বার্লিন: গল্পের শহর, অথবা শহরটা নিজেই গল্প - ২
ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস:
বিশ্বের অনেক স্থানেই আলোক উৎসব পালন করা হয় বিভিন্ন রুপে। ভারতে দিওয়ালী বা নেপালে দীপাবলী ধার্মিক উৎসব হিসেবে অনেকে দেখলেও এটি আসলে এখন সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবেরই অংশ হয়ে গেছে। ইরানের নববর্ষের (নরোজ) সময়ও তারা আলোক উৎসব করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আলোক উৎসবের মধ্যে রয়েছে ইহুদিদের হানুকা উৎসব, ফরাসীদের ফেত দে লুমিয়েখ (যা প্লেগ থেকে বাঁচতে মা মেরীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত) যেগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে উদযাপিত হয়।
উপরের এই ভুমিকার কারন হচ্ছে আজকে বার্লিনের ফেস্টিভাল অফ লাইটসের কথা বলব। প্রতি বছর তারা অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগে এই আলোকসজ্জার আয়োজন করে। এর ঐতিহাসিক পটভুমি খুঁজে পেলাম না তবে আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি পর্যটন উদ্যোগ। যেমন তাদের এবারের পর্যটন স্লোগান "Be Berlin" এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে।
তবে যাই হোক জার্মানরা যা করে তা অনেক পারঙ্গমতার সাথেই করে এবং এই বৈশিষ্টই তাদের এগিয়ে যাবার কারন। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই বাসার কাছাকাছি আকাশে মেঘের গায়ে দুর থেকে সার্চ লাইট পড়তে দেখেছি। ভাবছিলাম এ আবার কি। এই ফেস্টিভ্যালের কথা খেয়াল ছিল না তবে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাওয়া হলো এক রাতে।
শহরের সব পর্যটন আকর্ষণগুলো অপূর্ব আলোক সজ্জায় পূর্ন হয়ে গেছে। শহরের প্রধান রাস্তায় ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা যেন এখনই শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দিকে গিয়ে সার্চ লাইটের ব্যাপারটি খোলাসা হলো। ইউরোপা সেন্টারের কাছে এক উঁচু বাড়ী থেকে বিশাল সব সার্চ লাইচের আলো চারিদিকে দুরদুরান্তে ও আকাশে ফেলা হচ্ছে। সাথে সবুজ লেজার লাইট ও রয়েছে। আকাশে মেঘ ছিল বলে অপূর্ব দৃশ্য ছিল সেটি। আমার পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় এই আলোকসজ্জাগুলোর কিয়দংশও আসে নি।
সাথে সাথে আরেক মজার ব্যাপার দেখলাম। কাধে ট্রাইপড হাতে অসংখ হবি ফটোগ্রাফাররা ছুটেছে। পরে এক জার্মান ব্লগ থেকে কিছু লিন্ক পেলাম। সেখানে উল্লেখ করা ছিল যে আপনারা এই ফেস্টিভ্যালের ছবিগুলোতে যেমন দেখছেন তেমন সুন্দর আপনি কাছে থেকে কখনই দেখতে পাবেন না। সত্যিই তাই। কারন বার্লিন ডোম ও উন্টার ডেন লিন্ডেন ছিল লোকে লোকারণ্য। ওখান থেকে কোনকিছুই ভালভাবে দেখতে পারিনি যেমন এই ফ্লিকারে আপলোড করা ছবিগুলো দেখাচ্ছে:
ফ্লিকারে বার্লিন ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস।
বিশ্বজুড়ে রাতের বেশ কিছূ অসাধারন ছবি।
পাতা ঝরার দিন:
শীত চলে আসছে দ্রুত। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পাতা ঝরার খেলা দেখলাম। এ সময়টা সত্যিই খুব অন্যরকম লাগে। ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যাচ্ছে আর নানা রকম ভাবে ঘুরে ঘুরে পাতাগুলো পড়ে যাচ্ছে গাছ থেকে। সবুজ, হলুদ, বাদামী ইত্যাদি রংয়ের মিশ্রনে অপূর্ব দৃশ্য। সাথে মৃদু পাতা ঝরার শব্দের দ্যোতনা। এমনিতে বোঝা যায়না। কিন্তু হঠাৎ করে খেয়াল করলে মুগ্ধ হয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে শুনি।
আমার মেয়ের কিন্ডারগার্টেনের সামনে অনেকগুলো মেপল গাছ আছে। সেগুলো বিশাল বিশাল পাতা নীচে পড়ে এমন অবস্থা হয় যে রাস্তাঘাট সব ঢেকে যায়। প্রতিদিন তাই দেখি রাস্তার কোনায় পাতাগুলো জড়ো করে রাখা। জার্মানরা খুবই প্রযুক্তিপ্রেমী জাতি। তাই চিরাচরিত ঝাটার বদলে পাতা সরাতে তারা ব্যবহার করে শক্তিশালী ব্লোয়ার। এর পর মাঝে মাঝে বড় ট্রাক এসে সাকশন পাইপের মত আরেকটি ব্লোয়ার দিয়ে রাস্তার কোনা থেকে সেগুলো তুলে নেয়।
এই সময়টা হচ্ছে আপেলের। এ মাসের প্রথমে জার্মানীর দক্ষিণে লেক কন্সট্যান্স এলাকায় গিয়েছিলাম এবং ওখানকার আপেল গাছের ছড়াছড়ি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। রাস্তার ধারে বাড়ীর আঙ্গিনায় আপেল গাছে টসটসে আপেল ঝুলছে, কিছু পড়ে আছে। কিন্তু হয়ত পেড়ে খাবার লোক নেই। আমরা যেখানে থাকি সেই এপার্টমেন্ট কম্প্লেক্সের পেছনে তিনটি বিল্ডিংয়ের জন্যে অনেক গাছ গাছালীতে ঘেরা বাচ্চাদের জন্যে একটি খেলার জায়গা। এই তল্লাটে মনে হয় শিশুদের সংখ্যা কম তাই সেখানে লোকজন দেখা যায়না বললেই চলে। টেবল টেনিসের টেবলটায় ছাতা পড়ে আছে, পাশে শেওলা পড়া চেয়ার। বহুকাল কেউ মাড়ায় না এ পথ। আমার মেয়ে সুইংয়ে চড়বে বলে বায়না ধরে মাঝে মাঝে তাই ইদানীং সেখানে যাওয়া হয়। মাসখানেক আগে আবিস্কার করলাম প্লে গ্রাউন্ডের পাশে একটি গাছে ছোট ছোট এক ধরনের ফল হয়ে রয়েছে। পেড়ে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা থাকলেও সেটি নিষেধ করে আবার কোন নিয়ম আছে কিনা ভেবে করা হয়নি। সেদিন দেখি ফলগুলোর অনেকগুলোই পেঁকে বেশ কিছু মাটিতে পড়ে রয়েছে। বুঝলাম এটি ছোট সাইজের এক ধরনের আপেল। বাড়ীতে এনে খেয়ে দেখলাম টক টক কিন্তু খেতে মন্দ নয়। এই বোধহয় ধনী ও গরীব দেশের মধ্যে পার্থক্য। ওখানে লোকে খেতে পায়না। এখানে খাবার পড়ে নষ্ট হয়, খাবার লোক নেই।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
বিশ্বের অনেক স্থানেই আলোক উৎসব পালন করা হয় বিভিন্ন রুপে। ভারতে দিওয়ালী বা নেপালে দীপাবলী ধার্মিক উৎসব হিসেবে অনেকে দেখলেও এটি আসলে এখন সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবেরই অংশ হয়ে গেছে। ইরানের নববর্ষের (নরোজ) সময়ও তারা আলোক উৎসব করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আলোক উৎসবের মধ্যে রয়েছে ইহুদিদের হানুকা উৎসব, ফরাসীদের ফেত দে লুমিয়েখ (যা প্লেগ থেকে বাঁচতে মা মেরীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত) যেগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে উদযাপিত হয়।
উপরের এই ভুমিকার কারন হচ্ছে আজকে বার্লিনের ফেস্টিভাল অফ লাইটসের কথা বলব। প্রতি বছর তারা অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগে এই আলোকসজ্জার আয়োজন করে। এর ঐতিহাসিক পটভুমি খুঁজে পেলাম না তবে আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি পর্যটন উদ্যোগ। যেমন তাদের এবারের পর্যটন স্লোগান "Be Berlin" এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে।
তবে যাই হোক জার্মানরা যা করে তা অনেক পারঙ্গমতার সাথেই করে এবং এই বৈশিষ্টই তাদের এগিয়ে যাবার কারন। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই বাসার কাছাকাছি আকাশে মেঘের গায়ে দুর থেকে সার্চ লাইট পড়তে দেখেছি। ভাবছিলাম এ আবার কি। এই ফেস্টিভ্যালের কথা খেয়াল ছিল না তবে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাওয়া হলো এক রাতে।
শহরের সব পর্যটন আকর্ষণগুলো অপূর্ব আলোক সজ্জায় পূর্ন হয়ে গেছে। শহরের প্রধান রাস্তায় ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা যেন এখনই শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দিকে গিয়ে সার্চ লাইটের ব্যাপারটি খোলাসা হলো। ইউরোপা সেন্টারের কাছে এক উঁচু বাড়ী থেকে বিশাল সব সার্চ লাইচের আলো চারিদিকে দুরদুরান্তে ও আকাশে ফেলা হচ্ছে। সাথে সবুজ লেজার লাইট ও রয়েছে। আকাশে মেঘ ছিল বলে অপূর্ব দৃশ্য ছিল সেটি। আমার পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় এই আলোকসজ্জাগুলোর কিয়দংশও আসে নি।
সাথে সাথে আরেক মজার ব্যাপার দেখলাম। কাধে ট্রাইপড হাতে অসংখ হবি ফটোগ্রাফাররা ছুটেছে। পরে এক জার্মান ব্লগ থেকে কিছু লিন্ক পেলাম। সেখানে উল্লেখ করা ছিল যে আপনারা এই ফেস্টিভ্যালের ছবিগুলোতে যেমন দেখছেন তেমন সুন্দর আপনি কাছে থেকে কখনই দেখতে পাবেন না। সত্যিই তাই। কারন বার্লিন ডোম ও উন্টার ডেন লিন্ডেন ছিল লোকে লোকারণ্য। ওখান থেকে কোনকিছুই ভালভাবে দেখতে পারিনি যেমন এই ফ্লিকারে আপলোড করা ছবিগুলো দেখাচ্ছে:
ফ্লিকারে বার্লিন ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস।
বিশ্বজুড়ে রাতের বেশ কিছূ অসাধারন ছবি।
পাতা ঝরার দিন:
শীত চলে আসছে দ্রুত। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পাতা ঝরার খেলা দেখলাম। এ সময়টা সত্যিই খুব অন্যরকম লাগে। ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যাচ্ছে আর নানা রকম ভাবে ঘুরে ঘুরে পাতাগুলো পড়ে যাচ্ছে গাছ থেকে। সবুজ, হলুদ, বাদামী ইত্যাদি রংয়ের মিশ্রনে অপূর্ব দৃশ্য। সাথে মৃদু পাতা ঝরার শব্দের দ্যোতনা। এমনিতে বোঝা যায়না। কিন্তু হঠাৎ করে খেয়াল করলে মুগ্ধ হয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে শুনি।
আমার মেয়ের কিন্ডারগার্টেনের সামনে অনেকগুলো মেপল গাছ আছে। সেগুলো বিশাল বিশাল পাতা নীচে পড়ে এমন অবস্থা হয় যে রাস্তাঘাট সব ঢেকে যায়। প্রতিদিন তাই দেখি রাস্তার কোনায় পাতাগুলো জড়ো করে রাখা। জার্মানরা খুবই প্রযুক্তিপ্রেমী জাতি। তাই চিরাচরিত ঝাটার বদলে পাতা সরাতে তারা ব্যবহার করে শক্তিশালী ব্লোয়ার। এর পর মাঝে মাঝে বড় ট্রাক এসে সাকশন পাইপের মত আরেকটি ব্লোয়ার দিয়ে রাস্তার কোনা থেকে সেগুলো তুলে নেয়।
এই সময়টা হচ্ছে আপেলের। এ মাসের প্রথমে জার্মানীর দক্ষিণে লেক কন্সট্যান্স এলাকায় গিয়েছিলাম এবং ওখানকার আপেল গাছের ছড়াছড়ি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। রাস্তার ধারে বাড়ীর আঙ্গিনায় আপেল গাছে টসটসে আপেল ঝুলছে, কিছু পড়ে আছে। কিন্তু হয়ত পেড়ে খাবার লোক নেই। আমরা যেখানে থাকি সেই এপার্টমেন্ট কম্প্লেক্সের পেছনে তিনটি বিল্ডিংয়ের জন্যে অনেক গাছ গাছালীতে ঘেরা বাচ্চাদের জন্যে একটি খেলার জায়গা। এই তল্লাটে মনে হয় শিশুদের সংখ্যা কম তাই সেখানে লোকজন দেখা যায়না বললেই চলে। টেবল টেনিসের টেবলটায় ছাতা পড়ে আছে, পাশে শেওলা পড়া চেয়ার। বহুকাল কেউ মাড়ায় না এ পথ। আমার মেয়ে সুইংয়ে চড়বে বলে বায়না ধরে মাঝে মাঝে তাই ইদানীং সেখানে যাওয়া হয়। মাসখানেক আগে আবিস্কার করলাম প্লে গ্রাউন্ডের পাশে একটি গাছে ছোট ছোট এক ধরনের ফল হয়ে রয়েছে। পেড়ে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা থাকলেও সেটি নিষেধ করে আবার কোন নিয়ম আছে কিনা ভেবে করা হয়নি। সেদিন দেখি ফলগুলোর অনেকগুলোই পেঁকে বেশ কিছু মাটিতে পড়ে রয়েছে। বুঝলাম এটি ছোট সাইজের এক ধরনের আপেল। বাড়ীতে এনে খেয়ে দেখলাম টক টক কিন্তু খেতে মন্দ নয়। এই বোধহয় ধনী ও গরীব দেশের মধ্যে পার্থক্য। ওখানে লোকে খেতে পায়না। এখানে খাবার পড়ে নষ্ট হয়, খাবার লোক নেই।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
No comments:
Post a Comment