Tuesday, August 15, 2006

পথে পথে (১): গন্তব্য বেলজিয়াম

ভ্রমনটা আসন্নই ছিল কিন্তু ছিলনা প্রস্তুতি। শেষ মুহুর্তে আমাদের ম্যাপ রিডিংয়ের ক্ষমতার উপর ভরসা না করে সিনিয়র ভাই একটি নেভিগেশন সিস্টেম কিনলেন । এটির মিষ্টি কনঠের জন্যে নাম দেয়া হলো আপাজান ।

অবশেষে আপাজানের হাতে আমাদের ভবিষ্যত ছেড়ে দিয়ে আমরা তিন ভাই ও এক ভাতিজা বার্লিন থেকে রওনা হলাম স্থলপথে বেলজিয়ামের দিকে । জার্মানির অটোবান বা হাইওয়ে প্রসিদ্ধ বাধাহীন স্পীডের জন্যে । আমরা 150-200 কিমি (ঘন্টাপ্রতি) জোরে চালানোর পরও দেখা গেল বেশ কিছু গাড়ী আমাদের ফেলে চলে যাচ্ছে । এখন গ্রীস্মের শেষ পর্যায় তাই ল্যান্ডস্কেপে বেশ পরিবর্তন দেখতে পেলাম । আগের দেখা দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুল ও ঘাসের অপুর্ব রংয়ের ছোপ তার পর গ্রাম জুড়ে বিভিন্ন একক বাড়ী ও গাছপালার চমৎকার্র কম্পোজিশন এবার দেখা গেল না । বিস্তীর্ন প্রান্তর জুড়ে ফসল কাটার পর ম্যার মেরে ন্যাড়া ক্ষেত ।

আপাজান বলছেন 767 কিমি গন্তব্য 8 ঘন্টার মতো লাগবে । লম্বা হাইওয়ে বেশ বিরক্তিকর । তাড়াহুড়োতে সঙীত আনতে ভুলে গিয়েছি। পথের সঙী তাই সবেধন নীলমনি মান্না দের সিডি । সাথে ম্যারাথন আড্ডা ও পিছনের সিটে নাসিকা গর্জনে বিশ্রাম। বিকেলের দিকে আপাজানের বিরক্তির উদ্রেক করে ডুসেলডর্ফ শহরে যাত্রাবিরতি । উদ্দেশ্য আমাদের এবং বাহনের পেটপুজো ।

নেভিগেশন সিষ্টেম আমাদের ঠিকই নানান অলিগলি দিয়ে আবার হাইওয়েতে নিয়ে গেল । কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে আমরা মোটামুটি কানা হয়ে আছি । ব্যাপারটা টের পাওয়া গেল কিছু সময় পর । রাস্তার সাইনবোর্ড পরিবর্তন হওয়ায় বুঝলাম আমরা জার্মানীর বর্ডার পার হয়েছি । ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্ডারলেস কান্ট্রির মাহাত্য বুঝলাম । কোন থামাথামি নাই। ইমিগ্রেশন, পাসপোর্টে সিল ইত্যাদির ঝামেলা নেই । আমাদের দেশে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতেও খোদা হাফেজ, স্বাগতম ইত্যাদি লেখা থাকে । এক্ষেত্রে বর্ডারের কাছাকাছি পথে ছোট করে ডাচ ভাষায় কিছু লেখা ছিল যা আমরা মিস করেছি। এদিকে বেলজিয়ামেও ডাচ ভাষার ব্যবহার রয়েছে।

এরপর শুরু হলো আমাদের চিন্তা আমরা ঠিক কোন দেশে আছি এখন । জার্মানির বর্ডারে দুটি দেশ এবং বেশ কতগুলো রাস্তা কাছাকাছি । আমাদের হিসাব মতে আমাদের বেলজিয়ামে ঢোকার কথা । কিন্তু মোবাইলে আমরা নেদারল্যান্ডের সিগনাল পাচ্ছি । কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি তা বের করার ব্যর্থ চেষ্টা করে আপাজানের হাতে নিজেদের সপে দিলাম । কিছুক্ষন পর আমরা বেলজিয়ামে প্রবেশ করলাম এবং বোঝা গেল আমরা শর্ট কাট নিয়েছিলাম নেদারল্যান্ড হয়ে ।

বেলজিয়ামের ল্যান্ডস্কেপ জার্মানী থেকে বেশ আলাদা । মাঠে গরু এবং ঘোড়ার অবাধ বিচরন । গ্রামের বাড়ীগুলোর কাঠামো একটু ভিন্ন এবং অতটা রংয়ের ব্যবহার নেই । যতই ব্রাসেলসের দিকে আসতে থাকলাম ততই বৃষ্টি বাড়তে লাগলো । এখানকার হাইওয়েতে বাতি রয়েছে যা জার্মানি বা নেদারল্যান্ডসে নেই । আমরা ইতিমধ্যেই জার্মানীর রাস্তায় গাড়ী চালিয়ে করাপটেড তাই বামের লেন ফাকা পেয়ে 150-160 কিমি বেগে গিয়েছি । পরে শুনলাম ওদের হাইওয়ের সর্বোচ্চ স্পিড লিমিট 120 এবং বামের রাস্তাটি ইমার্জেনসির জন্যে ফাকা রাখতে হয় । ভাগ্য ভালো পুলিশের ঝামেলায় পরিনি ।

ব্রাসেলস শহরে গিয়ে আপাজানের মাথা খারাপ হয়ে গেল । ওখানে বেশ কিছু টানেল । এবং টানেলের মধ্যে জিপিএস সিগনাল যায়না (রিপিটার নেই) । প্রতিবার টানেলের মধ্যে থেকে বের হয়েই সে অনেক ডিরেকশন দেয়া শুরু করল । রাস্তার মাঝ খানে বলে make a u turn now । পরে বুঝলাম ব্রাসেলসের কিছু অংশের ডিটেইলস তার ম্যাপে নাই। অত:পর তাকে রেস্ট দিয়ে দুরালাপনের আশ্রয় নিয়ে গন্তব্য স্থলে আগমন। (চলবে)

No comments: