Tuesday, August 15, 2006

পথে পথে (৩) : উত্তরের ভেনিসে

ব্রুজ বা ব্রুগগেকে (French: Bruges, Dutch: Brugge) বলা হয় উত্তরের ভেনিস। ব্রাসেলস থেকে ১২০ কিমি দুরের ইউরোপের অন্যতম সুন্দর শহরটিতে যেতে লাগলো এক ঘন্টারও কম । ১৩৮ বর্গ কিমির শহরটিতে লোক সংখা মাত্র ১ লাখ।

উত্তর সাগর সেখান থেকে খুব কাছে এবং খালের মাধ্যমে সংযুক্ত । শহরটিতে লোকবসতি হাজার বছরেরও আগে থেকে এবং ব্রিটেনের সাথে বানিজ্যের একটি গুরুত্বপুর্ন বন্দর হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল । ১৭শ খ্রীস্টাব্দের শেষের দিকে উত্তর সাগরের প্রান্তে আরও বন্দর তৈরি হওয়ায় এই বন্দরের গুরুত্ব আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে । ১৮শ খ্রীস্টাব্দের শেষের দিকে লোক বসতি কমে যাওয়ায় এর নামকরন করা হয় মৃত ব্রুজ 'Bruges-la-Morte' । এই শহরের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যগুলো লতাগুল্ম দিয়ে ঢেকে যায় । কিন্তু এটিই বাচিয়ে দেয় শহরটিকে । দ্্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উত্তর ইউরোপের অনেক শহর বোমায় ধ্বংশ হয় । কিন্তু লতাগুল্মের জন্য ব্রুজ শহরটিকে উপর থেকে জঙলের মত লাগায় এতে কোন বোমা পরেনি ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবার শহরটি জনবসতিপুর্ন হয় ও একে একটি পর্যটন শহর হিসাবে গড়ে তোলা হয় । এটি ইউনেস্কোর World heritage site এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে কি পরিমান পর্যটক আসে তা টের পেলাম গাড়ী পার্কিং করার সময় । মাটির নীচে চার তলা পার্কিং স্পেসে মনে হয় প্রতি তলায় হাজারের মত গাড়ী ধরে । খালি যায়গা খুজতে লাগল ২৫ মিনিট ।

আবহাওয়া আমাদের সাথে সকাল থেকেই মসকরা করছিল । এই বৃষ্টি তো এই রোদ । এর মধ্যেই আমাদের ব্রুজ অভিযান শুরু হলো । সারি সারি মধ্যযুগীয় পুরোনো বাড়ী ও পুরোন ঢাকার মতো চিপা গলি । রাস্তা তৈরি পাথরের টালি দিয়ে। বলাই বাহুল্য টুরিস্টরা গিজ গিজ করছে এবং অনেকেরই হাতে গরম ওয়াফল , এখানকার জনপ্রিয় খাবার।
অনেক বাড়ীর নিচের তলা টুরিস্টদের মনোরনজনের জন্যে বিবিধ দোকান ও রেষ্টুরেন্টে রুপান্তরিত হয়েছে । তবে উপরের তলাগুলোতে ব্রুজবাসীদের বসতি রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তৈরির সাল লেখা রয়েছে, কোনটি ১৬শ খ্রীস্টাব্দে কোনটি ১৭শ খ্রীস্টাব্দে তৈরি। শহরের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া খালগুলোর পাড়ে ভেনিসের আদলে অপুর্ব দালান উঠে গেছে । সময়ের অভাবে বোট রাইডে ওঠা হলো না ।

ব্রুজে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে । চার্চ অফ আওয়ার লেডিতে মাইকেল এনজেলোর Madonna and Child ভাস্কর্যটি আছে যা ১৫০৪ সালে তৈরি হয়েছিল । এছাড়াও মধ্যযুগীয় ফ্লেমিশ পেইন্টিং ও ভাস্কর্যের মিউজিয়াম রয়েছে । শহরের মধ্যে দিয়ে হেটে যাওয়াটাই অদ্ভুত রোমনচের জন্ম দেয় । অনেকখানেই ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া বাহন নেই, মনে হয় মধ্য যুগে আছি ।

বেলজিয়াম প্রসিদ্ধ তার 'লেস' এর কাজ এবং চকলেটের জন্য । স্যুভেনির হিসাবে উভয়ই মন্দ নয় । ফ্যাক্টরি ও দোকান উভয়ই আছে এখানে ।

বেশ বড় এই শহরটিতে ভ্রমনের ভালো উপায় হচ্ছে সাইকেল ভাড়া করে নেয়া । অনেক কিছুই দেখা হলো না ফিরে যেতে হবে বলে। ব্রাসেলসে যে দেশীয় আতিথেয়তা (দুপুরের খাবার) অপেক্ষা করছে । (চলবে)

No comments: