Thursday, October 15, 2009

বৃটেনে যুদ্ধাপরাধীদের দৌরাত্ম্য

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী ছাত্র দেলোয়ার হোসেইন সম্প্রতি গার্জিয়ান পত্রিকার কমেন্ট ইজ ফ্রি সেকশনে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ব্রিটেন যে কিছু যুদ্ধাপরাধী আছে তা নিয়ে একটি তথ্য বহুল লেখা লেখেন গত ৭ই মার্চ। তার রিপোর্টটির মধ্যে ছিল যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে নিয়ে কয়েকটি প্যারা যা সেন্সর করার পর বর্তমানে এখানে দেখা যাবে
প্রতিবেদনটি প্রকাশের সপ্তাহখানেক পরে মঈনুদ্দিনের আইনজীবিদের কাছ থেকে উকিল নোটিশ পাবার পর গার্ডিয়ান পত্রিকা উক্ত প্যারাগুলো মুছে ফেলে একটি ডিসক্লেইমার ঝুলিয়ে দেয়:

• On 13 October this article was changed following a legal complaint.
এ প্রসঙ্গে হ্যারি'স প্লেস ব্লগ জানাচ্ছে যে জামাতে ইসলামী এখন বিলেতে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। তারা মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন আর লন্ডন মুসলিম সেন্টার (ইস্ট লন্ডন মসজিদ) পুরো নিয়ন্ত্রণ করে। যখনই কোন ব্লগ আর পত্রিকা তাদের উপর রিপোর্ট করে তখনই জামাতে ইসলামী আর মুসলিম ব্রাদারহুডের আইনজীবিরা আইনি হুমকি পাঠায়। ফলে অনেকেই তাদের ঘাঁটাতে সাহস করে না।
এই ব্লগ মন্তব্য করেছে:
আইনের হুমকিতে গার্ডিয়ান পত্রিকা সত্যি প্রকাশে পিছু হটেছে যা বাক স্বাধীনতার উপর বড় আঘাত। এটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় বিচার লাভের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আরও বড় হুমকি।
মুক্তাঙ্গণ ব্লগে অবিশ্রুত লিখেছিলেন:

ব্রিটেন যে যুদ্ধাপরাধীদের ভূস্বর্গে পরিণত হয়েছে, এই ক্ষোভ এর আগেও প্রকাশ পেয়েছে অন্যান্য দেশের বিভিন্ন নাগরিকদের মন্তব্য থেকে। বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের কারও কারও নিরাপদ বাসস্থান এখন এই ব্রিটেন। এই ব্রিটেনে বসেই গোলাম আযম পরিচালনা করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন।
গার্ডিয়ানের সেন্সরশীপ নিয়ে সেই ব্লগের মন্তব্য:
বাংলাদেশ যখন প্রত্যাশা করছে, ২০০৮-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকার তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে, বিদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী যুদ্ধাপরাধীদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে, ঠিক তখনই একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী চক্র আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, এ-ধরণের বিচার প্রক্রিয়াকে ঠেকানোর জন্যে এবং বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত তথ্যায়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করার জন্যে তারা যথেষ্ট সংঘবদ্ধ।
গার্ডিয়ানের এই কাপুরুষোচিত কার্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বাক স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী সবাইকে এই সকল যুদ্ধাপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানাচ্ছি।


× বাংলাদেশ গণহত্যা আর্কাইভে চৌধুরী মঈনুদ্দিনের ফ্যাক্টশীট

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Thursday, October 08, 2009

সব সমস্যার সমাধান যদি জিন্জিরাতে তৈরি হত

মানুষের এই ছোট জীবনে শারীরিক সমস্যার অন্ত নেই। আমাদের বেশীরভাগই নিজস্বতা ছাপিয়ে অন্য কেউ হতে চাই, কোন রোল মডেলের মত। আমাদের কারও হয়ত রঙ ময়লা, কেউ খাটো (ছেলে হলে) বা কেউ লম্বা (মেয়ে হলে)। কারও নাক বোঁচা, কারও দাত উঁচু, কারও মাথায় টাক। কারও গলার স্বর চিকন, কারও মোটা। কেউ তালপাতার সেপাই আবার কেউ হাতির মত। কারও মুখে ব্রণের দাগ, কারও ত্বক তেলতেলে।

খেয়াল করে দেখেছেন? উপরের প্রত্যেকটি সমস্যাগুলো সমাধানে বাণিজ্যিক পণ্য পাওয়া যাবে। এক গায়ের রঙ ফর্সা করার পণ্যেরই তো বিশ্বব্যাপী বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রী। মানুষ নিজের খুঁতগুলোকে ঢাকার জন্যে অঢেল টাকা খরচ করতে রাজি। কারণ একজনের সমস্ত পৃথিবী আবর্তিত হয় তার নিজের স্বত্বা, তার চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করেই।
বিশ্বের নানা দেশে বিবিধ বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে মানুষের এইসব চাহিদা মেটাতে। ভোগবাদের মূলমন্ত্র যে জিনিষ কেনার সাথে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি তা এসব পণ্যে বিদ্যমান। এই সমস্ত পণ্য প্রলোভন দেখানো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি হয় (হোক দেশটি বাংলাদেশ, ভারত অথবা ইন্দোনেশিয়া)। মেয়ের রঙ ময়লা বলে সে চাকরি পাচ্ছে না, অথচ সংসারের আয় দরকার। বাবা তাকে ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম কিনে দেয় আর সে এয়ার হোস্টেসের চাকুরি পায়, সংসার চালায় - কি সংবেদনশীল আবেগ। আরেক বিজ্ঞাপনে এক ছোট অভিনেতা ত্বক সাদা করার ক্রিম মেখে শ্যুটিংয়ের সময় নামকরা পরিচালকের নজরে পড়ে যায় ও নায়কের অভিনয়ের প্রস্তাব পায়। এইসব প্রচার ও আবেগের মাধ্যমে আমাদের সমাজের বর্ণবাদী মনোভাব আরও প্রতিষ্ঠা পায়।

শুধু এই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করেও অনেক পণ্য এসে গেছে বাজারে। ইসলামী ব্যান্কিং ব্যান্ক পরিমন্ডলে ভাল ব্যবসা করছে। নানা স্ন্যাক্সের সাথে হালাল শব্দটি জুড়ে দিলে বেশী বিক্রি হয়। শুদ্ধ ভেজিটারিয়ান পণ্যের কাটতি অনেক দেশেই। হিজাব পড়া বার্বি ডল বা ইসলামি সাতারের পোশাক জাতীয় পণ্য এখন হালের ফ্যাশন।

আর এসব পণ্য তৈরি ও বাণিজ্যে সেরা দেশ হচ্ছে চীনদেশ। আমাদের দেশে জিন্জিরায় ও তাদের মতই নানা পণ্য তৈরি হয় (পড়ুন নকল হয়) এবং সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে তাদের পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

চীন দেশে বিএমডাব্লিউ এক্স ফাইভ জীপটির ডিজাইনে গাড়ি বিক্রি হয় চাইনিজ ব্র্যান্ড সহকারে। তবে শোরুমের বাইরেই বিএমডাব্লিউর লোগোটি পাওয়া যায় যা লাগিয়ে নিলে আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।


(কৃত্রিম সতীচ্ছদ কিট - ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা এনওয়াই ডেইলি নিউজ)

তাদের উদ্ভাবনী শক্তিরও তারিফ করতে হয়। এক চাইনিজ কোম্পানি বের করেছে আর্টিফিসিয়াল ভার্জিনিটি হাইমেন কিট (কৃত্রিম সতীচ্ছদ কিট) এবং মাত্র ৩০ ডলারে মেয়েদের হাতের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এমন এক কবচ যা তাদের রক্ষা করবে সেই সব বিকারগ্রস্ত ছেলেদের কাছ থেকে যাদের বিবাহিত বধু হিসেবে শুধুমাত্র সতী মেয়েদেরই চায়। অবশ্য বিকারগ্রস্ত বলি কেন - এটি তো এখনও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেরই প্রথা - সাদা চাদরে রক্তে মেয়েদের স্বাক্ষর রেখে সতীত্বের প্রমাণ দিতে হয়। খেলাধুলা বা অন্য কারনে সতীচ্ছদ ছেঁড়ার কারণে যেসব মেয়েদের বিবাহিত জীবন/বিবাহ হুমকির মুখে তাদের জন্যে এই পণ্যটি জীবন রক্ষাকারীই বটে। তবে মেয়েদের সে স্বাধীনতা তো দেবে না সমাজ। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড (সংসদের ২০% আসন যাদের) আন্দোলন করছে এই ভার্জিনিটি কিট নিষিদ্ধ করার জন্যে। এটির বিক্রেতাদের উপর ফতোয়া জারী হয়ে গেছে।

আমি শুরু করেছিলাম মানুষের শারীরিক সমস্যা গুলো দিয়ে। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে যে এগুলোর অনেকগুলোই মানসিক সমস্যা যা আমাদের সমাজ লালন পালন করে থাকে। আমরাও এর বাইরে নই তাই আমরা ধরতে পারি না, সব স্বাভাবিক লাগে।

সেদিন এক ভারতীয় টিভি চ্যানেলে দেখলাম কাঁচ দিয়ে তৈরি চোখের আদলে লকেটের এক রক্ষা কবচ বের হয়েছে যা ইন্টারনেটে অর্ডার করা যাবে। আমাদের সফলতার দিকে যারা কুদৃষ্টি দেয় সেগুলো থেকে রক্ষা করবে এই কাঁচের চোখের রক্ষাকবচ। গ্রাফিক্সের মাধ্যমে মানুষের চোখ থেকে ঠিকরানো লাল কুদৃষ্টি কিভাবে ঠেকিয়ে দিচ্ছে কবচটি তা দেখানো হল। নিশ্চয়ই এর কাটতিও প্রচুর কারণ এই কুসংস্কারে ধর্ম-বর্ণ ভেদে অনেকেই বিশ্বাসী।

আমাদের এই সব মানসিক সমস্যাগুলো সমাধানে ভার্জিনিটি কিট বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষার মত জিন্জিরার কোন একটি পণ্যের প্রতীক্ষায় আছি।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন