Saturday, December 23, 2006

ডায়রির পাতা থেকে: কোন এক ১৮ই আগষ্ট

অভিশপ্ত আগ্নেয়গিরির প্রচন্ড বিস্ফোরন! কততম এটি? জানিনা। জেনে কি লাভ? জ্বালামুখ বন্ধ হয়ে হৃদ- সে তো হাজার বছরেও হবেনা। ইতিহাস ঘেটে তাই লাভ নেই। অতএব জ্বলে যাও হে আগ্নেয়গিরি।

কিন্তু এই বিস্ফোরনে বড় এক ক্ষতি হয়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ একটি নয়। সহসা সবার সামনে সত্য ঘোমটা উন্মোচন করে দাড়িয়ে। সত্য যে আগুনের মত নির্মম, শুধুই পোড়ায়।

আমিও তো রবীন্দ্রনাথের মত বিশ্বাস করতে চেয়েছি যে "মানুষে অবিশ্বাস করা পাপ।" কিন্তু একই আগুনে জ্বলা সাথী বলছে অবিশ্বাস্য সব কথা। এরপর সেই বিস্ফোরন । লাভার স্বরুপে ধ্বংসলীলা শুরু। লাভাকে যে মাটির গভীরে বেধে রাখা যায় না। লাভার গন্তব্য সে নিজেই জানেনা। সে যে জ্বালায়, পোড়ায়; নিজে জ্বলে।

লাভাতে কি বিশ্বাস রাখা যায় এরপর?

Tuesday, December 19, 2006

হোম, সুইট হোম

দিল্লি এবং কোলকাতা এয়ারপোর্টের অব্যবস্থাপনা, করাপশন এবং দৈন্যতা দেখার পরে ঝকঝকে তকতকে, ভোগান্তিমুক্ত জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবনদর। আমার প্রিয় বাংলাদেশ। ট্রাফিক জ্যাম, গ্রামিন ব্যাংকের অতি বিজ্ঞাপন ইত্যাদি কিছুই আর খারাপ লাগছিল না। দশ মাস পরে বাড়িতে ফিরে লুঙী পরে আয়েশ করে আড্ডা দেয়া। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। মা-বাবার বুকে প্রশান্তি । বোনের মুখে হাসি। ভাইয়ের কাছ থেকে হাল-হকিকত জানা।

চিরকালের জন্যে আমার ঘর আমার দেশ এমন থাক ।

Saturday, December 16, 2006

সামহোয়ার ইন বাংলা ব্লগের এক বছর: আমাদের অর্জন

বিজয় দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ।

আজ সারা দিন গ্লোবাল ভয়েসের দিল্লি সামিটে ছিলাম । গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন হচ্ছে ব্লগারদের জাতিসংঘ কারন এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লগারদের লেখা প্রমোট করা হয়। এর ৩৫ জন লেখক,কন্ট্রিবিউটর (বিভিন্ন দেশের) এবং হোস্ট নেশন ভারতের অনেক ব্লগার, সাংবাদিক এখানে উপস্থিত ছিলেন।

২ বছর আগে হার্ভার্ড ল সকুলের বার্কম্যান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারনেট এন্ড টেকনোলজির পৃষ্ঠোপোষকতায় কয়েকজন ব্লগারের উদ্যোগে গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন যাত্রা শুরু করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ক্ষেত্র তৈরী করা যেখানে বিশ্বের যে কেউ তার মতামত প্রকাশ করতে পারবে এবং যে কেউ তা পড়তে পারবে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লগাররা তাদের অনচলের বিভিন্ন ব্লগ নিরপেক্ষ ভাবে হাইলাইট করে যাতে বিভিন্ন দেশ এবং ভাষার মানুষের মধ্যে সেতুবনধন তৈরি হয় ।

আমার সৌভাগ্য হয়েছে এখানকার একজন লেখক হিসাবে বাংলাদেশী ব্লগারদের তুলে ধরার। আজকে সকালে আউটরিচ সেসনে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে ব্লগকে আরও বেশি সংখক লোকের কাছে পৌছে দেয়া যায়।

আমি গর্বের সাথে বাঁধ ভাঙার আওয়াজের কথা বলেছি। এটি আমাদের মাতৃভাষায় বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। গত বিজয় দিবসে সামহোয়ার ইন বাংলা ব্লগ শুরু হয়েছিল। প্রায় ৩৫০০ ব্লগার এবং দিনপ্রতি গড়পড়তা ৫০০০০ পাঠকের পদচারনায় ব্লগটি মুখরিত। আজ বিজয় দিবসে বাঁধ ভাঙার আওয়াজের জন্মদিন। আজ আমাদের দ্বিগুন আনন্দ ।

Thursday, December 14, 2006

মেঘের বেশে আকাশ দেশে

আমি এখন ১০৬৬৮ মিটার উচুঁতে প্লেনে বসে লিখছি । ৯২৫ কিমি গতিতে প্লেন চলছে ইরানের উপর দিয়ে। যাচ্ছি দিল্লি হয়ে দেশে। খুব কম সময় থাকব ।

প্লেনে বসে ব্লগ পড়তে পারছি ভাবতেই ভাল লাগছে। লুফথান্সা এই ফিচারটি বন্ধ করে দিচ্ছে অচিরেই।

Sunday, December 10, 2006

নিজেকে খুঁজি

সাদিকের অজানা পাঁচের পাল্লায় ইচ্ছে করেই পরলাম । এ যেন অনেকদিন পরে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করছি।

১) বাবা-মা দুই দিক থেকেই আমি খানদানী ঢাকাইয়া। জন্মসুত্রে চাঁটগাইয়া । আক্ষেপ এই দুটি আন্চলিক ভাষার কোনটিই পারিনা। তবে আগ্রহ নিয়ে ইংরেজী ছাড়া আরও দুটি বিদেশী ভাষা শিখেছি।

২) কিছুদিন গান শিখেছি এটি জেনেই যে কোনদিন ভাল শিল্পী হতে পারব না। আমার ওস্তাদ আশা দিয়ে বলেছিলেন আর কিছু না হোক গানের সুরটাতো বুঁঝতে পারবে। তাই তাকে সেলাম।

৩) মনচনাটকে পদচারনা ছিল বেশ কিছুদিন । অভিনয়ের চেয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে ও আড্ডা দিতেই বেশী ভাল লাগতো। কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় করে বুঝেছি এ দিকে আমার পা না মাড়ানোই ভালো।

৪) জীবনে কোনদিন বিদেশের কোন ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামে নাম লেখাইনি । সারাজীবনের জন্যে দেশকে পর করে দেব এটা ভাবতেই পারিনা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে এখন অবস্থান করলেও জানি একসময় ফিরবই। সে ভাবনাই আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

৫) জীবনে হিরোইক কিছু না করতে পারলেও একটি জিনিষ পেরেছি, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে। পাড়ার কয়েক বন্ধুর সাথে রাতদিন মেলামেশা। এক সকালে ফিশফাস কথা, সবাই যাচ্ছে বেশ্যালয়ে। আমি বললাম, যাবনা। বন্ধুরা ধমক দিল, টিজ করল। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনঢ়। পরবর্তীতে তাদের সাথে আর সেই অন্তরঙতা ছিলনা। তারা তাদের মত, আমি আমার মত। ভাল মন্দ নিজেরই বুঝতে হয় এবং ইচ্ছা করলেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।

Saturday, November 18, 2006

আমি বলি ঠিক আছে

সেদিন গেলাম বার্লিনের ভারতীয় দুতাবাস ও ডয়েশে ভেলে আয়োজিত একটি ক্লাসিকাল কনসার্ট অনুষ্ঠানে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো এদেশেও ভারত সম্পর্কে একটি ইলিউশন কাজ করে।

ডয়েশে সিম্ফনি অর্কেষ্ট্রা কিছুদিন আগে ভারতে গিয়ে ওদেশের শাস্ত্রীয় সঙীত সম্পর্কে ধারনা নিয়ে এসেছ। তারা দুই সংস্কৃতির মধ্যে সেতু বন্ধনের ডাক দিয়ে অনুষ্ঠানটিতে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্র দিয়ে ভারতীয় ধুন তোলার চেষ্টা করলো। চেষ্টা করলো বললাম কারন ব্যাপারটি অনেক দর্শকের কাছেই শিল্পোত্তীর্ন হয়নি। কম্পোজার সেলসির নোটে ভায়োলিন আর চেলো দিয়ে মন্দিরের শাঁখের আওয়াজ! বড্ড বেসুরো আর উচচকিত ঠেকেছে। তবে কম্পোজার সন্দীপ ভগবতী ও জন মায়ারের সুরে ভায়োলিনে মেডিটেশন ও ক্লারিনেটে রাগ সঙীত তোলার চেষ্টা কিছু যায়গায় ভাল লেগেছে।

এসব শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল সঙীতের সাথে বাদ্য যন্ত্রের গভীর সম্পর্ক আছে। এদুয়ের সহাবস্থান যেখানে অনুপস্থিত সেখানে সঙীতের সেই মাধুর্য কি পাওয়া যায়? অথচ পনিডত রবি শনকর, আনন্দ শনকর পশ্চিমা যন্ত্রের সংযোগে অনেক ফিউশন সঙীত করেছেন। সেগুলো ভালো হয়েছে কারন হয়ত তাদের দুই ধাঁচের সঙীতেই বেশ দখল আছে।শেষে মোজার্ট তার স্বরুপে ফিরে এসে দর্শকদের কিছুটা হলেও মোহিত করলেন। বধু বলছিল পাশ থেকে যদি মোজার্ট এর সুর তোলা হয় সেতারে তবে কেমন হবে? নিশ্চয়ই এরকম অদভুত কিছু হবে ।

তবে আমি এক্সপেরিমেন্টের বিরোধী নই । হোক এরকম আরও সেতু বন্ধন । উঠুক বাউলের একতারের সুর 'চেলো'তে। অথবা বাখ মোজার্ট সেতারে। 'জাত যায় জাত যায় লোকে বলে, আমি বলি ঠিক আছে'।

Saturday, October 28, 2006

সংবাদ কেন প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি?

গতকাল রাত থেকে একটু পরপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানার অনেক চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ সময় রাত 12টায় পত্রিকাগুলোর ইন্টারনেট সংস্করনগুলো পাবলিশ হয়। তার আগ পর্যন্ত বিডিনিউজ24 নামক সাইটটিতে কিছু সংবাদ পাওয়া গেল। দৃষ্টিপাত ব্লগসামহোয়ার ইন বাংলা ব্লগ থেকে অনেক কিছুই জানা গেল রাতে। আমরা প্রবাসী যারা তাদের কাছে বাংলাদেশী টিভি/রেডিও নেই এবং ইনটারনেটই একমাত্র ভরসা।

দেশের অনেক লোকের ক্ষেত্রেও কে কোন সংবাদপত্র পড়ছে তা সংবাদের নিরপেক্ষতাতে প্রভাব ফেলে।বর্তমানে পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে কারন বিচারপতি হাসান শপথ নিতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু সংবাদ পাব কোথায়? প্রথম আলোর মধ্যাহ্ন সংস্করনে দেখলাম খবর পড়তে টাকা লাগবে। সংবাদ কি শুধুই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নাকি?যেখানে ওহমাইনিউজের মত সিটিজেন জার্নালিস্টদের সাইট বিশ্বে প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদের এই মনোপলি খর্ব করে দিয়েছে এবং ব্লগগুলো মিডিয়ার থেকে দ্রুত ও কোয়ালিটি রিপোর্ট দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?

দেশের প্রতিটি লোক জার্নালিস্ট হতে পারে। দরকার শুধু একটি সাইট এবং ইন্টারনেট কানেকশন। সামহোয়ার ইন এরকম একটি সিটিজেন জার্নালিস্টভিত্তিক খবরের সাইট নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে। আমি তাদের অনুরোধ করব দ্রুত এটিকে বাস্তবায়ন করতে। আর এখানকার ব্লগারদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা যে যে এলাকায় আছেন ওখান থেকে ফার্স্ট হ্যান্ড সংবাদ আপনাদের ব্লগে প্রকাশ করুন। শফিক রেহমানদের মত লোকের কাছে সংবাদকে জিম্মি রাখলে চলবে না। এবারের ইলেকশনে ব্লগাররা একটি দৃষ্টান্তমুলক ভুমিকা পালন করুক দেশের লোকের কাছে।

Monday, October 09, 2006

নিজেকে হারিয়ে খুঁজি

রুপকথা ও গল্পে পড়েছি যে অতীতকালে সংসারের প্রতি বিরাগভাজন হলে বনবাসে চলে যাবার একটি চল ছিল। সাধু সন্তেরা লোকালয় ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদী ধ্যান করে উচ্চমার্গে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এই একাকিত্বের সাধনা কিন্তু সামাজিক জীবনের জটিলতা পরিহার করে নিজেকে খোঁজার জন্যেই।বর্তমান যুগের ঘন সামাজিক জীবনে এমন সুযোগ কমই দেখা যায়। রাগ করে যে দিকে দু'চোখ যায় সেদিকে চলে যাওয়ার অদম্য উদ্দেশ্য থাকলেও দৃষ্টি কিন্তু মোড়ের উচু বিলডিংটাতেই বাঁধা পায়। পালানোর উপায় নেই!

এই সমাজে আমরা একে অপরের সাথে সম্পর্ককেই সর্বোচ্চ মর্যাদা দেই। কিন্তু আমরা কিন্তু একটি সম্পর্ককে সব সময়ই এড়িয়ে চলি,তা হলো নিজের সাথে নিজের সম্পর্ক। এই সম্পর্ককে খুজে পেতেই দরকার ক্ষনিকের ধ্যান বা একাকিত্ব । কিন্তু এটি কেন দরকার?

জীবনানন্দ বলেছেন: "অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-আরো এক বিপন্ন বিষ্ময়আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে;আমাদের ক্লান্ত করে, ক্লান্ত - ক্লান্ত করে । "একাকিত্ব অনেক ক্ষেত্রেই জীবনের সেই বিপন্নতাকে খুজে পেতে সাহায্য করে। সামাজিক রীতিনীতি, কর্তব্যবোধ, ভাল সাজার ভন্ডামি ইত্যাদি থেকে নিজেকে কিছু সময় আড়ালে রাখে। জীবনের কিছু গোপনীয় বিষয় আমরা আমাদের অতি নিকটজনকেও জানাতে পারিনা। এমনকি সেটা নিয়ে চিন্তা করতেও ভয় লাগে। মনে হয় এই গুপ্তকথার অস্তিত্ব না থাকলেই ভাল হত। এগুলো আমাদের মনকে কুড়ে কুড়ে খায়। একাকিত্ব ছাড়া এগুলোর মুখোমুখি হবার সুযোগ কোথায়?

এই একাকিত্ব শুধু একা থাকা নয়। একা থাকা হচ্ছে ঋণাত্বক অবস্থা, অপরের সানি্নধ্যের আশায় বিপন্ন থাকা। কিন্তু আমি যেই একাকিত্বের (solitude) কথা বলছি সেটি হচ্ছে ধনাত্বক উদ্দেশ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া বিশেষ করে অপছন্দের কোন পরিবেশ থেকে। এটি মনের একটি অবস্থা এবং এই স্বল্প সময়ের ধ্যানে চিত্ত বিক্ষিপ্ত হয়না। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া করা যায়। এর সুবিধা হচ্ছে লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে নয়, লোকজনের মাঝে থেকেও একাকিত্বের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।

একাকিত্বের শক্তি অনেক। এই সময়টুকুতে গভীরভাবে চিন্তা করুন, নতুন কোন আইডিয়া পেয়ে যাবেন সহজেই। অথবা নিজের সমালোচনা করুন এবং সীমাবদ্ধতাগুলোকে দুর করার চেষ্টা করুন।একাকিত্বকে লালন করা সহজ। একটু একটু করে এর চর্চা করুন দেখবেন এটি আস্তে আস্তে আপনার চিন্তশক্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। হয়ত কবির ভাবালুতার বদনাম জুটবে আপনার কপালে। কিন্তু আপনিতো পাচ্ছেন সামজিক সম্পর্কের থেকেও বড় - আপনার নিজের সানি্নধ্য। জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়টুকু পাবেন একাকিত্বে ভাল একটি স্বপ্নের ভেলা চড়িয়ে। এই প্রাগৈতিহাসিক শিল্প থেকে জীবনকে বন্চিত করবেন না।

Sunday, October 08, 2006

কিংকর্তব্যবিমুঢ়

দৃশ্য এক: তখন প্রায় রাত নটা। ধানমন্ডির এক নির্জন ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামিয়েছি। হঠাৎ শুনি এক হাক "এই কল্যানপুর যাইবা?" আমি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে আসতে থাকা একটি লোকের দিকে তাকালাম চিন্তা করতে করতে 'ব্যাটা কি আমাকে ট্যাক্সি ড্রাইভার মনে করল নাকি'?

"তুমি কোনদিকে যাইবা?" লোকটি দ্বিতীয় প্রশ্নবান ছুড়ল। মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেল 'বাসায়' (সত্যি কথা)। "আচ্ছা যাও" শুনে বুঝলাম লোকটির হাত থেকে ছাড়া পেয়েছি । ভাবলাম লোকটির আর দোষ কি অন্ধকারে হয়ত বুঝতে পারেনি।

দৃশ্য দুই: ধানমন্ডির এক ক্লিনিকের সামনে দিনের বেলা গাড়ী থামিয়ে মোবাইলে কথা বলছি। হঠাৎ দেখি একটি বোরকা পড়া মহিলা এসে দরজার পাশে দাড়িয়ে কি যেন বলছে। আমি ফোনে কথা বলা থামিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে এবার পরিস্কার ভাবে বলল "রাজারবাগ যাইবেন"?

আমি কতক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থেকে যখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা তখন গেলাম রেগে "আপনি কি গ্রাম থেকে আসছেন যে ট্যাক্সিও চেনেন না"? মহিলা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে সম্মতিসুচক মাথা নাড়তে থাকল মানে সে গ্রাম থেকেই এসেছে। আমি তখন আমতা আমতা করে বোঝাচ্ছি তাকে যে ট্যাক্সির উপরে ট্যাক্সি লেখা থাকে এবং রং হয় কাল বা হলুদ।

এখানে বলা প্রয়োজন ঘটনা দুটি ২০০৫ সালের এবং আমার গাড়ীটি ছিল বিশ বছরের পুরনো নিশান মার্চ হ্যাচব্যাক (জলপাই রংয়ের) যা মারুতি কালো ক্যাবগুলির থেকে বেশ আলাদা।

শানে নুযুল: ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসাবেই আমাকে হয়ত বেশী মানাত ।

Wednesday, October 04, 2006

পুন:একত্রিকরন - স্বপ্ন ও বাস্তবতা

অক্টোবরের তিন তারিখ হচ্ছে জার্মান পুন:একত্রিকরন দিবস। 1990 সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানী এক হওয়ার পর প্রতি বছর এটি ঘটা করে পালন করা হয়।

বার্লিনে জার্মান সংসদের কাছে ব্রান্ডেনবুর্গার গেইটের পাশে জম্পেশ একটি মেলা বসেছিল (মূল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান হয়েছে কি'ল শহরে)। প্রচুর লোক এসেছিল পরিবার (পোষা কুকুর সহ) নিয়ে। আমার দুই বছর বয়সী মেয়ে জার্মানিতে আসার পর থেকেই কম লোক দেখে অভ্যস্ত। সে এত ভিড় দেখে মোটামুটি ভচকে গেল এবং গম্ভীর মুখে একটি রাইডে চড়ে বসল। অবশেষে টুইটি বেলুন তার হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় তার মুখে হাসি ফুটল। তবে দেশীয় বাড়োয়ারী মেলা দেখে অভ্যস্ত এ মনকে মেলাটি হতাশ করেছে। শুধুই খাবার ও পানীয়র স্টলের ছড়াছড়ি। জার্মানীর বাভারিয়ার ঐতিহ্য অক্টোবরফেস্টের রেশ রাখতেই এখানে লিটার মগে বিয়ারের ছড়াছড়ি ছিল। উৎসবের আইকন হিসাবে একটি বিশাল চড়কি অবশ্য মেলার আমেজটা ধরে রেখেছে। দিনটি ছিল সরকারী ছুটির দিন।

পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানীর জনগনের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুধু রাজনৈতিক কারনে - জার্মানী মিত্রবাহিনীর দেশগুলোর কন্ট্রোলের সুবিধার্থে জার্মানী ভাগ হয়ে যায়। পুর্ব জার্মানী চলে যায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রনে। তখন কোলড ওয়ারের যুগ মাত্র শুরু হয়েছে। দুদেশের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করা হয়। পূর্ব জার্মানীর জনগন কিন্তু এ বিভেদ মন থেকে মানেনি। তাদের মনে পুনরায় এক হওয়ার স্বপ্ন থেকে যায়। 1949 থেকে 1962 পর্যন্ত প্রায় 25 লক্ষ লোক পুর্ব থেকে পশ্চিম জার্মানীতে দেশান্তরী হয়। এ মিলন ঠেকাতে গড়ে ওঠে বার্লিন প্রাচীর। এই প্রাচীর ডিঙোতে গিয়ে কত যে স্বাধীনতাকামী মানূষ গুলিতে মারা গিয়েছে। আশির দশকের শেষের দিকে পেরেস্ত্রইকার হাওয়া লাগে পূর্ব জার্মানীতে। সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিক্ষোভ হয় এবং গনহারে লোক পালাতে থাকে পাশের দেশ চেকস্লোভাকিয়ায়। 1989 সালের 9ই নভেম্বর বার্লিন প্রাচির ভেঙে ফেলে দুই জার্মানি এক হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে।

অবশেষে আসলো সেই দিন - অক্টোবর 3, 1990। দুই জার্মানী এক হলো।খুব কি সহজ ছিল এই এক হওয়া? এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জার্মানীর উপর অনেক ঋনের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। ভুতপূর্ব পূর্ব জার্মানীর রাস্তাঘাট ও স্থাপনাগুলো সংস্কার করা হয়েছে এবং হচ্ছে । পুন:একত্রিকরনের খরচ 750 বিলিয়ন ইউরো। পূর্ব জার্মানির সরকার নিয়ন্ত্রিত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে গেছে। এখনো কিছু লোকের মন থেকে পূর্ব এবং পশ্চিমের বিভক্তির ধারনা যায়নি। সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারনার লোকেরা বাজার অর্থনীতির প্রতিযোগীতাতে খাপ খাওয়াতে পারছে না - মনের প্রাচির হয়তো সরেনি। কিন্তু এমন সুযোগ বারে বারে আসেনা । দুই জার্মানীর রক্তপাতহীনভাবে পুনরায় এক হওয়া জার্মানদের ঐকান্তিক ইচ্ছার ফলেই হয়েছে। জার্মানী আবার আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাড়াচ্ছে এই একীভুত শক্তি নিয়েই।

আমার মনে প্রশ্ন জাগে দুই বাংলার মানুষকি কখনও এক হওয়ার স্বপ্ন দেখে? নাকি তারা ধর্মকেই বিভক্তির প্রধান কারন হিসাবে এখনও দেখে?

Tuesday, October 03, 2006

কেটি মেলুয়া - জ্যাজ-পপ গানে মাতাচ্ছেন

তিন বছর আগে কেটি মেলুয়ার জীবন অন্য সাধারন এ লেভেলে পড়ুয়া ১৮ বছর বয়সী মেয়ের মতই ছিল। একটি রেকর্ড কোম্পানির পরিচালকের নজরে পড়ে গিয়ে তার ভবিষ্যত বদলে গেল। মিষ্টি কনঠে জ্যাজ পপ ঘরানার গানের সংকলন প্রথম এলবামটি ২০০৩ এ প্রকাশিত হয়েই সাড়া জাগায়।

এরপর ২০০৫ সালে প্রকাশিত তার দ্বিতীয় এলবাম piece by piece মালটি প্লাটিনাম সেলার হলো। এই এলবামের বেশ কটি গান ইউকে চার্টের শীর্ষে ছিল। পরপর দুবছর ধরে কেটি ব্রিটেনের সর্বাধিক বিক্রিত গায়িকা।কেটি মেলুয়ার জন্ম জর্জিয়ায়। ৯ বছর বয়স থেকে বসবাস আয়ারল্যান্ডে।

কথায় নয় কাজেই কেটির পরিচয় হউক আপনাদের সাথে। Nine Million Bicycles -গানটি ক্লিক করলে শুনতে পারবেন।লিরিকসটা এখানে পাবেন

কেটি মেলুয়ার ওয়েবসাইট

Sunday, October 01, 2006

মহাকাশ থেকে ব্লগিং

আনুশেহ আনসারি হচ্ছেন প্রথম মুসলিম নারী যিনি মহাকাশ ভ্রমন করে এসেছেন।

আরেকটি ব্যাপারও তিনি প্রথম করেছেন, সেটি হচ্ছে মহাকাশ থেকে প্রথম ব্লগে লিখেছেন। উনি শুরু করেছেন যাত্রার 9 দিন আগে এভাবে:

"আমি জানিনা কে এটি পরছে... হয়ত তুমি একটি ছোট মেয়ে, জানতে চাচ্ছ আমি কে... হয়ত তুমি একটি উচ্ছল যুবক, আমার ছবি দেখে আমার সম্পর্কে জানতে আগ্রহ হয়েছে... হয়ত তুমি একজন যে সবসময়ই মহাকাশ ভ্রমনের স্বপ্ন দেখ এবং জানতে চাচ্ছ যে এই স্বপ্ন পুরনের কাছাকাছি আসতে কেমন লাগে..."

মহাকাশ থেকে তার কিছু লাইন:

" আমি শেষ পর্যন্ত এসেছি... যাত্রা বেশ লম্বা সময় নিয়েছে.....

আপনারা ইতিহাসের সামিল হলেন! আপনারা মহাকাশ থেকে প্রথম ব্লগে পাবলিশ হওয়া লাইন পড়ছেন।"

আপনাদের ইতিহাসে সামিল হতে আর আটকে রাখবোনা । এই হচ্ছে আনুশেহর স্পেস ব্লগ

উইন্ডোজ ভিসতায় বাংলাদেশ





মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ভিস্তা রিলিজ হচ্ছে এ বছর নভেম্বরে। মাইক্রোসফট মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্রফেশনাল এওয়ার্ড প্রাপ্ত অমি আজাদ এটির বাংলা লোকেলের কাজ করেছেন। উইন্ডোজ এক্সপি সার্ভিস প্যাক - তে বাংলা -ভারত লেখা ছিল। ভিস্তাতে বাংলাদেশ আলাদাভাবে আসলো ।

তার ব্লগ থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

Monday, September 25, 2006

ধনি দেশের গরিব শিশুরা

বার্লিনের নতুন প্রধান রেল স্টেশন থেকে হেটে যাচ্ছি চ্যানসেলারের অফিসের পাশ দিয়ে পার্লামেন্টের দিকে। দেখি রাস্তার পাশের ঘাসে ছাওয়া প্রান্তর ভর্তি হাজার হাজার নীল পতাকা পোতা। ডয়েশার কিন্ডারশুটজবুন্ড নামের প্রতিষ্ঠানটি বার্লিনে প্রায় দুইলাখ এমন পতাকা লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে জার্মান রাজধানীতে সম সংখক গরীব শিশুর প্রতি সরকারের অবহেলার বিরুদ্ধে।

বলা হয় জার্মানির দেড় কোটি শিশুর ছয়জনে একজন গরীব এবং অন্য সাধারন শিশু থেকে তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মান খারাপ। এদের অনেকেই হয়ত শিক্ষা সমাপ্ত করবে না এবং অপরাধে জড়িয়ে যাবে।এদের দারিদ্রতার মুল কারন তাদের পিতামাতার বেকারত্ব।২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী জার্মানীতে একদিকে ১০লাখ উচ্চবিত্তের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ১০ লাখ ইউরোর বেশী করে, অন্য দিকে দারিদ্রতার সীমার নীচে অবস্থানরত লোকের (গড় আয়ের ৬০% থেকেও কম) সংখ্যা ১৭%, স্মরনকালের সবচেয়ে বেশী। প্রায় ১০% উচ্চবিত্ত লোক দেশটির ৫০% সম্পদের অধিকারী আর ৫০% নিন্মবিত্ত মিলে দেশটির মাত্র ৪% সম্পদ অর্জন করতে পেরেছে।

রাজধানী বার্লিনের ৩৫লাখ নাগরিকের পাঁচ লাখ গরীব এবং বেকারত্বের হার ১৭%। (সুত্র)এই দারিদ্রতা বৃদ্ধির প্রধান কারন হচ্ছে গত এসপিডি-সবুজ সরকারের হার্জ-৪ নামে নতুন এক নীতিমালা, যা বেকার লোকদের সোশাল সিকিউরিটির পরিমান কমিয়ে দেয় । অনেক বেকার লোক তাদের বাড়ী ছেড়ে অস্বাস্থ্যকর এলাকায় কম ভাড়ায় বাসা নিতে বাধ্য হয়। ২০০৪ সালে হার্জ-৪ চালু হবার পর এই দু বছরে শিশু দারিদ্রতার হার দ্বিগুন হয়ে গেছে। বার্লিনের অবস্থা আরও খারাপ। প্রায় অর্ধেক লোক সোশাল সিকিউরিটি নিয়ে থাকে। কিছু বদনামও আছে এদের অনেকের। অনেকে কম বেতনে চাকুরি করার থেকে কিছু না করেই প্রায় সমপরিমান সোশাল সিকিউরিটি পেতেই পছন্দ করে।

টুরিস্ট শহর হিসাবে পরিচিত এই শহরে চাকচিক্য বাড়ছে এবং লোক বাড়ছে। কিন্তু কাজের সুযোগ বাড়ছে না। প্রচুর পরিমানে তুর্কি আর পুর্ব ইউরোপের লোকের বসবাস এখানে যারা কম পয়সায় শ্রম বিক্রি করে থাকে। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনে ভিখারী প্রায়ই দেখা যায়। সেদিন দেখলাম কিছু যুবক রাস্তায় গাড়ীর কাঁচ পরিস্কার করে পয়সা চাচ্ছে। সিটি ট্রেনে গান গেয়ে ভিক্ষা করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই শহরে জীবন যাত্রার ব্যায় কম বলে কম আয়ের লোকেরা (বিশেষ করে সোশাল সিকিউরিটি ভোগরতরা) এখানে থাকতে পছন্দ করে। আমাদের দেশের গরীবদের সাথে এখানকার গরীবদের একটাই পার্থক্য, এখানে না খেয়ে কেউ মারা যায়না এবং পোশাক দেখে অনুমান করা কঠিন।

হঠাৎ করেই দেখা যায় যে বেশ ছিমছাম যুবক জিগ্গেস করছে যে ভাঙতি ৫০ সেন্ট আছে কিনা, তার টিকেটে কম পড়ছে (আসলে ভিক্ষার একটি কৌশল)।হপটবানহফে (প্রধান রেল স্টেশন) ফেরার পথে কাঠের পায়ে হাটা ব্রিজ ধরে স্প্রে নদী পার হলাম। ব্রিজের কোনায় একটি মলিন চেহারার ৩-৪ বছরের একটি শিশু একর্ডিয়ন বাজাচ্ছে, পাশে একটি থালা, কয়েকটি পয়সা তাতে। একটু এগিয়ে দেখলাম একটি পুর্ব ইউরোপীয় রমনী হাতে বাটি হাতে বলছে বিটে... বিটে... (দয়া করুন)। বুঝলাম ছেলেটির মা। ফেরার পথে কু'দামের (নিউইয়র্কের ফিফথ এভিনিউর অনুরুপ) রাস্তা দিয়ে বাসায় যাচ্ছি। আলোকিত কাচের শোরুম গুলোতে ডিজাইনার পোষাকের দাম শুরু ৩০০০-৫০০০ ইউরো থেকে। ধনী ও গরীবের কি বিভৎস সহাবস্থান!

Saturday, September 23, 2006

চাঁদ নিয়েও বিতর্ক: বিশ্বে মুসলিম একতার চিত্র

শুক্রবার দিন রাতে বার্লিনের তিনটি মসজিদ থেকে রোজার সময়সুঁচি পেলাম। মিলিয়ে দেখা গেল তিনটির সময়ই ৩-৪ মিনিট করে ভিন্ন। এবং সাথে সংবাদ, রোজা রোববার থেকে তবে, চাদ দেখা সাপেক্ষে।

সন্ধায় বাংলাদেশ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের মেইল পেলাম যে islam.de তে চাদ দেখা কমিটি জানিয়েছে জার্মানীতে কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। কাজেই রোববার থেকেই রোজা।

রাতে ফোন পেলাম যে বাংলাদেশী মসজিদে তারাবী পড়া হয়ে গিয়েছে, শনিবারই প্রথম রোজা। ইংল্যান্ডেও শনিবার থেকেই রোজা হচ্ছে কারন সৌদি আরবেও কাল থেকে রোজা। এবং ওখান থেকেই ঘোষনা হয়েছে যে পুরো ইউরোপে শনিবার থেকেই রোজা হবে (কোন অথরিটিতে?)। আমি ক্ষীনকণ্ঠে মেইলটির কথা বললাম । তো জবাব পেলাম পাকিস্তানিরা এবং তুর্কিরা রোববার থেকেই রোজা করবে, তবে আমরা বাংলাদেশীরা শনিবার থেকেই করছি। বলাই বাহুল্য তুর্কিরা বার্লিনে জার্মানদের পরই দ্বিতীয় মেজরিটি। পরলাম মহা গ্যাড়াকলে। এক সিনিয়র ভাইয়ের শরনাপন্ন হলাম, তো উনি বললেন, আমি রোজা রাখা শুরু করছি, ভুল হলে একদিন বেশী রোজা রাখা হবে ।আমি চিন্তা করতে লাগলাম যে আমি একদিন ঈদ করব আর আমার প্রতিবেশী একদিন ঈদ করব ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না? আর যাই হোক দেশে এই সমস্যার মুখোমুখি হইনি।আমেরিকাতেও একই সমস্যা রয়েছে।

এই ব্লগ পরে জানলাম যে একদল এ ব্যাপারে সেীদি আরবের অন্ধ সমর্থক, কারন তারাই নাকি ইসলামের ধারক ও বাহক। আর আরেকদল চাঁদ দেখার উপরই গুরুত্ব দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের বিবাদে আলাদা মসজিদ বানিয়ে নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর নজীর রয়েছে।সৌদি আরব ও কিছু মুসলিম দেশ একটি স্যাটেলাইট পাঠানোর উদ্দোগ নিয়েছে যার মাধ্যমে চাদ দেখাটা আরও বৈজ্ঞানিক ভাবে করা যাবে। বর্তমান পদ্ধতিতে আকাশে মেঘ থাকলে চাঁদ দেখায় ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে অনেককিছুর মতই সব মুসলমানেরা তা মানবে কিনা। আপনারা যেদিনই রোজা শুরু করেন সবার জন্যেই রইল শুভেচ্ছা ।

Saturday, September 16, 2006

জীবন উপন্যাস: সভ্যতার পাপ

তখন আমি ঢাকায়, কলেজে পড়ি। নির্মিয়মান বাড়ীর একটি রুমে আমার ঠাই হয়েছে। এই বয়সে একা থাকার ব্যাপারই কেমন রোমানচকর। অভিভাবক থেকে দুরে থাকার অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করছি বন্ধুদের সাথে সারাদিন তাস খেলে আর আড্ডা মেরে ।

একদিন সকালে খবর এল শাহীন আপা খুন হয়েছে, সাথে পিচ্চিটাও। পুকুরে লাশ পাওয়া গেছে। আমি বলছি তাই নাকি, হাতে কার্ড, অনক কষছি, এরপর কোন কার্ড দেব? বন্ধু দিল এক ধমক, "এই তুই হাসছিস কেন?" সম্বিত ফিরে আসলো। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম সংবাদদাতাকে "কি হয়েছে আবার বল"।

ট্রেনে যাচ্ছি ময়মনসিংহ, আব্বার সাথে। মন খুব খারাপ। সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সংবাদটা। ফ্লাশব্যাকে চলে গেল মন।শাহীন আপা আমার বড় চাচার মেয়ে। অনেক ভাইবোনের সাথে মানুষ। পড়াশোনা শেষ করে তখন ত্রিশালের থানা এডুকেশন অফিসার। আমাদের ফ্যমিলিতে মোটামুটি একটি রেভলু্যশন ঘটিয়ে দিয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। এক হিন্দু কলেজ প্রফেসরকে বিয়ে করেছেন। ধর্মের ভিন্নতার জন্যে পরিবারের অমত ছিল কিন্তু ভালবাসারই জয় হল। দুলাভাইয়ের সঙে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে, বেশ ফ্রেন্ডলি। শেষ দেখা কয়েক মাস আগেই আমার ময়মনসিংহ ভ্রমনের সময়। ওনাদের মেয়ের নাম কচি, বছর আড়াই বয়স। বেশ টরটরে কথা বলে। বেচারা পরে গিয়ে সামনের দাতে কালশিরা পরে গেছে। আমি শাহীন আপাকে বকলাম "দেখে রাখতে পারেননা?"। মেয়েটা মামা মামা বলে অস্থির, ছাড়তেই চায়না।

তারপর এক দু:স্বপ্ন অতিক্রম করলাম । চাচার বাসায় প্রচুর লোক, ক্রন্দনরোল। চারিদিকে ফিসফাস, কানাঘুষো। বিস্তারিত শুনলাম, অনেক ভার্সনে। মোদ্দাকথা দাম্পত্য কলহ ইদানিংকালের সঙী ছিল তাদের। সকালবেলা বাড়ীর পাশের পুকুরে ভেসে উঠেছে দুইজনের লাশ। গলায় শ্বাষরোধের িচহ্ন। স্বামী পলাতক। কি অনুভব ছিল তখন আমার মনে? শোক, অবিশ্বাস নাকি ক্রোধ? অথবা সবগুলোই?

লাশ আসলো পোস্ট মর্টেমের পর । সাদা কাপড়ে মোড়া কচি এবং তার মা শুয়ে আছে কাঠের বাক্সে। বিধ্বস্ত মামারা এবং ক্রন্দনরত খালারা দৌড়ে বেরাচ্ছে। আমার রাগ হচ্ছে কিছু লোকের উপর যারা লাশ দেখতে চাচ্ছে। এক ভাই বললেন লাশের যে অবস্থা না দেখাটাই ভালো।"আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"। আমার কাধে কচির লাশ, কবরস্থানে যাচ্ছি। খুব ভারী লাগছে কফিনটি, মনে হচ্ছে ধরনী দ্বিধা হয়ে যাক। আমি কাঁদছি, কাঁদছে আকাশ। মুখ ও জামা ভেজা, বৃস্টি না চোখের জলে কেউ জিজ্ঞেস করো না। সভ্যতার পাপ বইছি আমরা অনন্তকাল ধরে।

কি হলো তারপর? লোকটির হদিশ পাওয়া গেল না। মাসের পর মাস কেসের তারিখ পরে। চাচাত ভাইরা বহু চেষ্টা করল। চাচী শোকে পাথর। বহুদিন পরে খবর এল সে ইন্ডিয়ায় পলাতক। তার বাবা মা ছিল এদেশের কোন গ্রামে। তারাও বাড়ী ছেড়ে চলে গেছেন। একজন শিক্ষিত মানুষ বা তার পরিবার এমন করতে পারে তা যেন মেলানো যায়না। অথবা শিক্ষার ভিতরেই হয়ত পাপ ঢাকা থাকে ভালমানুষের খোলসে।

আমি আজ বিশ্বাস করি যে মানুষের জীবন উপন্যাসের চেয়েও ঘটনা বহুল। মানুষকে বিশ্বাস করা কি পাপ? আমাদের শত্রু যে অনেক সময়ই কাছের মানুষ।

Thursday, September 14, 2006

ক্ষৌরকর্মের কথকতা

ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক পুরুষদের একটি নিত্য কর্ম হচ্ছে সেভ করা। আমার প্রথম সেভিং কিট ছিল আব্বারটা (অবশ্যই লুকিয়ে)। আলাদা ব্লেড ঢুকিয়ে তখন করতে হতো। সেভেন ও ক্লক ব্লেড ইউজ করতাম। তারপর আমি প্রকাশ্যে ক্ষৌরকর্ম শুরু করলাম জিলেটের টুইন ব্লেড সিস্টেম দিয়ে। আব্বাকে একজন গিফট করেছিল কিন্তু উনি ব্যবহার করেনি। এটির ব্যবহারের সহজতাতে মুগ্ধ ছিলাম। তখন থেকেই জিলেটের প্রেমে পরা। এরপর সময়ের সাথে কত ব্রান্ড বদলানো হলো - জিলেট টু, কনটর, সেনসর, সেনসর এক্সেল, ম্যাক 3, ম্যাক 3 টারবো। মাঝখানে বিপদে পরে দু একবার অন্য ব্যান্ডের ডিসপোজেবল রেজর ট্রাই করেছি। কিন্তু ভাল লাগেনি। উইলকিনসন সোর্ডের কোয়াট্রর (চার ব্লেড) দিকে আড় চোখে তাকালেও কোন কারনে জিলেটের কাছে এখনও বিবাহিতের মতই বিশ্বস্ত। ম্যাক 3 টারবোতে এসে কেন যেন আটকে গেছি প্রায় তিন বছর। জিলেটের বিজ্ঞাপন The best a man can get মনে হয় প্রানে গেঁথে আছে।

সম্প্রতি জিলেট ফিউসন নামে একটি নতুন রেজর বেরিয়েছে। এটির সামনের দিকে পাঁচটি ব্লেড ও পিছনের দিকে একটি প্রেসিশন ব্লেড জুলফি কাটার জন্যে। কিন্তু আমার এখনি কিনতে ইচ্ছে করছেনা । মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে: ব্লেডের সংখা বাড়াই কি প্রযুক্তির উৎকর্ষতার লক্ষন?

Monday, August 28, 2006

কান্না পাচ্ছে!

সকাল বেলা খবর পেলাম আমার এক এক্স কলিগ মারা গেছে। প্রেগন্যান্ট ছিল সে, সেকেন্ড ইস্যু অক্টোবরে ডিউ। খিচুনি হচ্ছিল বলে ক্লিনিক থেকে ক্লিনিকে স্থানান্তর। শেষ ক্লিনিকটাতে কোন রকম চেষ্টাই করা হয়নি। এমনকি শুধু বাচ্চাটাকে বাচানোর কথাও তাদের মনে হয়নি। তার গাইনোকলজিষ্ট (খুবই নাম করা একজন) এভেইলেবল ছিলেন না। এই হচ্ছে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। কার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে তার পরিবার?

ছোট একটি ফ্যামিলি ছিল তাদের। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকুরে। একটি অপুর্ব কন্যা প্রায় আমার মেয়ের বয়সী। আমার পাশের কিউবিকলে বসত সে। প্রায় প্রতিদিনই বাচ্চার খবর আদান প্রদান হতো। বছর আড়াই বাচ্চাটির চেহারা মনে পরলেই কান্না পাচ্ছে।

Friday, August 18, 2006

সবচেয়ে সুন্দর কুৎসিত মেয়ে

জার্মান টিভিতে এই চেহারা দেখে আতকে উঠেছিলাম। একি ভারতীয় জাসি এখানে কি করছে? কয়েকদিন ফলো করে বুঝলাম সেই সোপ অপেরা, সেই বস, সেই বুদ্ধিমতী সেক্রেটারী । না শুধু ভারত বা জার্মানী নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই সোপ অপেরাটির ভার্সন রয়েছে। Yo soy Betty, la fea ("I am Betty, the Ugly One") হচ্ছে মূল গল্পটি যেটি কলাম্বিয়াতে 1999-2001 সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় সিরিজ ছিল। এই বেটিই দেশভেদে লোটে, বেটি, লেটি, লিসা বা জাসি। চেহারার কি মিল দেখেছেন কি? একেবারে কপিক্যাট। এর নিন্মোক্ত ভার্সনগুলো হয়েছে :* ডাচ - লোটে - তালপা টিভি* আমেরিকা - আগলি বেটি - এবিসি * রাশিয়া - নে রদিশ ক্রাসিভয় - আমেদিয়া ফিল্ম ঁ* মেক্সিকো - লা ফেয়া মা বেলা -এসমাস* জার্মানী - ফেরলিবট ইন বার্লিন - সাট আইনস* ভারত - জাসি যায়সি কই নেহি - সনি টিভি

Tuesday, August 15, 2006

পথে পথে (৩) : উত্তরের ভেনিসে

ব্রুজ বা ব্রুগগেকে (French: Bruges, Dutch: Brugge) বলা হয় উত্তরের ভেনিস। ব্রাসেলস থেকে ১২০ কিমি দুরের ইউরোপের অন্যতম সুন্দর শহরটিতে যেতে লাগলো এক ঘন্টারও কম । ১৩৮ বর্গ কিমির শহরটিতে লোক সংখা মাত্র ১ লাখ।

উত্তর সাগর সেখান থেকে খুব কাছে এবং খালের মাধ্যমে সংযুক্ত । শহরটিতে লোকবসতি হাজার বছরেরও আগে থেকে এবং ব্রিটেনের সাথে বানিজ্যের একটি গুরুত্বপুর্ন বন্দর হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল । ১৭শ খ্রীস্টাব্দের শেষের দিকে উত্তর সাগরের প্রান্তে আরও বন্দর তৈরি হওয়ায় এই বন্দরের গুরুত্ব আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে । ১৮শ খ্রীস্টাব্দের শেষের দিকে লোক বসতি কমে যাওয়ায় এর নামকরন করা হয় মৃত ব্রুজ 'Bruges-la-Morte' । এই শহরের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যগুলো লতাগুল্ম দিয়ে ঢেকে যায় । কিন্তু এটিই বাচিয়ে দেয় শহরটিকে । দ্্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উত্তর ইউরোপের অনেক শহর বোমায় ধ্বংশ হয় । কিন্তু লতাগুল্মের জন্য ব্রুজ শহরটিকে উপর থেকে জঙলের মত লাগায় এতে কোন বোমা পরেনি ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবার শহরটি জনবসতিপুর্ন হয় ও একে একটি পর্যটন শহর হিসাবে গড়ে তোলা হয় । এটি ইউনেস্কোর World heritage site এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে কি পরিমান পর্যটক আসে তা টের পেলাম গাড়ী পার্কিং করার সময় । মাটির নীচে চার তলা পার্কিং স্পেসে মনে হয় প্রতি তলায় হাজারের মত গাড়ী ধরে । খালি যায়গা খুজতে লাগল ২৫ মিনিট ।

