Wednesday, October 04, 2006

পুন:একত্রিকরন - স্বপ্ন ও বাস্তবতা

অক্টোবরের তিন তারিখ হচ্ছে জার্মান পুন:একত্রিকরন দিবস। 1990 সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানী এক হওয়ার পর প্রতি বছর এটি ঘটা করে পালন করা হয়।

বার্লিনে জার্মান সংসদের কাছে ব্রান্ডেনবুর্গার গেইটের পাশে জম্পেশ একটি মেলা বসেছিল (মূল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান হয়েছে কি'ল শহরে)। প্রচুর লোক এসেছিল পরিবার (পোষা কুকুর সহ) নিয়ে। আমার দুই বছর বয়সী মেয়ে জার্মানিতে আসার পর থেকেই কম লোক দেখে অভ্যস্ত। সে এত ভিড় দেখে মোটামুটি ভচকে গেল এবং গম্ভীর মুখে একটি রাইডে চড়ে বসল। অবশেষে টুইটি বেলুন তার হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় তার মুখে হাসি ফুটল। তবে দেশীয় বাড়োয়ারী মেলা দেখে অভ্যস্ত এ মনকে মেলাটি হতাশ করেছে। শুধুই খাবার ও পানীয়র স্টলের ছড়াছড়ি। জার্মানীর বাভারিয়ার ঐতিহ্য অক্টোবরফেস্টের রেশ রাখতেই এখানে লিটার মগে বিয়ারের ছড়াছড়ি ছিল। উৎসবের আইকন হিসাবে একটি বিশাল চড়কি অবশ্য মেলার আমেজটা ধরে রেখেছে। দিনটি ছিল সরকারী ছুটির দিন।

পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানীর জনগনের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুধু রাজনৈতিক কারনে - জার্মানী মিত্রবাহিনীর দেশগুলোর কন্ট্রোলের সুবিধার্থে জার্মানী ভাগ হয়ে যায়। পুর্ব জার্মানী চলে যায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রনে। তখন কোলড ওয়ারের যুগ মাত্র শুরু হয়েছে। দুদেশের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করা হয়। পূর্ব জার্মানীর জনগন কিন্তু এ বিভেদ মন থেকে মানেনি। তাদের মনে পুনরায় এক হওয়ার স্বপ্ন থেকে যায়। 1949 থেকে 1962 পর্যন্ত প্রায় 25 লক্ষ লোক পুর্ব থেকে পশ্চিম জার্মানীতে দেশান্তরী হয়। এ মিলন ঠেকাতে গড়ে ওঠে বার্লিন প্রাচীর। এই প্রাচীর ডিঙোতে গিয়ে কত যে স্বাধীনতাকামী মানূষ গুলিতে মারা গিয়েছে। আশির দশকের শেষের দিকে পেরেস্ত্রইকার হাওয়া লাগে পূর্ব জার্মানীতে। সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিক্ষোভ হয় এবং গনহারে লোক পালাতে থাকে পাশের দেশ চেকস্লোভাকিয়ায়। 1989 সালের 9ই নভেম্বর বার্লিন প্রাচির ভেঙে ফেলে দুই জার্মানি এক হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে।

অবশেষে আসলো সেই দিন - অক্টোবর 3, 1990। দুই জার্মানী এক হলো।খুব কি সহজ ছিল এই এক হওয়া? এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জার্মানীর উপর অনেক ঋনের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। ভুতপূর্ব পূর্ব জার্মানীর রাস্তাঘাট ও স্থাপনাগুলো সংস্কার করা হয়েছে এবং হচ্ছে । পুন:একত্রিকরনের খরচ 750 বিলিয়ন ইউরো। পূর্ব জার্মানির সরকার নিয়ন্ত্রিত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে গেছে। এখনো কিছু লোকের মন থেকে পূর্ব এবং পশ্চিমের বিভক্তির ধারনা যায়নি। সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারনার লোকেরা বাজার অর্থনীতির প্রতিযোগীতাতে খাপ খাওয়াতে পারছে না - মনের প্রাচির হয়তো সরেনি। কিন্তু এমন সুযোগ বারে বারে আসেনা । দুই জার্মানীর রক্তপাতহীনভাবে পুনরায় এক হওয়া জার্মানদের ঐকান্তিক ইচ্ছার ফলেই হয়েছে। জার্মানী আবার আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাড়াচ্ছে এই একীভুত শক্তি নিয়েই।

আমার মনে প্রশ্ন জাগে দুই বাংলার মানুষকি কখনও এক হওয়ার স্বপ্ন দেখে? নাকি তারা ধর্মকেই বিভক্তির প্রধান কারন হিসাবে এখনও দেখে?

No comments: