Thursday, April 18, 2019

বাংলাদেশের নদী

বাংলাদেশের নদী

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে রয়েছে শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০ নদ-নদী (তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া)। ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া, আঁকাবাঁকা মৌসুমি খাড়ি, কর্দমপূর্ণ খালবিল, যথার্থ দৃষ্টিনন্দন নদ-নদী ও এদের উপনদী এবং শাখানদী সমন্বয়ে বাংলাদেশে রয়েছে মোট প্রায় ২৪,১৪০ কিমি দৈর্ঘ্যের নদীব্যবস্থা। কিছু কিছু স্থানে যেমন, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং সুন্দরবন অঞ্চলে নদীনালা এতো বেশি যে সে অঞ্চলে প্রকৃতই নদীজালিকার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" বাংলাদেশের নদীগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫টি। পাউবো কর্তৃক নির্ধারিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১০২টি) , উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১১৫টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী (৮৭টি), উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী (৬১টি), পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী (১৬টি) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী (২৪টি) হিসেবে বিভাজন করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদীর মধ্যে অনেকগুলো আকার এবং গুরুত্বে বিশাল। এসব নদীকে বড় নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বৃহৎ নদী হিসেবে কয়েকটিকে উল্লেখ করা যায় এমন নদীসমূহ হচ্ছে: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি, শীতলক্ষ্যা, গোমতী ইত্যাদি।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী:

আঠারবাঁকি, আড়িয়াল খাঁ নদ, আতাই, আন্ধারমানিক, আফ্রা, অর্পণগাছিয়া, ইছামতি-কালিন্দি, কচা, কপোতাক্ষ নদ, কুমার নদ (চুয়াডাঙ্গা), কুমার নদী (ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ), কুমার আপার নদী, কুমার লোয়ার নদী, কয়রা, করুলিয়া, কাকশিয়ালী, কাজীবাছা, কাটাখালী, কাটাখাল, কালীগঙ্গা (পিরোজপুর), কীর্তনখোলা, খায়রাবাদ, খোলপেটুয়া, গড়াই, গুনাখালি, গলঘেসিয়া, গুলিশাখালী, ঘাঘর, ঘাসিয়াখালী, চত্রা, চুনকুড়ি, চন্দনা-বারাশিয়া, চাটখালী, চিত্রা, ঝপঝপিয়া, টর্কি, টিয়াখালি, ঢাকি, তেঁতুলিয়া, তেলিগঙ্গা-ঘেংরাইল, দড়াটানা-পয়লাহারা, দাড়ির গাঙ, দেলুতি, নুন্দা-উত্রা, নবগঙ্গা, নড়িয়া, নেহালগঞ্জ-রঙমাটিয়া, পটুয়াখালী, পুটিমারি, পুরাতন পশুর, পশুর, পাণ্ডব, পানগুছি, পালং, ফটকি, বগী, বুড়িশ্বর-পায়রা, বলেশ্বর, বাদুড়গাছা, বিশখালী, বিশারকন্দা-বাগদা, বিষ্ণু-কুমারখালি, বেগবতী, বেতনা, বেলুয়া, ভদ্রা, ভুবনেশ্বর, ভৈরব নদ, ভৈরব নদী (বাগেরহাট), ভৈরব-কপোতাক্ষ নদ, ভোলা, মংলা, মুক্তেশ্বরী টেকা, মধুমতি, মরিচ্চাপ-লবঙ্গবতী, মাথাভাঙ্গা, মাদারগাঙ, মাদারীপুর বিলরুট, মালঞ্চ, মিনহাজ, রূপসা, রাবনাবাদ, রায়মঙ্গল, লোহালিয়া, শাকবাড়িয়া, শাতলা-হারতা-নাথারকান্দা, শালদহ, শিবসা, শোলমারি, সুগন্ধা, সন্ধ্যা, সয়া-হাড়িভাঙ্গা, সাপমারা-হাবড়া, সালতা, সিরাজপুর হাওর, হরি, হরিহর, হামকুড়া, হাড়িয়া, হাপরখালী, হাবরখালী, হিশনা-ঝাঞ্চা নদী।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী:

আখিরা-মাচ্চা, আত্রাই, আত্রাই বা কাঁকড়া (দিনাজপুর), আত্রাই বা গুড় (নওগাঁ-নাটোর), আত্রাই (পাবনা), আলাই, আলাইকুমারী, ইছামতি (দিনাজপুর), ইছামতি (পাবনা), ইছামতি (বগুড়া), ইছামতি (বগুড়া-সিরাজগঞ্জ), ইরামতি, করতোয়া, করতোয়া (নীলফামারী), কাগেশ্বরী, কাটাখালী (গাইবান্ধা), কালা, কালাপানি, কালুদাহা, কুমলাল-নাউতারা, কুরুম, কুলিক, খড়খড়িয়া-তিলাই, খালসিডিঙ্গি, গদাই, গভেশ্বরী, পদ্মা, গাংনাই, গিদারী, গিরাই, গুকসী, গোবরা, গোহালা, ঘড়িয়া খাল, ঘাঘট, ঘিরনাই, ঘোড়ামারা, চাওয়াই, চিকনাই, চিকলী, চিরি, চিড়ি, চুঙ্গাভাঙ্গা, ছাতনাই, ছোট ঢেপা, ছোট যমুনা, ছোট সেনুয়া, টাঙ্গন, ডাহুক, ঢেপা, তালমা, তিস্তা, তিস্তা (পঞ্চগড়), তীরনই, তীরনই (পঞ্চগড়), তুলসীগঙ্গা, দুধকুমার, দেওনাই-চাড়ালকাটা-যমুনেশ্বরী, ধরলা, ধাইজান, ধুম, নর্ত, নলশীসা, নলেয়া, নাগর আপার নদী, নাগর লোয়ার নদী, নারোদ, পলিমারি, পাগলা, পাথরঘাটা, পাথরাজ, পুনর্ভবা, পেটকী, ফকিরনী, ফুলকুমার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, বড়াল আপার নদী, বড়াল লোয়ার নদী, বাঙালি, বাদাই, বার্নাই, বান্নী, বুরাইল, বুল্লাই, বুড়িখোড়া, বুড়ি তিস্তা, বেরং, বেলান, বেসানী, বোরকা, ভাদাই, ভুল্লী, ভেরসা, মহানন্দা আপার নদী, মহানন্দা লোয়ার নদী, মাইলা, মালদাহা, মুসাখান, মানস, যমুনা (পঞ্চগড়), রতনাই, রামচণ্ডি, রাক্ষসিনী-তেঁতুলিয়া, লেংগা, লোনা, শিব, সতী-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী, সিমলাজান, সিরামাখালী খাল, সিংগিমারী, সুই, সেনুয়া, সোজ, হারাবতী, হুড়াসাগর নদী ।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী:

আত্রাখালি, আবুয়া নদী বা নান্দিয়া গাং, আমরি খাল, ইসদার খাল-বারভাঙ্গা নদী, উপদাখালী, উমিয়াম, কর্ণঝরা, কর্ণ-বালজা, করিস, কাঁচামাটিয়া, কাপনা, কামারখাল, কামারখালী, কালদাহার-কানিয়াকুল, কালনী, কালাপানিঝরা, কুশিয়ারা, কোরাঙ্গী, খাজাচিং, খাসিমারা, খেপা, খোয়াই, গুমাই, ঘাগটিয়া, ঘানুরা-বগালা, ঘোড়াউত্রা, চামতি, চিতলখালী, চেলা, জাফলং-ডাউকি, জালিয়া ছড়া, জালুখালি, জুরী, ডাউকা, ধলা, দুধদা, দোলতা, ধনু, ধলাই-বিসনাই, ধলাই, নকলা-সুন্দ্রাকাশি, নরসুন্দা, নলজুর, নয়াগাং, নয়া গাং, নিতাই, পাটনাই-পাইকারতলা, পাবিজুড়ি-কুশি গাঙ-কুশিয়া, পিয়াইন, পিয়াইন (সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা), পুরনো সুরমা, পোড়া খাল-খাইয়া, বটরখাল, বড় গাং, বাউলাই, বাথাইল, বালই, বিজনা-গুঙ্গাইজুরি, বিবিয়ানা, বেকরা, বেতৈর, বেদুরি, ভাবনা-বাঁশিয়া-বহিয়া, ভোগাই-কংস, মগড়া, মনু, মরা সুরমা, মহারশি, মহাসিং, মালিজি, মিরগী, জাদুকাটা-রক্তি, লংলা, লাইন, লাউরানজানি, লুভা, সাইদুলি-বারনি, সাতারখালী, সারি গোয়াইন, সিনাই, সিঙ্গুয়া, সুতাং, সুরমা, সোনাই-বরদাল, সোমেশ্বরী, সোমেশ্বরী (ধর্মপাশা), সোমেশ্বরী নদী (শ্রীবর্দী-ঝিনাইগাতি) ।

উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী:

আইমান-আখিলা, আইমান-মোবারি, আড়িয়াল খাঁ, ইছামতি (মানিকগঞ্জ), ইছামতি (সিরাজদিখান), ইলিশমারী, এলংজানী, কাটাখালি, কালিগঙ্গা (মানিকগঞ্জ), খিরো (ত্রিশাল), খিরো (ভালুকা), গাংডুবি, গাজীখালী, গোল্লার, চাতাল, চাপাই, চিলাই, জয়পাড়া খাল, ঝারকাটা, জিঞ্জিরাম, ঝিনাই, টঙ্গী, টংকি, তালতলা, তুরাগ, তুলসীখালী, ধলেশ্বরী, নাগদা, নাঙ্গলা, নালজুরি, নাংলী, পদ্মা, পাগারিয়া-শিলা, পারুলি খাল, পাহাড়িয়া, পুরনো ধলেশ্বরী, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, পুংলী, বংশী, বংশী (সাভার), ব্রহ্মপুত্র (নরসিংদী-মুন্সীগঞ্জ), বাকসাতরা, বাজ্জা-মেধুয়া, বানার আপার নদী, বানার লোয়ার নদী, বালু, বুড়িগঙ্গা, বৈরান, বোশখালী, মরা জিঞ্জিরাম, মাহারি, মিনিখালী, লাবুন্ধা, লৌহজং, শীতলক্ষ্যা, সালদা, সুতী, সুতিয়া, সোনাখালী, হাই, হাড়িদোয়া নদী।

পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী:

ইছামতি (রাঙ্গামাটি), ঈদগাও, কর্ণফুলি, কাসালং, চেঙ্গি, ডলু-টংকাবতী, নাফ, বুড়া মাতামুহুরী, বাঁকখালি, ভারুয়াখালি, ভোলাখাল, মাইনী, মাতামুহুরী, রাংখাইন, সাঙ্গু, হালদা নদী ।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী:

আর্সি-নালিয়া, কাকড়ি, কাস্তি, গোমতী, ঘুংঘুর, ছোট ফেনী, ডাকাতিয়া, ডাসাডিয়া, তিতাস, পুরনো তিতাস, ধনাগোদা, ফেনী, বিজলি, বুড়ি, ভুলুয়া, মুহুরী, মেঘনা আপার নদী, মেঘনা লোয়ার নদী, লহর, লংগন বলভদ্রা, সালদা, সেলোনিয়া, সোনাই, হাওড়া নদী।

বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার আন্তঃসীমান্ত নদীর তালিকা:

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা নদী- ৫৫টি, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা নদী- ৩টি। রায়মঙ্গল, ইছামতী-কালিন্দী, বেতনা-কোদালিয়া, ভৈরব-কপোতাক্ষ, মাথাভাঙ্গা, গঙ্গা, পাগলা, আত্রাই, পুনর্ভবা, তেতুলিয়া, টাংগন, কুলিক বা কোকিল, নাগর, মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তালমা, ঘোড়ামারা, দিওনাই-যমুনেশ্বরী, বুড়িতিস্তা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, চিল্লাখালি, ভোগাই, সোমেশ্বরী, দামালিয়া/যালুখালী, নয়াগাঙ, উমিয়াম, যাদুকাটা, ধলা, পিয়াইন, শারি-গোয়াইন, সুরমা, কুশিয়ারা, সোনাই-বারদল, জুরি, মনু, ধলাই, লংলা, খোয়াই, সুতাং, সোনাই, হাওড়া, বিজনী, সালদা, গোমতী, কাকরাই-ডাকাতিয়া, সিলোনিয়া, মুহুরী, ফেনী, কর্ণফুলি, নিতাই, সাংগু, মাতামুহুরী, নাফ নদী।

অন্যান্য নদী:

আন্তঃসীমান্ত নদী এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ৪০৫টি নদী ছাড়াও আরও প্রায় তিন শতাধিক নদী রয়েছে। যেমনঃ আউলিয়াখানা, আমনদামন, আস্তাইল, কম্পো, কাওরাইদ, কাজীপুর, কালিন্দী, খাড়িয়া, গন্দর, গুমানি, খোয়াথল্যাংতুইপুই, চিলাই (সুনামগঞ্জ), চোরখাই, জলঢাকা, তেতুলিয়া, তৈনগাঙ, থেগা, নাগেশ্বরী, ধানখালী, ধানসিঁড়ি, নীলগঞ্জ, পঞ্চবেণী, প্রাণসায়র, ফটিকছড়ি, বরাক, বান্দসা, বুড়ো গৌরাঙ্গ, ময়ুর, রহমত খালি, রায়ডাক, লঙ্গাই, শুক, সোয়াই, হরবাংছড়া, হরিণঘাটা, হাড়িয়াভাঙা, হেরাচামতি নদী ইত্যাদি।

এই নদীগুলো সম্পর্কে আরো জানতে রিভার্স অফ বাংলাদেশ নামের অ্যাপটি আপনার ফোনে ব্যবহার করতে পারেন।

বাংলাদেশের নদী সম্পর্কে আরও কিছু তথ্যঃ

১) বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী সুরমা (৩৯৯কিমি)
২) বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক নদী পদ্মা নদীর অপর নাম কীর্তিনাশা। পদ্মা নদীর উৎপত্তি স্থল গঙ্গোত্রী হিমবাহ। কুমির সদৃশ ঘড়িয়াল দেখা যায় কোথায় – পদ্মনদীতে। পদ্মা মেঘনার সাথে মিশেছে চাঁদপুরে।পদ্মার শাখা নদী হল ইছামতি, গড়াই, ভৈরব, কুমার, আড়িয়ার খাঁ।পদ্মার একমাত্র উপনদী মহানন্দা। ৩২৪ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যের পদ্মা বাংলাদেশের সবচেয়ে নাব্য নদী।
৩) বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া নদী- ১টি (কুলিখ)
৪) বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট নদী – গোবরা (তেঁতুলিয়া), ৪ কিমি।
৫) বাংলাদেশের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী মেঘনা।
৬) বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রশস্ত নদী যমুনা।
৭) বাংলাদেশের সবচেয়ে র্দীঘতম নদী ব্রহ্মপুত্র।

ছবি এবং তথ্যের জন্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ আমিনুল ইসলাম তুহিন

No comments: