন্তু আমি কার্ডটি বের করে গার্ডের কাছে দিয়ে দেই কারন আমি জানতাম এটিএম এ ভিডিও ক্যামেরা থাকে এবং সেই অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পরবে। ভিডিও ক্যামেরা যদি না থাকত তাহলে আমি কি সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতাম? খুবই ভেবে দেখার বিষয়।

মাঝে মাঝে নিজের অক্ষমতা নিয়ে খুবই হতাশ হই। হতে পারলাম না আদর্শ কোন মানুষ অথবা আদর্শ কোন ক্রিমিনাল যার অপরাধবোধ নেই।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন