একটি অপরাধের কাহিনী
ঘটনাটি ছিল খুবই সাধারণ। ম্যাকডোনাল্ডসে খাবারের অর্ডার দেয়ার পরে ক্যাশ মেশিনে উঠল ৬.৪০ ইউরো। কয়েন খুঁজে পেতে দেরী হচ্ছে দেখে লাইনের পেছনের ছেলেটার চেহারায় দেখলাম অস্বস্তির ভাব। পাঁচ ইউরোর নোট, এক ইউরো ও পঞ্চাশ সেন্টের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার পরে ট্রেতে চেন্জ ও খাবার গুলো দিল ক্যাশের মেয়েটি। 'ডান্কে শোন' বলতে বলতেই শুনি সে পেছনের জনকে বলছে '..নেখস্টে বিটে'।
খালি যায়গা খুঁজে খেতে বসে খুঁচরোগুলো পকেটে পুরতে গিয়ে দেখি তিনটি ২০ সেন্টের কয়েন। বিলে লেখা আছে সেই ৬.৪০ ইউরো। তারপর বসে বসে ভাবলাম আমি কি তাকে ৭ ইউরো দিয়েছি? সে তো হবার নয় কারন অনেক খুঁজে পেতে কয়েনগুলো দিয়েছি। কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করার চিন্তা হলো কিন্তু বিশাল লাইন দেখে ভাবলাম 'কি দরকার'। এরপর থেকেই সমস্যাটি শুরু হল।
বাসায় ফিরে বার বার মাথায় ঘুরতে লাগল ব্যাপারটি - আমি কেন তাকে পয়সাটুকু ফেরত দিলাম না। কেন একে স্বাভাবিক মনে হল।
অথচ এই আমিই কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক বাজার করার পর পার্কিং লটে এসে কি কারনে বিলের দিকে তাকিয়ে দেখি ১১ প্যাকেট দুধের বদলে ৬টির দাম রেখেছে। আবার গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে বাকী পাঁচটির দামটুকু শোধ করে এসেছি।
আসলে আমাদের সবার ভেতরেই একটি দ্বৈত সত্তা কাজ করে। আমাদের সবারই একটি অপরাধপ্রবণতা রয়েছে যা মাঝে মধ্যে বের হয়ে পরে, অজান্তেই হয়ত। এবং আমারও হয়ত এমন আরও অপরাধবোধ রয়েছে যা হয়ত কোনদিন প্রকাশ করা হবে না।
কয়েক বছর আগে ঢাকার গুলশান এক নম্বরের এক এটিএম বুথে ঢুকেই দেখি আগের কেউ তার কার্ড ভেতরে রেখে চলে গেছে। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে "Would you like another transaction?" কয়েকটি বোতাম টিপলেই অন্যের বেশ কিছু টাকা হস্তগত হয়ে যেত। কিন্তু আমি কার্ডটি বের করে গার্ডের কাছে দিয়ে দেই কারন আমি জানতাম এটিএম এ ভিডিও ক্যামেরা থাকে এবং সেই অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পরবে। ভিডিও ক্যামেরা যদি না থাকত তাহলে আমি কি সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতাম? খুবই ভেবে দেখার বিষয়।
মাঝে মাঝে নিজের অক্ষমতা নিয়ে খুবই হতাশ হই। হতে পারলাম না আদর্শ কোন মানুষ অথবা আদর্শ কোন ক্রিমিনাল যার অপরাধবোধ নেই।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন
1 comment:
Post a Comment