জাকার্তা বার্তা: প্রাকৃতিক সম্পদ ও দেশের অর্থনীতি
বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল জাকার্তা শহরে। ইন্দোনেশিয়াকে একটু একটু করে ভাল লাগতে শুরু করেছে। কারণ দেশটির মূল সৌন্দর্য রাজধানীর বাইরে এবং ইতিমধ্যে জাকার্তার আশে পাশে বেশ কয়েকটি সুন্দর জায়গায় যাওয়া হয়েছে। সেইসব সম্পর্কে লেখা ও ছবি পরবর্তী পর্বের জন্যে তোলা রইল। আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে লিখছি।
আগেই বলেছিলাম যে জাকার্তার সাথে বাংলাদেশের অনেক মিল। তবে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভাল। এর একটি নমুনা হচ্ছে এ দেশে প্রচুর গাড়ি এবং মটর সাইকেল আর তাদের অধিকাংশই নিজেদের দেশে সংযোজন করা। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাকার্তা শহরে (ঢাকা শহরের দ্বিগুণ আয়তন) প্রায় ৯৫ লাখ নিবন্ধিত যানবাহন আছে যার মধ্যে ২০ লাখ গাড়ি এবং ৬৬ লাখ মটর সাইকেল। শহরটিতে যানজটের কারণ হচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা প্রতি বছর ১০% করে বাড়ছে এবং মাত্র ২% লোক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এত গাড়ি কেনার সামর্থ আছে কি না লোকের।
এখানে সরকারী গাড়ি আছে অনেক। সরকারের ছোট পদের কর্মচারীরাও গাড়ি/মটরসাইকেল পায়। বাংলাদেশের সাথে ইন্দোনেশিয়ার মূল পার্থক্য এটিই, সরকারের প্রচুর অর্থ আছে খরচ করার মত।
রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর ৩০ বছরের সরকারের সাফল্য হচ্ছে পার ক্যাপিটা জিডিপির প্রভূত উন্নতি। ১৯৬৬ সালে জেনারেল সুহার্তোর ক্ষমতা নেবার সময় ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রতি জিডিপি ছিল ৭০ ডলার যা ১৯৯৬ সালে বেড়ে ১০০০ ডলার হয় (বর্তমানে তা বেড়ে ৩৯০০ ডলার হয়েছে, বাংলাদেশের ১৫০০ ডলার)। এই ত্রিশ বছরের সাফল্যের মূলে রয়েছে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেল ও গ্যাস রপ্তানি। ১৯৭৩ সালের দিকে যখন তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায় তখন জিডিপি বেড়েছে বছরে ৫৪৫% করে প্রতি বছর। এই উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে প্রচুর দুর্নীতির মধ্যেও সরকার অর্জন করতে পেরেছে কিছু সাফল্য - যেমন চাল উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে ১৯৮০র দশকে। সব নাগরিকের জন্যে প্রাইমারী লেভেলে শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং সফল পরিবার পরিকল্পনা আন্দোলন। প্রচুর বিদেশী কোম্পানী এদেশে আসে উৎপাদনের ফ্যাক্টরি বসানোর জন্যে। তবে তবুও সুহার্তোর শাসনের শেষের দিকে প্রায় ৮০% ইন্দোনেশিয়ান প্রতিদিন প্রায় ১ ডলারের কিছু বেশী আয় করত। অর্থাৎ এই বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধনীদের আরও ধনী করেছে আর গরীবরা গরীবই থেকেছে। সুহার্তো পরিবারের সম্পত্তি ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং সে বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা।
তেল এবং গ্যাস (দৈনিক দশ লাখ ব্যারেল উত্তোলন) ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার রফতানির তালিকায় রয়েছে তৈরি খনিজ, ইলেকট্রনিক্স, পোষাক, রাবার, প্লাইউড ইত্যাদি। আর তাদের রয়েছে গ্রাসবার্গ স্বর্ণখনির আয়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণখনি এবং তৃতীয় সর্ববৃহৎ তামার খনি গ্রাসবার্গ ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া দ্বীপে অবস্থিত। এর বেশীর ভাগ শেয়ার রয়েছে আমেরিকার ফ্রিপোর্ট ম্যাকমোরানের (৬৭%) এবং বাকিটুকু ইন্দোনেশিয়ার সরকারের। এই মাইনে কাজ করে প্রায় বিশ হাজার লোক। বছরে এটি প্রায় ৫৮,৫০০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ, ১৭৫,০০০ কেজি রুপা এবং ৬ লাখ টন তামা উৎপন্ন করে। এই খনি নিয়ে রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস।
১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া নেদারল্যান্ডস এর কাছ থেকে স্বাধীন হবার পরেও পাপুয়া দ্বীপটি (ইরিন জায়া/ পশ্চিম নিউ গিনি) ছিল মূলত: ডাচদের দখলে (কিছু অংশে জার্মান মালিকানা ছিল)। ১৯৬০ সালে ফ্রিপোর্টের একদল সার্ভেয়ার খনিটির সন্ধান পান ১৯৩৬ সালের ডাচ একটি রিপোর্টের সূত্র ধরে। ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে পশ্চিম পাপুয়া দখল করতে ব্যর্থ হয়ে সামরিক অভিযান চালায় সুকর্ন সরকার। পরবর্তীতে আমেরিকার মধ্যস্ততায় জাতিসংঘ ইন্দোনেশিয়াকে শর্ত দেয় যে ১৯৬৯ সালের মধ্যে তাকে একটি গনভোটের আয়োজন করতে হবে পাপুয়ার জনগণের মতামত জানার জন্যে এবং তারপরে তারা পশ্চিম পাপুয়াকে সংযুক্ত করতে পারবে।
সুহার্তো ১৯৬৬ সালের একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জের ধরে ক্ষমতায় আসেন (যার ফলশ্রতিতে প্রায় ৫ লাখ কমিউনিষ্টকে মারা হয়) । সুহার্তো অর্থনীতিকে মুক্ত করে দেন এবং বিদেশী কোম্পানীকে বিনিয়োগের লাইসেন্স দেন (বলা হয় ঘুষের বিনিময়ে)। ১৯৬৭ সালে প্রথম কোম্পানী হিসেবে কন্ট্রাক্টটি পায় আমেরিকার ফ্রিপোর্ট সালফার - পাপুয়ায় স্বর্ণ ও তামা খনি প্রতিষ্ঠার জন্যে। কিন্তু তখনও খনিটি যেখানে অবস্থিত সেই পশ্চিম পাপুয়া স্বীকৃতভাবে ইন্দোনেশিয়ার করায়ত্ব ছিল না।
আমেরিকার অবমুক্ত সিকিউরিটি ফাইল অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ১৯৬৮ সালে একটি তারবার্তা পাঠায় যে দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিযোগের কারণে ইন্দোনেশিয়া সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ - তাই তারা নির্বাচনে জিততে পারবে না। কমিউনিষ্টদের নিধনের কারনে ইন্দোনেশিয়া তখন আবার আমেরিকার গুড বুকে।
১৯৬৯ সালের জুন মাসে কিসিন্জার ও নিক্সন ইন্দোনেশিয়া সফর করেন যখন পাপুয়ার অ্যাক্ট অফ চয়েস ভোটাভুটি চলছিল। কিন্তু একজন এক ভোটের নীতি পাল্টিয়ে ৮ লাখ ভোটারের যায়গায় মাত্র ১০০০ আদিবাসী নেতাদের দিয়ে প্রহসনের ভোটটি ঘটায় ইন্দোনেশিয়ার সরকার। ওদিকে কিসিন্জার সুহার্তোকে বাহবা দিচ্ছিলেন 'মডার্ন মিলিটারি ম্যান বলে'। আমেরিকার সমর্থন থাকায় এই ভোট স্বীকৃতি পায় ও পশ্চিম পাপুয়া ইন্দোনেশিয়ার হয়।
১৯৭২ সাল থেকে এর্টসবার্গ মাইন থেকে উত্তোলন শুরু করে ফ্রিপোর্ট। ১৯৮৮ সালে এই মাইনটি খালি হয়ে গেলে ৩ কিলোমিটার দুরে (৪০ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভের) গ্রাসবার্গ মাইন থেকে উত্তোলন শুরু করে। ২০০৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে যে ফ্রিপোর্ট ফ্রি পাপুয়া মুভমেন্টের আক্রমণ থেকে খনিকে বাঁচার জন্যে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সেবা (?) নেয় এবং ১৯৯৮ -২০০৪ সালে কোম্পানির খাতায় এই খাতে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ দেখানো আছে (সামরিক বাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা ১৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত পেয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী বিদেশী কোম্পানী থেকে সামরিক সদস্যের অর্থগ্রহণ দন্ডনীয় অপরাধ।
এই মাইনের বিক্রির অংশ ছাড়াও এর শুল্ক ইন্দোনেশিয়ার সরকারের এই খাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়।
পশ্চিম পাপুয়া দ্বীপের ধন সম্পদ নষ্ট করে আয় করার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ২০০৮ সালের সামার অলিম্পিক্সের জন্যে চীন ১ বিলিয়ন ডলারের কাঠের অর্ডার দেয় ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে যা এই দ্বীপের ব্যাপক অংশের বন উজাড় করে মেটানো হয়।
আমি খালি চিন্তা করছি আমাদের দেশের যদি এরকম প্রাকৃতিক সম্পদ আর এত আয় থাকত তাহলে দেশটি কোথায় যেত। অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার মত হয়ত কিছু লোকের কাছেই সব ধন যেত আর অধিকাংশ লোকেরই ভাগ্য পরিবর্তন হত না। কত বিচিত্র এই বিশ্ব।
(ছবি নাসার সৌজন্যে)
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
আগেই বলেছিলাম যে জাকার্তার সাথে বাংলাদেশের অনেক মিল। তবে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভাল। এর একটি নমুনা হচ্ছে এ দেশে প্রচুর গাড়ি এবং মটর সাইকেল আর তাদের অধিকাংশই নিজেদের দেশে সংযোজন করা। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাকার্তা শহরে (ঢাকা শহরের দ্বিগুণ আয়তন) প্রায় ৯৫ লাখ নিবন্ধিত যানবাহন আছে যার মধ্যে ২০ লাখ গাড়ি এবং ৬৬ লাখ মটর সাইকেল। শহরটিতে যানজটের কারণ হচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা প্রতি বছর ১০% করে বাড়ছে এবং মাত্র ২% লোক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এত গাড়ি কেনার সামর্থ আছে কি না লোকের।
এখানে সরকারী গাড়ি আছে অনেক। সরকারের ছোট পদের কর্মচারীরাও গাড়ি/মটরসাইকেল পায়। বাংলাদেশের সাথে ইন্দোনেশিয়ার মূল পার্থক্য এটিই, সরকারের প্রচুর অর্থ আছে খরচ করার মত।
রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর ৩০ বছরের সরকারের সাফল্য হচ্ছে পার ক্যাপিটা জিডিপির প্রভূত উন্নতি। ১৯৬৬ সালে জেনারেল সুহার্তোর ক্ষমতা নেবার সময় ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রতি জিডিপি ছিল ৭০ ডলার যা ১৯৯৬ সালে বেড়ে ১০০০ ডলার হয় (বর্তমানে তা বেড়ে ৩৯০০ ডলার হয়েছে, বাংলাদেশের ১৫০০ ডলার)। এই ত্রিশ বছরের সাফল্যের মূলে রয়েছে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেল ও গ্যাস রপ্তানি। ১৯৭৩ সালের দিকে যখন তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায় তখন জিডিপি বেড়েছে বছরে ৫৪৫% করে প্রতি বছর। এই উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে প্রচুর দুর্নীতির মধ্যেও সরকার অর্জন করতে পেরেছে কিছু সাফল্য - যেমন চাল উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে ১৯৮০র দশকে। সব নাগরিকের জন্যে প্রাইমারী লেভেলে শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং সফল পরিবার পরিকল্পনা আন্দোলন। প্রচুর বিদেশী কোম্পানী এদেশে আসে উৎপাদনের ফ্যাক্টরি বসানোর জন্যে। তবে তবুও সুহার্তোর শাসনের শেষের দিকে প্রায় ৮০% ইন্দোনেশিয়ান প্রতিদিন প্রায় ১ ডলারের কিছু বেশী আয় করত। অর্থাৎ এই বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধনীদের আরও ধনী করেছে আর গরীবরা গরীবই থেকেছে। সুহার্তো পরিবারের সম্পত্তি ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং সে বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা।
তেল এবং গ্যাস (দৈনিক দশ লাখ ব্যারেল উত্তোলন) ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার রফতানির তালিকায় রয়েছে তৈরি খনিজ, ইলেকট্রনিক্স, পোষাক, রাবার, প্লাইউড ইত্যাদি। আর তাদের রয়েছে গ্রাসবার্গ স্বর্ণখনির আয়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণখনি এবং তৃতীয় সর্ববৃহৎ তামার খনি গ্রাসবার্গ ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া দ্বীপে অবস্থিত। এর বেশীর ভাগ শেয়ার রয়েছে আমেরিকার ফ্রিপোর্ট ম্যাকমোরানের (৬৭%) এবং বাকিটুকু ইন্দোনেশিয়ার সরকারের। এই মাইনে কাজ করে প্রায় বিশ হাজার লোক। বছরে এটি প্রায় ৫৮,৫০০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ, ১৭৫,০০০ কেজি রুপা এবং ৬ লাখ টন তামা উৎপন্ন করে। এই খনি নিয়ে রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস।
১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া নেদারল্যান্ডস এর কাছ থেকে স্বাধীন হবার পরেও পাপুয়া দ্বীপটি (ইরিন জায়া/ পশ্চিম নিউ গিনি) ছিল মূলত: ডাচদের দখলে (কিছু অংশে জার্মান মালিকানা ছিল)। ১৯৬০ সালে ফ্রিপোর্টের একদল সার্ভেয়ার খনিটির সন্ধান পান ১৯৩৬ সালের ডাচ একটি রিপোর্টের সূত্র ধরে। ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে পশ্চিম পাপুয়া দখল করতে ব্যর্থ হয়ে সামরিক অভিযান চালায় সুকর্ন সরকার। পরবর্তীতে আমেরিকার মধ্যস্ততায় জাতিসংঘ ইন্দোনেশিয়াকে শর্ত দেয় যে ১৯৬৯ সালের মধ্যে তাকে একটি গনভোটের আয়োজন করতে হবে পাপুয়ার জনগণের মতামত জানার জন্যে এবং তারপরে তারা পশ্চিম পাপুয়াকে সংযুক্ত করতে পারবে।
সুহার্তো ১৯৬৬ সালের একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জের ধরে ক্ষমতায় আসেন (যার ফলশ্রতিতে প্রায় ৫ লাখ কমিউনিষ্টকে মারা হয়) । সুহার্তো অর্থনীতিকে মুক্ত করে দেন এবং বিদেশী কোম্পানীকে বিনিয়োগের লাইসেন্স দেন (বলা হয় ঘুষের বিনিময়ে)। ১৯৬৭ সালে প্রথম কোম্পানী হিসেবে কন্ট্রাক্টটি পায় আমেরিকার ফ্রিপোর্ট সালফার - পাপুয়ায় স্বর্ণ ও তামা খনি প্রতিষ্ঠার জন্যে। কিন্তু তখনও খনিটি যেখানে অবস্থিত সেই পশ্চিম পাপুয়া স্বীকৃতভাবে ইন্দোনেশিয়ার করায়ত্ব ছিল না।
আমেরিকার অবমুক্ত সিকিউরিটি ফাইল অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ১৯৬৮ সালে একটি তারবার্তা পাঠায় যে দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিযোগের কারণে ইন্দোনেশিয়া সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ - তাই তারা নির্বাচনে জিততে পারবে না। কমিউনিষ্টদের নিধনের কারনে ইন্দোনেশিয়া তখন আবার আমেরিকার গুড বুকে।
১৯৬৯ সালের জুন মাসে কিসিন্জার ও নিক্সন ইন্দোনেশিয়া সফর করেন যখন পাপুয়ার অ্যাক্ট অফ চয়েস ভোটাভুটি চলছিল। কিন্তু একজন এক ভোটের নীতি পাল্টিয়ে ৮ লাখ ভোটারের যায়গায় মাত্র ১০০০ আদিবাসী নেতাদের দিয়ে প্রহসনের ভোটটি ঘটায় ইন্দোনেশিয়ার সরকার। ওদিকে কিসিন্জার সুহার্তোকে বাহবা দিচ্ছিলেন 'মডার্ন মিলিটারি ম্যান বলে'। আমেরিকার সমর্থন থাকায় এই ভোট স্বীকৃতি পায় ও পশ্চিম পাপুয়া ইন্দোনেশিয়ার হয়।
১৯৭২ সাল থেকে এর্টসবার্গ মাইন থেকে উত্তোলন শুরু করে ফ্রিপোর্ট। ১৯৮৮ সালে এই মাইনটি খালি হয়ে গেলে ৩ কিলোমিটার দুরে (৪০ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভের) গ্রাসবার্গ মাইন থেকে উত্তোলন শুরু করে। ২০০৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে যে ফ্রিপোর্ট ফ্রি পাপুয়া মুভমেন্টের আক্রমণ থেকে খনিকে বাঁচার জন্যে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সেবা (?) নেয় এবং ১৯৯৮ -২০০৪ সালে কোম্পানির খাতায় এই খাতে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ দেখানো আছে (সামরিক বাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা ১৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত পেয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী বিদেশী কোম্পানী থেকে সামরিক সদস্যের অর্থগ্রহণ দন্ডনীয় অপরাধ।
এই মাইনের বিক্রির অংশ ছাড়াও এর শুল্ক ইন্দোনেশিয়ার সরকারের এই খাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়।
পশ্চিম পাপুয়া দ্বীপের ধন সম্পদ নষ্ট করে আয় করার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ২০০৮ সালের সামার অলিম্পিক্সের জন্যে চীন ১ বিলিয়ন ডলারের কাঠের অর্ডার দেয় ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে যা এই দ্বীপের ব্যাপক অংশের বন উজাড় করে মেটানো হয়।
আমি খালি চিন্তা করছি আমাদের দেশের যদি এরকম প্রাকৃতিক সম্পদ আর এত আয় থাকত তাহলে দেশটি কোথায় যেত। অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার মত হয়ত কিছু লোকের কাছেই সব ধন যেত আর অধিকাংশ লোকেরই ভাগ্য পরিবর্তন হত না। কত বিচিত্র এই বিশ্ব।
(ছবি নাসার সৌজন্যে)
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
1 comment:
আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লাগল।
Post a Comment