Sunday, November 01, 2009

বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতায় চীনের হস্তক্ষেপ



দৃক বাংলাদেশ এবং স্টুডেন্টস ফর এ ফ্রি তিবেত সংস্থার বাংলাদেশ শাখা সম্প্রতি তিব্বতের উপর এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীটি গতকাল শুরু হয়ে নভেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত হবার কথা ছিল।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চীন দুতাবাসের সাংস্কৃতিক এটাশে এবং কাউন্সেলর দৃক গ্যালারীতে এসে এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ড: শহীদুল আলমের সাথে দেখা করেন এবং প্রদর্শনীটি বন্ধ করতে বলেন। তারা কিছু উপঢৌকনও নিয়ে এসেছিলেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে তিব্বৎ চীনের অন্তর্গত এবং এই প্রদর্শনী বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যেকার সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। ড: আলম বলেন যে দৃক একটি স্বাধীন গ্যালারী এবং চীনা দুতাবাস চাইলে তাদের বক্তব্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিনে পেশ করতে পারেন। এমনকি চীন চাইলে তাদের প্রদর্শনীও এখানে করতে পারবে। তারা গ্যালারী দেখে প্রস্থান করে।

কিন্তু এরপর নানা হুমকি আসতে থাকে দৃক এর উপর। ওদিকে স্টুডেন্টস ফর এ ফ্রি তিবেত এর সদস্যদের বাড়ীর আসে পাশে গোয়েন্দা হানা দেয়া শুরু করে। ফোন আসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে: "চায়না আমাদের বন্ধু। দালাই লামার ছবি দেখিও না।" "না না, আমরা সেন্সরশীপের কথা বলছি না। তবে জানেনই তো..." এর পর এক নামকরা তারকার কাছ থেকে ফোন আসে। জাসদের এমপি হাসানুল হক ইনু ফোন করেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশের এক চীন নীতির কথা এবং এই প্রদর্শনী বাংলাদেশের জনগণের জন্যে কি প্রভাব বয়ে আনবে তা। চারিদিক থেকেই চাপ আসতে থাকে এবং শেষে তা পুলিশী ধমকিতে পরিণত হয়।

এসবির লোক আসে শহিদুল আলমের সাথে দেখা করতে। তারা উদ্যোক্তাদের সবার পরিচয় জানতে চান। শহিদুল অফিসিয়াল অর্ডারের কথা জানতে চান। উত্তর আসে "আপনি খামাখা জটিল করে ফেলছেন।" এবং তাকে শুনিয়েই উপরওয়ালার সাথে কথাবার্তা চলতে থাকে। " উনি সহযোগিতা করছেন না.. আমরা বুঝিয়েছি ওনাকে ব্যাপারটা.. না না এখনও কিছু করি নি। এর পরে তারা আবার আসে এবং ধমক দেয় সরকারকে সহযোগিতা না করলে ভবিষ্যতে দৃকের কপালে খারাবি আছে।

গতকাল (পহেলা নভেম্বর) বিকেলে পুলিশের ফোন আসে, "প্রদর্শনী বন্ধ করুণ না হলে ফোর্স পাঠাবো।" ফোর্স পাঠাতে হল তাদের এবং তালা মেরে দেয়া হলো প্রদর্শনী হল। কাউকে ঢুকতে দেয়া হলো না দৃকে। প্রধান অতিথি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ (ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল) দু ঘন্টা পর প্রতীকী উদ্বোধন করলেন। তখনও প্রদর্শনী বন্ধ ছিল - পুলিশ নাকি চাবি হারিয়ে ফেলেছে।

চীন সরকারের অন্যান্য দেশের উপর খবরদারীর এই লক্ষণ খুবই খারাপ। আর তাদের এই আন্তর্জাতিক সেন্সরশীপ অবশ্য বাংলাদেশ, নেপালের মত দুর্বল দেশের উপর শুধু ভালভাবে প্রয়োগ করতে পারে।

দৃক নিউজ সাইটটি এখন একটি রিপোর্টেড অ্যাটাক সাইট । এই কাজটি চীনের নেট সৈনিকদেরই কাজ হতে পারে। তাদের সেন্সরশীপের পরিধি তারা যত দুর সম্ভব বাড়াতে চেষ্টা করে এভাবে - যেমন তারা গত জুলাইতে মেলবোর্ণ ফিল্ম ফেস্টিভালে উইঘুর দের নিয়ে রাবেয়া কাদিরের চলচ্চিত্রটি দেখানো রোধ করতে ফেস্টিভ্যালের সাইট হ্যাক করে চাইনিজ পতাকা ঝুলিয়ে দেয়।

এর কারণ আমাদের রাজনীতিবিদগন এবং রাষ্ট্রযন্ত্র যারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যে চীনের পা চাটে। আমরা কোন দেশে বাস করছি? চীন না বাংলাদেশ? একটি প্রদর্শনী করার জন্যে কেন চীনের অনুমতি নেয়া লাগবে?

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীনের অবস্থান সবাই জানে। তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে। নব্বুই এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশীরা তাইওয়ান যেতে পারত না। কারণ পাসপোর্টে লেখা থাকতে ইজরায়েল ও তাইওয়ান ব্যাতিত সকল দেশে ভ্রমণ করা যাবে। এর পেছনেও ছিল চীন তোষণ নীতি। অথচ তাইওয়ানের সাথে ব্যবসা কি থেমে থেকেছে? বর্তমানে কি চীনের চাপে আবার বাংলাদেশ এরূপ ব্যান আরোপ করার ক্ষমতা রাখে (যখন কম্পিউটারের অনেক যন্ত্রাংশ আসে তাইওয়ান থেকে)?

চীন আমাদের তাদের ঠুনকো সস্তা জিনিষ বিক্রি করা ছাড়া কি দেয়? তারা সেতু নির্মাণ ইত্যাদিতে যেসব সহায়তা দেয় তা উসুল করে নেয় নিজস্ব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও নিজস্ব লোকবল লাগিয়ে। কেন কারণ ছাড়া চীনকে তোষণ করতে হবে?

চীন একটি একনায়কতন্ত্র আর বাংলাদেশ একটি গণতন্ত্র। এদেশে চীনের নীতি ফলানো গণতন্ত্রের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। কি হতো প্রদর্শনীটি হতে দিলে? কয়েকশ লোক হয়ত তা দেখত, ব্যাস। এখন এটি বন্ধ করে বাংলাদেশ যে পরিমাণ প্রচার পেল তাতে বরঞ্চ দেশের ইমেজের ক্ষতি হল। আমাদের তোষণ ও মোসাহেবী স্বভাব যে কবে পাল্টাবে এবং আমরা ভিক্ষার থালা ফেলে দিয়ে মেরুদন্ড সোজা করে কোনদিন বাঁচতে পারব সে বলা মুস্কিল।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের সাংবিধানিক অধিকার - বাক স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা - চীনের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে জিইয়ে রাখার জন্যে তাদের মদদ করা নয়। এই ব্যাপারটি তারা যত দ্রুত অনুধাবন করবেন ততই মঙ্গল।

এ নিয়ে আরও পড়ুন:

* শহিদুল আলমের ব্লগটুইটার

* গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন

* মাশুকুর রহমান

* সাদা কালো

* রব গডেন

* মিডিয়া হেল্পিং মিডিয়া

1 comment:

nisshobdo_rati said...

It is outrageous how we let other country control our freedom to know about Tibet!! Such Shame..