জার্মানীতে ড: মুহম্মদ ইউনুস
আজকে বার্লিনে জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশীরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড: মুহম্মদ ইউনুসকে একটি সংবর্ধনা দেয়। জার্মানীর অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল এসপিডির অফিস উইলি-ব্রান্ডট হাউজে রাত ৭টার সময় অনুষ্ঠানটি হয়।
ড: মুহম্মদ ইউনুস এমাসে এ নিয়ে দুবার এদেশে আসলেন। মূল কারন হচ্ছে জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য এবারের জি এইট সামিটের চেয়ারম্যান হিসাবে জার্মানীর চ্যনসেলর আন্গেলা মেরকেল আফ্রিকার নারীদের উন্নয়নে কিছু করতে চাচ্ছেন। ড: ইউনুস যেহেতু দরিদ্র নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন সে জন্যেই তার সাহায্য চেয়েছেন তিনি এবং এর প্রাক মিটিংগুলোতে ইউনুস থাকছেন।
প্রায় শ'খানেক বাঙালিদের মাঝে ইউনুস তার স্বাভাবিক ঢংয়ের বক্তৃতা দিলেন বাংলায়। আলোচনা করলেন তার কর্ম, গ্রামীন ব্যান্ক প্রসঙে, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার অনুভুতি প্রসঙে। এগুলো আগেই পড়া বা শোনা ছিল। নতুনের মধ্যে - ভিক্ষুকদের ঋণ ছিল যে কোনো মানুষই উদ্দোক্তা হতে পারে এই সংক্রান্ত একটি এক্সপেরিমেন্ট যা পরে সফল হয়।
আমি বসে ছিলাম প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য। সমসাময়িক প্রসঙগুলো চলে এল। উনি রাজনীতিতে আসার চেষ্টা কেন ছেড়ে দিলেন সে প্রসঙ এড়িয়ে গেলেন- 'আমি আমার চিঠিতেই সব বলেছি' এই বলে। ২২শে জানুয়ারীর প্রহসনমূলক নির্বাচনে কেন সায় ছিল তার জবাবে বললেন উনি চাচ্ছিলেন দেশে শান্ত আসুক, রক্তপাত বন্ধ হোক। নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি সেসময় আরও মারাত্মক আকার ধারন করতে পারত বলে তখন তার মনে হয়েছিল।
গ্রামীন ব্যান্কের সুদের চড়া হারের অভিযোগ খন্ডালেন এই ভাবে:- সুদের হার ওয়েবসাইটে দেয়া আছে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছে। ৩০%, ৫০% এরুপ ফিগারগুলো শুধুই রটনা। গ্রামীন ব্যান্কে ৪ ধরনের ঋণপ্রকল্প রয়েছে। এই ঋণগুলো দেয়ার জন্য মুলধন সংগ্রহ করা হয় ঋণগ্রহীতাদেরই ডিপোজিট থেকে। ঋণগ্রহীতাদের ডিপোজিটের জন্যে ৮-১২ % স্কিমভেদে দেয়া হয়। অর্থাৎ মুলধনের মুল্য গড়ে ১০%। নিন্মলিখিত প্রকল্পগুলোতে ঋন দেয় গ্রামীন ব্যান্ক:
১) বাড়ীর জন্য ঋণ: - ৭% সুদ (মুলধনের গড় মুল্য থেকে কম মুল্য)
২) শিক্ষা ঋণ: ছাত্রাবস্থায় কোন সুদ নেই। এর পরে ৫% সুদ (মুলধনের গড় মুল্য থেকে অনেক কম মুল্য)
৩) ভিক্ষুক লোন: সুদমুক্ত
৪) সাধারন ঋণ: সর্বাধিক সুদের হার ২০% (মুলধনের সংগ্রহের গড় মুল্য থেকে ১০% বেশী)
ড: ইউনুসের কথা হচ্ছে এই ১০% বেশী মুল্য পূর্বের তিনটি ঋণের খরচকে কাভার করে। এবং এই সুদের হার নির্ধারন করে ব্যন্কের মালিক - এর ঋনগ্রহিতা মহিলারা একটি বোর্ডের মাধ্যমে। ঋণের সুদের হার কমালে সন্চয়ের উপর তারা কম আয় পাবে - তাই তারা ২০% সুদেই সন্তুষ্ট।
গ্রামীন ব্যন্কের কিছু কর্মচারীর ভয়ভীতি প্রদর্শন ও দুর্নিতীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বললেন হয়ত বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটতে পারে আর এটি যেহেতু সমাজেরই অংশ তাই সামাজিক দুর্নীতির কিছু প্রভাব হয়ত কোথাও পড়তে পারে। গ্রামীন ব্যান্ক চেষ্টা করছে ঋণ সংগ্রহন ও বিতরন পদ্ধতি আরও আধুনিক করতে।
বার্লিন সিটি কাউন্সিল মেম্বার পশ্চিম বঙের ভাদুরী সাহেবের প্রশ্ন ছিল গ্রামীন ব্যান্ক রাজনীতিবিদ বা ধর্মীয় সংস্থা থেকে কিরকম প্রতিরোধ বা সাহায্য পেয়ে এসেছে। ড: ইউনুস বললেন যে নতুন কিছু ধারনা হলে সহজে লোকে মানতে চায়না। গ্রামীন ব্যান্কের বিরুদ্ধেও ভয়ভীতি ও অসহযোগ হয়েছে। আমি কখনও অভিহিত হয়েছি পুঁজিবাদের দালাল - সিআইয়ের এজেন্ট হিসাবে। আবার কখনও কমিউনিষ্ট বা ধর্মের বিরুদ্ধে (কারন নারীদের প্রাধিকার দিয়েছি)। কিন্তু গ্রামীন ব্যান্ক সবসময়েই বিতর্কের উর্দ্ধে থাকতে চেয়েছে। কোন গ্রামে অনভিপ্রত হলে গ্রামীন ব্যন্ক সেখান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু সাধারন মানুষই সমস্যার সমাধান করে তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়েছে। কারন মানুষের প্রয়োজনেই গ্রামীন ব্যান্ক- নিজের প্রয়োজনে নয়।
একজন প্রশ্নকর্তা প্রসঙক্রমে জানালেন গত ৮ই মে হামবুর্গে কোন জার্মান সংস্থা আয়োজিত তার সংবর্ধনার টিকিট ছিল ৮০০ ইউরো। তাই তখন তারা ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। আজ সুযোগটি পেয়েছেন।
বন থেকে ব্লগার মাসকাওয়াথ আহসান এসেছিলেন ডয়েশে ভেলের জন্য ড: ইউনুসের সাক্ষাৎকার নিতে। বেশি কথা হয়নি- যাবার সময় বলে গেলেন হাজার দুয়ারীর জন্য একটি লেখা দিতে।
এই হল আজকে আমার ইউনুস দর্শন।
No comments:
Post a Comment