Monday, September 25, 2006

ধনি দেশের গরিব শিশুরা

বার্লিনের নতুন প্রধান রেল স্টেশন থেকে হেটে যাচ্ছি চ্যানসেলারের অফিসের পাশ দিয়ে পার্লামেন্টের দিকে। দেখি রাস্তার পাশের ঘাসে ছাওয়া প্রান্তর ভর্তি হাজার হাজার নীল পতাকা পোতা। ডয়েশার কিন্ডারশুটজবুন্ড নামের প্রতিষ্ঠানটি বার্লিনে প্রায় দুইলাখ এমন পতাকা লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে জার্মান রাজধানীতে সম সংখক গরীব শিশুর প্রতি সরকারের অবহেলার বিরুদ্ধে।

বলা হয় জার্মানির দেড় কোটি শিশুর ছয়জনে একজন গরীব এবং অন্য সাধারন শিশু থেকে তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মান খারাপ। এদের অনেকেই হয়ত শিক্ষা সমাপ্ত করবে না এবং অপরাধে জড়িয়ে যাবে।এদের দারিদ্রতার মুল কারন তাদের পিতামাতার বেকারত্ব।২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী জার্মানীতে একদিকে ১০লাখ উচ্চবিত্তের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ১০ লাখ ইউরোর বেশী করে, অন্য দিকে দারিদ্রতার সীমার নীচে অবস্থানরত লোকের (গড় আয়ের ৬০% থেকেও কম) সংখ্যা ১৭%, স্মরনকালের সবচেয়ে বেশী। প্রায় ১০% উচ্চবিত্ত লোক দেশটির ৫০% সম্পদের অধিকারী আর ৫০% নিন্মবিত্ত মিলে দেশটির মাত্র ৪% সম্পদ অর্জন করতে পেরেছে।

রাজধানী বার্লিনের ৩৫লাখ নাগরিকের পাঁচ লাখ গরীব এবং বেকারত্বের হার ১৭%। (সুত্র)এই দারিদ্রতা বৃদ্ধির প্রধান কারন হচ্ছে গত এসপিডি-সবুজ সরকারের হার্জ-৪ নামে নতুন এক নীতিমালা, যা বেকার লোকদের সোশাল সিকিউরিটির পরিমান কমিয়ে দেয় । অনেক বেকার লোক তাদের বাড়ী ছেড়ে অস্বাস্থ্যকর এলাকায় কম ভাড়ায় বাসা নিতে বাধ্য হয়। ২০০৪ সালে হার্জ-৪ চালু হবার পর এই দু বছরে শিশু দারিদ্রতার হার দ্বিগুন হয়ে গেছে। বার্লিনের অবস্থা আরও খারাপ। প্রায় অর্ধেক লোক সোশাল সিকিউরিটি নিয়ে থাকে। কিছু বদনামও আছে এদের অনেকের। অনেকে কম বেতনে চাকুরি করার থেকে কিছু না করেই প্রায় সমপরিমান সোশাল সিকিউরিটি পেতেই পছন্দ করে।

টুরিস্ট শহর হিসাবে পরিচিত এই শহরে চাকচিক্য বাড়ছে এবং লোক বাড়ছে। কিন্তু কাজের সুযোগ বাড়ছে না। প্রচুর পরিমানে তুর্কি আর পুর্ব ইউরোপের লোকের বসবাস এখানে যারা কম পয়সায় শ্রম বিক্রি করে থাকে। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনে ভিখারী প্রায়ই দেখা যায়। সেদিন দেখলাম কিছু যুবক রাস্তায় গাড়ীর কাঁচ পরিস্কার করে পয়সা চাচ্ছে। সিটি ট্রেনে গান গেয়ে ভিক্ষা করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই শহরে জীবন যাত্রার ব্যায় কম বলে কম আয়ের লোকেরা (বিশেষ করে সোশাল সিকিউরিটি ভোগরতরা) এখানে থাকতে পছন্দ করে। আমাদের দেশের গরীবদের সাথে এখানকার গরীবদের একটাই পার্থক্য, এখানে না খেয়ে কেউ মারা যায়না এবং পোশাক দেখে অনুমান করা কঠিন।

হঠাৎ করেই দেখা যায় যে বেশ ছিমছাম যুবক জিগ্গেস করছে যে ভাঙতি ৫০ সেন্ট আছে কিনা, তার টিকেটে কম পড়ছে (আসলে ভিক্ষার একটি কৌশল)।হপটবানহফে (প্রধান রেল স্টেশন) ফেরার পথে কাঠের পায়ে হাটা ব্রিজ ধরে স্প্রে নদী পার হলাম। ব্রিজের কোনায় একটি মলিন চেহারার ৩-৪ বছরের একটি শিশু একর্ডিয়ন বাজাচ্ছে, পাশে একটি থালা, কয়েকটি পয়সা তাতে। একটু এগিয়ে দেখলাম একটি পুর্ব ইউরোপীয় রমনী হাতে বাটি হাতে বলছে বিটে... বিটে... (দয়া করুন)। বুঝলাম ছেলেটির মা। ফেরার পথে কু'দামের (নিউইয়র্কের ফিফথ এভিনিউর অনুরুপ) রাস্তা দিয়ে বাসায় যাচ্ছি। আলোকিত কাচের শোরুম গুলোতে ডিজাইনার পোষাকের দাম শুরু ৩০০০-৫০০০ ইউরো থেকে। ধনী ও গরীবের কি বিভৎস সহাবস্থান!

No comments: