Wednesday, June 21, 2006

বার্লিন হলোকাস্ট মেমোরিয়াল

সাদিকের একটি পোষ্ট (লিনক: http://tinyurl.com/ruhdq) আমাকে লিখতে বসাল । এইতো দিন দশেক আগে সাদিকের সাথে হলোকাস্ট মেমোরিয়াল ও মিউজিয়াম দেখতে গেলাম । মিউজিয়ামটা এমন ভাবে সাজানো যে যেকোনো লোকের মনে ব্যাপারটা দারুন ভাবে নাড়া দেবে । আমারও মনটা অসম্ভব খারাপ হয়েছিল ।

মেমোরিয়ালটা ব্রান্ডেনবুর্গার গেটের কাছে অবস্থিত । এর ঠিক পাশেই নতুন আমেরিকান এমব্যাসি ভবন তৈরি হচ্ছে । এর বিশেষত্ব হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চতার 2711টা কনকৃট স্লাব যেগুলোর চারপাস দিয়ে হাটা যায় । এটি তৈরি করতে প্রায় 28 মিলিয়ন ইউরো লেগেছে । গত বছর মে মাসে প্রথম এটি ওপেন হয় । সম্প্রতি একটি ফুড কোর্ট এর পাশে তৈরি হয়েছে ।

এর তথ্যকেন্দ্র ও মিউজিয়ামটি মাটির নিচে অবস্থিত । এর বিভিন্ন অংশ খুব সাইন্টিফিক ভাবে সাজানো । প্রথমে রয়েছে নাতসিদের ইহুদি নিধন পলিসি সম্পর্কে একটি টুর (ছবি ও লেখা) ব্যকগ্রাউন্ডসহ।

তার পর রুম অফ ডাইমেনসনস, যেখানে একটি অন্ধকার রুমে হলোকাষ্ট ভিক্টিমদের 15টি ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট যা নাতসি নৃশংসতা সম্পর্কে ধারনা দেয় । মাটিতে বিছানো চিঠি বা চিরকুট স্পটলাইটে মাটির নিচ থেকে আলোকিত, অতিকষ্টে উৎস ও ব্যকগ্রাউন্ড পরা যায় । কিন্তু জ্বল জ্বল করছে বিষাদময় সত্য । আট বছরের ছোট মেয়ে লিখেছে: 'বাবা ওরা আমাদের মেরে ফেলবে । তোমাকে বুকে জড়াতে পারলামনা কিন্তু জেন আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি ।'

পরের সেকশন রুম অফ ফ্যামিলিস যেখানে ইউরোপের 15টি ইহুদি পরিবারের শুরু থেকে নাতসি ভিকটিম হওয়া পর্যন্ত বর্ননা করা হয়েছে স্থির ও চলমান চিত্র এবং বিভিন্ন ডকুমেন্টের মাধ্যমে । এখান থেকে বোঝা যায় যে তারা কতটা প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং কিভাবে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ।

তার পরে রয়েছে একটি বিশাল রুম যেখানে ইহুদি ভিকটিমদের নাম ও বায়োগ্রাফি পড়া হচ্ছে । সাথে সাথে চার দেয়ালে প্রজেক্ট হচ্ছে মৃতদের নাম এবং জন্ম ও মৃত্যুর সন । যদি সব কজন হলোকাষ্ট ভিক্টিমদের নাম একসাথে পড়া হয় তাহলে প্রায় সাড়ে ছ বছর লেগে যাবে । আন্দাজ করতে পারছেন কি পরিমান মানুষকে মারা হয়েছিল?

এই রুমের পাশেই রয়েছে সবার সুবিধার জন্যে সারি সারি কম্পিউটার টার্মিনাল যাতে ভিক্টিমদের ডাটাবেজ এক্সেস করা যায়। তিন মিলিয়নের উপর এন্ট্রি রয়েছে এই ডাটাবেজে (ইয়াদ ভাশেম, ইজরায়েলী) ।

এর পরে রয়েছে রুম অফ সাইটস যেখানে কনসেন্ট্রেশন ক্যম্প, ডিপোর্টেশন রুট ইত্যাদি স্পর্কে বিস্তারিত । প্রচুর হিস্টোরিকাল ফুটেজ, ছবি ও ডকুমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এতে । এক নাৎসি মেজর রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তার সুপিরিয়রকে, লাখো লোক মারার লিষ্ট এবং সাথে ম্যাপ কোথায় কত মারা হয়েছে । গর্বের সাথে উল্লেখ, একটি অনচল ইহূদি মুক্ত ।
এসব দেখার পরে একজন নিও নাৎসিদেরও মনে উপলব্ধি আশা বাধ্য যে পৃথিবীতে এত পাপ খুব কমই হয়েছে । আমার ও গায়ে কাটা দিয়ে উঠছিল ।

আমিও সাদিকের সাথে একমত যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রান দিয়েছে তাদের জন্যে এরকম একটা মেমোরিয়াল খুবই দরকার । মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় উদ্দোগ কিন্ত ট্রাডিশনাল ডিসপ্লে ও স্বল্প কনটেন্ট খুব কার্যকরী নয় । মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম যাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ শুধুই 'গন্ডগোলের সময়' ছিল তাদের নাড়া দেয়ার জন্যে এমন উদ্দোগ জরুরি । কত লাগবে? 200-250 কোটি টাকা । বাংলাদেশকি পারবেনা?

আমি আর সাদিক পরে গিয়েছিলাম বার্লিনের ইহূদি মিউজিয়ামে , আমার দেখা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ও ইন্টারএকটিভ একটা মিউজিয়াম। ওখানে গেলে বুঝতে পারা যায় কেন জার্মান জাতি ইহুদিদের উপর বিরুপ মনোভাব পোষন করত । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যকগ্রাউন্ড ও বাঙালী জাতি সস্পর্কে এমন মিউজিয়াম প্রয়োজন । এটি পরবর্তীতে লিখব ।

No comments: