দেনা
"বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা"
- উৎপলকুমার বসু
টুকিটাকি ভাবনাগুলো
"বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা"
- উৎপলকুমার বসু
Posted by
Rezwan
at
12:41 PM
0
comments
Posted by
Rezwan
at
12:44 PM
1 comments
Labels: ইন্দোনেশিয়া, ডায়রি
আজকের খবরের চ্যানেলগুলোতে শুধু বার্লিন ওয়াল পতনের বিশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানমালা - অনেকেই লাইভ দেখাচ্ছে। ১৯৮৯ সালে বার্লিন ওয়ালের এই পতন মধ্য ও পূর্ব ইউরোপব্যাপী সমাজতন্ত্র বিরোধী বিপ্লবেরই শক ওয়েভের ফসল হিসেবে ধরা হয়। তবে এটি আরও তাৎপর্য পূর্ণ। এটি হচ্ছে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মায়ের পেটের দুই ভাইয়ের পুনর্মিলন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর সমন্বিত পরাশক্তিরা ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত জার্মানী দখল করে রাখে। ১৯৪৯ সালে আমেরিকা গ্রেট ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের দখলে থাকা ১২টি স্টেটের সমন্বয়ে পশ্চিম জার্মানী গঠিত হয় এবং রাশিয়ার দখলে থাকা ৫টি স্টেট নিয়ে পূর্ব জার্মানী গঠিত হয়। প্রাক্তন রাজধানী বার্লিন শহরটি দুইভাগ হয়ে যায় এবং পশ্চিম জার্মানীর রাজধানী বন নির্ধারিত হয়। ১৯৫৫ সালে রাশিয়া পূর্ব জার্মানীকে পুরোপুরি স্বাধীন ঘোষণা করে, তবে রাশিয়ার সৈন্যরা পটস্ডাম চুক্তি অনুযায়ী সেখানে থেকে যায়, যেমন পশ্চিম জার্মানীতে আমেরিকা, ইউকে আর ফ্রান্স এর সৈন্যরা ছিল।
আলাদা হবার পরপরই ১৯৫০ এর দশকে পশ্চিম জার্মানী একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে যায়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির অনেকটাই তারা কাটিয়ে উঠে। ঐদিকে পূর্ব জার্মানরা তেমন সৌভাগ্যবান ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম থেকেই তাদের উপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারা পোল্যান্ড আর চেকোস্লোভাকিয়া ছাড়া কোথাও যেতে পারত না (তাও বিশেষ অনুমতিক্রমে)। কিন্তু তবুও সীমিত আকারে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হত তখনও। তবে পশ্চিম জার্মানীতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থাকায় ১৯৫০ এর দশকে প্রায় ৩৫ লাখ পূর্ব জার্মানবাসী পশ্চিম জার্মানীতে চলে আসে। এই ঢল ঠেকাতে হঠাৎ করে ১৯৬১ সালে বার্লিনের মাঝামাঝি দেয়াল তুলে দেয়া হয় ও ডেথ জোন তৈরি করা হয় নো ম্যানস ল্যান্ডে। পরবর্তী বছরগুলোতে অনেকে এই ডেথ জোন পার হয়ে পালাতে গিয়ে মারা যায় পূর্ব জার্মান সৈন্যদের কাছে।
দুই জার্মানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পূর্ব জার্মানীর সরকার খুব তৎপর ছিল। পশ্চিম জার্মান সরকারও মানবাধিকার ইস্যুগুলো খুঁচিয়ে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি বজায় রাখত। কিন্তু একই ভাষা, একই জাতি এবং একই পরিবারের মধ্যে টান কিন্তু ঘুঁচাতে পারে নি। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় ১৩০০০ পুর্ব জার্মানবাসী অষ্ট্রিয়া -হাঙ্গেরিয়ান সীমান্তে পালিয়ে আসে। চেকোস্লোভাকিয়ায় পশ্চিম জার্মান দুতাবাসে কয়েকশ পূর্ব জার্মান আশ্রয় নেয় এবং পরে তাদের বিশেষ ট্রেনে করে পশ্চিম জার্মানী নিয়ে আসা হয়। সে মাসেই এরিক হোনেকার পূর্ব জার্মানীর প্রিমিয়ার পদ থেকে সরে দারান।
ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপে ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর সরকার ঘোষণা দেয় যে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পূর্ব জার্মানদের উপর ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। সেটা ছিল এক নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং তা নিয়ে কোন প্রস্তুতি ছিল না, এমনকি বর্ডার গার্ডরাও কিছু জানতেন না। তবে সেই ঘোষণা দেয়ার সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এই সিদ্ধান্ত কি কখন থেকে কার্যকর হবে? তখন মূখপাত্রটি আমতা আমতা করে বলেন আমিতো কোন সময় উল্লেখ দেখছি না - এখন থেকেই ধরতে পারেন। এটি সরাসরি টিভিতে দেখানো হচ্ছিল। তা শুনে দলে দলে লোক বার্লিনের বিভিন্ন চেকপোষ্টে চলে আসে। লোকের প্রচন্ড চাপে সীমান্তরক্ষীরা হাল ছেড়ে দেয় এবং সরে দাঁড়ায়। প্রায় বিশ হাজার লোক সেদিন দেয়াল ভেঙ্গে ও টপকে পশ্চিম জার্মানিতে চলে আসে। বার্লিন ওয়ালের পতন হয়।
এই ঘটনা পরবর্তী বছরে দুই জার্মান একীভূত করাকে তরান্বিত করে। 'আমরা এক জাতি - এই স্লোগানে আকাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
আমাদের পূর্ব ও পশ্চিম বাংলাও এক সময় আলাদা হয়েছিল। জার্মানদের ক্ষেত্রে সেটি ছিল দেশ ভাগ এবং ভাবধারার ভিন্নতা। আমাদের ক্ষেত্রে সেটি ছিল ধর্মীয় ভাগ। একই ভাষা, একই সংস্কৃতি, একই জাতীয়তা। অথচ ধর্মের ভিন্নতা আমাদের দুরে ঠেলে দিল।
দুই জার্মানীকে আলাদা রাখার জন্যে সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। পূর্ব জার্মানীতে টিভিতে একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করা হত পশ্চিম জার্মানীর বিরুদ্ধে খুনসুটি করার জন্যে। বাইরে দেয়াল থাকলেও কিন্তু লোকজনের মনে দেয়াল ছিল না। তাই দুই জার্মানীর আবার এক হওয়া সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু আমাদের দুই বঙ্গের কি অবস্থা? ধর্ম-সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প এখনও ছড়ায়। পশ্চিম বঙ্গে বাংলা ভাষার কদর কমে যাচ্ছে। নেই সেখানে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলের প্রবেশাধিকার। সাংস্কৃতিক বিনিময় আগের চাইতে অনেক কম। পশ্চিম বঙ্গে বাংলাদেশের ক'জন লেখকের বই বিক্রি হয়? পূর্ব বঙ্গ তথা বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ এখন রাজনৈতিক এজেন্ডা- এটি কিছু মানুষের রুটি রুজির ব্যাপার। বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে তারা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলতে ব্যস্ত। আমরা না চাইলেও দুরত্বটা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
সব মিলে দুই বঙ্গের কারও কি ইচ্ছে হয় আবার কাঁটাতারের বেড়া ভেঙ্গে এক সাথে মেলার? জানি বর্তমান বাস্তবতায় হয়ত একত্রীকরণ বেশীই চাওয়া হবে। তবে নিদেনপক্ষে ভিসা বিহীন যাতায়াত, ইইউর মত ইকনমিক জোন?
কিন্তু সেটা সম্ভব করার আগে আমাদের মনের দেয়াল ভাঙ্গতে হবে।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
Posted by
Rezwan
at
12:52 PM
1 comments
Posted by
Rezwan
at
11:16 PM
1 comments
Labels: বাক স্বাধীনতা, বাংলাদেশ
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী ছাত্র দেলোয়ার হোসেইন সম্প্রতি গার্জিয়ান পত্রিকার কমেন্ট ইজ ফ্রি সেকশনে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ব্রিটেন যে কিছু যুদ্ধাপরাধী আছে তা নিয়ে একটি তথ্য বহুল লেখা লেখেন গত ৭ই মার্চ। তার রিপোর্টটির মধ্যে ছিল যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে নিয়ে কয়েকটি প্যারা যা সেন্সর করার পর বর্তমানে এখানে দেখা যাবে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের সপ্তাহখানেক পরে মঈনুদ্দিনের আইনজীবিদের কাছ থেকে উকিল নোটিশ পাবার পর গার্ডিয়ান পত্রিকা উক্ত প্যারাগুলো মুছে ফেলে একটি ডিসক্লেইমার ঝুলিয়ে দেয়:
• On 13 October this article was changed following a legal complaint.
আইনের হুমকিতে গার্ডিয়ান পত্রিকা সত্যি প্রকাশে পিছু হটেছে যা বাক স্বাধীনতার উপর বড় আঘাত। এটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় বিচার লাভের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আরও বড় হুমকি।
ব্রিটেন যে যুদ্ধাপরাধীদের ভূস্বর্গে পরিণত হয়েছে, এই ক্ষোভ এর আগেও প্রকাশ পেয়েছে অন্যান্য দেশের বিভিন্ন নাগরিকদের মন্তব্য থেকে। বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের কারও কারও নিরাপদ বাসস্থান এখন এই ব্রিটেন। এই ব্রিটেনে বসেই গোলাম আযম পরিচালনা করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন।
বাংলাদেশ যখন প্রত্যাশা করছে, ২০০৮-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকার তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে, বিদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী যুদ্ধাপরাধীদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে, ঠিক তখনই একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী চক্র আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, এ-ধরণের বিচার প্রক্রিয়াকে ঠেকানোর জন্যে এবং বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত তথ্যায়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করার জন্যে তারা যথেষ্ট সংঘবদ্ধ।
Posted by
Rezwan
at
1:09 AM
0
comments
Labels: বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ
মানুষের এই ছোট জীবনে শারীরিক সমস্যার অন্ত নেই। আমাদের বেশীরভাগই নিজস্বতা ছাপিয়ে অন্য কেউ হতে চাই, কোন রোল মডেলের মত। আমাদের কারও হয়ত রঙ ময়লা, কেউ খাটো (ছেলে হলে) বা কেউ লম্বা (মেয়ে হলে)। কারও নাক বোঁচা, কারও দাত উঁচু, কারও মাথায় টাক। কারও গলার স্বর চিকন, কারও মোটা। কেউ তালপাতার সেপাই আবার কেউ হাতির মত। কারও মুখে ব্রণের দাগ, কারও ত্বক তেলতেলে।
খেয়াল করে দেখেছেন? উপরের প্রত্যেকটি সমস্যাগুলো সমাধানে বাণিজ্যিক পণ্য পাওয়া যাবে। এক গায়ের রঙ ফর্সা করার পণ্যেরই তো বিশ্বব্যাপী বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রী। মানুষ নিজের খুঁতগুলোকে ঢাকার জন্যে অঢেল টাকা খরচ করতে রাজি। কারণ একজনের সমস্ত পৃথিবী আবর্তিত হয় তার নিজের স্বত্বা, তার চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করেই।
বিশ্বের নানা দেশে বিবিধ বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে মানুষের এইসব চাহিদা মেটাতে। ভোগবাদের মূলমন্ত্র যে জিনিষ কেনার সাথে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি তা এসব পণ্যে বিদ্যমান। এই সমস্ত পণ্য প্রলোভন দেখানো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি হয় (হোক দেশটি বাংলাদেশ, ভারত অথবা ইন্দোনেশিয়া)। মেয়ের রঙ ময়লা বলে সে চাকরি পাচ্ছে না, অথচ সংসারের আয় দরকার। বাবা তাকে ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম কিনে দেয় আর সে এয়ার হোস্টেসের চাকুরি পায়, সংসার চালায় - কি সংবেদনশীল আবেগ। আরেক বিজ্ঞাপনে এক ছোট অভিনেতা ত্বক সাদা করার ক্রিম মেখে শ্যুটিংয়ের সময় নামকরা পরিচালকের নজরে পড়ে যায় ও নায়কের অভিনয়ের প্রস্তাব পায়। এইসব প্রচার ও আবেগের মাধ্যমে আমাদের সমাজের বর্ণবাদী মনোভাব আরও প্রতিষ্ঠা পায়।
শুধু এই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করেও অনেক পণ্য এসে গেছে বাজারে। ইসলামী ব্যান্কিং ব্যান্ক পরিমন্ডলে ভাল ব্যবসা করছে। নানা স্ন্যাক্সের সাথে হালাল শব্দটি জুড়ে দিলে বেশী বিক্রি হয়। শুদ্ধ ভেজিটারিয়ান পণ্যের কাটতি অনেক দেশেই। হিজাব পড়া বার্বি ডল বা ইসলামি সাতারের পোশাক জাতীয় পণ্য এখন হালের ফ্যাশন।
আর এসব পণ্য তৈরি ও বাণিজ্যে সেরা দেশ হচ্ছে চীনদেশ। আমাদের দেশে জিন্জিরায় ও তাদের মতই নানা পণ্য তৈরি হয় (পড়ুন নকল হয়) এবং সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে তাদের পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।
চীন দেশে বিএমডাব্লিউ এক্স ফাইভ জীপটির ডিজাইনে গাড়ি বিক্রি হয় চাইনিজ ব্র্যান্ড সহকারে। তবে শোরুমের বাইরেই বিএমডাব্লিউর লোগোটি পাওয়া যায় যা লাগিয়ে নিলে আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।
(কৃত্রিম সতীচ্ছদ কিট - ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা এনওয়াই ডেইলি নিউজ)
Posted by
Rezwan
at
1:15 AM
0
comments
আজ (সেপ্টেম্বর ২৮) ছিল বিজয়া দশমী। বেলা বারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শারদীয় দুর্গা পুজা মন্ডপে গিয়ে দেখি বাইরে ট্রাক দাঁড়ানো - বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে। প্রবেশ পথটি মরিচা বাতি দিয়ে ছাওয়া। রাতে নিশ্চয়ই বেশ লাগে।
জগন্নাথ হলে পুজা মন্ডপ
প্রতিমার সামনে তেমন ভীড় দেখলাম না। ঢাক বেজে চলেছে এবং কিছু বাচ্চা নাচছে। অনেককেই দেখলাম প্রতিমাকে ব্যাকগ্রাউন্ডে নিয়ে নিজেদের ছবি তোলায় ব্যস্ত, ডিজিটাল ক্যামেরা, সাধারণ ফিল্ম ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনের ক্যামেরার ছড়াছড়ি।
মা দুর্গা
মা দুর্গা দাঁড়িয়ে সব দেখছেন। আর দেখছেন চেয়ারে বসে অনেকে।
প্রতিমা
বিকেলে বিসর্জনের সময় ঢাকায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হল। মা দুর্গা পতি শিবের কাছে ফিরে যাবার সময় সমস্ত ঢাকাই কাঁদল।
সবাইকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
Posted by
Rezwan
at
1:20 AM
0
comments
সচলাড্ডায় যাব পণ করে রেখেছিলাম আগেই। কাল সকালে নজরুলকে ফোন করে বললাম আসছি। সে জানালো যে সাড়ে পাঁচটা থেকেই অনেকে থাকবে। আমার যেতে যেতে হল সাড়ে ছটা। বাবুর্চী রেঁস্তোরার দোতালা তিনতলা ঘুরেও কারও দেখা না পেয়ে আবার নজরুলকে ফোন দিলাম। সে পরিবারের সাথে তখনও রাস্তায় এবং তৎক্ষণাৎ খবর দিল উপস্থিত সচলদের। তিন তলার পাশে একটি বিশেষ জায়গায় ঠাই হয়েছে সচলদের। একে একে পরিচয় হল সবজান্তা, রণদীপম, জালাল ভাই, আনিস ভাই, সীমন, মামুন হক এবং আরও অনেকের সাথে।
খাবার ছিল মজাদার, এর বর্ণনা দিয়ে পেটে পিলে জন্মাবার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। তারপর সে তো অনেক গল্প, এক পোস্টে হবে না। তাই ছবিই কথা বলুক:
সচলায়তনের অফিসিয়াল মডেল
সবজান্তা
জালাল ভাই
রণদীপম বসু
খাবারের কিয়দংশ
'কথা কম কাজ বেশী' এই কথায় 'বিপ্লব'
"কাবাব পরোটা ভাল হয়েছে, আর আছে কি?" - ভাস্কর
মেয়ের সাথে আহমেদুর রশীদ
আনিস ভাই জুবায়ের ভাইয়ের স্মরণে জমায়েতের দাওয়াত দিচ্ছেন
এক ঝাক সচল
আরও এক ঝাক সচল
Posted by
Rezwan
at
1:23 AM
2
comments
Labels: সচলায়তন
ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের ২০০৮ সালের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা ১০ম (১৪৭) আর ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা ১৫তম (১২৬)। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ছিল যুগ্মভাবে প্রথম (১৫৮) আর ইন্দোনেশিয়া ষষ্ঠ (১৩৭)।
অর্থাৎ ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের সার্টিফিকেট অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতির অবস্থা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভাল। এখন আপনাদের আমার কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলি। ইন্দোনেশিয়ায় আসার পর আমার কিছু টার্গেট ছিল: প্রথমত: একটি ব্যান্ক একাউন্ট খোলা, ভিসা বাড়িয়ে থাকার অনুমতি যোগাড় করা, আর জার্মানী থেকে পাঠানো সংসারের কিছু সামগ্রী পোর্ট থেকে ছাড়ানো। প্রায় দুমাস হতে চলল এর একটি মাত্র করতে পেরেছি, অর্থাৎ থাকার অনুমতিটুকু (একটি বছর মেয়াদী ভিসা মাত্র), আর বাকী সব এখনও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা পড়েছে। মাল এসে পোর্টে রয়েছে - ডেমারেজ বাড়ছে, আর আমরা কোন এক সরকারী কর্মকর্তার একটি সীল ও সইয়ের জন্যে বসে আছি।
বাংলাদেশই দুর্নীতির আখড়া এই বিশ্বাস যাদের আছে তাদের জন্যে আমার গল্প বলি। স্বল্প মেয়াদী থাকার অনুমতি পত্র (কিতাস) এর ফর্ম ফিল আপ করে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি ও ছবি সহ জমা দেবার পরে সেটা আবার ফেরত আসল। কারণ নতুন ফর্ম এসেছে। তো আমাদের কেন পুরোনো ফর্ম দেয়া হল আগে? জানা গেল ওটি ঠিক জায়গা থেকে আনা হয় নি। কিছু অসাধু লোক পুরোনোটি বিক্রি করে তাই দুর্নীতি দমনের জন্যে নতুন ফর্ম ছাপানো হয়েছে যা দেয়া হচ্ছে বিনা পয়সায়। এরপর তা জমা দেবার পর ফেরত এল কারণ ছবি নাকি ঠিক হয় নি, লাল ব্যাকগ্রাউন্ড লাগবে (আগেরবার জমা দেবার সময় বললেই পারত)। আবার ছবি তৈরি করে দিয়ে আসা হল, এভাবে এক সপ্তাহ পা্র হয়ে গেল। তার পর সব চুপচাপ। মেসেন্জারকে পাঠানো হয় খোঁজ নিতে আর বলে তারা নাকি জানাবে। কিন্তু সেই পাথর তো আর নড়ে না। এবার শরণাপন্ন হলাম স্থানীয় প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছে। তারা বলল পয়সা ছাড়া তো কিছু হবে না।
এখানে কোন কাজ করানোর জন্যে ইন্দোনেশীয়ার ভাষা জানা খুবই জরুরী - কারন অনেকেই ইংরেজী জানে না। তাই ইন্দোনেশিয়ান মেসেন্জারকেই টাকা দিয়ে পাঠালাম। সে এরপর দিনে দিনে ফিরিস্তি দেয় কিভাবে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল নড়ে। প্রথমে আপনি একটি ফাইল কিনে এক টেবিলে জমা দেবেন। সাথে থাকবে একটা সাদা খামে গিফ্ট। তারপর হুজুরের মর্জি হলে (আর ক্রমাগত ফলোআপের পরে) সে আপনার কাগজের উপর কাজ করে পাশের টেবিলে স্থানান্তরের জন্যে একটি চিঠি দেবে। সেটি টাইপ করতে নিশ্চয়ই অনেক কাজ কারণ মেসেন্জার তা করানোর জন্যে সারাদিন সেখানেই বসে থাকে। তারপর সেই চিঠি পাশের টেবিলে না গিয়ে মেসেন্জারের কাছে আসে। সে এনে আমাদের দেখায় যে কাজ হচ্ছে। পরের দিন আবার পাশের টেবিলে নতুন ফাইল কিনে খামসহ কাগজপত্র জমা পরে। এভাবেই কাজ আগাতে থাকে ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব গতিতে। সবশেষে প্রায় মাসখানেক পার করে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ আসল যখন একজন পরিচিতজন সেই অফিসে কি কাজে গিয়েছিলেন - তিনি জায়গা মত কিছু টাকা দিয়ে বের করে নিয়ে আসলেন ভিসাটুকু। তার বক্তব্য আমাদের মেসেন্জার নিশ্চয়ই পর্যাপ্ত টাকা দেয় নি, কিছু পকেটে পুরেছে, না হলে এত সময় লাগার কথা নয়।
ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতির ব্যাপারটি বুঝতে হলে একটু পেছনের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। দেশটিতে এতকাল শাসন করে গেছে ঔপনিবেশিক শাসকদের হাতের পুতুল, সামরিক নেতা ও কিছু স্বৈরশাসক, এবং তাদের সর্ব শেষজন, সুহার্তো যিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত শাসন করে গেছেন। সুহার্তোকে ধরা হয় বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ নেতা হিসেবে।
দেশটিতে পাবলিক সার্ভিসের কোন ধারণাই ছিল না এত দিন এবং গণতান্ত্রিক দেশ এবং জনগণই সর্ব ক্ষমতার উৎস এই সংস্কৃতি এখনও লোকজনের রক্তে গেড়ে বসে নি। দেশটিতে সরকারী চাকুরি মানে হচ্ছে খুবই মর্যাদার ব্যাপার এবং এর সাথে অনেক সুবিধা আপনা আপনি আসে। এই সব সুবিধার মধ্যে আছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের কাছ থেকে উপঢৌকন (মনে রাখবেন ঘুষ কিন্তু ওরা কখনও বলে না, বলে গিফ্ট), এবং সরকারী সম্পদ নয়ছয় করার অব্যক্ত অধিকার।
সুহার্তোর সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার হচ্ছে এই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া। না দিয়েও উপায় ছিল না। তার শাসনামলে তার নিকট আত্মীয় থেকে দুরতম আত্মীয় পর্যন্ত সবাইকে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে বসানো হয়েছিল । বিভিন্ন বেদরকারী মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকারী অনুমোদনের আওতায় এনে তিনি তার আত্মীয় স্বজনকে প্রভূত অর্থ কামানোর সুযোগ করে দেন। সুহার্তো পুত্রের যে সব দুর্নীতির কথা এবং তার বিদেশে থকা সম্পদের কথা শুনেছি সে তুলনায় আমাদের দেশের রাজকুমারেরা ছিঁচকে চোর।
১৯৯০ সালে তার ঘোষিত নিউ অর্ডার এর বৈশিষ্ট্য ছিল সিভিল সোসাইটির প্রভাব কমানো, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমলাতন্ত্রের ভেতরে ঢুকানো ইত্যাদি। আর ঐতিহ্যগতভাবে দেশটিতে আমলাদের সাধারণ মনোভাব হচ্ছে দেশের অন্যান্য লোকদের চেয়ে তারা বেশী মর্যাদাপূর্ণ। যত উঁচু আমলা তত বেশী মর্যাদার, তত বেশী ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তার কাছে কোন সেবা চাওয়া তার কাছে ভিক্ষা চাওয়ার মত এবং অবশ্যই তার কাছে সেই অনুরোধের সাথে আপনার সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী একটি গিফ্ট কাম্য (একটি খামভর্তি টাকা সেই গিফটের সাধারণ ধরণ)। আপনি যদি কোন উপঢৌকনের প্রস্তাব না করেন তাহলে সেটি অবমাননাকর হিসেবে ধরা হবে এবং আপনার কাজে প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে সেই প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হবে।
আমাদের দেশের মতই এদেশেও দাড়ি টুপীর ছড়াছড়ি না থাকলেও অনেকেই ধর্মীয় আচারে রত (নামাজ রোজা) এবং প্রচুর মসজিদ। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম রোজার সময় হয়তো ওরা ঘুষ নেবে না, তাহলে কি এ মাসে কোন কাজ হবে না। উত্তর মিলেছে আরে ঘুষ কেন বলেন? এটি তো ওদের কাছে গিফ্ট মাত্র, আপনি খুশী হয়ে আপনার কাজের জন্যে দিচ্ছেন, ওরা তো চাচ্ছে না! এটিতে ধর্মে কি বাঁধা(??) ?
সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপারটি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে এই উপঢৌকনের সংস্কৃতিকে মেনে নেয়। একজন সরকারী কর্মচারীকে একটি রুটিন কাজের জন্যে উপঢৌকন না দেয়াকে তাকে অসম্মান করা মনে করে। আমার এখনও জানা হয় নি ওদের সরকারী কর্মকর্তাদের মূল বেতন কি স্ট্যান্ডার্ডের। কিন্তু এদেশে অনেকেরই লাইফস্টাইল দেখে মনে হয় বেতনভোগী কর্মচারীরা এই জীবনযাত্রা কোনদিনই পোষাতে পারবে না। এখানে ১০ টাকার নুডলস খেয়ে কারও একবেলা কাটে আর কেউ ফ্রেস জ্যুস খায় ১৫০ টাকা দিয়ে।
ইন্দোনেশিয়াতে এখনও পুলিশের চাকুরী পাওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করে বাবা-মার সচ্ছলতার উপর (অবশ্য এটি ভাল ইনভেস্টমেন্ট, দ্রুতই টাকা উঠে আসে)।
তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে যে দুর্নীতি দমনের প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে সুহার্তো পরবর্তী সরকারগুলো। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন (কেপিকে) বেশ কিছু উচ্চপদস্থ আমলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু এর পরিচালককে এক মার্ডার কেসে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিশোধ হিসেবে।
এখানে বৈদ্যুতিক মিটার রিডিং নেয়া হয় ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে। বেশ কিছু সরকারী অফিসে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো আছে উপঢৌকন সংস্কৃতি রোধের জন্যে (যদিও শুনেছি সেসব স্থানে কাজ দ্রুত আদায় হয় বাড়ীতে উপঢৌকন পৌঁছানোর মাধ্যমে)।
আমাদের দেশেও দুর্নীতি আছে কিন্তু সেটি কি এই লেভেলে? কিন্তু ট্রান্সপ্যারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের মতে গত দশকে বাংলাদেশ বারংবার দুর্নীতিতে ১ নম্বর হয়েছে। আমার কিন্তু তাদের স্ট্যাটিস্টিক্সে একদম ভরসা উঠে গেছে।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
Posted by
Rezwan
at
1:27 AM
0
comments
Labels: ইন্দোনেশিয়া, দুর্নীতি
সাড়ে তিন বছর ইউরোপে বসবাসের পর আমার নতুন বসতি এখন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। দোহাতে উড়োজাহাজ পরিবর্তন করে সিঙাপুরের ফ্লাইটে উঠতে যাব তখন দেখি মাথায় কাপড় দেয়া বিশাল একদল ইন্দোনেশীয় নারী লাইন ভেঙ্গে বোর্ডিং এর জন্যে দাড়াতে তৎপর। এরা মধ্যপ্রাচ্যের ধনীদের বাড়ীর গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে বাড়ী ফিরছে। এছাড়া লাইনের বেশ কিছু লোকজনের পোষাকে বোঝা গেল তারা ওমরাহ করে দেশে ফিরছে। সিঙাপুরে যাত্রাবিরতিটা হলো খুব মজার। একই বিমান জাকার্তা যাবে, ফুয়েলিং এর জন্যে থেমেছে। কিন্তু আমাদের সবাইকে নামানো হল এবং আবার নতুন করে চেকইন ও বোর্ডিং করানো হল। জিজ্ঞেস করায় বলা হলো যে সিঙাপুরের আইন নাকি কড়া। দোহা থেকে বিমানে সাথে তরল পদার্থ নেয়ার অনুমতি ছিল কিন্তু সিঙাপুরে বিমানে নেয়া যাবে না।
সেখান থেকে প্রায় ঘন্টা দেড়েকের ফ্লাইট জাকার্তা পর্যন্ত। প্লেন নামার সময় নীচে বেশ সবুজ দেখলাম। এয়ারপোর্টটি বেশ বড় মনে হলো না। আমাদের 'জিয়া' এর থেকে বেশ বড়। তবে বেশ একটি গোছানো ভাব আছে। নীচে গ্রাউন্ড স্টাফের ছড়াছড়ি, একটু পরপর মোছা হচ্ছে মেঝে। শোয়াইন ফ্লুর জন্যে আমাদের একটি ডিক্লারেশন দিতে হলো (জ্বর আছে কিনা, কোথা থেকে এসেছি) ইত্যাদি। একজায়গায় দেখলাম জটলা। স্ক্রীনিং করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সবার কাছ থেকে ডিক্লারেশনটি নিয়ে পড়ে না দেখে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। বুঝলাম সেই ব্যুরোক্রেসী - আমরা নিজেও জানিনা এসব কেন করছি - ফলাফল শুন্য।
ইমিগ্রেশনে অনেক সময় লাগল। উল্টে পাল্টে পাসপোর্ট ভিসা দেখল অফিসার, কিছু টাইপ করল, একবার কাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল। তারপর মুক্তি। নিতে লোক এসেছিল, তাই মালপত্র গাড়ীতে উঠিয়ে চললাম জাকার্তা শহরের উদ্দেশ্যে (এয়ারপোর্টটি মূল শহরের একটু বাইরে)। আমরা যাচ্ছি একটি টোল রোডে এবং আমাদের যাত্রাপথের উল্টোদিকে প্রচুর জ্যাম।
কাচ ও কংক্রীটের চকচকে রাজ্য
সত্যিই শহরে ঢুকে প্রথমেই মনে হল ঢাকার কথা। মেগাসিটির অন্যতম চিহ্ন হচ্ছে স্মগ (কুয়াশা), হাইরাইজ এবং অগুণতি শপিং মল। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে জাকার্তাকে একটু একটু করে আরও চিনলাম। উচু বিল্ডিঙ এর ধারেই ভাঙ্গা বাড়ী - যদিও আমাদের বস্তির মত জীর্ণ নয়। অনেক এলাকায়ই চিপা গলি, রাস্তা ভাঙ্গা।
বিত্তবৈভবের অপর পীঠেই দারিদ্র
ওদের রিক্সা নেই কিন্তু রাস্তায় গিজগিজ করে মোটরসাইকেল, ওরা বলে ওজেক। ছোট রাস্তার মোড়ে মোড়ে ওজেকের স্টল, ভাড়ায় খাটে। জ্যামের কারনে দ্রুত চলাচলের জন্যে বেশ জনপ্রিয়।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্যে আছে তাদের মিনিবাস। যেখান সেখান থেকে লোক উঠাচ্ছে। আর ট্রান্স জাকার্তা এসি বাস যার জন্যে রয়েছে আলাদা লাইন। রাস্তায় গাড়ী চলাচলে কেউ নিয়ম মানে না। তবে বিশৃংখলাও নেই।
জাকার্তার লোকেরা এমনিতে খুব ভদ্র। তবে নৈতিকতার অভাব রয়েছে বড্ড, আমাদের মতই। ট্যাক্সি ড্রাইভার এমন ভাব করবে যে তার কাছে কোন ভাংতি নেই, অর্থাৎ চেন্জটুকু রেখে দিতে চাচ্ছে। তাই ভাষা না জানলে রাস্তায় চলা খুব অসুবিধা। এখানে টুরিস্ট বা বানিজ্যিক এলাকা ছাড়া দোকানে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ইংরেজী জানা লোক খুব কম।
আমার প্রথমে অসুবিধা হলো ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে। এক ইন্টারনেট কাফেতে গেলাম সেখানে স্পীড অনেক স্লো। বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করলেও অনেক চেষ্টা করেও ইন্সটল করতে পারলাম না। ভাষার সমস্যা সত্বেও ক্যাফের লোকটিকে বোঝালাম যে আমার ফন্টটি ইন্সটল করা জরুরী। সে এসে কিছুক্ষণ গুঁতাগুতি করে বলল আমি পারব না। আমাদের ইন্জিনিয়ারকে লাগবে। আমি বললাম তাহলে অনুগ্রহ করে কালকে করিয়ে নিও। বলল সে তো সব সময় আসে না।
এরপর অনেক খুঁজে পেতে গেলাম মোবাইল ইন্টারনেটের জন্যে সিম কিনতে। আমাকে একগাদা লিস্ট ধরিয়ে দিল - যে এই কাগজপত্র লাগবে। দেখলাম আমার এসব বের করতে মাস তিনেকের ধাক্কা। এই কদিন আমি ইন্টারনেট ছাড়া থাকব! পরবর্তীতে এক স্থানীয় আমাকে সাহায্য করে তার নামে পোস্ট পেইড সিমটি কিনতে। আমি কানেকটেড হতে পারলেও সার্ভিসের অবস্থা চরম খারাপ, কখনই তাদের উদ্ধৃত স্পীড পাওয়া যায়না। আর সন্ধ্যার পরে তো একেবারে স্লো হয়ে যায়। এর চেয়ে আমাদের দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের সার্ভিস অনেক ভাল।
চার লেনের চওড়া রাস্তা - তারপরেও জ্যাম
শ্রমের মূল্য কম বলেই বোধহয় এখানে কর্মদক্ষতাও কম। আর রয়েছে দুর্নীতি। এখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। কর্মচারী সংসদ থেকে রিসিট পর্যন্ত দেবে আপনাকে ঘুষের জন্যে। তাই সেবার মানও সেইরকম - কড়ি ঢালবেন তো সবকিছু এসে হাজির, না হলে কিছুই নড়বে না।
তবে দুর্নীতির মূলে মনে হয় ধনী গরীবের চরম বৈষম্য। এখানে আছে কারওয়ান বাজারের মত কাঁচা বাজার আবার নন্দন আগোরার মত শপিং মল (কারফুর, জায়ান্ট)। কারফুরে মাছের দাম কাঁচা বাজারের তুলনায় ২-৪গুণ। এমনিতে জাকার্তা খুব এক্সপেনসিভ জায়গা, একবার কারফুরে বাজার কররেই ৪০-৫০ ডলার নেমে যায়। এখানে সবই পাওয়া যায় কিন্তু তার মূল্য আছে - অনেক ক্ষেত্রে ইউরোপের চেয়ে বেশী লাগল। রাস্তায় দেখা যায় মার্সিডিজ, বিএমডাব্লু। আবার এই দেশেই ১০০ ডলারে কাজের লোক পাওয়া যায়। ঠিক আমাদের দেশের মত। তারা কিভাবে এই শহরে বেঁচে থাকে জানার ইচ্ছে খুব।
সেদিন বৃষ্টি হলো। ঘন্টাখানেকের বৃষ্টিতেই শহরের কিছু অংশের রাস্তায় দেখা গেল একফুট পানি। জানা গেল নালা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে এই অবস্থা। সরকার ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে - কিন্তু অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
