Wednesday, December 24, 2008

উর্দুতে বন্দনা করা এটি কার বাংলাদেশ?


ইসলামিক টিভিতে এবারের বিজয় দিবস উদযাপন করা হয় বাংলা, উর্দু ও ইংরেজী মেশানো একটি অদ্ভুত গান দিয়ে। এও দেখার দিন আসল উর্দুতে আমাদের একাত্তরের কথা শুনতে হয়!

আমার এটিই জানার ইচ্ছা আমাদের দেশে উর্দু ভাষাকে কেন এখনও আমল দেয়া হচ্ছে? কেন মাদ্রাসায় এখনও উর্দু শেখানো হয়? ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে উর্দু জানা লাগে? আমাদের দেশে উর্দু শিখে কার কি লাভ হবে?

(সূত্র: আনহার্ড ভয়েসেস )

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

বাংলাদেশের নির্বাচন ২০০৮ এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার

আগামী ২৯শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ একটি বহুল প্রতিক্ষিত সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত নভেম্বরে সমাপ্ত বহুল প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল যে প্রার্থীরা সিটিজেন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা এমনকি নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। তবে বাংলদেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিত ভিন্ন কারন সাড়ে চোদ্দ কোটি লোকের শতকরা ১ ভাগেরও কম ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পান। যদিও নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে অনেকেই ব্লগ এবং ফেসবুক ব্যবহার করে পরিস্থিতির পরিবর্তনে সচেষ্ট রয়েছেন। সামহোয়্যার ইন , সচলায়তন , আমার ব্লগ , মুক্তাঙ্গন, প্রথম আলো ব্লগ ইত্যাদি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্মে নির্বাচন সংক্রান্ত পোস্টে ভরে গেছে যেখানে যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্লগাররা একে অপরের মতাদর্শের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায়ও লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এসব বিতর্ক আর মতামত কি করে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে যেখানে নীতিনির্ধারকরা, যেমন রাজনৈতিক নেতারা এবং সরকারী আমলারা ডিজিটাল মিডিয়া এবং এইসব কথোপকথন থেকে আপাত:দৃষ্টিতে দূরে থাকেন। বাংলাদেশে এখনও ঐতিহ্যবাহী মূলধারার প্রচার মাধ্যমেরই প্রভাব বেশী তবে সাম্প্রতিক কালে তাদের কারও কারও একপেশে রিপোর্টিং এর কারনে তাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়েবসাইট ইন্টারঅ্যাক্টিভ নয় ফলে জনগণের মতামতকে তারা আমল দিচ্ছেন কিনা তা বোঝার উপায় নেই। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হাজারো প্রার্থীর মাত্র কয়েকজনকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচারণায় নামতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি বক্তৃতাসর্বস্ব এবং প্রচারণামূলক, খুবই কম সুযোগ আছে মূল নেতাদের সাথে কথোপকথনের এবং তাদের কাছে জবাবদিহীতা চাওয়ার। তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষদের কিছুই বলার থাকেনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। তবে জাগরী নামে বাংলাদেশের যুবাদের একটি নির্দলীয় সংগঠন ফেইসবুক এবং ব্লগ ব্যবহার করছে যুবাদের জ্ঞাত এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে যাতে তারা রাজনৈতিক এবং নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় আরও বেশী করে অবদান রাখতে পারে।


আমরা কি? ছবি: জাগরীর সৌজন্যে

জাগরী বর্তমানে একটি প্রচারণা চালাচ্ছে ‘আমাদের ভোট, আমাদের কথা নামে'। তাদের ফেইসবুক পাতা থেকে এই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।



জাগরীর পরিকল্পনা ও সঞ্চালনা সংক্রান্ত মিটিং। ছবি জাগরীর সৌজন্যে

সাম্প্রতিক কালে জাগরীর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে একটি ডকুমেন্টারী তৈরি করে বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্যে ইউটিউবে তা প্রকাশ করা।




৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ডকুমেন্টারীর লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশীরা যাতে প্রার্থী সম্পর্কে জেনেশুনে ভোট দেন। এতে স্বাক্ষাৎকার দেয়া যুবারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। তবে এই ডকুমেন্টারী যুবাদের সেই আশাকেও তুলে ধরেছে যে একটি পরিবর্তন আসবে অচিরেই।

এ বারে নির্বাচন এবং অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের উপর অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেটে। এখন প্রয়োজন বাংলাদেশীদের এইসব তথ্য সম্পর্কে জানা যাতে তারা সঠিক ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারেন।

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যরত বেসরকারী সংস্থা সুজন একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাইট পরিচালনা করছে যাতে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে বিপুল পরিমান তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই সাইটের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন সম্পর্কে বিভিন্ন সাধারণ তথ্য , নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী প্রার্থীদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং আরও অনেক কিছু। সুজনের আরও একটি বিশেষ পরিবেশনা রয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রায় ৪০০০ সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আর্কাইভ রয়েছে । নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের দুর্নীতির রেকর্ড কি রকম তা নাম অনুযায়ী খোঁজা যাবে ওই আর্কাইভ থেকে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সাইটেও নির্বাচন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যেমন ভোটার লিস্ট , পিডিএফ ফরম্যাটে প্রার্থীদের প্রোফাইল এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতি নির্দেশিকা

ই-বাংলাদেশ বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের লিন্ক প্রতিদিন প্রকাশ করছে এবং বিভিন্ন পর্যালোচনা ও তাজা খবর পরিবেশন করছে নাগরিক সাংবাদিকদের কাছ থেকে তাদের বিশেষ নির্বাচন কাভারেজে (ইংরেজী ভাষায়)। এই সাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য যেমন প্রার্থীদের তালিকা এবং বিভিন্ন দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারের লিন্ক রয়েছে। এর আরেকটি সহপরিবেশনা, বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম আমার ব্লগ ও তাদের নির্বাচনী বিশেষ পরিবেশনা শুরু করেছে বাংলা ভাষায়। এই সাইটে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ও নাগরিক সাংবাদিকদের মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় ইংরেজী ভাষার গ্রপ ব্লগ আনহার্ড ভয়েসও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে যাচ্ছে।

সর্বাধিক বৃহৎ বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম সামহোয়ার ইন “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” ইংরেজী দৈনিক দ্যা নিউ এইজ এর সাথে যৌথভাবে নির্বাচনের উপর একটি গ্রুপ ব্লগ শুরু করেছে। নিউ এইজ সংবাদপত্রও সম্প্রতি একটি নির্বাচন পোর্টাল চালু করেছে যাতে এই গ্রুপ ব্লগ থেকে নির্বাচিত লেখা এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও তাজা খবর প্রকাশ করছে। এটিই এ দেশে প্রথম এমন উদ্যোগ, যেখানে একটি মূলধারার প্রচার মাধ্যম তাদের হাউজের বাইরে কোন ব্লগের সাথে মিলে কিছু করছে। এই সাইটটিতে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ ম্যাপ রয়েছে যেখানে পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফলকে দেখানো হয়েছে।

নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারনায় প্রযুক্তির কম ব্যবহারের এই ধারার বিপরীতে আছেন ব্লগার এবং সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান , যিনি রাজশাহী -৬ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন এবং ফেসবুক ব্যবহার করে তার নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। চট্রগ্রাম ৬ আসনের ড: হাসান মাহমুদ একটি ইলেকশন ব্লগ খুলেছেন । চট্টগ্রাম-৮ (কোতয়ালী, বাকলিয়া ও ডবলমুরিং-আংশিক) আসনে জনাব আলহ্বাজ নুরুল ইসলাম ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে একটি ক্যাম্পেইন সাইট খুলেছেন। সেই সাইটে ইউটিউব ব্যবহার করে বেশ কিছু ক্যাম্পেইন করেছেন যা অবশ্যই অনুকরনযোগ্য।

সবাই এটি এখন দেখার অপেক্ষায় যে বাংলাদেশীরা নির্বাচনের সময় ব্লগ, ভিডিও (যেমন ইউটিউব), ফটোগ্রাফ (যেমন ফ্লিকার), টুইটার ইত্যাদি বিভিন্ন নাগরিক মিডিয়া টুল কিভাবে ব্যবহার করে তাদের মতামত জানায়।

মূল: গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে ইংরেজীতে প্রকাশিত ও বাংলা লিঙ্গুয়ায় অনুবাদ হিসেবে প্রকাশিত।

Tuesday, December 16, 2008

আমাদের সংবাদপত্রের বর্তমান হাল ও আশার আলো হিসেবে ব্লগ

বিজয় দিবস এসে গেছে। পত্র পত্রিকায় বেশুমার পাতা ভরানো আর্টিকেল পাবেন দিনটিকে উপলক্ষ্য করে। কিন্তু সেগুলোতে খুব কমই দেখা যায় নতুনত্ব, গভীরতা ও সত্যের ছায়া।

একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে একটি রিপোর্ট হয়েছে যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নানা সাইট সম্পর্কে বলা হয়েছে। খুবই মহৎ উদ্যোগ। এতদিনে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গেছে বলে অভিনন্দন।

কিন্তু খটকা লাগল সাইটগুলোর বর্ণনা পড়ে:

"ইউ টিউব (http://www.youtube.com) সহ বিভিন্ন সাইট মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, ঘটনাপ্রবাহ আর মতামতে ভর্তি৷ জেনোসাইড বাংলাদেশ (http://www.genocidebangladesh.org) নামের সাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি৷"

জেনোসাইড বাংলাদেশ সাইটে জর্জ হ্যারিসনের গান ডাউনলোড করার কোন অপশন নেই। ইউটিউবে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের ভিডিও সার্চ করা যায় সেটার ব্যখ্যা প্রয়োজন ছিল। লেখাটা পড়ে মনে হয়েছে যে লেখক সাইটগুলোর ভেতরে গিয়ে কিছু পড়েন নি। তাহলে হয়ত বলতেন না:

"ইন্টারনেটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার কোনো কাজ এখনো শুরু হয় নি"

আশা করব উনি এই ত্রিশটি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সাইটগুলোর প্রতিটি পড়বেন এবং তার পর আবার মন্তব্য করবেন।



আজকাল প্রচার মাধ্যমের সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানুষের মনে। এই তো সাম্প্রতিক 'বাংলার তাজমহল' সংক্রান্ত বিতর্কে দেখা গেছে দেশী বিদেশী প্রচার মাধ্যমগুলো লোকমুখে শুনে সরেজমিনে তদন্ত না করেই অতিরন্জিত রিপোর্ট করেছে আর সামহোয়ার ইনের ব্লগাররা এই কেলেন্কারী উদঘাটন করেছে

আমাদের দেশের পেশাদারী সাংবাদিকদের অভিযোগ করতে শোনা যায় যে ব্লগে গভীর কিছু নেই, গালাগালিতে ভর্তি। যেন ব্লগে খালি গুজব ছড়ানো হয় আর প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমে সত্য রিপোর্টের ছড়াছড়ি। অথচ উপরের ঘটনাগুলো এর বিপরীত কিছুই প্রমাণ করে।

ব্লগের সুবিধা হলো এখানে কেউ পয়সার বিনিময়ে ফরমায়েসী লেখা লেখে না, মনের তাগিদেই লেখে। আর অসত্য ও মিথ্যা বলে এখানে কেউ পার পায় না। কারন কমিউনিটিই বিচার করে, যাচাই বাছাই করে সত্যতা। সাথে সাথেই কমেন্ট পড়ে। অযৌক্তিক, সূত্র ছাড়া কিছু বলে পালাবার উপায় নেই। সংবাদপত্রগুলোকে বলছি সাহস থাকলে অনলাইন সংস্করণগুলোতে কমেন্ট চালু করুন। প্রতিটি সংবাদেরই যৌক্তিকতা প্রমান হয়ে যাবে।

মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Monday, December 15, 2008

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে


"আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।"

আল বাঘদাদিয়া চ্যানেলের ইরাকী সাংবাদিক মুন্তাজের আল জাঈদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বুশের দিকে জুতো ছুড়ে প্রতিবাদ জানানোর সাহস করল এই বলে "ইরাকী জনগণের কাছ থেকে উপহার নাও"।

আপনাদের আশে পাশে রাজনৈতিক সমাবেশে যখনই কোন যুদ্ধাপরাধী মুক্তিযোদ্ধাদের হজ্জ্ব ডেলিগেশনে নিয়ে যাবার মূলো ঝুলাবে তখনই জানিয়ে দেয়া উচিৎ যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সাথে হজ্জ্বে যেতে রাজী নয় এমনকি তাদের সাথে বেহেস্তেও যাবে না । সেটা না পারলেও কি নিদেন পক্ষে কেউ কি মুন্তাজের আল জাঈদির মত সাহস দেখিয়ে পায়ের জুতোর সদ্ব্যবহার করতে পারবে?

আপনাদের আশে পাশে যখন বিশ্ব বেহায়া সমাবেশে নাটকীয় সুরে বলবে আমি শেখ হাসিনার বড় ভাই তখন ও কি কারও জাঈদির মত সাহস হবে প্রতিবাদ করার?

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন