মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিতর্ক
একটি বিষয় নিয়ে আমাদের সবারই স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরী, বিশেষ করে যারা প্রবাসে আছেন বা অচিরেই যাদের ভিনদেশে ভ্রমণ করতে হবে তাদের। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এই বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা এবং এ নিয়ে সমস্ত গুজবকে উড়িয়ে দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করা।
আমরা এরকম শুনে আসছিলাম আগে থেকেই যে আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে কারও কাছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট না থাকলে তাকে বিদেশ ভ্রমণ করতে দেয়া হবে না। এ নিয়ে পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাংলাদেশ এই ডেডলাইন মিস করতে যাচ্ছে এ কথা আমরা সবাই জানি। ২০০৭ সালেই ভোটার রেজিস্ট্রেশন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের সাথে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হবার কথা ছিল, কিন্তু আমরা যে কারণে জাতিগতভাবে অনেক ট্রেনই মিস করি, এ ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি।
সর্বশেষ সংবাদ হচ্ছে সরকারের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্প অবশেষে চালু হচ্ছে (প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিতর্কে যাব না) এবং এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে এই নতুন পাসপোর্টের জন্যে আবেদন তারা গ্রহণ করবে। তবে দু:সংবাদ হচ্ছে বাংলাদেশের মোট পাসপোর্ট সংখ্যা ৬৬ লাখ এবং এই পরিমাণ পাসপোর্ট প্রতিস্থাপন করতে প্রায় তিন বছর লাগবে। কিন্তু এখন যেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ যে পহেলা এপ্রিলের পর আসলে কি হবে।
আমি এ নিয়ে বেশ কিছু খোঁজ খবর করেছি। তাতে দেখেছি যে ভুল তথ্যে ভরা বিভিন্ন রিপোর্ট এবং এক শ্রেণীর লোক এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। বিতর্কিত হিটখোর সাংবাদিক সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী তার অনলাইন ব্লিটজ পত্রিকায় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়ে বসলেন যে "কোন বাংলাদেশী এপ্রিলের পর ভ্রমণ করতে পারবেন না"। জন্ডিস সাংবাদিকতার চুড়ান্ত উদাহরণ এটি - কারণ উনি অনেক গল্প ফেঁদেছেন।
এ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক রিপোর্ট হয়েছে কিন্তু প্রকৃত সত্য কম স্থানেই উল্লেখিত হয়েছে (আমাকে কেউ কি এ সংক্রান্ত কোন সঠিক রিপোর্টের লিন্ক দিতে পারেন?)। সত্যটি হচ্ছে এই ডেডলাইনটির প্রণেতা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (বাংলাদেশ যার সদস্য)। এটি বলেছে যে এর সদস্য দেশগুলোকে ২০১০ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা শুরু করতে হবে।
মেশিন রিডেবল নয় এমন পাসপোর্ট কিন্তু তামাদি হয়ে যাচ্ছে না যতদিন না পর্যন্ত এর বৈধতা আছে। তবে এখন পর্যন্ত একটি ডেডলাইনের কথা শোনা যাচ্ছে - ২০১৫ সালের ২৪শে নভেম্বর (তথ্য যাচাই করতে সূত্র দরকার) - এর পরে ন্যূনতম মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থাকতে হবে একজন ভ্রমণকারীর।
এবং যে বিষয়টি অধিকাংশ পত্রিকার রিপোর্টই এড়িয়ে গেছে যে কাকে ভ্রমণ করতে দেয়া হবে এবং কাকে দেয়া হবে না, এই এক্তিয়ার কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর। যেমন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসা ওয়েইভার দেশগুলোর নাগরিকদের জন্যে (যে সব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে ভিসা লাগে না) বাধ্যতা মূলক মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ডেডলাইন প্রথমে ঘোষণা করেছিল ২০০৩ সালে যা পরবর্তীতে কয়েকবার পেছানো হয়। অবশেষে ২০শে জানুয়ারী ২০১০ থেকে এই সিদ্ধান্তটি বলবৎ হয়। তবে যাদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নেই তাদের ভিসা নিয়ে প্রবেশ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে এইসব ডেডলাইন পরিবর্তন হতে পারে এবং দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। আর বাংলাদেশীরা ভ্রমণ করতে পারবে না এইসব জুজুর ভয় কারা দেখাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের খোঁজ নেয়া দরকার।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সহসাই আমাদের হাতে আসছে না। এই নতুন পাসপোর্ট প্রণয়নে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত সংস্কার দরকার। বাংলাদেশের ৬৬টি মিশন ও কনসুলেটে বসানো দরকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণ- যেসব সংক্রান্ত কোন উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি যদিও সরকারের এ নিয়ে পরিকল্পনা আছে।
তবে সবচেয়ে দু:খের বিষয় হচ্ছে এর পরবর্তী প্রযুক্তি আরএফডি চিপসহ বায়েমেট্রিক ই-পাসপোর্ট চলে এসেছে এবং ২০১৪ সালের পর আমরা আবার এরকম একটি ডেডলাইনের মুখোমুখি হব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত - পাকিস্তান অচিরেই ই-পাসপোর্ট দেয়া শুরু করবে। আমরা আবার ট্রেন মিস করব এবং অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হব।
(ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে)
আমরা এরকম শুনে আসছিলাম আগে থেকেই যে আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে কারও কাছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট না থাকলে তাকে বিদেশ ভ্রমণ করতে দেয়া হবে না। এ নিয়ে পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাংলাদেশ এই ডেডলাইন মিস করতে যাচ্ছে এ কথা আমরা সবাই জানি। ২০০৭ সালেই ভোটার রেজিস্ট্রেশন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের সাথে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হবার কথা ছিল, কিন্তু আমরা যে কারণে জাতিগতভাবে অনেক ট্রেনই মিস করি, এ ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি।
সর্বশেষ সংবাদ হচ্ছে সরকারের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্প অবশেষে চালু হচ্ছে (প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিতর্কে যাব না) এবং এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে এই নতুন পাসপোর্টের জন্যে আবেদন তারা গ্রহণ করবে। তবে দু:সংবাদ হচ্ছে বাংলাদেশের মোট পাসপোর্ট সংখ্যা ৬৬ লাখ এবং এই পরিমাণ পাসপোর্ট প্রতিস্থাপন করতে প্রায় তিন বছর লাগবে। কিন্তু এখন যেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ যে পহেলা এপ্রিলের পর আসলে কি হবে।
আমি এ নিয়ে বেশ কিছু খোঁজ খবর করেছি। তাতে দেখেছি যে ভুল তথ্যে ভরা বিভিন্ন রিপোর্ট এবং এক শ্রেণীর লোক এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। বিতর্কিত হিটখোর সাংবাদিক সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী তার অনলাইন ব্লিটজ পত্রিকায় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়ে বসলেন যে "কোন বাংলাদেশী এপ্রিলের পর ভ্রমণ করতে পারবেন না"। জন্ডিস সাংবাদিকতার চুড়ান্ত উদাহরণ এটি - কারণ উনি অনেক গল্প ফেঁদেছেন।
এ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক রিপোর্ট হয়েছে কিন্তু প্রকৃত সত্য কম স্থানেই উল্লেখিত হয়েছে (আমাকে কেউ কি এ সংক্রান্ত কোন সঠিক রিপোর্টের লিন্ক দিতে পারেন?)। সত্যটি হচ্ছে এই ডেডলাইনটির প্রণেতা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (বাংলাদেশ যার সদস্য)। এটি বলেছে যে এর সদস্য দেশগুলোকে ২০১০ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা শুরু করতে হবে।
মেশিন রিডেবল নয় এমন পাসপোর্ট কিন্তু তামাদি হয়ে যাচ্ছে না যতদিন না পর্যন্ত এর বৈধতা আছে। তবে এখন পর্যন্ত একটি ডেডলাইনের কথা শোনা যাচ্ছে - ২০১৫ সালের ২৪শে নভেম্বর (তথ্য যাচাই করতে সূত্র দরকার) - এর পরে ন্যূনতম মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থাকতে হবে একজন ভ্রমণকারীর।
এবং যে বিষয়টি অধিকাংশ পত্রিকার রিপোর্টই এড়িয়ে গেছে যে কাকে ভ্রমণ করতে দেয়া হবে এবং কাকে দেয়া হবে না, এই এক্তিয়ার কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর। যেমন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসা ওয়েইভার দেশগুলোর নাগরিকদের জন্যে (যে সব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে ভিসা লাগে না) বাধ্যতা মূলক মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ডেডলাইন প্রথমে ঘোষণা করেছিল ২০০৩ সালে যা পরবর্তীতে কয়েকবার পেছানো হয়। অবশেষে ২০শে জানুয়ারী ২০১০ থেকে এই সিদ্ধান্তটি বলবৎ হয়। তবে যাদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নেই তাদের ভিসা নিয়ে প্রবেশ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে এইসব ডেডলাইন পরিবর্তন হতে পারে এবং দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। আর বাংলাদেশীরা ভ্রমণ করতে পারবে না এইসব জুজুর ভয় কারা দেখাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের খোঁজ নেয়া দরকার।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সহসাই আমাদের হাতে আসছে না। এই নতুন পাসপোর্ট প্রণয়নে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত সংস্কার দরকার। বাংলাদেশের ৬৬টি মিশন ও কনসুলেটে বসানো দরকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণ- যেসব সংক্রান্ত কোন উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি যদিও সরকারের এ নিয়ে পরিকল্পনা আছে।
তবে সবচেয়ে দু:খের বিষয় হচ্ছে এর পরবর্তী প্রযুক্তি আরএফডি চিপসহ বায়েমেট্রিক ই-পাসপোর্ট চলে এসেছে এবং ২০১৪ সালের পর আমরা আবার এরকম একটি ডেডলাইনের মুখোমুখি হব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত - পাকিস্তান অচিরেই ই-পাসপোর্ট দেয়া শুরু করবে। আমরা আবার ট্রেন মিস করব এবং অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হব।
(ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে)
No comments:
Post a Comment