এদেশের তরুণদের মধ্যে ব্যান্ডপ্রীতি প্রচুর। সেদিন গেলাম আনচোল বীচে। সেখানে দেখি ব্যান্ড সংগীত হবে তাই নিয়ে লোকজনের উৎসাহের কমতি নেই। টিভিতে একেকজন শিল্পীর পোষাক দেখি আর মেলাই আমাদের পরিচিত শিল্পীর সাথে -এই যে জেমসের মতো চুল, আবার ওড়না পরেছে; এর গলার স্বরে হাসানের মত টান , আবার চুলও লম্বা।
আনচোল বীচ
এই কদিনে আমাদের বিনোদন ছিল ইন্দোনেশিয়ার ভাষার চ্যানেলের টিভি দেখা। এদের কিছু জটিল সোপ আছে - যাতে ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর মত প্যাচ। কিছু সিরিয়ালের মূল লেখকও নাকি ভারতীয়। এখানে বেশীরভাগ সিরিয়ালেই মেয়েরা হয় ভিলেইন আর পুরুষরা হয় গোবেচারা টাইপের। পরে জানলাম আসলেই অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েশাষিত সমাজ এখানে।
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম এশিয়ার সর্ববৃহত মসজিদ - বিশাল পাঁচ তলা কম্পলেক্স এবং সামনে ঈদগাহের বিশাল খোলা মাঠ। তার অতি নিকটেই একটি ক্যাথেড্রাল। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ মুসলিম দেশে ধর্মীয় পোষাক কিন্তু দেখেছি কম। গরম বলে রাস্তা ঘাটে মেয়েরা পরে টি শার্ট এবং স্কার্ট বা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, বিশেষ করে গৃহপরিচারিকারা। ছেলেরা সাধারণ শার্ট, প্যান্ট। কিছু ধনী মহিলাদের মাথায় হিজাব পড়তে দেখেছি, তবে তাদের অনেকেই ড্রাইভ করে। এটি মুসলিম দেশ বোঝানোর জন্যে আজান শোনা যায় পাড়ায় পাড়ায়। আমাদের দেশের মতই নামাজীর সংখ্যাও বেশী আর ঘুষখোরের সংখ্যাও।
এতসব মিলেই জাকার্তাকে আমার ঢাকার খুব কাছাকাছি লেগেছে। হয়ত ঢাকা আগামী পাঁচ কিংবা দশ বছরে এখানে পৌছাবে। দেশের অনেক কিছুই যেহেতু আমরা সহ্য করে নেই তাই মনে হচ্ছে এখানে থাকাও বেশ ইন্টারেস্টিং হবে।
জাকার্তার কিছু ছবি ফ্লিকারে -
× পোস্টকার্ডের জাকার্তা
× মেক আপ ছাড়া একই শহর
× ট্রেন যাত্রা
× বৃষ্টিবরণ
পোস্টের টাইটেলের জন্যে কৃতজ্ঞতা: হিমু
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
Posted by
Rezwan
at
1:31 AM
2
comments
Labels: ইন্দোনেশিয়া
মধ্যপ্রাচ্যের জনসংখ্যার বিশাল এক অংশ হচ্ছে মূলত: দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত অভিবাসী শ্রমিকরা। এই পোস্টে আমরা তেমন দুই ব্যক্তির কথা শুনব যারা দক্ষিন এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার জন্য এসেছেন।
মোহাম্মদ ইকবাল হচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার একজন নাগরিক যিনি বাহরাইনে থাকেন। তিনি বাংলাদেশী একজন শ্রমিকের গল্প বলেছেন (মূল ইংরেজী থেকে অনুবাদ):
আমি সম্প্রতি একজন বাঙ্গালীকে (বাংলাদেশী) দেখেছি যে একটা হোটেলে সাময়িক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। সে আসলে হোটেলের পাবলিক এলাকাতে কাজ করে, যেমন কাচের জানালা পরিষ্কার করা, বা লবির মেঝে পরিষ্কার করা। সে অতিথি কক্ষের দায়িত্বে নেই বা কামরা ঠিক করে না। এখানে কোন বিষয়টি ঠিক না? তাকে ১৫০০ বাহরাইনি ডিনার (৩৯৮০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৩ লাখ টাকা) ব্যয় করতে হয়েছে বাহরাইনে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য। তার ২ বছর কাজ করার অনুমতি আছে। প্রতিদিন ১০ বাহরাইনি ডিনার (২৬ আমেরিকান ডলার) বেতন দেয়া হয় তাকে, তার মানে সে প্রতিমাসে ২৪০ বাহরাইনি ডিনার (৬৩৬ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৪৫ হাজার টাকা) আয় করে। এটা কি বেশ ভালো বেতন? দাড়ান...! তাকে তার ফ্লাট, পানি, বিদ্যুত, খাওয়ার জন্য টাকা দিতে হয় আর এরপর অবশ্যই দেশে টাকা পাঠাতে হয়।
আমরা হিসাব করি। বাড়ির জন্য সে অনেকের সাথে একটা ফ্লাটে থাকে যেটার জন্যে ব্যয় মাসে ধরা যাক ৫০ বাহরাইনি ডিনার (১৩২ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ১০ হাজার টাকা)। এরপরে পানি আর বিদ্যুত আরো ১০ বাহরাইনি ডিনার (২৬ আমেরিকান ডলার), আর এরপরে খাওয়া ৪০ বাহরাইনি ডিনার (৬৬ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৫ হাজার টাকা)। তাহলে বাড়ীতে নেওয়ার জন্যে পুরো অর্থ বাঁচবে বাংলাদেশী টাকায় ১১৫ (৩০৫ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ২১ হাজার টাকা) প্রতি মাসে। এক বছরে (১২ মাসে) সে বাঁচাতে পারবে ১৩৮০ বাহরাইনি ডিনার (৩৬৬০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় আড়াই লাখ টাকা)। এই অর্থ ভিসা বা ঢোকার ফি হিসাবে দেয়া ১৫০০ বাহরাইনি ডিনার (৩৯৮০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৩ লাখ টাকা) শোধ করার জন্যে যথেষ্ট না। আমার কোন ধারণা নেই এই অর্থ সরকার নির্ধারিত কিনা, কিন্তু একটা জিনিষ আমার কাছে পরিষ্কার না যে ২ বছরে সে মাত্র ১২৬০ বাহরাইনি ডিনার (৩৩৪০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা) বাঁচাতে পারে। পরিশেষে সে তার ১৫০০ বাহরাইনি ডিনার (৩৯৮০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৩ লাখ টাকা) বিসর্জন দিয়ে আর দুই বছর কঠোর পরিশ্রম করেছে কেবলমাত্র ১২৬০ বাহরাইনি ডিনার (৩৩৪০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা) এর জন্য। আরো দুই বছরের কাজের ভিসা বাড়াতে তাকে আবার ১০০০ বাহরাইনি ডিনার (২৬৫২ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ) বিনিয়োগ করতে হবে। তার মানে দুই বছর পরে, সে পারবে বাঁচাতে ২৬০ বাহরাইনি ডিনার (৬৯০ আমেরিকান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৪৮ হাজার টাকা) মাত্র আর আমি এখনও জানিনা সে কিভাবে এরপর তার বিমান ভাড়া দেয়। আমি আসলেই বুঝতে পারি না যেহেতু এটা যুক্তিযুক্ত না!
বাহরাইনে অবস্থিত একজন ফরাসী লেখক ফ্রান্সিন বারলেট গত মে মাসে ওমানের মাস্কাট থেকে বাহরাইনে আসার সময়ে ইয়াসমিনা নামে ভারতীয় একজন মহিলার সাথে কথা বলেছেন। এটা ইয়াসমিনার গল্প (মূল ফরাসী থেকে অনুবাদ):
আমার চেন্নাইয়ের (ভারতে) জীবন খুব সহজ ছিল না, জানেন। কলেজে আমার দুই মেয়ে আছে। একদিন তারা ডাক্তার হবে। কিন্তু প্রথমে আমাকে তার ব্যয়ভার বহন করতে হবে, আরো অনেক কিছুর জন্যে টাকার যোগাড় করতে হবে। আপনি জানেন, আমি কেবলমাত্র ওমানের সালালাহতে দুই মাস কাটিয়ে আসলাম। আমি গতকাল সেখানে আমার কাজ ছেড়েছি। আমি একটা ওমানি পরিবারের সাথে ছিলাম। ম্যাডামের দশটা বাচ্চা ছিল- আটটা মেয়ে আর দুইটা ছেলে- আর মে মাসের শেষে তিনি এগারোতম সন্তানের জন্ম দেবেন। আপনি বুঝতে পারছেন? এগারোটা বাচ্চা...সেটা চমৎকার। কিন্তু আমি সেখানে থাকবো না দেখার জন্য যে সেটা ছেলে না মেয়ে। আমাকে যেতে হবে। এটা কঠিন তাকে একা রেখে আসা, জন্মের এতো কাছে কোন সাহায্য ছাড়া রেখে আসা, কিন্তু আমি থাকতে পারবো না।
প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায়, তার স্বামী আমার শোয়ার ঘরে আসত। প্রত্যেক সন্ধ্যায় আমি তাকে বলতাম, “আমি আপনার কর্মী, স্ত্রী নই। ফিরে যান, আপনার স্ত্রীর আপনাকে প্রয়োজন। নিজের বিছানায় ফিরে যান। আপনার অধিকার নেই আমার সাথে এমন করার। আমাকে বিশ্রাম নিতে দেন, আমি ক্লান্ত...”। আপনি কল্পনা করতে পারেন? দশটা বাচ্চা, বাড়ির কাজ, রান্না, কাপড় ধোয়া আর কয়েক টন ডিশডাশা আর আবায়া পোশাক ইস্ত্রী করা প্রত্যেক দিন যার সাথে ছিল চাদর, ডায়াপার আর তোয়ালে। কিন্তু আপনি জানেন, আমার কাজ করতে আপত্তি নেই। আমি অন্য কিছু কিভাবে করতে হয় জানিনা। আমি নিবেদিত। আমি কঠিন কাজকে ভয় পাইনা। কিন্তু রাত্রে আমার সাথে এমন করার অধিকার তার ছিল না। আমাকে ছোঁয়া, বিরক্ত করা। আমি তাকে থামাতে পারতাম না। জোর ছিল না... আমাকে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। দ্রুত।
বুঝেছেন, আমাদের মতো কাজের লোক যারা ভারত, শ্রীলঙ্কা, সোমালিয়া বা ফিলিপাইন্স থেকে আসে, তাদের দুই মাসের অর্ন্তবতীকালীন সময় থাকে, আর তার পরে তারা চুক্তি বাতিল করে ফিরে যেতে পারেনা। আমাদের পাসপোর্ট মালিকের হাতে আটক থাকে, আর তারা না চাইলে আমরা যেতে পারি না। আপনাকে আপনার দুই বছরের চুক্তি শেষ করতে হবে, বাড়িতে যেতে পারার আগে। এটাই আইন। আমি তাদেরকে বলেছিলাম আমি আমার অর্ন্তবতীকালীন সময় শেষ হওয়ার আগেই চলে যেতে চাই, এটা আমার অধিকার। তা সত্ত্বেও ওই গৃহস্বামী চায়নি যে আমি যাই।
এর পরে আমি খাওয়া বন্ধ করে দেই। পাঁচ দিন আমি আমার কামরা থেকে বের হইনি, আমি কিছু খাইনি, আমি স্নান করিনি। তারা ডাক্তার ডেকেছিল, আর সে পুলিশ ডেকেছিল। ওই! তারা আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গেল। স্বামীকে আমার বাড়ী ফেরার প্লেনের টিকিট কিনে দিতে হলো, আর আমার পাসপোর্ট ফেরত দিল। এটা আইন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে খারাপ ছিল, জানেন। আমি পড়তে পারিনা। আমি বুঝতে পারিনি আমার প্লেনের টিকিটে কি লেখা আছে। বোর্ডিং এর সময়ে গালফ এয়ারের এটেন্ডেন্ট বলল যে আমার টিকিট রামানাথাপুরামের , আমার বাড়ী চেন্নাইএর না। আপনি বিশ্বাস করতে পারেন? আমি প্লেনে উঠতে অস্বীকৃতি জানাই। কোথায় যাবো? রামানাথাপুরাম এমন একটা শহর যেটা আমি চিনি না। সাথে কোন টাকাকড়ি নেই, কোনো সাহায্য ছাড়া, আমার বাড়ি থেকে ৬০০ কিমি দুরে কি করব? ভাগ্যক্রমে, রামানাথাপুরাম থেকে চেন্নাই পর্যন্ত পুলিশ আমার টিকিটের টাকা দিয়েছে। সেই স্বামীটা তাদেরকে ফিরত দেবে। পুলিশরা ঠিক কাজ করেছে, জানেন। এটার খরচ পরেছে ৬০ রিয়াল (আমেরিকান ডলার ১৫৫)... আমার জন্য এক মাসের বেতন!
আমি দুবাইতে এর আগে পাঁচ বছর ছিলাম যেখানে আমি ‘লাফ’ দিয়েছিলাম (লাফ দেয়া মানে: মালিককে ছেড়ে দিয়ে, পাসপোর্ট ছেড়ে দিয়ে, অন্য কোথাও ভালো বেতনের একটা কাজ নেয়া, কিন্তু আইনসঙ্গতভাবে নয়)। আগে সৌদি আরবে আমি দুই বছর কাজ করেছি, দুই বছর ওমানে। আমি আবার আসব। এই দেশকে আমার আসলেই ভালো লেগেছে। কিন্তু এখনই না। প্রথমে আমি আমার মেয়েদেরকে দেখতে চাই আর একটু বিশ্রাম নিতে চাই।
প্রথম প্রকাশ: গ্লোবাল ভয়েসেস বাংলায় । আয়েশা সালদানহার রচনা থেকে অনুবাদ।
Posted by
Rezwan
at
11:26 PM
0
comments
Labels: বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, শ্রম
Posted by
Rezwan
at
1:36 AM
0
comments
Posted by
Rezwan
at
1:40 AM
0
comments
"For the internet to reach its potential in bridging human differences, we need to make the problems of language and translation center to our conversations about the future of the internet."অনুবাদের ভারটুকু আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।
Posted by
Rezwan
at
1:43 AM
0
comments
Posted by
Rezwan
at
1:54 AM
0
comments
Labels: জার্মানী, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ছিল যেন এক মৃত্যুপুরী, শয়তানের লকলকে জিভে চাটা এক নড়ক। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ২ লাখেরও বেশী নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নেয়া হয়েছে।
সুজান ব্রাউন মিলার তার Against Our Will: Men, Women and Rape বইটিতে লিখেছেন যে ধর্ষণকৃত নারীদের সৌন্দর্য দেখে বাছা হত এমন নয়। আট বছর বয়সী মেয়েশিশু থেকে ৭৫ বছরের বুড়ী পর্যন্ত পাক বর্বর হায়েনা থেকে রেহাই পায়নি। কোন কোন নারীকে সারা রাত ধরে গণ ধর্ষণ করা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কন্টিজেন্টের চীফ জে. একে নিয়াজী দম্ভ নিয়ে বলেছিলেন "আপনারা কি ভাবে আশা করেন একজন সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে থাকবে যুদ্ধ করবে আর মারা যাবে এবং সেক্স করবে ঝিলমে গিয়ে?" (ইস্ট পাকিস্তান, দ্য এন্ড গেম - ব্রীগেডিয়ার এ আর সিদ্দিক )। এসব সেনাদের হাতে নারীদের তুলে দিত রাজাকার আলবদরেরা।
যুদ্ধ শেষ হবার পরে এই সব ধর্ষিতা নারী এবং তাদের গর্ভের অগণিত যুদ্ধ শিশুদের নিয়ে এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু তাদের সম্মান দিয়ে বলেন তারা আমার মেয়ে। তাদের বীরঙ্গণা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। কিন্তু তাদের অবস্থা ছিল অবর্ণনীয়। অনেকে সামাজিক গন্জনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
এনবিসি নিউজ আর্কাইভে সেই সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট আছে।
Posted by
Rezwan
at
11:30 PM
5
comments
Labels: বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ
বার্লিনের কাছে ওরানিয়েনবুর্গে সাক্সেনহাউজেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যে কয়েকবার গিয়েছি সে কয়বারই প্রশ্নটি মাথায় এসেছিল যে এত বড় হত্যাযজ্ঞ -হলোকস্ট সংঘটন তো সম্মিলিত কর্ম। যে লাশ বহন করেছে বা প্রহরী ছিল তারা কখনও বেঁকে বসেনি? মানুষ খুন করতে অস্বীকৃতি জানায় নি? আমরা কিন্তু কম উদাহরণের কথাই জানি যেখানে দেখা যায় যে ইহুদীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে কোন জার্মান নাগরিক। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই শিন্ডলার্স লিস্ট চলচ্চিত্র খ্যাত জার্মান ব্যবসায়ী অসকার শিন্ডলার যিনি বেশ কিছু ইহুদীকে তার কারখানায় কাজ দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তবে তিনিও বিতর্কের উর্ধে নন কারন নাজী পর্টির সদস্য হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে সস্তা শ্রম পাবার জন্যে তিনি ইহুদীদের ব্যবহার করতেন।
সাম্প্রতিকালের দ্য রিডার ছবিতে হানা স্মিৎজ (কেইট উইনস্লেট যার জন্যে অস্কার পেয়েছে) এর বিচার যখন হচ্ছিল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে এস এস গার্ড হিসেবে তাদের কাছে ৩০০ জন বন্দী যখন বিমান থেকে ফেলা বোমার আগুণে পুড়ছিল তখন সে কেন দরজা খুলে দেয়নি। সে তখন বলেছিল যে "এরা আমার রেসপনসিবিলিটি ছিল তাই কি করে তাদের ছেড়ে দেই?"
