Tuesday, March 24, 2009

সিলভিয়া প্লাথের কবিতার অনুবাদ

সিলভিয়া প্লাথ ছেলে নিকোলাস হিউজের সাথে(ছবিতে সিলভিয়া প্লাথ ছেলে নিকোলাস হিউজের সাথে)
 
কবি সিলভিয়া প্লাথ সম্প্রতি আবার সংবাদে এসেছেন তার ৪৬ বছর বয়সী ছেলের আত্মহত্যার খবরের সাথে। এই অভিমানী কবিও ১৯৬৩ সালে ৩০ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন। তার স্বামী ছিলেন ব্রিটিশ কবি টেড হিউজ।

ইমরুল হাসান সিলভিয়ার একটি সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছিলেন সচলায়তনে। তার নামকরা কবিতা "Daddy" এর অনুবাদ করেছি আমি যেটি নিচে দেয়া হল। মূল কবিতাটি পাবেন এখানে

বাবা
তুমি আর, তুমি আর পরোনা
সেই কালো জুতা।
বাস করেছি আমি যার মধ্যে
তোমার পায়ের মতো করে,
রিক্ত, ম্লান হয়ে, ত্রিশ বছর ধরে।
সাহস পর্যন্ত হয়নি হাঁচার বা নিশ্বাস ফেলার।
বাবা, তোমাকে আমার মেরে ফেলতে হত।
কিন্তু চলে গেলে তুমি আমার সময়ের আগেই।
এক বস্তা ইশ্বর, মার্বেলের মত ভারী,
ভয়ানক মূর্তি এবং বিরাট ধুসর এক পা নিয়েই
এবং এক বিশাল মাথা খেয়ালী অতলান্তিকের দিকে,
যেখানে নীলের উপর সীমের মত সবুজ বর্ষিত হয়
সুন্দর নসেট সৈকতের পানিতে।
তোমা থেকে মুক্তির জন্যে আমি প্রার্থনা করতাম,
আহ, তুমি।
জার্মান ভাষায়, সেই পোলিশ শহরে যাকে
দুরমুজ দিয়ে সমান করে দেয়া হয়েছিল
কারন যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ।
সেই শহরের নামটি খুবই পরিচিত।
আমার পোলিশ বন্ধু
বলেছে এরকম আছে কয়েক ডজন।
তাই আমি বলতে পারব না কখনই
কোথায় তুমি পা মাড়িয়েছ,
কোথায় তোমার শেকড়।
পারিনি বলতে কথা তোমার সাথে কখনই,
জিহ্বা আটকে গেছে চোয়ালে,
আটকে গেছে কাঁটা তারের ফাঁদে।
আমি, আমি, আমি, আমি
কথাই বলতে পারতাম না।
আমার মনে হত প্রতিটি জার্মানই তুমি
এবং অশ্রাব্য তোমার ভাষা,
একটি ইন্জিন, একটি ইন্জিন যেন
আমাকে বিরক্ত করছে ইহুদীদের মত,
একজন ইহুদী, দাখাউ, আউসভিৎজ, বেলসেনে
আমি কথা বলা শুরু করলাম ইহুদীদের মত,
আমার মনে হয় আমি হয়ত ইহুদী।
টিরল অঞ্চলের তুষারপাত, কিংবা ভিয়েনার স্বচ্ছ বিয়ার
সত্যি নয়, খাঁটি নয়, বনেদী নয় তোমার কাছে
আমার যাযাবর পূর্বপুরুষ এবং আমার অদ্ভুত ভাগ্য
এবং আমার নকল ব্যাগ, আমার সাধারণ ব্যাগ
আমি হয়ত কিঞ্চিত পরিমাণে ইহুদী।
আমি তোমাকে সবসময়ই ভয় পেতাম
তোমার যুদ্ধবিমান, তোমার গোয়েবলীয় প্রচার
তোমার পরিপাটি গোঁফ
তোমার আর্য চোখ, উজ্জ্বল নীল
পান্জার ম্যান, পান্জার ম্যান, ওহ তুমি।
ইশ্বর নয়, কিন্তু একটি সোয়াস্তিকা চিহ্ন
নিকষ কালো, কোন আলো তা ভেদ করতে পারে না।
প্রতিটি নারীই একজন ফ্যাসিবাদীকে পুজা করে,
মুখ মাড়ানো সেই জুতাকে, সেই নিষ্ঠুরকে
নিষ্ঠুর হৃদয় তোমার মত এক পশুকে।
তুমি ব্লাকবোর্ডের সামনে দাড়িয়ে বাবা,
যে ছবিটি আমার কাছে আছে সেখানে।
তোমার থুতনিতে একটি খাঁজ আছে যেখানে
তোমার জুতা থাকার কথা ছিল।
কিন্তু কম শয়তান মনে হচ্ছে না তার জন্যে।
না, সেই কৃষ্ণাঙ্গের চেয়েও কম না যে
আমার সুন্দর হৃদয় দুটুকরো করে দিয়েছিল।
আমার বয়স ছিল দশ যখন
ওরা তোমাকে কবর দিল।
বিশ বছর বয়সে আমি মরতে চেয়েছিলাম
এবং ফিরতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে, কাছে।
আমার মনে হয়েছিল তোমার হাড় দিয়েও হবে।
কিন্তু তারা আমাকে থলে থেকে বের করে
এবং আমাকে আঁঠা দিয়ে জুড়ে দেয়।
তখন আমি জানি আমার কি করতে হবে,
আমি তোমার একটি মূর্তি বানাই।
একটি কৃষ্ণাঙ্গ মুর্তি মাইন কাম্ফের মত যার চেহারা।
এবং নিপীড়নের প্রতি ভালোবাসা জন্মালো
এবং আমি বলেছি আমি রাজী, আমি রাজী।
তাই বাবা, আমার অবশেষে মুক্তি হয়েছে
সেই কালো টেলিফোনটির তার উপড়ে ফেলা হয়েছে,
সেই কন্ঠ আর আমাকে বিরক্ত করবে না।
আমি যদি একজনকে খুন করে থাকি
তাহলে কিন্তু দুজনকেই শেষ করে দিয়েছি।
সেই রক্তচোষা যে তোমার প্রতিমূর্তি হয়ে এসেছিল
এবং বছরখানেক ধরে আমার রক্ত চুষেছিল,
সাত বছর ধরে, যদি তুমি জানতে চাও।
বাবা, তুমি এখন শুতে পার।
তোমার কালো হৃদয়ে এখন একটি লম্বা পেরেক।
গ্রামের লোকজন কখনই
দেখতে পারত না তোমাকে,
তারা এখন খুশীতে নাচছে এবং
পদাঘাত করছে তোমাকে।
তারা সবসময়ই জানত তুমিই...।
বাবা, বাবা, ওহ জালিম বাবা আমি মুক্তি পেয়েছি।
সিলভিয়ার নিজ কন্ঠে কবিতাটি শুনুন:



ছবি: টাইমস অনলাইন এর সৌজন্যে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

3 comments:

Krishnadas B said...
This comment has been removed by a blog administrator.
Krishnadas B said...

APNAR ANUBAADTI ABOSSOI ATYANTA NIMNO MAANER.TOBE, PROCHESTATIKE SAADHUBAAD JAANAI.APNI KHUB JORURI AKTA KAAJ KORECHHEN.EIMUHURTE ETA AMAR KHUB PRAYOJON CHHILO.DHANYABAAD.VALO THAKBEN.

Rezwan said...

ধন্যবাদ আপনার অকপট ফিডব্যাকের জন্যে। অনুবাদটি নিজের জন্যেই করা - আর আমি নিজে কবি নই - তাই হয়ত শিল্পোত্তীর্ণ হয়নি আপনার কাছে। আপনার কোন অংশগুলো নিম্নমানের মনে হয়েছে জানালে বাধিত হব। কিরকম হলে ঠিক হত সেটিও অনুগ্রহ করে জানাবেন।

রোমান হরফে বাংলা লেখা আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে। আশা করি ভবিষ্যতে কষ্ট করে বাংলা হরফেই লিখবেন। ধন্যবাদ।