Sunday, November 25, 2007

এই অক্ষমতাকে কোথায় রাখি

হারিকেন সিডরের দেশ জুড়ে তান্ডবের চিত্র ইথারের মাঝ দিয়ে ভেসে আসে। কম্পিউটারের স্ক্রীনে ভয়ন্কর সব সংখ্যা, তথ্য, পরিসংখ্যান দেখি, ব্লগে লিখি, মতামত দেই বা ত্রান যোগাড়ের চেষ্টা করি। তার মাঝেও দৈনন্দিন গতানুগতিক সিডিউলের কোন পরিবর্তন হয়না। প্রবাস জীবন-ঘড়ি এভাবেই চলে।

আজ কয়েকদিন পর দেশে ফোন করলাম। বাবা জানালেন বরিশাল ও ভোলা যাচ্ছেন। পুরনো কাপড় কিছু জড়ো করেছেন এবং কিছু নগদ সাহায্য দেবেন দুর্গতদের খুঁজে বের করে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকলাম তার কথা যে দুর্গত লোকজন তো কাজ করতে চায়না না খালি সাহায্যের জন্যে বসে থাকে। তিনি সেখানে উপস্থিত থেকে ওদের দিয়ে বিধ্বস্ত বাড়ীর জন্য উপকরন কিনে দিয়ে তাদের দিয়ে মেরামতের কাজ করাবেন এবং দিনের কাজ শেষে টাকা দান করবেন। আমার দেহঘড়ি রিফ্লেক্সবশত: ৭১ বছর বয়সী পিতার শারীরিক সামর্থ ও নানা রোগের কথা চিন্তা করে তাকে থামাতে চায়; বলতে চায় "তুমি কেন যাবা, কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও না। এতদিন থাকার দরকার কি?"

কিন্তু আমার তখন কন্ঠরোধ হয়ে আসে। আমি তাকে আশাহত করার মতো বেয়াদবী করতে গিয়েও করি না। আমার কিছু টাকা দান করার মত ভন্ডামিও করতে বলিনা। আমি স্পষ্ট আমার অক্ষমতাটুকু দেখতে পাই।

এই বিপুল ঘুর্ণিঝড় পীড়িত লোকদের জন্যে দরকার কিছু সাহায্যের হাত যা শুধু কিছু টাকা সদকা দিয়েই দায়িত্ব এড়াবে না, নিজের পরিশ্রম দিয়ে (যে কোন প্রকারেরই হোক) সাহায্য পৌছে দেবার কাজটি করবে ও তাদের পূনর্বাসনে সাহায্য করবে।

সেরকমটি আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকলেও না করাটা লজ্জারই বটে। সেই লজ্জাই আমাকে আজ আমার পিতা দিয়েছেন এবং অপরাধী করেছেন।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

No comments: