Monday, December 11, 2023

যদি আমাকে মরতে হয়

ছবি আল জাজিরার সৌজন্যে।

গাজার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কবি রিফাত আলারির গত পহেলা নভেম্বর এক্স (টুইটার) প্লাটফর্মে তার একাউন্টে "যদি আমাকে মরতে হয়" নামে একটা কবিতা পোস্ট করেন যা হাজার হাজার শেয়ার হয়। 

গত ৬ই ডিসেম্বর এক ইজরায়েলি বোমা হামলায় তিনি তার ভাই, বোন ও তিন সন্তানসহ মৃত্যুবরন করেন। এই কবিতাটি এখন বিশ্বের অনেক ভাষায় লোকে অনুবাদ করছে (যার অনেকগুলো পাওয়া যাবে এই টুইটার থ্রেডে )।

নীচে আমার বাংলা অনুবাদের প্রয়াস। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। 

যদি আমাকে মরতে হয় 
তোমাকে বাঁচতে হবে।
 
আমার জিনিষপত্র বেঁচে
এক টুকরো কাপড় কিনো
আর একটু সুতো
(লম্বা লেজের সাদা ঘুড়ি বানানোর জন্যে)
যাতে কোন শিশু, গাজার কোন মাঠে
স্বর্গের দিকে তাকিয়ে 
তার বাবার প্রতীক্ষা করে থাকে
যে চলে গেছে এক অগ্নিহল্কায়
কাউকে বিদায় না জানিয়ে
নিজের সন্তানদেরও না 
অথবা নিজেকে। 

সে যেন দেখে আকাশে সেই ঘুড়ি
আমার ঘুড়িটা, তোমার বানানো
আর এক মুহূর্ত হলেও যেন শিশুটি ভাবে
যে সেখানে এক দেবদূত আছে
স্বর্গ থেকে ফিরিয়ে আনছে ভালোবাসা

আমার মরণ যদি আসে
তা যেন আশা নিয়ে আসে
যেন গল্প নিয়ে আসে।

Thursday, April 18, 2019

বাংলাদেশের নদী

বাংলাদেশের নদী

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে রয়েছে শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০ নদ-নদী (তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া)। ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া, আঁকাবাঁকা মৌসুমি খাড়ি, কর্দমপূর্ণ খালবিল, যথার্থ দৃষ্টিনন্দন নদ-নদী ও এদের উপনদী এবং শাখানদী সমন্বয়ে বাংলাদেশে রয়েছে মোট প্রায় ২৪,১৪০ কিমি দৈর্ঘ্যের নদীব্যবস্থা। কিছু কিছু স্থানে যেমন, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং সুন্দরবন অঞ্চলে নদীনালা এতো বেশি যে সে অঞ্চলে প্রকৃতই নদীজালিকার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" বাংলাদেশের নদীগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫টি। পাউবো কর্তৃক নির্ধারিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১০২টি) , উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১১৫টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী (৮৭টি), উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী (৬১টি), পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী (১৬টি) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী (২৪টি) হিসেবে বিভাজন করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদীর মধ্যে অনেকগুলো আকার এবং গুরুত্বে বিশাল। এসব নদীকে বড় নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বৃহৎ নদী হিসেবে কয়েকটিকে উল্লেখ করা যায় এমন নদীসমূহ হচ্ছে: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি, শীতলক্ষ্যা, গোমতী ইত্যাদি।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী:

আঠারবাঁকি, আড়িয়াল খাঁ নদ, আতাই, আন্ধারমানিক, আফ্রা, অর্পণগাছিয়া, ইছামতি-কালিন্দি, কচা, কপোতাক্ষ নদ, কুমার নদ (চুয়াডাঙ্গা), কুমার নদী (ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ), কুমার আপার নদী, কুমার লোয়ার নদী, কয়রা, করুলিয়া, কাকশিয়ালী, কাজীবাছা, কাটাখালী, কাটাখাল, কালীগঙ্গা (পিরোজপুর), কীর্তনখোলা, খায়রাবাদ, খোলপেটুয়া, গড়াই, গুনাখালি, গলঘেসিয়া, গুলিশাখালী, ঘাঘর, ঘাসিয়াখালী, চত্রা, চুনকুড়ি, চন্দনা-বারাশিয়া, চাটখালী, চিত্রা, ঝপঝপিয়া, টর্কি, টিয়াখালি, ঢাকি, তেঁতুলিয়া, তেলিগঙ্গা-ঘেংরাইল, দড়াটানা-পয়লাহারা, দাড়ির গাঙ, দেলুতি, নুন্দা-উত্রা, নবগঙ্গা, নড়িয়া, নেহালগঞ্জ-রঙমাটিয়া, পটুয়াখালী, পুটিমারি, পুরাতন পশুর, পশুর, পাণ্ডব, পানগুছি, পালং, ফটকি, বগী, বুড়িশ্বর-পায়রা, বলেশ্বর, বাদুড়গাছা, বিশখালী, বিশারকন্দা-বাগদা, বিষ্ণু-কুমারখালি, বেগবতী, বেতনা, বেলুয়া, ভদ্রা, ভুবনেশ্বর, ভৈরব নদ, ভৈরব নদী (বাগেরহাট), ভৈরব-কপোতাক্ষ নদ, ভোলা, মংলা, মুক্তেশ্বরী টেকা, মধুমতি, মরিচ্চাপ-লবঙ্গবতী, মাথাভাঙ্গা, মাদারগাঙ, মাদারীপুর বিলরুট, মালঞ্চ, মিনহাজ, রূপসা, রাবনাবাদ, রায়মঙ্গল, লোহালিয়া, শাকবাড়িয়া, শাতলা-হারতা-নাথারকান্দা, শালদহ, শিবসা, শোলমারি, সুগন্ধা, সন্ধ্যা, সয়া-হাড়িভাঙ্গা, সাপমারা-হাবড়া, সালতা, সিরাজপুর হাওর, হরি, হরিহর, হামকুড়া, হাড়িয়া, হাপরখালী, হাবরখালী, হিশনা-ঝাঞ্চা নদী।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী:

আখিরা-মাচ্চা, আত্রাই, আত্রাই বা কাঁকড়া (দিনাজপুর), আত্রাই বা গুড় (নওগাঁ-নাটোর), আত্রাই (পাবনা), আলাই, আলাইকুমারী, ইছামতি (দিনাজপুর), ইছামতি (পাবনা), ইছামতি (বগুড়া), ইছামতি (বগুড়া-সিরাজগঞ্জ), ইরামতি, করতোয়া, করতোয়া (নীলফামারী), কাগেশ্বরী, কাটাখালী (গাইবান্ধা), কালা, কালাপানি, কালুদাহা, কুমলাল-নাউতারা, কুরুম, কুলিক, খড়খড়িয়া-তিলাই, খালসিডিঙ্গি, গদাই, গভেশ্বরী, পদ্মা, গাংনাই, গিদারী, গিরাই, গুকসী, গোবরা, গোহালা, ঘড়িয়া খাল, ঘাঘট, ঘিরনাই, ঘোড়ামারা, চাওয়াই, চিকনাই, চিকলী, চিরি, চিড়ি, চুঙ্গাভাঙ্গা, ছাতনাই, ছোট ঢেপা, ছোট যমুনা, ছোট সেনুয়া, টাঙ্গন, ডাহুক, ঢেপা, তালমা, তিস্তা, তিস্তা (পঞ্চগড়), তীরনই, তীরনই (পঞ্চগড়), তুলসীগঙ্গা, দুধকুমার, দেওনাই-চাড়ালকাটা-যমুনেশ্বরী, ধরলা, ধাইজান, ধুম, নর্ত, নলশীসা, নলেয়া, নাগর আপার নদী, নাগর লোয়ার নদী, নারোদ, পলিমারি, পাগলা, পাথরঘাটা, পাথরাজ, পুনর্ভবা, পেটকী, ফকিরনী, ফুলকুমার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, বড়াল আপার নদী, বড়াল লোয়ার নদী, বাঙালি, বাদাই, বার্নাই, বান্নী, বুরাইল, বুল্লাই, বুড়িখোড়া, বুড়ি তিস্তা, বেরং, বেলান, বেসানী, বোরকা, ভাদাই, ভুল্লী, ভেরসা, মহানন্দা আপার নদী, মহানন্দা লোয়ার নদী, মাইলা, মালদাহা, মুসাখান, মানস, যমুনা (পঞ্চগড়), রতনাই, রামচণ্ডি, রাক্ষসিনী-তেঁতুলিয়া, লেংগা, লোনা, শিব, সতী-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী, সিমলাজান, সিরামাখালী খাল, সিংগিমারী, সুই, সেনুয়া, সোজ, হারাবতী, হুড়াসাগর নদী ।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী:

আত্রাখালি, আবুয়া নদী বা নান্দিয়া গাং, আমরি খাল, ইসদার খাল-বারভাঙ্গা নদী, উপদাখালী, উমিয়াম, কর্ণঝরা, কর্ণ-বালজা, করিস, কাঁচামাটিয়া, কাপনা, কামারখাল, কামারখালী, কালদাহার-কানিয়াকুল, কালনী, কালাপানিঝরা, কুশিয়ারা, কোরাঙ্গী, খাজাচিং, খাসিমারা, খেপা, খোয়াই, গুমাই, ঘাগটিয়া, ঘানুরা-বগালা, ঘোড়াউত্রা, চামতি, চিতলখালী, চেলা, জাফলং-ডাউকি, জালিয়া ছড়া, জালুখালি, জুরী, ডাউকা, ধলা, দুধদা, দোলতা, ধনু, ধলাই-বিসনাই, ধলাই, নকলা-সুন্দ্রাকাশি, নরসুন্দা, নলজুর, নয়াগাং, নয়া গাং, নিতাই, পাটনাই-পাইকারতলা, পাবিজুড়ি-কুশি গাঙ-কুশিয়া, পিয়াইন, পিয়াইন (সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা), পুরনো সুরমা, পোড়া খাল-খাইয়া, বটরখাল, বড় গাং, বাউলাই, বাথাইল, বালই, বিজনা-গুঙ্গাইজুরি, বিবিয়ানা, বেকরা, বেতৈর, বেদুরি, ভাবনা-বাঁশিয়া-বহিয়া, ভোগাই-কংস, মগড়া, মনু, মরা সুরমা, মহারশি, মহাসিং, মালিজি, মিরগী, জাদুকাটা-রক্তি, লংলা, লাইন, লাউরানজানি, লুভা, সাইদুলি-বারনি, সাতারখালী, সারি গোয়াইন, সিনাই, সিঙ্গুয়া, সুতাং, সুরমা, সোনাই-বরদাল, সোমেশ্বরী, সোমেশ্বরী (ধর্মপাশা), সোমেশ্বরী নদী (শ্রীবর্দী-ঝিনাইগাতি) ।

উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী:

আইমান-আখিলা, আইমান-মোবারি, আড়িয়াল খাঁ, ইছামতি (মানিকগঞ্জ), ইছামতি (সিরাজদিখান), ইলিশমারী, এলংজানী, কাটাখালি, কালিগঙ্গা (মানিকগঞ্জ), খিরো (ত্রিশাল), খিরো (ভালুকা), গাংডুবি, গাজীখালী, গোল্লার, চাতাল, চাপাই, চিলাই, জয়পাড়া খাল, ঝারকাটা, জিঞ্জিরাম, ঝিনাই, টঙ্গী, টংকি, তালতলা, তুরাগ, তুলসীখালী, ধলেশ্বরী, নাগদা, নাঙ্গলা, নালজুরি, নাংলী, পদ্মা, পাগারিয়া-শিলা, পারুলি খাল, পাহাড়িয়া, পুরনো ধলেশ্বরী, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, পুংলী, বংশী, বংশী (সাভার), ব্রহ্মপুত্র (নরসিংদী-মুন্সীগঞ্জ), বাকসাতরা, বাজ্জা-মেধুয়া, বানার আপার নদী, বানার লোয়ার নদী, বালু, বুড়িগঙ্গা, বৈরান, বোশখালী, মরা জিঞ্জিরাম, মাহারি, মিনিখালী, লাবুন্ধা, লৌহজং, শীতলক্ষ্যা, সালদা, সুতী, সুতিয়া, সোনাখালী, হাই, হাড়িদোয়া নদী।

পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী:

ইছামতি (রাঙ্গামাটি), ঈদগাও, কর্ণফুলি, কাসালং, চেঙ্গি, ডলু-টংকাবতী, নাফ, বুড়া মাতামুহুরী, বাঁকখালি, ভারুয়াখালি, ভোলাখাল, মাইনী, মাতামুহুরী, রাংখাইন, সাঙ্গু, হালদা নদী ।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী:

আর্সি-নালিয়া, কাকড়ি, কাস্তি, গোমতী, ঘুংঘুর, ছোট ফেনী, ডাকাতিয়া, ডাসাডিয়া, তিতাস, পুরনো তিতাস, ধনাগোদা, ফেনী, বিজলি, বুড়ি, ভুলুয়া, মুহুরী, মেঘনা আপার নদী, মেঘনা লোয়ার নদী, লহর, লংগন বলভদ্রা, সালদা, সেলোনিয়া, সোনাই, হাওড়া নদী।

বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার আন্তঃসীমান্ত নদীর তালিকা:

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা নদী- ৫৫টি, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা নদী- ৩টি। রায়মঙ্গল, ইছামতী-কালিন্দী, বেতনা-কোদালিয়া, ভৈরব-কপোতাক্ষ, মাথাভাঙ্গা, গঙ্গা, পাগলা, আত্রাই, পুনর্ভবা, তেতুলিয়া, টাংগন, কুলিক বা কোকিল, নাগর, মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তালমা, ঘোড়ামারা, দিওনাই-যমুনেশ্বরী, বুড়িতিস্তা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, চিল্লাখালি, ভোগাই, সোমেশ্বরী, দামালিয়া/যালুখালী, নয়াগাঙ, উমিয়াম, যাদুকাটা, ধলা, পিয়াইন, শারি-গোয়াইন, সুরমা, কুশিয়ারা, সোনাই-বারদল, জুরি, মনু, ধলাই, লংলা, খোয়াই, সুতাং, সোনাই, হাওড়া, বিজনী, সালদা, গোমতী, কাকরাই-ডাকাতিয়া, সিলোনিয়া, মুহুরী, ফেনী, কর্ণফুলি, নিতাই, সাংগু, মাতামুহুরী, নাফ নদী।

অন্যান্য নদী:

আন্তঃসীমান্ত নদী এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ৪০৫টি নদী ছাড়াও আরও প্রায় তিন শতাধিক নদী রয়েছে। যেমনঃ আউলিয়াখানা, আমনদামন, আস্তাইল, কম্পো, কাওরাইদ, কাজীপুর, কালিন্দী, খাড়িয়া, গন্দর, গুমানি, খোয়াথল্যাংতুইপুই, চিলাই (সুনামগঞ্জ), চোরখাই, জলঢাকা, তেতুলিয়া, তৈনগাঙ, থেগা, নাগেশ্বরী, ধানখালী, ধানসিঁড়ি, নীলগঞ্জ, পঞ্চবেণী, প্রাণসায়র, ফটিকছড়ি, বরাক, বান্দসা, বুড়ো গৌরাঙ্গ, ময়ুর, রহমত খালি, রায়ডাক, লঙ্গাই, শুক, সোয়াই, হরবাংছড়া, হরিণঘাটা, হাড়িয়াভাঙা, হেরাচামতি নদী ইত্যাদি।

এই নদীগুলো সম্পর্কে আরো জানতে রিভার্স অফ বাংলাদেশ নামের অ্যাপটি আপনার ফোনে ব্যবহার করতে পারেন।

বাংলাদেশের নদী সম্পর্কে আরও কিছু তথ্যঃ

১) বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী সুরমা (৩৯৯কিমি)
২) বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক নদী পদ্মা নদীর অপর নাম কীর্তিনাশা। পদ্মা নদীর উৎপত্তি স্থল গঙ্গোত্রী হিমবাহ। কুমির সদৃশ ঘড়িয়াল দেখা যায় কোথায় – পদ্মনদীতে। পদ্মা মেঘনার সাথে মিশেছে চাঁদপুরে।পদ্মার শাখা নদী হল ইছামতি, গড়াই, ভৈরব, কুমার, আড়িয়ার খাঁ।পদ্মার একমাত্র উপনদী মহানন্দা। ৩২৪ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যের পদ্মা বাংলাদেশের সবচেয়ে নাব্য নদী।
৩) বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া নদী- ১টি (কুলিখ)
৪) বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট নদী – গোবরা (তেঁতুলিয়া), ৪ কিমি।
৫) বাংলাদেশের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী মেঘনা।
৬) বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রশস্ত নদী যমুনা।
৭) বাংলাদেশের সবচেয়ে র্দীঘতম নদী ব্রহ্মপুত্র।

ছবি এবং তথ্যের জন্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ আমিনুল ইসলাম তুহিন

Sunday, July 22, 2012

দোহাই মিডিয়া, থামলে ভাল লাগে

দেশে একসময় সবেধন নীলমণি ছিল সাহেব বিবির বাক্স বিটিভি। সে সময় সেটি মূলত: সরকারের কথা বললেও টিভি নাটক, ইংরেজী সিরিয়াল, ডকুমেন্টারি, কার্টুন ইত্যাদি কিছু বিষয়ে ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এই উপমহাদেশে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলের মনোপলি ঘুচায় স্যাটেলাইট টিভি। ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে এমটিভিতে বাবা সায়গলের মিউজিক ভিডিও (ঠান্ডা ঠান্ডা পানি) এবং জি নিউজের অনুসন্ধিৎসু খবরের আয়োজন উপমহাদেশের দর্শকদের নতুন যুগের আস্বাদ দেয়। বাংলাদেশ যোগ দেয় একটু পরে। ১৯৯৭ সালে চ্যানেল আই ও এটিএন বাংলার পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু হয়। এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। বাংলাদেশে মনে হয় এখন গোটা বিশেক স্যাটেলাইট টিভির সম্প্রচার হয়।

দেশের স্যাটেলাইট টিভিগুলো একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর একঘেয়ে ও একপেশে অনুষ্ঠান এর বদলে দর্শকদের নিজেদের পছন্দের কিছু দেখার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু এইসব চ্যানেলের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে কিছু কর্পোরেট হাউজ এবং তাদের পেছনের কিছু রাজনৈতিক দর্শন ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। বেশীরভাগ চ্যানেলেরই নিজস্ব কোন উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নেই। এসব অনেক সময় চালানো হয় নিজের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দেখানোর জন্যে, আর ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বীদের টেক্কা দেবার জন্যে বা তাদের প্রতি কুৎসা রটনার জন্যে। আক্ষেপ হয় দেশে এখনও পৃথক কার্টুন, এডুকেশন বা স্পোর্টস চ্যানেল হল না।

বিটিভির অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকের অভিযোগ থাকলেও শাইখ সিরাজের 'মাটি ও মানুষ' কিংবা ফেরদৌসী রহমানের 'এসো গান শিখি' ছিল আপামর জনসাধারণের অনুষ্ঠান এবং খুবই জনপ্রিয়। স্যাটেলাইটের যুগে হাজারো অনুষ্ঠানের ভীড়ে সেরকম উল্লেখ করার মত অনুষ্ঠান খুবই কম। এখনকার অনুষ্ঠানের মধ্যে বেশীরভাগই মধ্যবিত্তদের উপদেশ দেয়ায় ব্যস্ত - কিভাবে গ্ল্যামারযুক্ত জীবন যাপন করবেন, কোথায় যাবেন, কি পড়বেন, কি শুনবেন, কি দেখবেন, ইত্যাদি। আর রয়েছে গান, মডেলিং ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা নিয়ে রমরমা বাণিজ্য। আমার এক আভিজ্ঞতা বলি - খাগড়াছড়িতে গিয়েছিলাম - সেখানে কোন এক টিভি চ্যানেলের গানের প্রতিযোগীতায় এক আদিবাসী বালিকার জন্যে এসএমএস ভোটের জন্যে যে পরিমাণ তদবির, ক্যাম্পেইন, মিছিল ইত্যাদির কথা শুনলাম তাতে মনে হল ব্যাপারটি অসুস্থতার পর্যায়ে গিয়েছে। সেই মেয়েটি জিতেছিল কিনা জানিনা - তবে মানুষের এই আবেগকে পুঁজি করে সেই চ্যানেল আর মোবাইল কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে নিশ্চয়ই - এই ব্যাপারগুলো কিন্তু সংবাদ হয় না।

আপনি খবরের কাগজ খুলে দেখুন, নানা চটকদার খবরের ভীড়ে গণ্ডগ্রামের সেই ক্ষুদ্রঋণের ভার সইতে না পারা কৃষকের আত্মহত্যার খবর আসে না। মিডিয়া এখন শ্রেণীতোষণে ব্যস্ত। তাদের বিজ্ঞাপনী আয়ের মোটা অংশ আসে মোবাইল কোম্পানী থেকে - কাজেই সেসব কোম্পানী নিয়ে সমালোচনামূলক লেখা কম। অমুক তারকা, তমুক বুদ্ধিজীবী কি বলেছেন, তারা ঈদের দিনে কি করবেন বা খাবেন সেটি নিয়ে ফিচার হয়।



ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা ব্ল্যান্ক নয়েজ

আমরা দেখছি এখন মিডিয়াতে তুচ্ছ সব বিষয়ের গ্ল্যামারাইজেশন, খবর সংগ্রহে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আসামের গৌহাটিতে একটি আদিবাসী মেয়ের উপর চড়াও হল গোটা বিশেক উশৃঙ্খল যুবক। এক টিভি ক্যামেরাম্যান ৩০ মিনিট ধরে ভিডিও ধারণ করল মেয়েটিকে সাহায্য না করে। বিডিআর বিদ্রোহের সময় দেখেছি মিডিয়া কি করে ভুল কবরের পেছনে ছুটেছে। সাগর রুনির হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের আগে গিয়ে আলামত নষ্ট করেছে কারা?

বর্তমানে মিডিয়ার পুঁজি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ। মানুষের আবেগের যায়গাগুলো ধরতে পারে তারা ঠিকই। মৃত্যুর সংবাদ পাবার আধাঘন্টার মধ্যেই কিছু লোক পৌঁছে যায় টিভি চ্যানেলে - টকশোতে নিজেদের তুলে ধরতে। প্রতিটি চ্যানেলে হুমায়ূনকে ভেজে খাওয়া হচ্ছে নানা ভাবে। কফিনের ভেতরের লাশের ছবি দেখাচ্ছে অনেকে। আমরা নাদান দর্শক সেগুলো গোগ্রাসে গিলছি আর হাপুস নয়নে কাঁদছি। হ্যা, আমাদের চোখের জলই, আমাদের আবেগই তাদের উপজীব্য। আমরা প্রশ্ন করছি না কেন এত বাড়াবাড়ি।

এই শেনসেশনালিজমের মূলে রয়েছে যে কোন মূল্যে খবর বেঁচা - মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখা। এ রিপোর্টিংয়ে খবরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোন গভীর ধারনা থাকে না, এতে থাকে পক্ষপাতিত্ব, দুর্নীতি। এই রিপোর্টিংয়ে জরুরী খবর চাপা পড়ে - তুচ্ছ খবর লাইম লাইটে আসে। এ ধরনের রিপোর্টিংয়ে মানুষের প্রাইভেসি বা শোককে পুঁজি করে।

এ অবস্থা থেকে উন্নতির উপায় কি আমি জানি না। অনিন্দ্যের পোস্টে আকুতি ছিল - "দয়া করে হুমায়ূন আহমেদকে শান্তিতে মরতে দেন"। আমি বলছি মিডিয়াকে "থামলে ভাল লাগে"। অচিরেই না থামলে ভবিষ্যৎে দর্শকরা অন্য কোন বিকল্প খুঁজে নেবে।

প্রথম প্রকাশ সচলায়তন এ।

Thursday, April 05, 2012

বিবেকহীন বস্তি উচ্ছেদ ও নীরব দর্শক

গতকাল বুধবার সকালে বেদখলকৃত সরকারী জমি উদ্ধারে বনানী এলাকার করাইল বস্তি  উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মেটোপলিটন পুলিশের ৪ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়। সরকারী ভাষ্যমতে বেদখলকৃত ১৭০ শতাংশ জমির মধ্যে ৮০ শতাংশ বিটিসিএলের মালিকানাধীন ও ৪৩ শতাংশ পিডব্লিইডি’র এবং বাকি জমি আইসিটির।

এক অসমর্থিত খবরে জানা গেছে যে বুলডোজারের নীচে শত শত বস্তি ধ্বংস হবার সময় ঘুমন্ত দুই শিশু মারা যায়। হ্যা তাদের জানানো হয়েছিল উচ্ছেদের কথা গত মঙ্গলবার বিকেলে - স্থানীয় ভাবে মাইকিং করে। কিন্তু এই দুই শিশুর পিতামাতা হয়ত আমলে নেয়নি। গত বছর ২০শে সেপ্টেম্বর রাজউক এরকম স্বল্প নোটিসে আরেকটি উচ্ছেদ অভিযান চালায় সেখানে। পুলিশ আর পাড়ার মাস্তানদের দ্বারা ১২০টিরও বেশী পরিবার উচ্ছেদ করা হলেও পরে তারা আবার এসে বাসা করে। গত ২০০৮ সালে প্রথম পিডাব্লিউডি উচ্ছেদের নোটিশ পাঠালে আইন ও শালিস কেন্দ্র পুনর্বাসন ছাড়া  উচ্ছেদ মানবাধিকার লঙ্ঘন এই বলে হাইকোর্টে একটি স্টে অর্ডার নেয়। সেই মামলার বিভিন্ন শুনানীতে পুনর্বাসনের কথা বলা হয় তবে গত জানুয়ারীতে হাইকোর্ট সরকারকে আদেশ দেয় দুই মাসের মধ্যে এই বেদখলকৃত জমি উদ্ধার করতে - তবে সেখানে পুনর্বাসনের কোন কথা বলা হয় নি।

করাইল এলাকার এইসব ভূমিহীন বস্তিবাসীর ৩০ ভাগ দিনমুজুর, ২০% রিক্সা-ভ্যান চালায়, ১৮% গার্মেন্টস কর্মী ও ১২% ছোট ব্যবসা করে। তাদের মাসিক আয় ২৫০০-৪৫০০ টাকা এবং স্থানীয় মান্তানদের ৮০ স্কয়ার ফিটের ঘর ভাড়া দিতে হয়  ৮০০-১২০০ টাকা।

হ্যা, আমাদেরও ঈদ হয়। ছবি ডেভিড হোয়াইটের সৌজন্যে


এই টাকায় তাদের কিভাবে চলে সে খেয়াল কি রাখে কেউ? জ্যাম এড়াতে আমি অনেক সময় রিক্সায় তেজগাঁয়ের রেললাইনের পাশের বস্তি ও ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারীদের বাসস্থান এর পাশের রাস্তাটি দিয়ে আসি। বিজয় স্বরণী ও তেজগাওঁ এর ওভারব্রিজের নীচে এক অদ্ভুত বাজার বসে। কাছাকাছি কাওরান বাজারে যেসব শাক-সব্জি আসে সেসব ট্রাক থেকে নামানোর সময়টা কখনও দেখেছেন কি? কিছু বস্তির ছেলে চাপ খাওয়া, নষ্ট হওয়া শাক সব্জি সংগ্রহ করে সেখান থেকে, এবং অনেকসময় ভালগুলো চুরি করে - অবশ্যই  শারীরিক প্রহার এবং গালাগালির ঝুঁকি মাথায় নিয়ে। সেইসব শাকসব্জি এবং হয়ত সরাসরি আড়ত থেকে পঁচে যাওয়া শাক-সব্জি দিয়েই উল্লেখিত বাজারটি সাজানো। সারি করে বিছিয়ে রাখা পাকা করলা, থেৎলানো পটল, পঁচা শসা, কাল হয়ে যাওয়া আলু - এগুরো নিত্য নৈমিত্তিক চিত্র। এখানে বাজার করতে আসে বস্তির নিম্নবিত্তরা। হ্যা, আমাদের মত বেশী দামের ফ্রেস সব্জি কেনার সামর্থ না থাকতে পারে, কিন্তু তাদেরও তো বাঁচতে হয়।  বাজারের একটি মাত্র মাংসের দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা একটি মাংসের পিস ঝুলে প্রমান করে তারা - না তাদের জীবনেও বিশেষ অনুষ্ঠান থাকে যখন তারা মাংস খেতে পারে।

কিন্তু এই বস্তিবাসীদের  আবাসহীন করা ঠেকাতে তেমন কেউ নেই তাদের পক্ষে লড়ার। কিছু এনজিও প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেছে এবং অনেকে পত্রপত্রিকায় লিখছে।  কিন্তু আমাদের কার সময় আছে সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেবার?

তত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্যে বাসস্থান করার কথা উঠল। সেটা আর এগোয় নি। কে করবে বলেন। তাদের জন্যে করে কার কি লাভ হবে?

আজকে বস্তিবাসীরা মহাখালীতে মানববন্ধন করছে। বনানী গুলশান এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানে কোন রিক্সা চলছে না - ধর্মঘটে গেছে তারা। আমাদের সাধারণ প্রতিক্রিয়া কি হবে ভাবছি। অসহ্য গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামে থেকে সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করব। তাতে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না। এসব ভূমিহীন মানুষ আবার বসতি গড়বে নতুন কোন করাইলে। আমরা আমাদের সমস্যাকে শুধু এড়ানোর চেষ্টা করব - ঢাকাকে তিলত্তোমা করার কথা বলব কিন্তু সমস্যা মিটবে না। এ জন্যে আমরা নীরব দর্শকরাও অনেকটা দায়ী।

(ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র)

Sunday, February 12, 2012

এ-কেমন মৃত্যু ?

আজ সকালে মেইল চেক করার সময় বন্ধু চ্যাটে এল ও জানালো আজকের দিনের বিভীষিকাময় খবরটি - সাংবাদিক সাগর সরোয়ার ও টিভি রিপোর্টার মেহেরুন রুনীর নৃশংস হত্যাকান্ড। সে বলছিল "গতকাল রাতেই সাগরকে একটি প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছিলাম - আজকে সেটাই হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি।"

এইতো একদিন আগেও যারা ছিলেন সুখী দম্পতি, আজ শুধুই স্মৃতি আর ছবি। সারাদিন ফেসবুকে সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে সাগর-রুনী নিয়ে শোকগাথা ও স্মৃতিচারণ, তাদের ছেলে মেঘকে নিয়ে নানা কথা পড়তে পড়তে ও ছবি দেখে আমরাও শোকাচ্ছন্ন ও ভারাক্রান্ত হই বইকি।

সাগরের ডয়েশে ভেলেতে চাকুরির সুবাদে দম্পতিটি জার্মানিতে প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত বছর ফিরে এসেছেন। অন্য অনেকের মত বিদেশে থেকে জাননি। হয়ত দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ভাগ্যে রইল বিভীষিকাময় মৃত্যু।

অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন - এটা কি ডাকাতি না প্রতিহিংসামূলক খুন। তারা দুজন কি তাদের রিপোর্টিং এর জন্যেই কোন শক্র তৈরি করেছিলেন? নাকি এটি কোন পারিবারিক বিরোধ? সেসব হয়ত জানা যাবে অথবা যাবে না। তবে আমাদের সমাজ যে অমানবিক ও কলুষিত হয়ে গেছে তা বোঝা যায় ঘাতকদের আচরণে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ীঃ "সাগরের দেহে ১৯টি বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া ছোটখাটো আরো ২০-২৫টি কাটা দাগ পাওয়া গেছে। বুকের বাম পাশে একটা ছুরির ৮০ ভাগ গেঁথে ছিল।" হায়, এ পোড়ার দেশে খুনেও রহম নেই।

এ মৃত্যু আমাদের অনেককেই নাড়িয়ে দিয়েছে। এসব জেনে নির্লজ্জ স্বাভাবিক থাকা যায় না। তবে বাস্তবতা এই যে দেশে নানান নৃশংসতা অব্যহত রয়েছে ও থাকবে। কারন আমরা কখনও মূল নিয়ে ভাবি না। সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। পাওয়া আর না পাওয়ার দলের মধ্যে একধরণের অবিশ্বাসের ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। ফলে দেখা যায় খুব অল্প খরচ করেই মানুষ খুন করা যায়। আর নৃশংসতার ব্যাপারটিও সমাজসৃষ্ট। কোরবানীর সময় অভিভাবকরা অতি উৎসাহে সন্তানদের পশু জবাই করা দেখাব। পাকিস্তান ও গুটি কয়েক দেশ ব্যতিত পৃথিবীর কোথাও প্রকাশ্যে পশু জবাইয়ের চল নেই। ফলে লক্ষ্য করবেন এসব দেখে দেখে শেখার ফলে দেশে জবাই ও ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর হার বেশী। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্র বা বুদ্ধিজীবীরা ভেবেছে কখনও?

আজ আরেক প্রবাসী বান্ধবীর সাথে কথা হচ্ছিল। সে দেশে ফেরার জন্যে চাকুরি খুঁজছে কিছুদিন ধরে। আজকের সংবাদে মুহ্যমান সে বলল এখন আমি ফেরার ব্যপারে নতুন করে ভাবব। এতদিন ফিরে আসার জন্যে উদ্বুদ্ধ করলেও আজ তাকে কোন কিছু বলতে পারিনি। এই মৃত্যু উপত্যকা থেকে আমার দেশকে ফিরে কেড়ে না আনলে আমি তার নিরাপদ ভবিষ্যৎের প্রতিশ্রুতি দেই কিভাবে?

Sunday, January 22, 2012

ভিআইপিতন্ত্র

ক্লাস টুতে স্কুলের বাংলা টিচার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে বড় হলে কি হব। আমি উত্তর দিয়েছিলাম 'পুলিশ'। কারন পুলিশরা তখন আমার চোখে ছিল বীরত্ব-ক্ষমতার প্রতীক। এখন যদি আমাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে চোখ বুঁজে অবশ্যই বলব ভিআইপি।

ভিআইপির সঠিক কোন সংজ্ঞা নেই, স্বার্থ আর ক্ষমতাই তাদের নিয়ন্ত্রক। ভিআইপি হতে লাগে না কোন যোগ্যতা, ন্যুনতম মনুষ্যত্ব বা পড়াশোনা। 'লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে' ধরণের তত্ব এক্ষেত্রে অচল। বাংলাদেশের শতাধিক এমপির শিক্ষাগত যোগ্যতা "স্বশিক্ষিত"। সেই স্বশিক্ষিতদের হাতে আমার শৈশবের হিরো পুলিশকে অনায়াসেই চড় খেয়েও তা হজম করতে হয়। বহু বিচারকের একটি করে অন্তত থার্ড ডিভিশন রয়েছে। তারপরও আপনি যদি ভুলে যান যে তারা সাধারণ মানুষ নয়, বিচারপতি, তাহলে হয়ত আপনাকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হবে।

এই ভিআইপি সংস্কৃতি কি করে বাঙ্গালীদের গ্রাস করল? মুগল সম্রাটেরা তাদের আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারসূত্রে জমির মালিক ভূঁইয়া বা ভূপতিদের নিয়ে জমিদারতন্ত্র চালু করেন। মুগল আমলে জমি ছিল মর্যাদার প্রতীক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির একটি উৎস - কারন জমিদারকে পুলিশ, বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর কিছু দায়িত্ব পালন করতে হতো। উচ্চাভিলাসী জমিদাররা শাসকশ্রেণীকে তুষ্ট করার বিনিময়ে সার্বভৌম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেন। ঔপনিবেশিক আমলেও জমিদাররা ছিলেন বহাল তবিয়তেই তবে তাদের খাজনা আদায় ছাড়া অন্যান্য ক্ষমতা হ্রাস পায়। ১৯৫১ সালে জমিদারি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক বিলোপ হলেও জমিদার বাহাদুররা ঠিকই রয়ে গেছেন অন্য চেহারায়। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে জমিদারতন্ত্রের মীথ প্রথিত। ফলে অর্থের প্রাচুর্য বা ক্ষমতাধর হলে সেই জমিদারী মানসিকতা জেগে ওঠে। তারা এবং তাদের আশেপাশের লোকেরা ভিআইপি স্ট্যাটাসের সুবিধা ভোগে তৎপর হয়ে ওঠে। এমনকি প্রভাবশালী নেতার মুরগীরও ভিআইপি স্ট্যাটাস পাবার নজির দেখা গেছে।

আপনার দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার মধ্যে আপনারা ভিআইপির উপস্থিতি টের পাবেন। এই দেশটি স্পষ্টতই ভিআইপিদের দেশ হয়ে উঠেছে। আপনি ভিআইপি হলেন তো বিনা ঘুষে, বিনা পুলিশী ঝামেলায় আপনার জীবন চলবে। আপনার ট্রাফিক জ্যামে পড়তে হবে না, কারন বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থায় আপনার চলাচল। আপনি বিদেশের ভিসা সহজে পাবেন। ভিআইপিদের মধ্যে কি কেউ বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে মারা গেছে?

এই কারনেই আমরা সবাই ভিআইপি হতে চাই। পরিচয়ের পর কয়েকটি বাক্যের মধ্যে আমরা উচ্চারণ করে ফেলি আমরা কোন ভিআইপির কত কাছের। ভাবি এতেই যদি শিকে ছিঁড়ে। সকলের জন্যে সমান অধিকার এই জিনিষটি আমরা মুখে বললেও তলে তলে লালায়িত থাকি একটু ভিআইপি সুখের।

এই ভিআইপিতন্ত্রের বুকে কিছুটা চির ধরিয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর টুলস। ইন্টারনেট ও মোবাইল সহজলভ্য হবার সাথে সাথে যোগাযোগের নিমিত্ত এখন হাতের মুঠোয়। ব্লগে, ফেসবুকে সবাই আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। এখন বুদ্ধিজীবীরা আগের মত আর বিবৃতি দিয়ে সুখ পান না- কারন আম জনতা তাদের চেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলে ফেলে। বিশ্বের অনেক নামিদামী পত্রিকা বিদেশী সংবাদদাতা তুলে নিচ্ছে - কারন ব্লগ-টুইটারে ব্রেকিং নিউজ মিলে। ওপেনসোর্স, ক্রিয়েটিভ কমন্স, ক্রাউডসোর্সিং, কমিউনিটি, কোলাবরেশনের মাধ্যমে শেয়ার্ড নলেজ - উইকিপিডিয়া, ইউটিউব, ফ্লিকার, ফেসবুক, ব্লগ কমিউনিটি। ওয়েবের মাধ্যমে কোটি লোকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সৃষ্টি সবার হাতের মুঠোয়। এইসব শত শত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ২০০৬ সালের ম্যান অফ দা ইয়ার সম্মান দেয়।

১৯৯৯ সালে ন্যাপস্টার সবার নিজস্ব সঙ্গীত আর্কাইভ উন্মুক্ত করার মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে গান আদান প্রদান সহজলভ্য করে দিল। সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রি প্রমাদ গুনল। অচিরেই তাদের নামে মামলা হল এবং ২০০১ সালে এটি বন্ধ হয়ে গেল। ন্যাপস্টারের দুর্বলতাগুলো জয় করে পরে র‌্যাপিডশেয়ার, মেগাআপলোড, ড্রপবক্স এর মত শেয়ারিং সাইট জন্ম নেয়। সম্প্রতি আবার এইসব শেয়ারিং সাইট ও কোলাবরেটিভ কন্টেন্ট এর বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে লাগা হচ্ছে। বহুল আলোচিত সোপা ও পিপা আইন চালু হলে টুইটার বা ইউটিউবএর মত সাইটকে প্রতিটি পোস্ট পরীক্ষা করে পাবলিশ করতে হত (এখানে বিস্তারিত)- যা বাস্তবে সম্ভব নয়। ব্যপক প্রতিবাদের মুখে আইনগুলো পাশ করা থেকে বিরত রাখা গেছে, কিন্তু এরকম চাপ আরও আসবে মেধাস্বত্ত রক্ষার নামে।

মোগাআপলোডের বিরুদ্ধে কপিরাইট লংঘন আর ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী ক্ষতিসাধনের অভিযোগ এসেছে এবং একে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেগাআপলোড কোম্পানিটি হংকংএর এবং পাইরেসীর অভিযোগে অভিযুক্ত এর কিছু কন্টেন্ট আমেরিকার লিজড সার্ভারে রাখার কারনে ফেডারেল কোর্ট তাদের জুরিস্ডিকশন দাবী করে। আমেরিকার অনুরোধে নিউজিল্যান্ড থেকে এর তিনজন (জার্মান ও ডাচ) হর্তাকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে বেনামী হ্যাকাররা আমেরিকার জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট, এফবিআই, কপিরাইট অফিস, ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ ইত্যাদির ওয়েবসাইট হ্যাক করে

এক স্বদেশীর বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেবার জন্যে মামলা ঠোকা হয়েছে। ফেসবুক একটি ক্লোজড সাইট। কাজেই এখানে অসদাচরণ প্রদর্শনের (?) জন্যে বড়জোড় চাকুরিজীবির বিভাগীয় শাস্তি হতে পারে, মামলা নয় (জুরিস্ডিকশনের ব্যাপারটিও আছে), যেখানে সে ভুল স্বীকার করে স্ট্যাটাসটি মুছে দিয়েছে। তার অনুপস্থিতির কারনে আদালত অবমাননার শাস্তি প্রদান যেন ঝিকে মেরে বৌকে শেখান - খবরদার বাড়াবাড়ি করবে না। অথচ জামাত নেতা জনসভায় প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুমকি দেয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয় না - কারন সে রাজনৈতিক ভিআইপি।

এইভাবে বিশ্বজুড়ে সাধারণ অনলাইন ব্যবহারকারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সংবাদ বা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্যে। ওদিকে অসাধু ভিআইপি রাজনীতিবিদরা তাদের বিশ্বব্যাপী গোপন ব্যান্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ কোটি টাকা আদান প্রদান করে অস্ত্র বা নিষিদ্ধ জিনিষ কিনছে -কারুরই মাথা ব্যাথা নেই।

গুয়াতেমালাতে আমেরিকার চাপে একটি বিশেষ কোর্ট এবং দুটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে কপিরাইট আইনের জন্যে। দেড় কোটি মানুষের এই দেশে প্রতি বছর ৬০০০ লোক খুন হয় এবং খুনীদের বিচার হয় না। মাইকেল জ্যাকসনের পাইরেট গান ডাউনলোড করার জন্যে কারও পাঁচ বছরের সাজা হতে পারে - অথচ তাকে খুনের দায়ে ডাক্তারের সাজা হয়েছে একবছর।

ইন্টারনেটকে সাধারণ মানুষের হাত থেকে ভিআইপিদের কব্জায় নিয়ে আসার জন্যে তোড়জোড় হচ্ছে আমাদের দেশেও। কপিরাইট আর সাইবার আইনের পক্ষে সোচ্চার হচ্ছে কতিপয় গোষ্ঠি। প্রথমে একশ্রেণীর মিডিয়া কর্পোরেট ব্লগ চালু করে মতামত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় নতুন নতুন ফন্দি আঁটছে। এটি করছে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। বিভিন্ন সভা সমিতির মাধ্যমে তারা ব্লগ ভিআইপি সাজার চেষ্টায় ব্যস্ত।

ইন্টারনেটকে ভয় ভীতির উর্ধ্বে রেখে সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য না করতে পারলে এটি অন্য সব মাধ্যমের মতই ভিআইপি নিয়ন্ত্রিত হবে। মানুষের কণ্ঠ রোধ করতে পারলে কাদের লাভ হয় তা মানুষ চীন, উত্তর কোরিয়া, ইরান ইত্যাদি স্বৈরাচারী শাসকের দেশ থেকে অনুমেয়। আমাদের তাই ভাবতে হবে - আমরা আমাদের এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের লক্ষ্যে লড়ব না ভিআইপি হবার ইঁদুর দৌড়ে যোগ দেব।

Saturday, November 05, 2011

জাগো বাংলাদেশ নিয়ে যত কথা

গতকাল অফিসে যাবার সময়ে শেরাটন হোটেলের সামনের মোড়ে দেখলাম হলুদ টিশার্ট পরা কয়েকজন ছেলেমেয়ে বিভিন্ন গাড়ির কাছে এসে কিছু জিজ্ঞেস করছে। গাড়ি সিগন্যালে থামতেই ১৪-১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী এগিয়ে এল। স্যার বলে সম্ভাষণ করে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা শুরু করতেই গাড়ি আবার নড়ল। দ্রুত পকেটে হাত দিয়ে কিছু টাকা হস্তান্তর করতেই Primary Education For All লেখা একটি স্টিকার পেলাম। অন্য গাড়িতে দেখলাম ফুল দেয়া হচ্ছে।

এরপর অফিস যেতে যেতে ভাবছিলাম যে ওইখানে প্রায়ই পথশিশুরা ফুল নিয়ে দাড়িয়ে থাকে অথচ তাদের কাছ থেকে কালে ভদ্রে কিছু কেনা হয় না। তাহলে আমি ঐ হলুদ পোশাক পড়া কিশোরীকে কেন সাহায্য করলাম?
(ছবি: গতকাল সিলেটে ড: জাফর ইকবাল ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের হলুদ টি শার্ট পরা। সৌজন্যে জাগো বাংলাদেশ ও টিটিএল)

বিভিন্ন ব্লগে এই নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে যার বেশীরভাগেই দেখলাম তথ্যের অভাবে গালগল্প, ব্র্যান্ডিং ও কাঁদা-ছোড়াছুড়ি চলছে। এইসব কিশোর-কিশোরী বা তাদের কে পাঠিয়েছে তা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? কালকের এই আয়োজনটি কিন্তু রীতিমত পাবলিক ক্যাম্পেইন করা একটি কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতার উদ্যোগ। ডেইলি স্টারে এসেছে যে জাগো বাংলাদেশ নামক এনজিওর ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ শাখার প্রায় ৭০০০ স্বেচ্ছাসেবক যারা বিভিন্ন ইংরেজী ও বাংলা মাধ্যমের স্কুল এবং কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে তারা দেশের দশটি শহরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে জাতিসংঘের উৎসাহে প্রবর্তিত ইউনিভার্সাল চিলড্রেনস ডে সম্পর্কে জানাবে এবং পথশিশুদের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করবে ৩রা নভেম্বর ২০১১ তারিখে। একই দিনে তারা ১৮০০ পথশিশুকে বিভিন্ন খেলার যায়গায় নিয়ে যাবে, তাদের খাবার এবং চিকিৎসা দেবে। এর মূল স্পন্সর আমেরিকান দুতাবাস এবং সহায়তা করেছে এয়ারটেল, পিজ্জা হাট, কেএফসি, ফারইস্ট লি: ওয়ান্ডারল্যান্ড, টিটিএল এবং অন্যান্য সংস্থা। অনেক প্রতিথযশা যেমন জাফর ইকবাল স্যারও তাদের উৎসাহিত করেছেন ( এবং তার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেবার ধৃষ্টতা পেয়েছে ছাগুরা)। জাগো বাংলাদেশ ২০০৭ সাল থেকেই ইউনিভার্সাল চিলড্রেনস ডে পালন করে আসছে।

 সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশী যুব্ক করভি রক্ষান্দ ধ্রুবের গল্প স্বপ্নের মতন, অন্তত দেশে বিদেশে সেভাবেই প্রচারিত। বিলেত থেকে ২১ বছর বয়সে আইনে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরে ধ্রুব। কথা ছিল পারিবারিক ব্যবসা সামলাবে সে, কিন্তু মাথায় ভুত চাপল পথশিশুদের জন্যে স্কুল করবে সে। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে রায়ের বাজারে বন্ধুদের সাহায্যে একটি রুম ভাড়া নেয় জাগো এবং একটি ছোট ইংরেজী স্কুল খোলে যেখানে ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের এডএক্সেল কারিকুলামে পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মেলে খাবার ও চিকিৎসা। বাড়ি যাবার সময় আবার আধা কেজি চালও পায়। ধ্রুব করিৎকর্মা ছেলে, তার যোগাযোগ, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে দেশী-বিদেশী সাহায্য যোগাড় করে স্কুলটি এগিয়ে নেয়। এর জন্যে আকর্ষনীয় প্রেজেন্টেশন, ভিডিও ও নানা ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নেয়।

বর্তমানে এই বিল্ডিং এর দুই তলা জুড়ে ৩৬০ জন করে দুই শিফটে ৭২০ জন পথশিশু শিক্ষা নেয়। তাদের ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ অন্যান্য কয়েকটি শহরে আরও গুটি কয়েক ছোট স্কুল আছে। ইতিমধ্যে দেশী ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে ধ্রুব। এছাড়াও দ্যা ঢাকা প্রজেক্ট নামে আরেকটি স্কুল আছে যেখানে বিশেষ ভাবে এমিরেটস এর বিমানবালাদের অর্থায়নে বাংলা ও ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানো হয়।

দুবছর আগে বাড়ি থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়, বেছে নাও - পারিবারিক ব্যবসা না তোমার খামখেয়ালি। ধ্রুব বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলের একটি রুমে আশ্রয় নিয়ে বলে দিনের অধিকাংশ সময়তো এখানেই থাকি, নাহয় আরেকটু থাকলাম। জাগো বাংলাদেশে আরও বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে জড়িত - তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী

ইউনিভার্সাল চিলড্রেনস ডের ২০১০ সালের অনুষ্ঠানে প্রায় ২০০০ স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেয়। এইসব স্বেচ্ছসেবকদের আনুষ্ঠানিক কাঠামো দিতে অঙ্গসংস্থা ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ গঠিত হয় কাকরাইলে এবছর আমেরিকান দুতাবাসের সহযোগীতায়। উদ্দেশ্য আগামী ২ বছরের মধ্যে ২১টি স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা। তাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য ৬৪টি জেলায় স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সামাজিক মিডিয়ার ব্যবহার - আপনি যোগ দিতে চান? ফেসবুক লগিন ব্যবহার করে যোগ দিতে পারেন। ফেসবুকে তাদের স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ৬০০০ এর উপরে। এবারের ইউনিভার্সাল চিলড্রেনস ডে উপলক্ষ্যে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ বেশ কটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে দেশজুড়ে -চট্টগ্রাম, ঢাকার আইএসডি, সেইন্ট যোসেফ ইত্যাদি নামকরা স্কুল ছাড়াও ওয়ান্ডারল্যান্ডে ছিল এইসব আয়োজন। নয়নকাড়া ভিডিও এবং ছবি ফেইসবুক ও ইউটিউবে শেয়ার করা হয়েছে এবং আরও ছাত্রছাত্রী উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আমি কেন সেই কিশোরীকে সাহায্য করলাম সেটি এখন খোলাসা হল। এটি ছিল পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া ইভেন্ট এবং এতে একটি স্টানিং ইফেক্ট ছিল। এতজনের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের পেছনে সামাজিক মিডিয়ার অবদান অনস্বীকার্য। টুইটারের মাধ্যমে জানা যায় যে ঢাকার উত্তরাংশে পুলিশ গতকাল তাদের কার্যক্রমে বাধা দেয় এবং ধ্রুব গুলশান থানায় গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

আজকে অরিত্রের লেখায় জাগো বাংলাদেশের পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা এসেছে। অনেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পোষাক নিয়ে আপত্তি করেছেন (সাবিহ ওমর ভালো জবাব দিয়েছেন তাদের)। অনেকে কত টাকা উঠেছে তার হিসেব চা্চ্ছেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবককে টিশার্ট পরিহিত অবস্থায় শিশা বারে দেখা গেছে সেসব ছবি এসেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সবই কিন্তু বিভিন্ন ব্লগে আসার সাথে সাথে তাদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট হয়ে যাচ্ছে এবং জবাব চাচ্ছে অনেকে। আগ্রহীরা চাইলে ধ্রুব, জাগো ফাউন্ডেশন এবং ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ফেসবুক পেইজে এইসব নিয়ে আলোচনা দেখতে পারেন। সামাজিক মিডিয়ার সুবিধাটা এইখানে - পত্রিকার মত একপেশে রিপোর্ট না। জবাবদিহীতার আশা করা যায়।

এইসব স্বেচ্ছাসেবক দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের অন্তর্গত - কাজেই গুটিকয়েকের ব্যক্তিগত দুর্নীতিকে জেনেরালাইজ করা হয়ত ঠিক হবে না। ২০১০ সালে ৬ ঘন্টায় তোলা হয়েছিল ২৪ লাখ টাকা, এবার শোনা যাচ্ছে ৩৮ লাখ টাকার কথা - জাগো বাংলাদেশ তাদের আয় ব্যয়ের রিপোর্ট প্রদানে স্বচ্ছ হবেন এ আশা রইল - না হলে সবাই যা বোঝার বুঝে যাবেন।

ধ্রুবর ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে একটি অংশ তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না:
One parent of a volunteer complained: I can't find a parking lot at JAAGO School in Karail. Can you please find me a parking lot and please do make a school with parking lot next time?

Korvi Rakshand answered: The kids who comes to the JAAGO School don't have cars. Actually, they don't have 3 meals a day. Right now, JAAGO is trying to arrange education and food for them. Once they study, become rich and can buy cars, we will definitely relocate the school which will have a parking lot and most probably a Helipad also.
এই প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়ে বোঝা যায় যে জাগোকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়েছে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এতজন স্বেচ্ছাসেবকদের একত্রিত করতে। তবে তাদের জন্যেই দামী স্কুলের এইসব উচ্চবিত্ত ঘরের স্বেচ্ছাসেবকরা যাদের অনেকে আদর করে ফার্মের মুরগি বলে ডাকে তারা এই প্রথমবার অ্যাক্টিভিজমের স্বাদ পাচ্ছে। আমেরিকান দুতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠান বলে হয়ত তাদের পিতামাতা তাদের রাস্তায় ছেড়েছে। তারা ভবিষ্যৎে দেশের সংকটময় মুহূর্তগুলোতে এইভাবে নেমে আসবে কিনা এবং কর্পোরেট বেনিয়া গন্ধ ছাড়া উদ্যোগগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ কেমন সেটা দেখার আকাঙ্খা রইল। তারাও দেশেরই অংশ এবং আমরা শ্রেণীভেদ করে তাদের যেন দুরে না ঠেলি। স্বেচ্ছাসেবকতা করা তাদেরও অধিকার এবং দেখা যাক তেল গ্যাস রক্ষার মত বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এর মত জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে তাদের ভূমিকা কেমন থাকে।

এখানে উল্লেখযোগ্য গতকালের আয়োজনে আলোকচিত্রে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে সহায়তা করেছে থ্রু দ্যা লেন্স (টিটিএল) নামক অ্যামেচার ফটোগ্রাফারদের সংগঠন (আমার কয়েক বন্ধুও আছে সেখানে)। জাতীয় অন্যান্য অ্যাক্টিভিজমে তাদের সচরাচর দেখা যায় না। ভবিষ্যৎে কি তাদের পাওয়া যাবে?

জাগো বাংলাদেশ আর ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও আমেরিকান সরকারের ভূমিকা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। ৬৪টি জেলায় স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক হলে তাদের কি লাভ? বিষয়টা এতটা জটিল যে বলতে হয় খুব খেয়াল কৈরা।