Sunday, March 29, 2009

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধে আন্তর্জাতিক চাপ

স্বাধীন বাংলাদেশে কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো না, কেন পাকিস্তানে টিক্কা খানরা গণহত্যার প্রাইজ হিসেবে পরে মন্ত্রী হবার সুযোগ পেয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন পেয়েছে সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অনেকেরই অজানা।

২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭১, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান বলেন, "কোন যুদ্ধাপরাধী আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা। এমনকি গনহত্যা এবং অত্যাচারে জড়িত পাকিস্তানী সেনাসদস্যরাও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।" শেখ মুজিবর রহমান এবং ইন্দিরা গান্ধীর এক সভা শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ভারত সকল সহয়তা প্রদান করবে। - (সূত্র)

তবে টু্করো টুকরো কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় যে ভারতের তত্বাবধানে থাকা যুদ্ধবন্দীদের কেন তৎকালীন সরকার বিচার করতে পারেন নি। প্রথমত:

এর পেছনে আন্তর্জাতিক চাপ একটা বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামের খোলা ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশ্যে ৫ জন অপরাধীর মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন টিভি ও পত্রিকার কল্যাণে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। এই ঘটনাকে নিজেদের অনুকুলে কাজে লাগায় পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ঘটনার হোতা কাদের সিদ্দিকী স্পষ্টই বলেছেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়েছিলো দুজন অবাঙালী কিশোরীকে অপহরণ করার সময়। এবং মৃত্যুদন্ড পাওয়ারা কেউই অবাঙালী নয়।

এসব যুদ্ধাপরাধীকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তড়িত উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিয়াজী ও রাও ফরমান আলীর মতো মাথাগুলোকে ২১ ডিসেম্বর উড়িয়ে নেওয়া হয় কলকাতা। তিন সপ্তাহের এক বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ৮০টি ট্রেন করে সমস্ত যুদ্ধবন্দীদের সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়।
- অমি রহমান পিয়াল

১৯৭২ সালের ২ জুলাই স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে একটি লাইনও নেই। কোথাও বলা নেই যে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হবে বা বিচার হবে না।

সে সময় ভারতের কাছে বন্দী ছিল ৯৩ হাজার যুদ্ধাপরাধী। এর মধ্যে ৮০ হাজার সামরিক এবং বাকিরা বেসামরিক ব্যক্তি।
সবাইকে পাকিস্তান নিজ দেশে নিয়ে যায়। কোনো চুক্তির আওতায় না বরং ভারত তাদের ছেড়ে দিয়েছিল সৌহার্দের নিদর্শন হিসাবে। ভারত যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চায় তারই নিদর্শন হিসাবে ভারত এই সৌহার্দ দেখায়।
- শওকত হোসেন মাসুম

"১৯৭৩ সালের ৫-৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধান বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের একটি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। .... মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের নেতৃত্বে সৌদি আরবের রাজা ফয়সাল, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেডিয়েন এর সহযোগিতায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যার মুলে ছিল ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচারে বাংলাদেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলো এবং এজন্য তখনো পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে নাই । আর পাকিস্তানের মিত্র হিসাবে চীন বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে যোগদানে ভেটো প্রদান করছে । এর মধ্যে চীন পুনরায় জানিয়ে দেয় "After resolution of the war trials issue, Peking will recognise Dacca, and the way will be open for Bangladesh to be admitted to the United Nations" (১৮) ।

(১৫ ই ডিসেম্বর ১৯৭৩) আন্তর্জাতিক আদালত থেকে পাকিস্তানের মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আরব লীগ নেতৃবৃন্দের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। এবার আরব লীগ নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করেন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান করার জন্য । এর জবাবে জুলফিকার আলী ভূট্টো জানান যে বাংলাদেশ ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করলেই কেবলমাত্র পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, সৌদি রাজা ফয়সাল এবং জর্ডানের রাজা হুসেইন এর উদ্যোগে সাতটি মুসলিম দেশের প্রতিনিধি ঢাকা সফর করেন ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজী করাতে । কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে কোন শর্তসাপেক্ষে পাকিস্তানের স্বীকৃতি গ্রহণে অস্বীকার করেন এবং এই বিষয়ে আরো আলোচনা প্রয়োজন বলে অভিমত দেন। - মিরাজ

এর পরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ১৯৪৪ সালের পর দ্বিতীয় প্রাণহারী দুর্ভিক্ষের কবলে পরে। ১৯৭৪ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত এই দুর্ভিক্ষের কারন হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ (সাইক্লোন, খরা ও বন্যা) এর কথা বলা হলেও আসলে এর পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সাহায্যের রাজনীতি। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সমাজতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং পাকিস্তানের থেকে আমেরিকার উপর চাপ ছিল যুদ্ধপরাধী ইস্যু ধামাচাপা দেয়ার জন্যে। তাই বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য সাহায্যের জাহাজ ঘুরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ লোক খাদ্যের অভাবে মারা যায়।

তৎকালীন সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২৬০০০ লোক মৃত্যুবরন করলেও আসলে মারা গেছেন লাখ লাখ।অস্ট্রেলিয়ান (ধন্যবাদ ফাহমিদুল শুধরে দেবার জন্যে) সাংবাদিক জন পিলগার একটি ডকুমেন্টারীতে দেখিয়েছেন কিভাবে নিক্সনের পলিটিক্স লাখ লাখ বাঙালীর মৃত্যুর কারন হয়।






গ্লোবাল হাঙ্গার এলায়েন্সের দ্বেবিন্দর শর্মা বলেছেন :

নবীন বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের দুর্গতির সময় যুক্তরাষ্ট্র ২.২ মিলিয়ন টন খাদ্য সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয় পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেয়ার জন্যে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

No comments: