Monday, January 15, 2007

পড়ছি স্মৃতি: ১৯৭১ সিরিজ

পাকিস্তানি ঘাতকবাহিনী ও তাদের দোসররা বাঙালীদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তার একটি গুরুত্মপুর্ন দলিল হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত "স্মৃতি: ১৯৭১ সিরিজ"। ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত এ সিরিজটির প্রথম থেকে ১১তম খন্ড পর্যন্ত (৬ষ্ঠ বাদে) ১০টি আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাধারন মানুষ ও বুদ্ধিজীবিদের পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষের বর্ননায় তাদের দেশপ্রেম ও কি পরিস্থিতিতে তারা শহীদ হয়েছেন তার মর্মস্পর্শী বিবরন আছে এই বইগুলোতে। কারো যদি পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের (প্রায় ৩৫০০০ লোক ইস্ট পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যানস দ্্বারা গঠিত) সম্পর্কে বিন্দু মাত্র সন্দেহ থাকে তাহলে সিরিজটি পড়ে দেখবেন দয়া করে।

দেখবেন রাজাকার শুধুমাত্র বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের অধিকারী নয়, এরা আমাদের আশে পাশেরই লোক, কারো প্রতিবেশী বা ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই ধরনের লোক আজও এদেশে আছে যারা অপরের ভালো সহ্য করতে পারেনা। সুযোগ পেলেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায়। দেশের উন্নতির চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও মতবাদ প্রতিষ্ঠাই তাদের কাছে মূখ্য। এদের চেনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

আমরা যেন স্বার্থপর না হই। এইসব শহীদদের রক্তদান আমরা যেন ভুলে না যাই।

Saturday, December 23, 2006

ডায়রির পাতা থেকে: কোন এক ১৮ই আগষ্ট

অভিশপ্ত আগ্নেয়গিরির প্রচন্ড বিস্ফোরন! কততম এটি? জানিনা। জেনে কি লাভ? জ্বালামুখ বন্ধ হয়ে হৃদ- সে তো হাজার বছরেও হবেনা। ইতিহাস ঘেটে তাই লাভ নেই। অতএব জ্বলে যাও হে আগ্নেয়গিরি।

কিন্তু এই বিস্ফোরনে বড় এক ক্ষতি হয়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ একটি নয়। সহসা সবার সামনে সত্য ঘোমটা উন্মোচন করে দাড়িয়ে। সত্য যে আগুনের মত নির্মম, শুধুই পোড়ায়।

আমিও তো রবীন্দ্রনাথের মত বিশ্বাস করতে চেয়েছি যে "মানুষে অবিশ্বাস করা পাপ।" কিন্তু একই আগুনে জ্বলা সাথী বলছে অবিশ্বাস্য সব কথা। এরপর সেই বিস্ফোরন । লাভার স্বরুপে ধ্বংসলীলা শুরু। লাভাকে যে মাটির গভীরে বেধে রাখা যায় না। লাভার গন্তব্য সে নিজেই জানেনা। সে যে জ্বালায়, পোড়ায়; নিজে জ্বলে।

লাভাতে কি বিশ্বাস রাখা যায় এরপর?

Tuesday, December 19, 2006

হোম, সুইট হোম

দিল্লি এবং কোলকাতা এয়ারপোর্টের অব্যবস্থাপনা, করাপশন এবং দৈন্যতা দেখার পরে ঝকঝকে তকতকে, ভোগান্তিমুক্ত জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবনদর। আমার প্রিয় বাংলাদেশ। ট্রাফিক জ্যাম, গ্রামিন ব্যাংকের অতি বিজ্ঞাপন ইত্যাদি কিছুই আর খারাপ লাগছিল না। দশ মাস পরে বাড়িতে ফিরে লুঙী পরে আয়েশ করে আড্ডা দেয়া। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। মা-বাবার বুকে প্রশান্তি । বোনের মুখে হাসি। ভাইয়ের কাছ থেকে হাল-হকিকত জানা।

চিরকালের জন্যে আমার ঘর আমার দেশ এমন থাক ।

Saturday, December 16, 2006

সামহোয়ার ইন বাংলা ব্লগের এক বছর: আমাদের অর্জন

বিজয় দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ।

আজ সারা দিন গ্লোবাল ভয়েসের দিল্লি সামিটে ছিলাম । গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন হচ্ছে ব্লগারদের জাতিসংঘ কারন এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লগারদের লেখা প্রমোট করা হয়। এর ৩৫ জন লেখক,কন্ট্রিবিউটর (বিভিন্ন দেশের) এবং হোস্ট নেশন ভারতের অনেক ব্লগার, সাংবাদিক এখানে উপস্থিত ছিলেন।

২ বছর আগে হার্ভার্ড ল সকুলের বার্কম্যান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারনেট এন্ড টেকনোলজির পৃষ্ঠোপোষকতায় কয়েকজন ব্লগারের উদ্যোগে গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন যাত্রা শুরু করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ক্ষেত্র তৈরী করা যেখানে বিশ্বের যে কেউ তার মতামত প্রকাশ করতে পারবে এবং যে কেউ তা পড়তে পারবে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লগাররা তাদের অনচলের বিভিন্ন ব্লগ নিরপেক্ষ ভাবে হাইলাইট করে যাতে বিভিন্ন দেশ এবং ভাষার মানুষের মধ্যে সেতুবনধন তৈরি হয় ।

আমার সৌভাগ্য হয়েছে এখানকার একজন লেখক হিসাবে বাংলাদেশী ব্লগারদের তুলে ধরার। আজকে সকালে আউটরিচ সেসনে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে ব্লগকে আরও বেশি সংখক লোকের কাছে পৌছে দেয়া যায়।

আমি গর্বের সাথে বাঁধ ভাঙার আওয়াজের কথা বলেছি। এটি আমাদের মাতৃভাষায় বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। গত বিজয় দিবসে সামহোয়ার ইন বাংলা ব্লগ শুরু হয়েছিল। প্রায় ৩৫০০ ব্লগার এবং দিনপ্রতি গড়পড়তা ৫০০০০ পাঠকের পদচারনায় ব্লগটি মুখরিত। আজ বিজয় দিবসে বাঁধ ভাঙার আওয়াজের জন্মদিন। আজ আমাদের দ্বিগুন আনন্দ ।

Thursday, December 14, 2006

মেঘের বেশে আকাশ দেশে

আমি এখন ১০৬৬৮ মিটার উচুঁতে প্লেনে বসে লিখছি । ৯২৫ কিমি গতিতে প্লেন চলছে ইরানের উপর দিয়ে। যাচ্ছি দিল্লি হয়ে দেশে। খুব কম সময় থাকব ।

প্লেনে বসে ব্লগ পড়তে পারছি ভাবতেই ভাল লাগছে। লুফথান্সা এই ফিচারটি বন্ধ করে দিচ্ছে অচিরেই।

Sunday, December 10, 2006

নিজেকে খুঁজি

সাদিকের অজানা পাঁচের পাল্লায় ইচ্ছে করেই পরলাম । এ যেন অনেকদিন পরে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করছি।

১) বাবা-মা দুই দিক থেকেই আমি খানদানী ঢাকাইয়া। জন্মসুত্রে চাঁটগাইয়া । আক্ষেপ এই দুটি আন্চলিক ভাষার কোনটিই পারিনা। তবে আগ্রহ নিয়ে ইংরেজী ছাড়া আরও দুটি বিদেশী ভাষা শিখেছি।

২) কিছুদিন গান শিখেছি এটি জেনেই যে কোনদিন ভাল শিল্পী হতে পারব না। আমার ওস্তাদ আশা দিয়ে বলেছিলেন আর কিছু না হোক গানের সুরটাতো বুঁঝতে পারবে। তাই তাকে সেলাম।

৩) মনচনাটকে পদচারনা ছিল বেশ কিছুদিন । অভিনয়ের চেয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে ও আড্ডা দিতেই বেশী ভাল লাগতো। কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় করে বুঝেছি এ দিকে আমার পা না মাড়ানোই ভালো।

৪) জীবনে কোনদিন বিদেশের কোন ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামে নাম লেখাইনি । সারাজীবনের জন্যে দেশকে পর করে দেব এটা ভাবতেই পারিনা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে এখন অবস্থান করলেও জানি একসময় ফিরবই। সে ভাবনাই আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

৫) জীবনে হিরোইক কিছু না করতে পারলেও একটি জিনিষ পেরেছি, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে। পাড়ার কয়েক বন্ধুর সাথে রাতদিন মেলামেশা। এক সকালে ফিশফাস কথা, সবাই যাচ্ছে বেশ্যালয়ে। আমি বললাম, যাবনা। বন্ধুরা ধমক দিল, টিজ করল। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনঢ়। পরবর্তীতে তাদের সাথে আর সেই অন্তরঙতা ছিলনা। তারা তাদের মত, আমি আমার মত। ভাল মন্দ নিজেরই বুঝতে হয় এবং ইচ্ছা করলেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।

Saturday, November 18, 2006

আমি বলি ঠিক আছে

সেদিন গেলাম বার্লিনের ভারতীয় দুতাবাস ও ডয়েশে ভেলে আয়োজিত একটি ক্লাসিকাল কনসার্ট অনুষ্ঠানে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো এদেশেও ভারত সম্পর্কে একটি ইলিউশন কাজ করে।

ডয়েশে সিম্ফনি অর্কেষ্ট্রা কিছুদিন আগে ভারতে গিয়ে ওদেশের শাস্ত্রীয় সঙীত সম্পর্কে ধারনা নিয়ে এসেছ। তারা দুই সংস্কৃতির মধ্যে সেতু বন্ধনের ডাক দিয়ে অনুষ্ঠানটিতে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্র দিয়ে ভারতীয় ধুন তোলার চেষ্টা করলো। চেষ্টা করলো বললাম কারন ব্যাপারটি অনেক দর্শকের কাছেই শিল্পোত্তীর্ন হয়নি। কম্পোজার সেলসির নোটে ভায়োলিন আর চেলো দিয়ে মন্দিরের শাঁখের আওয়াজ! বড্ড বেসুরো আর উচচকিত ঠেকেছে। তবে কম্পোজার সন্দীপ ভগবতী ও জন মায়ারের সুরে ভায়োলিনে মেডিটেশন ও ক্লারিনেটে রাগ সঙীত তোলার চেষ্টা কিছু যায়গায় ভাল লেগেছে।

এসব শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল সঙীতের সাথে বাদ্য যন্ত্রের গভীর সম্পর্ক আছে। এদুয়ের সহাবস্থান যেখানে অনুপস্থিত সেখানে সঙীতের সেই মাধুর্য কি পাওয়া যায়? অথচ পনিডত রবি শনকর, আনন্দ শনকর পশ্চিমা যন্ত্রের সংযোগে অনেক ফিউশন সঙীত করেছেন। সেগুলো ভালো হয়েছে কারন হয়ত তাদের দুই ধাঁচের সঙীতেই বেশ দখল আছে।শেষে মোজার্ট তার স্বরুপে ফিরে এসে দর্শকদের কিছুটা হলেও মোহিত করলেন। বধু বলছিল পাশ থেকে যদি মোজার্ট এর সুর তোলা হয় সেতারে তবে কেমন হবে? নিশ্চয়ই এরকম অদভুত কিছু হবে ।

তবে আমি এক্সপেরিমেন্টের বিরোধী নই । হোক এরকম আরও সেতু বন্ধন । উঠুক বাউলের একতারের সুর 'চেলো'তে। অথবা বাখ মোজার্ট সেতারে। 'জাত যায় জাত যায় লোকে বলে, আমি বলি ঠিক আছে'।