আবহাওয়া আমাদের সাথে সকাল থেকেই মসকরা করছিল । এই বৃষ্টি তো এই রোদ । এর মধ্যেই আমাদের ব্রুজ অভিযান শুরু হলো । সারি সারি মধ্যযুগীয় পুরোনো বাড়ী ও পুরোন ঢাকার মতো চিপা গলি । রাস্তা তৈরি পাথরের টালি দিয়ে। বলাই বাহুল্য টুরিস্টরা গিজ গিজ করছে এবং অনেকেরই হাতে গরম ওয়াফল , এখানকার জনপ্রিয় খাবার।
অনেক বাড়ীর নিচের তলা টুরিস্টদের মনোরনজনের জন্যে বিবিধ দোকান ও রেষ্টুরেন্টে রুপান্তরিত হয়েছে । তবে উপরের তলাগুলোতে ব্রুজবাসীদের বসতি রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তৈরির সাল লেখা রয়েছে, কোনটি ১৬শ খ্রীস্টাব্দে কোনটি ১৭শ খ্রীস্টাব্দে তৈরি। শহরের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া খালগুলোর পাড়ে ভেনিসের আদলে অপুর্ব দালান উঠে গেছে । সময়ের অভাবে বোট রাইডে ওঠা হলো না ।

ব্রুজে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে । চার্চ অফ আওয়ার লেডিতে মাইকেল এনজেলোর Madonna and Child ভাস্কর্যটি আছে যা ১৫০৪ সালে তৈরি হয়েছিল । এছাড়াও মধ্যযুগীয় ফ্লেমিশ পেইন্টিং ও ভাস্কর্যের মিউজিয়াম রয়েছে । শহরের মধ্যে দিয়ে হেটে যাওয়াটাই অদ্ভুত রোমনচের জন্ম দেয় । অনেকখানেই ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া বাহন নেই, মনে হয় মধ্য যুগে আছি ।

বেলজিয়াম প্রসিদ্ধ তার 'লেস' এর কাজ এবং চকলেটের জন্য । স্যুভেনির হিসাবে উভয়ই মন্দ নয় । ফ্যাক্টরি ও দোকান উভয়ই আছে এখানে ।

বেশ বড় এই শহরটিতে ভ্রমনের ভালো উপায় হচ্ছে সাইকেল ভাড়া করে নেয়া । অনেক কিছুই দেখা হলো না ফিরে যেতে হবে বলে। ব্রাসেলসে যে দেশীয় আতিথেয়তা (দুপুরের খাবার) অপেক্ষা করছে । (চলবে)

পথে পথে (২): ব্রাসেলস শহর

বেলজিয়ামকে বলা হয় 'ককপিট অফ ইউরোপ' । প্রায় 1 কোটি লোকের বাস এই দেশে । ৬০% লোকের ভাষা ডাচ (ওদের ভাষায় ফ্লেমিশ) এবং ৩৫% লোকের ভাষা ফ্রেনচ । মধ্যযুগে (১৫৭৯-১৮১৫) এটি দক্ষিন নেদারল্যান্ডস নামে প্রসিদ্ধ ছিল এবং স্পেন, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রানসের শাষনাধীন ছিল । ১৮৩০ সালে বেলজিয়াম রেভলুশনের মাধ্যমে স্বাধীন বেলজিয়ামের জন্ম । বেলজিয়ামে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এবং সংসদীয় গনতন্ত্র রয়েছে ।

মধ্যযুগ থেকেই এর বর্তমান রাজধানী ব্রাসেলস শহর ব্যবসা বানিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল । নেটো, ইরোপিয়ান ইউনিয়ন ইত্যাদি সংস্থার সদর দফতর থাকায় বর্তমানেও ব্রাসেলস ইউরোপের একটি গুরুতপুর্ন শহর ।

আমরা পৌছেছি রাত 8টার দিকে । হাত মুখ ধুয়ে পেট পুজো করার পরে ছুটলাম রাতের ব্রাসেলস দেখতে। একে একে দেখা হলো রাজার অফিস, রাজার চার্চ , গ্র প্লাস ও পুরোন মার্কেট (Grand' Place-Grote Markt) এবং ম্যানেকেন পি । এটা আসলে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনরত একটি ছোট ছেলের মুর্তি । জনশ্রুতি রয়েছে যে ছেলেটি প্রস্রাব করে ব্রাসেলস দখলকারী সৈন্যদের গোলাবারুদ ভিজিয়ে দিয়ে শহরটি রক্ষা করে। ব্রাসেলস শহরে এই ছেলের শত শত মুর্তি আছে । শীতকালে এই ছেলের মুর্তিটি বিয়ার প্রস্রাব করে এবং লোক 5 ইউরো দিয়ে তা কিনে খায় ।

গ্র প্লাসে রাতে প্যালেসের দেয়ালে আলোক ও সঙীত সহকারে একটি শো হয় যা সত্যিই অপুর্ব । তার পরে দেখতে গেলাম এটমিয়াম যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক স্থাপত্য বলা হয়। রাতে এটিকে অনুর বিভিন্ন মলেকিউলস এর মতই দেখা যায় (ছবি দ্রষ্টব্য)।

তারপর দেখতে গেলাম ইউরোপিয়ান কমিশনের অফিস । আমাদের দেশের মত এত সিকিউরিটি নেই । আশে পাশে কোন পুলিশ দেখলাম না ।

রাত একটার দিকে ক্লান্ত দেহে বাসায় প্রত্যাবর্তন । পরবর্তী দিনে বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন অনচল ভ্রমনের স্বপ্ন নিয়ে অবশেষে নিদ্রায় মগ্ন হলাম সবাই । (চলবে)

পথে পথে (১): গন্তব্য বেলজিয়াম

ভ্রমনটা আসন্নই ছিল কিন্তু ছিলনা প্রস্তুতি। শেষ মুহুর্তে আমাদের ম্যাপ রিডিংয়ের ক্ষমতার উপর ভরসা না করে সিনিয়র ভাই একটি নেভিগেশন সিস্টেম কিনলেন । এটির মিষ্টি কনঠের জন্যে নাম দেয়া হলো আপাজান ।

অবশেষে আপাজানের হাতে আমাদের ভবিষ্যত ছেড়ে দিয়ে আমরা তিন ভাই ও এক ভাতিজা বার্লিন থেকে রওনা হলাম স্থলপথে বেলজিয়ামের দিকে । জার্মানির অটোবান বা হাইওয়ে প্রসিদ্ধ বাধাহীন স্পীডের জন্যে । আমরা 150-200 কিমি (ঘন্টাপ্রতি) জোরে চালানোর পরও দেখা গেল বেশ কিছু গাড়ী আমাদের ফেলে চলে যাচ্ছে । এখন গ্রীস্মের শেষ পর্যায় তাই ল্যান্ডস্কেপে বেশ পরিবর্তন দেখতে পেলাম । আগের দেখা দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুল ও ঘাসের অপুর্ব রংয়ের ছোপ তার পর গ্রাম জুড়ে বিভিন্ন একক বাড়ী ও গাছপালার চমৎকার্র কম্পোজিশন এবার দেখা গেল না । বিস্তীর্ন প্রান্তর জুড়ে ফসল কাটার পর ম্যার মেরে ন্যাড়া ক্ষেত ।

আপাজান বলছেন 767 কিমি গন্তব্য 8 ঘন্টার মতো লাগবে । লম্বা হাইওয়ে বেশ বিরক্তিকর । তাড়াহুড়োতে সঙীত আনতে ভুলে গিয়েছি। পথের সঙী তাই সবেধন নীলমনি মান্না দের সিডি । সাথে ম্যারাথন আড্ডা ও পিছনের সিটে নাসিকা গর্জনে বিশ্রাম। বিকেলের দিকে আপাজানের বিরক্তির উদ্রেক করে ডুসেলডর্ফ শহরে যাত্রাবিরতি । উদ্দেশ্য আমাদের এবং বাহনের পেটপুজো ।

নেভিগেশন সিষ্টেম আমাদের ঠিকই নানান অলিগলি দিয়ে আবার হাইওয়েতে নিয়ে গেল । কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে আমরা মোটামুটি কানা হয়ে আছি । ব্যাপারটা টের পাওয়া গেল কিছু সময় পর । রাস্তার সাইনবোর্ড পরিবর্তন হওয়ায় বুঝলাম আমরা জার্মানীর বর্ডার পার হয়েছি । ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্ডারলেস কান্ট্রির মাহাত্য বুঝলাম । কোন থামাথামি নাই। ইমিগ্রেশন, পাসপোর্টে সিল ইত্যাদির ঝামেলা নেই । আমাদের দেশে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতেও খোদা হাফেজ, স্বাগতম ইত্যাদি লেখা থাকে । এক্ষেত্রে বর্ডারের কাছাকাছি পথে ছোট করে ডাচ ভাষায় কিছু লেখা ছিল যা আমরা মিস করেছি। এদিকে বেলজিয়ামেও ডাচ ভাষার ব্যবহার রয়েছে।

এরপর শুরু হলো আমাদের চিন্তা আমরা ঠিক কোন দেশে আছি এখন । জার্মানির বর্ডারে দুটি দেশ এবং বেশ কতগুলো রাস্তা কাছাকাছি । আমাদের হিসাব মতে আমাদের বেলজিয়ামে ঢোকার কথা । কিন্তু মোবাইলে আমরা নেদারল্যান্ডের সিগনাল পাচ্ছি । কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি তা বের করার ব্যর্থ চেষ্টা করে আপাজানের হাতে নিজেদের সপে দিলাম । কিছুক্ষন পর আমরা বেলজিয়ামে প্রবেশ করলাম এবং বোঝা গেল আমরা শর্ট কাট নিয়েছিলাম নেদারল্যান্ড হয়ে ।

বেলজিয়ামের ল্যান্ডস্কেপ জার্মানী থেকে বেশ আলাদা । মাঠে গরু এবং ঘোড়ার অবাধ বিচরন । গ্রামের বাড়ীগুলোর কাঠামো একটু ভিন্ন এবং অতটা রংয়ের ব্যবহার নেই । যতই ব্রাসেলসের দিকে আসতে থাকলাম ততই বৃষ্টি বাড়তে লাগলো । এখানকার হাইওয়েতে বাতি রয়েছে যা জার্মানি বা নেদারল্যান্ডসে নেই । আমরা ইতিমধ্যেই জার্মানীর রাস্তায় গাড়ী চালিয়ে করাপটেড তাই বামের লেন ফাকা পেয়ে 150-160 কিমি বেগে গিয়েছি । পরে শুনলাম ওদের হাইওয়ের সর্বোচ্চ স্পিড লিমিট 120 এবং বামের রাস্তাটি ইমার্জেনসির জন্যে ফাকা রাখতে হয় । ভাগ্য ভালো পুলিশের ঝামেলায় পরিনি ।

ব্রাসেলস শহরে গিয়ে আপাজানের মাথা খারাপ হয়ে গেল । ওখানে বেশ কিছু টানেল । এবং টানেলের মধ্যে জিপিএস সিগনাল যায়না (রিপিটার নেই) । প্রতিবার টানেলের মধ্যে থেকে বের হয়েই সে অনেক ডিরেকশন দেয়া শুরু করল । রাস্তার মাঝ খানে বলে make a u turn now । পরে বুঝলাম ব্রাসেলসের কিছু অংশের ডিটেইলস তার ম্যাপে নাই। অত:পর তাকে রেস্ট দিয়ে দুরালাপনের আশ্রয় নিয়ে গন্তব্য স্থলে আগমন। (চলবে)

Wednesday, August 09, 2006

ঘরে ফেরার ডাক


প্রবাসী ডাক্তার রুমীর কল্যানে আমার একটি ভিডিও দেখা হলো। ভিডিওটি তৈরি করিয়েছেন স্কোয়ার গ্রুপের তপন চৌধুরি আমেরিকায় অবস্থিত বাংলাদেশী ডাক্তারদের জন্য । প্রবাসীদের দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থান নিয়ে ফিরে আসার জন্য আকুতি আছে এই ভিডিও ক্লিপটিতে । মন খারাপ হয়ে যায় ভিডিওটি দেখলে । এটি দেখে স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাসরত কোন বাংলাদেশী কি ভবিষ্যতে দেশে ফিরে আশার সিদ্ধান্ত নেবে?

লিংক

Monday, August 07, 2006

বাংলাদেশী জাতীয়তা: বৈষম্যভিত্তিক আইন

বাংলাদেশী জাতীয়তা সংক্রান্ত একটি বৈষম্যমুলক আইন বিদ্যমান এখনও এদেশে ।

একজন বাংলাদেশী পাসপোর্ট হোলডার বাংলাদেশী ভদ্রলোক যদি একজন বিদেশিনীকে বিয়ে করেন তবে সেই স্ত্রী এবং ওনার বিদেশে হওয়া যে কোন সন্তান স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পাবেন ।

কিন্তু পাসপোর্ট হোলডার যদি মহিলা হন তাহলেই বাধবে গোল । তিনি তার নাগরিকত্ব তার সন্তান বা জামাইকে transmit করতে পারবেন না । কি ভয়নকর? বাংলাদেশী মহিলার সন্তান বাংলাদেশী হতে পারবে না বাবা অন্য দেশের বলে । বাংলাদেশে বার্থ সিটিজেনশীপ আইন সঠিক কিরকম জানিনা তবে শুনেছি সেইক্ষেত্রেও বাবার জাতীয়তা গুরুত্ব পুর্ন ।

কিরকম পিতৃতান্ত্রিক আইন ভেবে দেখেছেন?

হামিদা হোসেইন এক সেমিনারে বলেছেন:

The Bangladesh Citizenship Act, 1951 and The Bangladesh Citizenship (Temporary Provisions) Order 1972, deprive women of equal rights in citizenship. The prescription that the right of citizenship be passed on to children from father and grandfather is clearly inconsistent with constitutional guarantees of equality in Article 28(1 & 2). Although Article 6 of the Constitution states that citizenship will be determined and regulated by law, but its intention cannot be to create different classes of citizenship.

Sunday, July 30, 2006

অনলাইনে ভোটার লিস্ট

সুজন -সুশাষনের জন্যে নাগরিক 2000 সনে প্রনীত 64 জেলার ভোটার তালিকা অনলাইনে দেয়ার উদ্দ্যোগ নিয়েছিল । এখন পর্যন্ত 25টি জেলার করতে পেরেছে ।

আমি আশা করব নতুন ভোটার লিস্টটা সরকার অনলাইনে এক্সেসিবল করে দেবে ট্রানসপারেনসির জন্যে ।

Wednesday, July 26, 2006

জবাবদিহিতা

Accountability বা জবাবদিহিতা অর্থ হচ্ছে দায়িত্ববোধ, অর্থাৎ নিজস্ব কোন কাজ সম্পর্কে ব্যাখা দেয়া বা ভাল মন্দের দায়িত্ব স্বীকার করা । কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙনে এই শব্দটির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে । অথচ প্রতিনিধিত্বমুলক গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি (দল বা ব্যক্তি) জনগনের কাছে জবাবদিহী করতে বাধ্য ।

বাংলাদেশে আজ 'জোর যার মুল্লুক তার' পরিস্থিতির সৃস্টি করা হচ্ছে । বিগত দুই দশকে বহু জনপ্রতিনিধীর ও সরকারী আমলাদের অপরাধ ও দুর্নীতি ঢাকতে গিয়ে নিত্য নতুন আইন সৃস্টি করা হয়েছে । যেমন এই বছর 35 বিলিয়ন টাকা (500 মিলিয়ন ডলার) কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দেয়া হয়েছে মাত্র 7.5% প্রদান করার বিনিময়ে । নিয়ম অনুযায়ী এই টাকার সোর্স গোপন করা যাবে অর্থাত জবাবদিহীতার মৃত্যু ঘটানো হলো । সৎ পথে কামালে 25% ট্যাক্স দিতে হতো আর জবাবও দিতে হতো কিভাবে টাকা কামিয়েছে ।

এভাবে পদে পদে জবাবদিহিতার নিয়মগুলো তুলে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে ।

এখন আশা যাক নির্বচনী মুলোগুলোর কথায়। বিএনপির যে সব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পালিত হয়নি সেগুলো হচ্ছে:
1) বিচার বিভাগ পৃথকীকরন ।
2) রেডিও টিভির স্বায়ত্বশাষন
3) স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন
4) ন্যায়পাল নিয়োগ
5) বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল

সরকারের আর মাস কয়েক বাকি । এই সরকার যাবে আরেক সরকার আসবে । নির্বাচনী মুলো গুলো আগের মতো ঝুলতেই থাকবে । বেশীর ভাগ জনগন কি সারাজীবন জনপ্রতিনিধিদের কাছে জবাব না চেয়ে চুপ করেই থাকবে? উপযুক্ত প্রার্থিকে বিবেচনা না করে মার্কা দেখে ভোট দেয়ার দিন বদল করতে হবে, এটা মূর্খতারই সামিল ।

Sunday, July 23, 2006

ধর্ম না জাতীয়তা কোনটি আগে?

একটি খুবই ইন্টারেস্টিং সার্ভের রেজালট (পিউ রিসার্চ সেন্টার) শেয়ার করছি। বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষের পরিচয়ে কোন বিষয়টি গুরুত্বপুর্ন, ধর্ম না জাতীয়তা । মুসলমান এবং ক্রিশ্চিয়ান দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এটি পরিচালনা করা হয়েছিল ।

সবচেয়ে বেশী মুসলিম আইডেন্টিটি প্রেফার করে দ্্বি-জাতিতত্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের মুসলমানরা (87%) । মুসলমান মেজরীটি দেশেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম গনতান্ত্রিক ইন্দোনেশিয়ার 36% লোকের কাছে মুসলিম আইডেন্টিটি গুরুত্বপুর্ন । আর একই দেশের39% লোকের কাছে জাতীয়তা গুরুত্বপুর্ন।

উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সব দেশের ক্রিশ্চিয়ানদের মধ্যেই জাতীয়তা ধর্মের থেকে গুরুত্বপুর্ন ।

এখন বাংলাদেশীদের কাছে কোনটি গুরুত্বপুর্ন? বাংলাদেশ কোনটি হতে চায় সমস্যা সনকুল পাকিস্তান না উন্নয়নশীল ইন্দোনেশিয়া?

Thursday, July 20, 2006

সুখী হওয়ার উপায়

পাচটি বিষয় স্মরন রাখলেই আমরা সুখী হতে পারি:

1) হৃদয় থেকে ঘৃনাগুলো মুছে ফেলুন ।
2) মাথা থেকে দুশ্চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলুন ।
3) লোক দেখানো মনোভাব বাদ দিয়ে সহজ জীবন যাপন করুন ।
4) বেশী দেয়ার চেষ্টা করূন ।
5) কম আশা করুন তাহলে প্রতিটি ছোট খাট প্রাপ্তি আপনার জীবনে অনেক আনন্দ নিয়ে আসবে ।

Wednesday, July 19, 2006

স্কুলে আজ কি শিখেছ?









স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার সোনা বাবা ।
স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার ছোট বাবা ।

আমি শিখেছি সরকার কখনও মিথ্যা বলেনা
আমি শিখেছি যোদ্ধারা কখনও মরেনা
আমি শিখেছি সবাই স্বাধীন ।
হ্যা, এটাই শিক্ষক আমাকে বলেছেন
স্কুলে আমি এটাই শিখেছি বাবা আজকের দিন ।

স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার সোনা বাবা ।
স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার ছোট বাবা ।

আমি শিখেছি পুলিশ বন্ধু জনগনের
আমি শিখেছি হাত অনেক বড় আইনের
আমি শিখেছি খুনীরা মরেই প্রায়শ্চিত্ত করে
যদিও খুনি চিনতে ভুল হতেই পারে ।
হ্যা, এটাই শিক্ষক আমাকে বলেছেন
স্কুলে আমি এটাই শিখেছি বাবা আজকের দিন ।

স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার সোনা বাবা ।
স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার ছোট বাবা ।

আমি শিখেছি সরকারকে ক্ষমতাবান হতে হয়
এটি সবসময়ই সঠিক, কখনই ভুল নয়
আমাদের নেতারা খুব ভাল মানুষ আর
তাদের আমরা নির্বাচিত করি বারেবার

স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার সোনা বাবা ।
স্কুলে আজ কি শিখেছ?
আমার ছোট বাবা ।

আমি শিখেছি যে যুদ্ধ এতটা খারাপ নয়
আমি শিখেছি যুদ্ধের ইতিহাস গৌরবময়
আমরা করেছি যুদ্ধ জার্মানী ও ইরাকে
কোন দিন হয়ত দেবে সুযোগ আমাকে

(পিট সিগারের গানের অনুবাদ)

Monday, July 17, 2006

নিরাপরাধকেও মারো

নিরাপরাধকেও মারো
কারন তারাও হতে পারে টেররিস্ট ।

দুর্বলতা দেখিও না
দয়ালু হয়োনা
সংবেদনশীল হয়ো না
সাহায্যের হাত বাড়িও না
কিছুই গায়ে লাগিও না, কারন
নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কমে যাবে ।

বিশ্বাস করো
যুদ্ধই শান্তি,
অজ্ঞানতাই শক্তি ।

(ইংরেজী থেকে অনুবাদ
মূল: লীলা ফারজামি - ইরানী কবি )

Monday, July 10, 2006

বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার অভিজ্ঞতা

বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বার্লিনের ফ্যানমাইলেতে দশ লাখ (কতৃপক্ষের ভাষ্য, আমার মতে এত হবে না) লোকের সাথে ।

ফাইনালের টিকেট পাননি তো কি হয়েছে? ২০টির মত বড় পর্দাসহ প্রায় ৩ কিমি লম্বা এই ফ্যানমাইলেতে বিশ্বের তাবৎ দেশীয় ফ্যানদের সাথে খেলা দেখার মজাই আলাদা । সাথে ছিল খাদ্য ও বিনোদনের নানা আয়োজন । দেশের পহেলা বৈশাখের মত ফেস্টিভ আমেজ । বিভিন্ন দেশের জার্সি গায়ে, মুখে রং মেখে, বিচিত্র ভেপু বাজিয়ে উৎসবে সবার অংশগ্রহন ছিল এর প্রান। খেলায় সবার দারূূন মনযোগ । জিদানের লালকার্ড পর্ব রিপ্লে হওয়ার পর সমন্বিত বিস্ময় , প্রতিটি গোলের উচ্ছাস ; এক কথায় অবিশ্বাস্য । খেলা শেষের চুড়ান্ত উচ্ছাস ও লেজার শো অনেকদিন মনে থাকবে ।

বাড়ী ফেরার পথে বিপত্তি । অনেক দুর হেটে S Bahn ও U Bahnএ ভিটেনবার্গপ্লাটজ আসলাম । তারপর অনির্দিষ্টকালের জন্যে অপেক্ষা আর টেনশন । রাত একটা বাজে অথচ বাস আসছেনা কারন কু'দাম জুড়ে গাড়ি জট । সবাই এদিকে গাড়ি নিয়ে আসছে আর হর্ন বাজাচ্ছে । জার্মান বলেই মনে হলো এদেরকে । সঙিনী বললেন ফ্রানস জিতলেও এরকমই হত কারন তাদের আসলে ফুর্তি করার ছুতো দরকার ছিল । কয়েকমাইল হেটে অগত্যা ট্যাক্সির সন্ধান ও বাড়ি ফেরা।

হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন যে মানুষ চোখ দিয়ে যে সৌন্দর্য দেখে তার কিছু অংশ মাত্রই ক্যামেরা দিয়ে ধরা যায় । আশা করছি আমার তোলা ছবিগুলোতে হয়ত উৎসবের কিছুটা আমেজ পাওয়া যাবে ।

Monday, July 03, 2006

বকসিস কালচার ও আমাদের জাতিগত গর্বের প্রস্থান

স্বপ্নচারী জিগ্গেস করেছেন (http://tinyurl.com/mroq6) সিএনজি ড্রাইভাররা কেন ভিক্ষা করে?

আসলে ভিক্ষা কে করছেনা? পরোক্ষভাবে ভিক্ষা করাটা অমাদের সমাজে একটা প্রতিষ্ঠিত কালচার হয়ে দাড়িয়েছে ।

পোষ্ট অফিসে টিকিটের জন্যে টাকা দিয়েছেন তো ভাংতি চেয়ে রেখে দেয়া হলো । রিক্সা বা সি এন জি অনায়াসে বেশী চাচ্ছে । কাউকে দিয়ে কিছু কাজ করাবেন আসলের সাথে সাথে বকসিস চাই । সরকারী কোন অফিসে যাচ্ছেন বকসিস (ঘুষ) ছাড়া আপনার কাজই হবে না ।

মজার ব্যপার হলো এই বকসিস কালচার সবাই কিন্তু যায়েজ করে নিয়েছে । সি এন জি ড্রাইভার কিন্তু তার টুপি দাড়ি খুব ভাল ভাবেই ডিসপ্লে করছে । রোজার দিনে ঘুষ কিন্তু আফিসের কেরানী নিজের হাতে নেবে না । বলবে ড্রয়ারে রেখে যান ।

আসলে আমাদের জাতিগত গর্ব মনে হয় কমে যেতে শুরু করেছে । এমন একদিন ছিল যখন একজন অপরের কাছে মাথা পাতার চেয়ে না খেয়ে মরে যাওয়া শ্রেয় বলে মনে করত ।

যেখানে পশ্চিমা সমাজে unattended পন্য দোকানে বিক্রি হয় মানুষের নৈতিকতা বোধকে পুজি করে সেখানে আমরা ক্রমশই নিচের দিকে নামছি । আমাদের সমাজে এর পরিবর্তন কবে হবে কিভাবে হবে কিছুই বুঝতে পারছিনা ।

কোথাও পড়েছিলাম যে দারিদ্রতা মানুষের নীতিবোধকে ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে । আসলেই কি কথাটি সত্য?

Friday, June 30, 2006

বাংলা ব্লগিংয়ের ভবিষ্যত

আমি লিখতে বসলাম শোহেইল মতাহির চৌধুরীকে করা উপরুক্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে (http://tinyurl.com/zu56e) । ওনার মত অপ্রিয় হলেও সত্য যে সামহোয়ার ইন সাইটে হয়ত শ দুয়েকের বেশী নিয়মিত ব্লগার/পাঠক নেই ।

তবে হতাশ হবার কিছু নেই । সামহোয়ারইনের 6 মাস বয়সে 2.5 মিলিয়ন হিট এবং হাজারের কাছাকাছি রেজিস্টার্ড ব্লগার (কতৃপক্ষ সঠিক সংখা জানালে বাধিত হব ) কিন্তু কোন অংশে কম প্রাপ্তি নয়। এখনও পশ্চিমবঙের বাঙালিদের এমন কমিউনিটি গড়ে উঠেনি । আমি ত মনে করি এখানে বেশ কিছু উন্নত মানের এবং বিভিন্ন ডাইমেনশনের লেখা হচ্ছে যা লিটল ম্যাগাজিন গুলো থেকে (পাঠকসংখা ও ইনটারএকটিভিটির দিক দিয়ে ) অনেকটাই বেশী কার্যকরী । এগুলো কি সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করবে না? অবশ্যই ভাল সম্ভাবনা আছে এই কমিউনিটির ।

এখন আসছি বিশ্বসমাজে ব্লগ কোন স্থান নিয়ে আছে । এটি পরবর্তী যুগান্তরী নেট প্রযুক্তি ওয়েব 2.0 এর অংশ । উন্নত দেশগুলোতে 50%-70% ইন্টারনেট ইউজাররা কমপক্ষে একটি ব্লগ মেইনটেইন করে । চিনদেশে 37 মিলিয়ন ব্লগার আছে http://tinyurl.com/nnjau যারা প্রায় সবাই চায়নীজ ভাষায় ব্লগিং করে । টেকনোরাতির গবেষনায় (http://tinyurl.com/jgfc4) ব্লগের সংখা প্রতি ছয়মাসে দ্্বিগুন হচ্ছে । সেই তুলনায় জনসংখার দিক দিয়ে বিচার করলে বাংলাদেশী ব্লগারের সংখা এখনও অনেক কম ।

এখন আসছি বাংলা বগিংকে আরো জনপ্রিয় করার পিছনে যুক্তি ও উপায় গুলো সম্পর্কে । প্রথমত: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারনে অনেকেই ভাল লিখতে পারেননা । ইংরেজী চর্চায় আমরা যেমন গুরুত্ব দেই বাংলার পিছনে তেমন সময় ব্যয় করি না । লেখা হচ্ছে নিজের মত প্রকাশ করার একটি উপায় এবং ভাল লিখতে হলে চচ্র্চার প্রয়োজন , প্রয়োজন বেশী করে পরার। আমাদের জীবনে বই পড়ার চচ্র্চা কমে গেছে টিভির আগ্রাসনে । পত্রিকাটাও কিন্তু আমরা পড়ার সময় পাইনা ।

ইনটারনেট কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে আশির্বাদ স্বরুপ । আমি এমন সব পত্রিকা অনলাইনে পড়তে পারি যা নিজে হয়ত কোনদিন কিনে পড়তামনা ।আর যত বেশী পড়ব আমাদের তত বেশী মত তৈরি হবে । এবং মত প্রকাশের সহজ উপায় ব্লগে লেখা ।

অনেকে যারা সামহোয়ারইনের নতুন লেখকদের লেখার সমালোচনা করেন তারা ভাবেন না যে কেউ মায়ের পেট থেকে লেখা শিখে আসে না । কয়েকদিন যেতে দিন এদের লেখাও আপনাদের ভাল লাগবে । এবং যত বেশী মত হবে এবং এগুলো নিয়ে ডিবেট হবে তত বেশী করে আমাদের সমাজের সমস্যাগুলোর সমাধানের উপায় সৃস্টি হবে । আধ্যাপক আবদুললাহ আবু সাইদ "আলোকিত মানুষ" সৃষ্টির সাধনা করছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইগুলোকে জনগনের কাছে পৌছে দিয়ে । বাংলা ব্লগিং এর মাধ্যমে অনুরুপ কিছু করা কি সম্ভব নয়?

কিন্তু সমস্যা একখানেই । আমাদের দেশে দীর্ঘক্ষন অনলাইনে থাকার সামর্থ এখনও অনেকেরই নাই (বিশেষ করে ছাত্রসমাজের) । সাবমেরিন কেবলের কোন প্রভাব এখনও ত দেখছিনা । তবে আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো একটি কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে ব্লগ কর্নার বা অনুরুপ প্রচারের মাধ্যমে । আগ্রহ সৃস্টি করাটাই আসল ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী বলেছেন যে বাংলা চ্যাটিং এখনও বেশী জনপ্রিয় । আমি মনে করি যে সময়ের সাথে সাথে ব্লগিংও জনপ্রিয় হবে । কারন বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে হলে এছাড়া উপায় নেই ।

আরেকটা ব্যপার হচ্ছে যে ব্লগিং এর প্রযুক্তগত অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে । ওয়ারডপ্রেস, টাইপপ্যাড, ব্লগার ইত্যাদি প্রভাইডারের মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে প্রায় বিনা পয়সায় উন্নত ডিজাইনের কাষ্টমাইজড ওয়েবলগ বানানো । বাংলা ব্লগিংয়ের জন্য সামহোয়ার ইনের পাশাপাশি আরও লোকাল প্রভাইডার হয়ত ভবিষ্যতে আসবে ।

কাজেই আমি কিন্তু বাংলা ব্লগিংয়ের অফুরন্ত সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি । কিন্তু এর প্রসারে অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে হবে সবাইকেই, যে যেভাবে পারি ।

Wednesday, June 21, 2006

বার্লিন হলোকাস্ট মেমোরিয়াল

সাদিকের একটি পোষ্ট (লিনক: http://tinyurl.com/ruhdq) আমাকে লিখতে বসাল । এইতো দিন দশেক আগে সাদিকের সাথে হলোকাস্ট মেমোরিয়াল ও মিউজিয়াম দেখতে গেলাম । মিউজিয়ামটা এমন ভাবে সাজানো যে যেকোনো লোকের মনে ব্যাপারটা দারুন ভাবে নাড়া দেবে । আমারও মনটা অসম্ভব খারাপ হয়েছিল ।

মেমোরিয়ালটা ব্রান্ডেনবুর্গার গেটের কাছে অবস্থিত । এর ঠিক পাশেই নতুন আমেরিকান এমব্যাসি ভবন তৈরি হচ্ছে । এর বিশেষত্ব হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চতার 2711টা কনকৃট স্লাব যেগুলোর চারপাস দিয়ে হাটা যায় । এটি তৈরি করতে প্রায় 28 মিলিয়ন ইউরো লেগেছে । গত বছর মে মাসে প্রথম এটি ওপেন হয় । সম্প্রতি একটি ফুড কোর্ট এর পাশে তৈরি হয়েছে ।

এর তথ্যকেন্দ্র ও মিউজিয়ামটি মাটির নিচে অবস্থিত । এর বিভিন্ন অংশ খুব সাইন্টিফিক ভাবে সাজানো । প্রথমে রয়েছে নাতসিদের ইহুদি নিধন পলিসি সম্পর্কে একটি টুর (ছবি ও লেখা) ব্যকগ্রাউন্ডসহ।

তার পর রুম অফ ডাইমেনসনস, যেখানে একটি অন্ধকার রুমে হলোকাষ্ট ভিক্টিমদের 15টি ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট যা নাতসি নৃশংসতা সম্পর্কে ধারনা দেয় । মাটিতে বিছানো চিঠি বা চিরকুট স্পটলাইটে মাটির নিচ থেকে আলোকিত, অতিকষ্টে উৎস ও ব্যকগ্রাউন্ড পরা যায় । কিন্তু জ্বল জ্বল করছে বিষাদময় সত্য । আট বছরের ছোট মেয়ে লিখেছে: 'বাবা ওরা আমাদের মেরে ফেলবে । তোমাকে বুকে জড়াতে পারলামনা কিন্তু জেন আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি ।'

পরের সেকশন রুম অফ ফ্যামিলিস যেখানে ইউরোপের 15টি ইহুদি পরিবারের শুরু থেকে নাতসি ভিকটিম হওয়া পর্যন্ত বর্ননা করা হয়েছে স্থির ও চলমান চিত্র এবং বিভিন্ন ডকুমেন্টের মাধ্যমে । এখান থেকে বোঝা যায় যে তারা কতটা প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং কিভাবে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ।

তার পরে রয়েছে একটি বিশাল রুম যেখানে ইহুদি ভিকটিমদের নাম ও বায়োগ্রাফি পড়া হচ্ছে । সাথে সাথে চার দেয়ালে প্রজেক্ট হচ্ছে মৃতদের নাম এবং জন্ম ও মৃত্যুর সন । যদি সব কজন হলোকাষ্ট ভিক্টিমদের নাম একসাথে পড়া হয় তাহলে প্রায় সাড়ে ছ বছর লেগে যাবে । আন্দাজ করতে পারছেন কি পরিমান মানুষকে মারা হয়েছিল?

এই রুমের পাশেই রয়েছে সবার সুবিধার জন্যে সারি সারি কম্পিউটার টার্মিনাল যাতে ভিক্টিমদের ডাটাবেজ এক্সেস করা যায়। তিন মিলিয়নের উপর এন্ট্রি রয়েছে এই ডাটাবেজে (ইয়াদ ভাশেম, ইজরায়েলী) ।

এর পরে রয়েছে রুম অফ সাইটস যেখানে কনসেন্ট্রেশন ক্যম্প, ডিপোর্টেশন রুট ইত্যাদি স্পর্কে বিস্তারিত । প্রচুর হিস্টোরিকাল ফুটেজ, ছবি ও ডকুমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এতে । এক নাৎসি মেজর রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তার সুপিরিয়রকে, লাখো লোক মারার লিষ্ট এবং সাথে ম্যাপ কোথায় কত মারা হয়েছে । গর্বের সাথে উল্লেখ, একটি অনচল ইহূদি মুক্ত ।
এসব দেখার পরে একজন নিও নাৎসিদেরও মনে উপলব্ধি আশা বাধ্য যে পৃথিবীতে এত পাপ খুব কমই হয়েছে । আমার ও গায়ে কাটা দিয়ে উঠছিল ।

আমিও সাদিকের সাথে একমত যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রান দিয়েছে তাদের জন্যে এরকম একটা মেমোরিয়াল খুবই দরকার । মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় উদ্দোগ কিন্ত ট্রাডিশনাল ডিসপ্লে ও স্বল্প কনটেন্ট খুব কার্যকরী নয় । মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম যাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ শুধুই 'গন্ডগোলের সময়' ছিল তাদের নাড়া দেয়ার জন্যে এমন উদ্দোগ জরুরি । কত লাগবে? 200-250 কোটি টাকা । বাংলাদেশকি পারবেনা?

আমি আর সাদিক পরে গিয়েছিলাম বার্লিনের ইহূদি মিউজিয়ামে , আমার দেখা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ও ইন্টারএকটিভ একটা মিউজিয়াম। ওখানে গেলে বুঝতে পারা যায় কেন জার্মান জাতি ইহুদিদের উপর বিরুপ মনোভাব পোষন করত । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যকগ্রাউন্ড ও বাঙালী জাতি সস্পর্কে এমন মিউজিয়াম প্রয়োজন । এটি পরবর্তীতে লিখব ।

Tuesday, May 16, 2006

পডকাস্ট

আপনারা অনেকেই হয়ত পডকাস্ট (http://en.wikipedia.org/wiki/Podcast) সম্পর্কে জানেন । এটি হচ্ছে ব্লগের মত একটি Web 2.0 টুল যা মুলত মালটিমিডিয়া দিয়ে তৈরি । অডিও ব্লগ বা ভিডিও ব্লগ হচ্ছে পডকাস্ট এর বিভিন্ন মাধ্যম ।

আমার মতে বাংলা ব্লেগর মত অডিও ব্লগও আমরা সহজেই তৈরি করতে পারব । শুধু দরকার একটি মাইক্রোফোন, মালটিমিডিয়া এনাবলড কমপিউটার ও কিছু ফ্রি সফটওয়ার । ভিডিও ব্লগের জন্য দরকার ভিডিও ক্যামেরা ও অনেক ব্যান্ডউইথ যা বাংলাদেশে পাওয়া কঠিন ।

আপনারা অতনুর প্রথম বাংলা অডিও পডকাস্টটি শুনুন (http://tmiac.podomatic.com/) । আশা করি অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন ।

Monday, May 15, 2006

বাংলায় উইকিপিডিয়া

আপনারা নিশ্চয়ই ওপেন সোর্স বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার (http://en.wikipedia.org/) কথা জানেন । এর সুবিধা হচ্ছে যে কেউ একে সমৃদ্ধ করতে পারে ।

গত বছর থেকে বাংলায় একটি উইকিপিডিয়া (http://bn.wikipedia.org/) তৈরির চেষ্টা চলছে । কিন্তু এটি এখনও অনেক পিছিয়ে আছে কন্ট্রিবিউটরের অভাবে। বাংলা উইকিপিডিয়া ইউনিকোডভিত্তিক এবং ব্রাউজার ইনডিপেন্ডেন্ট বলে এতে লেখা খুবই সহজ । শুধু কিছু গনতান্ত্রিক প্যানেল এডিটর থাকে যারা এনট্রি গুলো পরিমার্জনা করে ।

তাই আপনারা যারা আগ্রহী অতিসত্তর এই উদ্দ্যোগে সামিল হোন । এর অন্যতম উদ্দ্যোক্তা রাগিব হাসান (কম্পিউটার বিঙান বিভাগ, ইলিনয়স ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা) সমপ্রতি বিবিসির 'ক্লিক অনলাইন' অনুষ্ঠানে বলেছেন যে এই বাংলা বর্ষের শেষে 10,000 নতুন বাংলা এনট্রি তিনি আশা করছেন । আপনারা চাইলে এটি অবশ্যই সম্ভব ।

গুরূত্বপুর্ন লিনকগুলো :

http://bn.wikipedia.org This is the main page

http://www.ragibhasan.com/wikipedia Here is a small tutorial written for new users

http://groups.yahoo.com/group/bangla_wiki This is a yahoo group opened for Bangla wikipedia

http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_Bangladesh-related_topics This is a list of BD related topics in the English wikipedia

Tuesday, April 25, 2006

ছেলে আর মেয়ের মধ্যে প্রেমহীন বন্ধুত্ব সম্ভব?

আপনারা যারা When Harry Met Sally ছবিটি দেখেছেন তারা হয়ত তর্ক করবেন যে এটা সম্ভব নয় । হ্যারী ও স্যালী যদিও অনেক বছর ধরে চেষ্টা করেছে তাদের বন্ধুতের ্বসম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে যৌনতাবিহীনভাবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পারে না ।

আবার যারা Lost in Translation ছবিটি দেখেছেন তারা মানবেন যে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে এক বিছানায় সারারাত গল্প করে কাটাতে পারে কোনরুপ শারীরিক আকর্ষন দ্্বারা বিঘনিত না হয়ে ।

আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেকেই হয়ত মানতেই চাইবেনা যে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে প্রেমহীন বন্ধুত্ব সম্ভব । আমি অনেক তথাকথিত প্রগতিশীল মানুষকেও দেখেছি ছেলে-মেয়ে সম্পর্ক নিয়ে মুখরোচক মন্তব্য করতে । এর জন্যে হয়ত অনেক ভাল বন্ধুতেরই অকাল পরিসমাপ্তি ঘটে । কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাষনের মধ্য দিয়েও এরুপ বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব । আমরা কি একটু উদারভাবে চিন্তা করতে পারিনা?

আপনারা কি ভাবছেন এ নিয়ে?

Thursday, April 06, 2006

মধ্য ইউরোপে বন্যা

এই বছর অতিরিক্ত বরফপাত এবং বসন্তের শুরুতেই অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত এর জন্যে মধ্য ইউরোপে বন্যা দেখা দিয়েছে । উচু পাহাড়ের বরফ দ্রূতহারে গলে যাওয়ায় দানিউব ও এলবে নদী উপচে প্রচুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে । চেক রিপাবলিকে সাতজন এবং স্লোভাকিয়ায় দুজন মারা গিয়েছে ।

টিভিতে জার্মানীর স্যক্সনি প্রদেশের বন্যার প্রকোপ দেখছিলাম । বন্যার দেশ থেকে আসা আমারতো দৃশ্যগুলো অপরিচিত নয় । তবে বুঝলাম যে বেশ ক্ষতি হয়েছে কারন সম্পদ যত আধুনিক তার মুল্যও তত বেশি । অবশ্য অনেকেরই ইনসুরেনস করা আছে এবং রাট্ট্র বলেছে পুনর্গঠনে সাহায্য করবে । ভাবলাম আমাদের দেশে কবে দুর্গতদের এরকম সাহায্য আশা করা যাবে?

ধনী দেশ হোক আর গরীব দেশ হোক প্রকৃতির ভয়াল থাবার কাছ থেকে কারুরি রেহাই নেই । আমাদের দেশে যদি প্রতি বছর বন্যা না হতো তাহলে আমাদের দেশ নিশচয়ই অর্থনৈতিকভাবে আরেকটুু উন্নত থাকত ।

Sunday, January 01, 2006

ওয়েবলগের জগত

সেটি ছিলো ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের কোন এক দিন । তখন ইরাক যুদ্ধের গরম খবরে পূর্ন পত্রিকাগুলো । হঠাৎ দেখলাম সালাম পাকশ এর ওয়েবলগ সম্পর্কে একটি লেখা । ওটি ছিলো বলগার এ হোস্ট করা । সালাম এবং অন্যান্যদের লেখা পড়ে আমার অন্য একটি জগৎ উন্মোচন হলো ।আমার মনে হলো আমারও অনেক কিছু বলার আছে । উৎসাহী আমি নিজেই একটি ওয়েবলগ শুরু করলাম 'তৃতিয় বিশ্বের চোখে' (পছন্দের লিংক দেখুন) ।

প্রথম দিকে আমার যাত্রা ছিল উদ্দেশ্যবিহীন । তারপর লক্ষ্য করলাম যে বাংলাদেশ সম্প র্কে বিদেশীদের তেমন একটা ধারনা নৈই । শুধু হেডলাইনে পড়া খারাপ খবরগুলো (বন্যা, দারিদ্র্য, মৌলবাদ) দিয়েই দেশের পরিচয় । এদেশের মানুষদের তো আর সেই ভুল ভাঙানোর তেমন সুযোগ নেই । তখন মনে হলো ওয়েবলগ হতে পারে বাংলাদেশীদের সেই কনঠস্ব র । আমি তাই সবসময়ই বাংলাদেশীদের ওয়েবলগকে স্বাগত জানাই এবং প্রমোট করার চেস্টা করি ।

আমি বাংলাদেশীদের ওয়েবলগের একটি সাম্প্রতিক তালিকাও রেখেছি আমার ওয়েবলগে। এর আগেও বাংলা ওয়েবলগ এর চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্নভাবে (পছন্দের লিংক দেখুন) । কিনতু সেগুলো তেমন আগায়নি ।

আমি সামহোয়্যার ইন এর এই উদ্দ্যোগকে স্বাগত জানাই । আমি আশা করি এটি অনেক বাংলা কনঠস্বরের কলকাকলিতে অচিরেই মুখরিত হবে ।