ব্যাপারটি যতই বালখিল্য মনে হয় আসলে এটি কিন্তু জার্মান চারিত্রিক বৈশিষ্টের একটি অংশ। তারা নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে এতটাই নির্মম এবং সাধারণত: একচুলও নড়ে না।
নিকোলাস কুলিশ দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসে জার্মান চরিত্রের এই অংশ তুলে ধরেছেন। উনি উদাহরন দিয়েছেন যে রাস্তা ঘাটে কত নিয়ম আছে এবং সেগুলো কঠোরভাবে পালন করা হয়। অথচ মোড়ে মোড়ে পুলিশ নেই বা ভিডিও ক্যামেরা নেই তা পর্যবেক্ষনের জন্যে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতাও তাই। দৈনন্দিন অনেক নিয়মকেই তাদেরকে চোখে চোখে রাখার দরকার হয় না। তারা নিজেরা তা মানে এবং অপরকে স্মরণ করিয়ে দেয় তা সঠিকভাবে পালনের জন্যে। এবং অনেকক্ষেত্রে এইটি খুব অনধিকার চর্চাও মনে হয়। এক অজপাড়াগায়ে একটি খালি পার্কিং লটে গাড়ী রেখে ম্যাপ দেখছি তখন এক বুড়ো এসে বলল এটি ইনভ্যালিড পার্কিং এখানে রাখতে পারবে না তুমি। আমি বললাম পাশে আরও যায়গা আছে ইনভ্যালিডদের জন্যে কাজেই আমি কারও সমস্যা করছি না, আমি একটু পরেই চলে যাব। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা - বলল এখানে রাখা নিষিদ্ধ তোমাকে সরাতেই হবে। নিয়মের বাইরে কোন কিছু সে মানতে রাজী নয়। এভাবেই তারা ছোটকাল থেকে শিক্ষা লাভ করেছে। আমি আমল না দিয়ে ম্যাপের দিকে মনযোগ দেয়ায় বুড়ো গজগজ করতে বাড়ীর দিকে গেল। আমি অবশ্য কিছু পরেই সরে গেলাম কারন না হলে সে হয়ত পুলিশ ডাকত।
নিয়মের প্রতি বাধা থাকা এই চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারনে এজন্যেই জার্মানদের বাহ্যিক দৃষ্টিতে বেশ রবোটিক মনে হয়। এবং কারো সাথে ভালভাবে না মিশলে ভেতরের মানবিক দিকগুলো জানা যায় না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তাদের নির্লিপ্ততার কারন কি নিয়ম মানার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট ছিল কি না সেটা বিতর্কের বিষয়। জার্মানিতে নুরেমবুর্গ আইন (১৯৩৫) করে ইহুদীদের সমাজচ্যুত করা হয় এবং ইহুদীদের বিবাহ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়। ইহুদীদের নিধনের ফাইনাল সল্যুশনও লিখিতভাবে প্রণীত হয়েছিল। কাজেই অনেকের যুক্তি হতে পারে যে সাধারণ লোক নির্দেশ মেনেছে শুধু।
জার্মানদের নিয়্ম সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হচ্ছে যে মানুষের ভালোর জন্যেই তা তৈরি। তবে নিয়ম মানতে গিয়ে মানুষের ক্ষতি করা কি উচিৎ কিনা এবং এ নিয়ে তারা ভাবে কি না জানার আগ্রহ আছে।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
Posted by
Rezwan
at
1:56 AM
0
comments
"Born as a deaf and dumb, Sunita Paul decided to use pen in expressing herself. "
"তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় বিশেষজ্ঞ বলা যায়। বাংলাদেশ নিয়ে লিখেছেন অনেক। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশ বিষয়ে এহেন একজন বিশেষজ্ঞের কথা কেন আমরা এতদিন জানতাম না। হোন তিনি বাংলাদেশ বিরোধী একজন লেখক কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ নিয়ে এত ধারণা যার তার বিষয়ে কিছু খোঁজখবর তো আমাদের কাছে থাকার কথা ছিল। "
বাংলাদেশ বিষয়ে এমন জানাশোনা যে ব্যক্তির বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তার কিছু না কিছু যোগাযোগ তো থাকতেই হয়। স্বাভাবিক এই প্রশ্ন থেকেই আবার অনুসন্ধান চলে। যোগাযোগের সূত্রটি কিছুটা বের হয়ে আসে। বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। ইংরেজি পত্রিকাটির নাম উইকলি ব্লিটজ।http://www.weeklyblitz.net/ ব্লিটজ পত্রিকাটির সম্পাদক সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী।
সুনীতা পাল এই শোয়েব চৌধুরীরর পত্রিকার নিয়মিত লেখেন। আরও মজার বিষয় শোয়েব চৌধুরীকে নিয়ে তিনি একাধিক লেখা লিখেছেন। আরও মজার বিষয় হলো, সুনীতা পাল যেসব পত্রিকায় লেখেন যেমন আমেরিকান ক্রনিকল বা গ্লোবাল পলিটিশিয়ান সেসব পত্রিকার নিয়মিত লেখকদের মধ্যে সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী অন্যতম। সুনীতা পাল ও সালউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর লেখার বিষয়, আগ্রহ প্রায় একই। সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী যেখানে বাংলাদেশ বিষয়ে নরম, সেখানেই সুনীতা পাল কঠোর। সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ও সুনীতা পাল দুজনেই চান বাংলাদেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিক এবং দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করুক।
Posted by
Rezwan
at
11:41 PM
0
comments
Labels: সাংবাদিকতা
If you do not see Bangla
ব্লগিং প্লাটফর্ম:
ডাইরেক্টরী ও এগ্রেগেটর:
ভারতীয়: