Monday, March 30, 2009

ইতিমধ্যে দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের এখনও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব

১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করব দন্ডিত যুদ্ধপরাধীদের নিয়ে।

১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে এক বৈঠকে গনহত্যা তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময়ে ৩৭০০০ যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়।


২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ দালাল আইন ১৯৭২’ নামে (রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৮) একটি অধ্যাদেশ জারি হয়। শেখ মুজিবর রহমান সাক্ষরিত সেই অধ্যাদেশে যুদ্ধপরাধী এবং দালালের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে - "কোনো ব্যক্তি যদি একক বা দলগতভাবে বা কোনো সংস্থার হয়ে প্রত্যক্ষ্ বা পরোভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষনে সহযোগিতা করে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকান্ডে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িত থাকে।" কমপক্ষে ২ মাস থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল এই আইনে। অনেক ফাঁকফোকড় ছিল এ আইনে, যার ৭ম ধারায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সর্বময় কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওসি যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনেন তাহলে সেটা গ্রহন করা হবে না, অন্য কোনো আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না- এমন অনেক গলদে ভর্তি ছিল আইনটি। - -অমি রহমান পিয়াল

১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধপরাধীদের সাজা দেওয়ার জন্য নতুন একটি আইন পাস হয়। ‘অ্যাক্ট নং-১৯, ১৯৭৩’ (লিংক-৩) নামের এই আইনে গনহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, বিচার এবং সাজা দেওয়ার অধিকার রাখা হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানী ১৯৫ জন উচু পদমর্যাদার সেনা অফিসারের বিচার বাংলাদেশেই যাতে করা যায় এমন। কিন্তু আন্তুর্জাতিক চাপে ও পাকিস্তানের স্বীকৃতির আশায় ১৯৭৪ সালে ত্রিদেশীয় একটি চু্ক্তির আওতায় ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়া পাকিস্তানে ফেরত নেয়া হয়।


বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান (দেশে অবস্থিত) যুদ্ধাপরাধী দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। কথাটা পুরো সত্যি নয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় প্রান্তিক পর্যায়ের দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করা হয়েছে। হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন এবং স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এবং নেতৃস্থানীয় কোনো দালাল ও ঘাতককে এই ক্ষমা ঘোষণার আওতায় নেওয়া হয়নি। অধ্যাপক গোলাম আযম থেকে শুরু করে নুরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, খান এ সবুর, মাহমুদ আলী, খাজা খয়েরুদ্দিন, রাজা ত্রিদিব রায়ের মতো নেতৃস্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে তাদের ফেরার ঘোষণা করা হয় (১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২, দৈনিক বাংলা)। ক্ষমার আওতায় পড়েননি রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর কোনো নেতা। তালিকা দেখলে দেখা যাবে ঠিক কারা এসব নেতৃত্বে ছিলেন। -অমি রহমান পিয়াল

১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বরের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় মুক্তি পায় প্রায় ২৬০০০ অভিযুক্ত। কিন্তু ৭৫২ অভিযুক্ত ও বিচারাধীন ১১০০০ অভিযুক্ত তখনও জেলে ছিল। ৩১শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত সায়েম এবং চিফ মার্শাল ল এডমিনিষ্ট্রেটর জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ দালাল আইন ১৯৭২’ (রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৮) বাতিল করেন। এর ফলে ৭৫২ জন অভিযুক্ত ও বিচারাধীন সকলে ছাড়া পেয়ে যায়।

আজ প্রথম আলোতে মিজানুর রহমান খান বলেছেন :


যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নে যখন ট্রাইব্যুনাল গঠিত হতে যাচ্ছে, তখন একটি মিথ বা কল্পকথা ভেঙে দেওয়া দরকার। মিথটি হলো, বিচারপতি সায়েম ও জেনারেল জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করার মাধ্যমে কারাগারে আটক ও দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু কথাটি এভাবে সত্য নয়। এর আড়ালে মস্ত একটি সত্য চাপা পড়ে আছে।

সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ও ১৯৭২ সালের দালাল আইন রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর চেয়ে বেশি কিছু।

দালাল আইন বাতিল অধ্যাদেশ পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বৈধতা’ পেলেও তা ছিল একটি এখতিয়ারবহির্ভুত পদক্ষেপ। আইনের সরল পাঠে এটা বলা যায় যে ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ উপদফায় ‘কখনো বাতিল বা বেআইনি হয়েছে বলে গণ্য হবে না’ কথাটির অর্থ এই যে, ওই আইনটি আজও বহাল রয়েছে। বিচারপতি সায়েমের অধ্যাদেশটি ভয়েড অ্যাবিনিশিও বা গোড়া থেকে বাতিল। এখন হয়তো কেবল একটি রিট দায়ের করলেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংবিধানের অভিভাবকের দায়িত্ব পালনকারী উচ্চ আদালতের কাছ থেকে এ মর্মে একটি ঘোষণা আসা স্বাভাবিক প্রত্যাশা হতে পারে যে দালাল আইন বাতিল আইনের কখনো অস্তিত্ব ছিল না।

পঁচাত্তরের পরে কার্যত দুটি ইনডেমনিটি আইন পাস করা হয়েছিল। এর একটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং দ্বিতীয়টি দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল; তাদের ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়। প্রথম ইনডেমনিটির বিরোধিতায় যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, সেভাবে তাঁরা দ্বিতীয় ইনডেমনিটির বিরুদ্ধাচরণ করেননি। এমনকি আজ যখন চারদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উঠেছে, সংসদে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, আমরা ভাবছি এই বুঝি ১৯৭৩ সালের আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হতে যাচ্ছে; তখনও যাদের বিচার করা হয়েছিল তাদের কী হলো সেদিকে খেয়াল দেওয়া হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালকে তো বিচার করতে হবে। একটি বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কোনো অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁরা দন্ড বা খালাস দেবেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের দন্ড ইতিমধ্যে হয়ে গেছে তাদের কী হবে? এই দন্ডিত ব্যক্তিরা কোন জাদুমন্ত্রবলে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছিল তা আমাদের জানতে হবে।

বিস্তারিত পড়ুন প্রথম আলোয়

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন 

Sunday, March 29, 2009

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধে আন্তর্জাতিক চাপ

স্বাধীন বাংলাদেশে কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো না, কেন পাকিস্তানে টিক্কা খানরা গণহত্যার প্রাইজ হিসেবে পরে মন্ত্রী হবার সুযোগ পেয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন পেয়েছে সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অনেকেরই অজানা।

২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭১, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান বলেন, "কোন যুদ্ধাপরাধী আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা। এমনকি গনহত্যা এবং অত্যাচারে জড়িত পাকিস্তানী সেনাসদস্যরাও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।" শেখ মুজিবর রহমান এবং ইন্দিরা গান্ধীর এক সভা শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ভারত সকল সহয়তা প্রদান করবে। - (সূত্র)

তবে টু্করো টুকরো কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় যে ভারতের তত্বাবধানে থাকা যুদ্ধবন্দীদের কেন তৎকালীন সরকার বিচার করতে পারেন নি। প্রথমত:

এর পেছনে আন্তর্জাতিক চাপ একটা বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামের খোলা ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশ্যে ৫ জন অপরাধীর মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন টিভি ও পত্রিকার কল্যাণে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। এই ঘটনাকে নিজেদের অনুকুলে কাজে লাগায় পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ঘটনার হোতা কাদের সিদ্দিকী স্পষ্টই বলেছেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়েছিলো দুজন অবাঙালী কিশোরীকে অপহরণ করার সময়। এবং মৃত্যুদন্ড পাওয়ারা কেউই অবাঙালী নয়।

এসব যুদ্ধাপরাধীকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তড়িত উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিয়াজী ও রাও ফরমান আলীর মতো মাথাগুলোকে ২১ ডিসেম্বর উড়িয়ে নেওয়া হয় কলকাতা। তিন সপ্তাহের এক বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ৮০টি ট্রেন করে সমস্ত যুদ্ধবন্দীদের সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়।
- অমি রহমান পিয়াল

১৯৭২ সালের ২ জুলাই স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে একটি লাইনও নেই। কোথাও বলা নেই যে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হবে বা বিচার হবে না।

সে সময় ভারতের কাছে বন্দী ছিল ৯৩ হাজার যুদ্ধাপরাধী। এর মধ্যে ৮০ হাজার সামরিক এবং বাকিরা বেসামরিক ব্যক্তি।
সবাইকে পাকিস্তান নিজ দেশে নিয়ে যায়। কোনো চুক্তির আওতায় না বরং ভারত তাদের ছেড়ে দিয়েছিল সৌহার্দের নিদর্শন হিসাবে। ভারত যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চায় তারই নিদর্শন হিসাবে ভারত এই সৌহার্দ দেখায়।
- শওকত হোসেন মাসুম

"১৯৭৩ সালের ৫-৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধান বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের একটি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। .... মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের নেতৃত্বে সৌদি আরবের রাজা ফয়সাল, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেডিয়েন এর সহযোগিতায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যার মুলে ছিল ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচারে বাংলাদেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলো এবং এজন্য তখনো পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে নাই । আর পাকিস্তানের মিত্র হিসাবে চীন বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে যোগদানে ভেটো প্রদান করছে । এর মধ্যে চীন পুনরায় জানিয়ে দেয় "After resolution of the war trials issue, Peking will recognise Dacca, and the way will be open for Bangladesh to be admitted to the United Nations" (১৮) ।

(১৫ ই ডিসেম্বর ১৯৭৩) আন্তর্জাতিক আদালত থেকে পাকিস্তানের মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আরব লীগ নেতৃবৃন্দের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। এবার আরব লীগ নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করেন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান করার জন্য । এর জবাবে জুলফিকার আলী ভূট্টো জানান যে বাংলাদেশ ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করলেই কেবলমাত্র পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, সৌদি রাজা ফয়সাল এবং জর্ডানের রাজা হুসেইন এর উদ্যোগে সাতটি মুসলিম দেশের প্রতিনিধি ঢাকা সফর করেন ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজী করাতে । কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে কোন শর্তসাপেক্ষে পাকিস্তানের স্বীকৃতি গ্রহণে অস্বীকার করেন এবং এই বিষয়ে আরো আলোচনা প্রয়োজন বলে অভিমত দেন। - মিরাজ

এর পরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ১৯৪৪ সালের পর দ্বিতীয় প্রাণহারী দুর্ভিক্ষের কবলে পরে। ১৯৭৪ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত এই দুর্ভিক্ষের কারন হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ (সাইক্লোন, খরা ও বন্যা) এর কথা বলা হলেও আসলে এর পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সাহায্যের রাজনীতি। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সমাজতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং পাকিস্তানের থেকে আমেরিকার উপর চাপ ছিল যুদ্ধপরাধী ইস্যু ধামাচাপা দেয়ার জন্যে। তাই বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য সাহায্যের জাহাজ ঘুরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ লোক খাদ্যের অভাবে মারা যায়।

তৎকালীন সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২৬০০০ লোক মৃত্যুবরন করলেও আসলে মারা গেছেন লাখ লাখ।অস্ট্রেলিয়ান (ধন্যবাদ ফাহমিদুল শুধরে দেবার জন্যে) সাংবাদিক জন পিলগার একটি ডকুমেন্টারীতে দেখিয়েছেন কিভাবে নিক্সনের পলিটিক্স লাখ লাখ বাঙালীর মৃত্যুর কারন হয়।






গ্লোবাল হাঙ্গার এলায়েন্সের দ্বেবিন্দর শর্মা বলেছেন :

নবীন বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের দুর্গতির সময় যুক্তরাষ্ট্র ২.২ মিলিয়ন টন খাদ্য সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয় পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেয়ার জন্যে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Friday, March 27, 2009

মসজিদে নামাজ পড়ারতদের বোমা দিয়ে উড়িয়ে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার বাসনা

 
পাকিস্তানে আজ আত্মঘাতী বোমা পড়েছে মসজিদে নামাজ পড়ারত অবস্থায় প্রায় ২৫০ লোকের উপর। প্রাথমিক ভাবে ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, হতাহত অগণিত। খাইবার প্রদেশের নমরুদ শহরে এই হামলা চালানো হয়। (বিবিসি সংবাদে বিস্তারিত )

পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমে তালিবানরা ইসলামী শাসন ও শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার দাবী করে আসছে। তার সাথে রয়েছে শিয়া-সুন্নী বিরোধ। সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চড়াও হয়েছে। সে জন্যেই সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গীবাদী আক্রমণ বেড়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষই তাদের শিকার।

যে কোন আত্মঘাতী আক্রমণই নিন্দনীয়। তবে মসজিদে নামাজ পড়া লোকদের উপর আক্রমণ কোন শত্রুও করবে না। তাই এই আক্রমণের নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

ইসলামী জঙ্গীবাদ কোন মনুষ্যত্ব বিহীন। তাদের দ্বারা যে কোন যুক্তিই খাড়া করা সম্ভব। তার হয়ত বলবে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে যে কোন কিছু যায়েজ।

বর্তমানে বাংলাদেশেও জঙ্গীবাদের শেকড় আছে। এদের মূলোৎপাটন না করতে পারলে অচিরেই বাংলাদেশে পাকিস্তানের মত অরাজকতা সৃষ্টি হবে এবং সাধারণ মানুষেরা তার মূল্য দেবে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Tuesday, March 24, 2009

সিলভিয়া প্লাথের কবিতার অনুবাদ

সিলভিয়া প্লাথ ছেলে নিকোলাস হিউজের সাথে(ছবিতে সিলভিয়া প্লাথ ছেলে নিকোলাস হিউজের সাথে)
 
কবি সিলভিয়া প্লাথ সম্প্রতি আবার সংবাদে এসেছেন তার ৪৬ বছর বয়সী ছেলের আত্মহত্যার খবরের সাথে। এই অভিমানী কবিও ১৯৬৩ সালে ৩০ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন। তার স্বামী ছিলেন ব্রিটিশ কবি টেড হিউজ।

ইমরুল হাসান সিলভিয়ার একটি সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছিলেন সচলায়তনে। তার নামকরা কবিতা "Daddy" এর অনুবাদ করেছি আমি যেটি নিচে দেয়া হল। মূল কবিতাটি পাবেন এখানে

বাবা
তুমি আর, তুমি আর পরোনা
সেই কালো জুতা।
বাস করেছি আমি যার মধ্যে
তোমার পায়ের মতো করে,
রিক্ত, ম্লান হয়ে, ত্রিশ বছর ধরে।
সাহস পর্যন্ত হয়নি হাঁচার বা নিশ্বাস ফেলার।
বাবা, তোমাকে আমার মেরে ফেলতে হত।
কিন্তু চলে গেলে তুমি আমার সময়ের আগেই।
এক বস্তা ইশ্বর, মার্বেলের মত ভারী,
ভয়ানক মূর্তি এবং বিরাট ধুসর এক পা নিয়েই
এবং এক বিশাল মাথা খেয়ালী অতলান্তিকের দিকে,
যেখানে নীলের উপর সীমের মত সবুজ বর্ষিত হয়
সুন্দর নসেট সৈকতের পানিতে।
তোমা থেকে মুক্তির জন্যে আমি প্রার্থনা করতাম,
আহ, তুমি।
জার্মান ভাষায়, সেই পোলিশ শহরে যাকে
দুরমুজ দিয়ে সমান করে দেয়া হয়েছিল
কারন যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ।
সেই শহরের নামটি খুবই পরিচিত।
আমার পোলিশ বন্ধু
বলেছে এরকম আছে কয়েক ডজন।
তাই আমি বলতে পারব না কখনই
কোথায় তুমি পা মাড়িয়েছ,
কোথায় তোমার শেকড়।
পারিনি বলতে কথা তোমার সাথে কখনই,
জিহ্বা আটকে গেছে চোয়ালে,
আটকে গেছে কাঁটা তারের ফাঁদে।
আমি, আমি, আমি, আমি
কথাই বলতে পারতাম না।
আমার মনে হত প্রতিটি জার্মানই তুমি
এবং অশ্রাব্য তোমার ভাষা,
একটি ইন্জিন, একটি ইন্জিন যেন
আমাকে বিরক্ত করছে ইহুদীদের মত,
একজন ইহুদী, দাখাউ, আউসভিৎজ, বেলসেনে
আমি কথা বলা শুরু করলাম ইহুদীদের মত,
আমার মনে হয় আমি হয়ত ইহুদী।
টিরল অঞ্চলের তুষারপাত, কিংবা ভিয়েনার স্বচ্ছ বিয়ার
সত্যি নয়, খাঁটি নয়, বনেদী নয় তোমার কাছে
আমার যাযাবর পূর্বপুরুষ এবং আমার অদ্ভুত ভাগ্য
এবং আমার নকল ব্যাগ, আমার সাধারণ ব্যাগ
আমি হয়ত কিঞ্চিত পরিমাণে ইহুদী।
আমি তোমাকে সবসময়ই ভয় পেতাম
তোমার যুদ্ধবিমান, তোমার গোয়েবলীয় প্রচার
তোমার পরিপাটি গোঁফ
তোমার আর্য চোখ, উজ্জ্বল নীল
পান্জার ম্যান, পান্জার ম্যান, ওহ তুমি।
ইশ্বর নয়, কিন্তু একটি সোয়াস্তিকা চিহ্ন
নিকষ কালো, কোন আলো তা ভেদ করতে পারে না।
প্রতিটি নারীই একজন ফ্যাসিবাদীকে পুজা করে,
মুখ মাড়ানো সেই জুতাকে, সেই নিষ্ঠুরকে
নিষ্ঠুর হৃদয় তোমার মত এক পশুকে।
তুমি ব্লাকবোর্ডের সামনে দাড়িয়ে বাবা,
যে ছবিটি আমার কাছে আছে সেখানে।
তোমার থুতনিতে একটি খাঁজ আছে যেখানে
তোমার জুতা থাকার কথা ছিল।
কিন্তু কম শয়তান মনে হচ্ছে না তার জন্যে।
না, সেই কৃষ্ণাঙ্গের চেয়েও কম না যে
আমার সুন্দর হৃদয় দুটুকরো করে দিয়েছিল।
আমার বয়স ছিল দশ যখন
ওরা তোমাকে কবর দিল।
বিশ বছর বয়সে আমি মরতে চেয়েছিলাম
এবং ফিরতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে, কাছে।
আমার মনে হয়েছিল তোমার হাড় দিয়েও হবে।
কিন্তু তারা আমাকে থলে থেকে বের করে
এবং আমাকে আঁঠা দিয়ে জুড়ে দেয়।
তখন আমি জানি আমার কি করতে হবে,
আমি তোমার একটি মূর্তি বানাই।
একটি কৃষ্ণাঙ্গ মুর্তি মাইন কাম্ফের মত যার চেহারা।
এবং নিপীড়নের প্রতি ভালোবাসা জন্মালো
এবং আমি বলেছি আমি রাজী, আমি রাজী।
তাই বাবা, আমার অবশেষে মুক্তি হয়েছে
সেই কালো টেলিফোনটির তার উপড়ে ফেলা হয়েছে,
সেই কন্ঠ আর আমাকে বিরক্ত করবে না।
আমি যদি একজনকে খুন করে থাকি
তাহলে কিন্তু দুজনকেই শেষ করে দিয়েছি।
সেই রক্তচোষা যে তোমার প্রতিমূর্তি হয়ে এসেছিল
এবং বছরখানেক ধরে আমার রক্ত চুষেছিল,
সাত বছর ধরে, যদি তুমি জানতে চাও।
বাবা, তুমি এখন শুতে পার।
তোমার কালো হৃদয়ে এখন একটি লম্বা পেরেক।
গ্রামের লোকজন কখনই
দেখতে পারত না তোমাকে,
তারা এখন খুশীতে নাচছে এবং
পদাঘাত করছে তোমাকে।
তারা সবসময়ই জানত তুমিই...।
বাবা, বাবা, ওহ জালিম বাবা আমি মুক্তি পেয়েছি।
সিলভিয়ার নিজ কন্ঠে কবিতাটি শুনুন:



ছবি: টাইমস অনলাইন এর সৌজন্যে।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, March 21, 2009

একাত্তরের গণহত্যার ভিডিও

এবিসি নিউজ (৩০শে নভেম্বর ১৯৭১)

নীচের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কিভাবে পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢাকার কাছের এক গ্রামের ৭৫ জন নারী পুরুষ ও শিশুকে বীভৎস ভাবে ধর্ষণ ও হত্যার পর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়েছে এবং সমস্ত গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদের অপরাধ তারা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছিল।

এবিসি নিউজের প্রতিবেদক বলছিলেন, এরা যদি মুক্তিবাহিনীর লোক নাও হয়ে থাকে তবে এই বীভৎসতা সচক্ষে দেখার পর তারা অবশ্যই মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করবে এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে।



এখানে সরাসরি দেখুন

হাই রেজল্যুশন ভিডিও দেখুন এখানে

আজকের বিডিআর দ্বারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের ঘটনাতেও আমরা দেখি যে একই ধরনের বীভৎসতা ঘটানো হয়েছে। কাজেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হাত এখানে আছে তা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ই বাংলাদেশের সৌজন্যে

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন