Friday, October 31, 2008

বার্লিন: গল্পের শহর, অথবা শহরটা নিজেই গল্প - ২

ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস:

বিশ্বের অনেক স্থানেই আলোক উৎসব পালন করা হয় বিভিন্ন রুপে। ভারতে দিওয়ালী বা নেপালে দীপাবলী ধার্মিক উৎসব হিসেবে অনেকে দেখলেও এটি আসলে এখন সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবেরই অংশ হয়ে গেছে। ইরানের নববর্ষের (নরোজ) সময়ও তারা আলোক উৎসব করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আলোক উৎসবের মধ্যে রয়েছে ইহুদিদের হানুকা উৎসব, ফরাসীদের ফেত দে লুমিয়েখ (যা প্লেগ থেকে বাঁচতে মা মেরীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত) যেগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে উদযাপিত হয়।

জন্ডারমেনমার্কট 
জন্ডারমেনমার্কট

উপরের এই ভুমিকার কারন হচ্ছে আজকে বার্লিনের ফেস্টিভাল অফ লাইটসের কথা বলব। প্রতি বছর তারা অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগে এই আলোকসজ্জার আয়োজন করে। এর ঐতিহাসিক পটভুমি খুঁজে পেলাম না তবে আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি পর্যটন উদ্যোগ। যেমন তাদের এবারের পর্যটন স্লোগান "Be Berlin" এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে।

তবে যাই হোক জার্মানরা যা করে তা অনেক পারঙ্গমতার সাথেই করে এবং এই বৈশিষ্টই তাদের এগিয়ে যাবার কারন। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই বাসার কাছাকাছি আকাশে মেঘের গায়ে দুর থেকে সার্চ লাইট পড়তে দেখেছি। ভাবছিলাম এ আবার কি। এই ফেস্টিভ্যালের কথা খেয়াল ছিল না তবে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাওয়া হলো এক রাতে।

জিগেসজয়েলে-ভিক্টরি টাওয়ার 
জিগেসজয়েলে-ভিক্টরি টাওয়ার

শহরের সব পর্যটন আকর্ষণগুলো অপূর্ব আলোক সজ্জায় পূর্ন হয়ে গেছে। শহরের প্রধান রাস্তায় ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা যেন এখনই শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দিকে গিয়ে সার্চ লাইটের ব্যাপারটি খোলাসা হলো। ইউরোপা সেন্টারের কাছে এক উঁচু বাড়ী থেকে বিশাল সব সার্চ লাইচের আলো চারিদিকে দুরদুরান্তে ও আকাশে ফেলা হচ্ছে। সাথে সবুজ লেজার লাইট ও রয়েছে। আকাশে মেঘ ছিল বলে অপূর্ব দৃশ্য ছিল সেটি। আমার পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় এই আলোকসজ্জাগুলোর কিয়দংশও আসে নি।

ফরাসী চার্চ 
ফরাসী চার্চ

সাথে সাথে আরেক মজার ব্যাপার দেখলাম। কাধে ট্রাইপড হাতে অসংখ হবি ফটোগ্রাফাররা ছুটেছে। পরে এক জার্মান ব্লগ থেকে কিছু লিন্ক পেলাম। সেখানে উল্লেখ করা ছিল যে আপনারা এই ফেস্টিভ্যালের ছবিগুলোতে যেমন দেখছেন তেমন সুন্দর আপনি কাছে থেকে কখনই দেখতে পাবেন না। সত্যিই তাই। কারন বার্লিন ডোম ও উন্টার ডেন লিন্ডেন ছিল লোকে লোকারণ্য। ওখান থেকে কোনকিছুই ভালভাবে দেখতে পারিনি যেমন এই ফ্লিকারে আপলোড করা ছবিগুলো দেখাচ্ছে:

ফ্লিকারে বার্লিন ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস

বিশ্বজুড়ে রাতের বেশ কিছূ অসাধারন ছবি

পাতা ঝরার দিন:

শীত চলে আসছে দ্রুত। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পাতা ঝরার খেলা দেখলাম। এ সময়টা সত্যিই খুব অন্যরকম লাগে। ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যাচ্ছে আর নানা রকম ভাবে ঘুরে ঘুরে পাতাগুলো পড়ে যাচ্ছে গাছ থেকে। সবুজ, হলুদ, বাদামী ইত্যাদি রংয়ের মিশ্রনে অপূর্ব দৃশ্য। সাথে মৃদু পাতা ঝরার শব্দের দ্যোতনা। এমনিতে বোঝা যায়না। কিন্তু হঠাৎ করে খেয়াল করলে মুগ্ধ হয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে শুনি।

ঝরা পাতা 
ঝরা পাতা

আমার মেয়ের কিন্ডারগার্টেনের সামনে অনেকগুলো মেপল গাছ আছে। সেগুলো বিশাল বিশাল পাতা নীচে পড়ে এমন অবস্থা হয় যে রাস্তাঘাট সব ঢেকে যায়। প্রতিদিন তাই দেখি রাস্তার কোনায় পাতাগুলো জড়ো করে রাখা। জার্মানরা খুবই প্রযুক্তিপ্রেমী জাতি। তাই চিরাচরিত ঝাটার বদলে পাতা সরাতে তারা ব্যবহার করে শক্তিশালী ব্লোয়ার। এর পর মাঝে মাঝে বড় ট্রাক এসে সাকশন পাইপের মত আরেকটি ব্লোয়ার দিয়ে রাস্তার কোনা থেকে সেগুলো তুলে নেয়।

পড়ে থাকা আপেল 
পড়ে থাকা আপেল

এই সময়টা হচ্ছে আপেলের। এ মাসের প্রথমে জার্মানীর দক্ষিণে লেক কন্সট্যান্স এলাকায় গিয়েছিলাম এবং ওখানকার আপেল গাছের ছড়াছড়ি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। রাস্তার ধারে বাড়ীর আঙ্গিনায় আপেল গাছে টসটসে আপেল ঝুলছে, কিছু পড়ে আছে। কিন্তু হয়ত পেড়ে খাবার লোক নেই। আমরা যেখানে থাকি সেই এপার্টমেন্ট কম্প্লেক্সের পেছনে তিনটি বিল্ডিংয়ের জন্যে অনেক গাছ গাছালীতে ঘেরা বাচ্চাদের জন্যে একটি খেলার জায়গা। এই তল্লাটে মনে হয় শিশুদের সংখ্যা কম তাই সেখানে লোকজন দেখা যায়না বললেই চলে। টেবল টেনিসের টেবলটায় ছাতা পড়ে আছে, পাশে শেওলা পড়া চেয়ার। বহুকাল কেউ মাড়ায় না এ পথ। আমার মেয়ে সুইংয়ে চড়বে বলে বায়না ধরে মাঝে মাঝে তাই ইদানীং সেখানে যাওয়া হয়। মাসখানেক আগে আবিস্কার করলাম প্লে গ্রাউন্ডের পাশে একটি গাছে ছোট ছোট এক ধরনের ফল হয়ে রয়েছে। পেড়ে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা থাকলেও সেটি নিষেধ করে আবার কোন নিয়ম আছে কিনা ভেবে করা হয়নি। সেদিন দেখি ফলগুলোর অনেকগুলোই পেঁকে বেশ কিছু মাটিতে পড়ে রয়েছে। বুঝলাম এটি ছোট সাইজের এক ধরনের আপেল। বাড়ীতে এনে খেয়ে দেখলাম টক টক কিন্তু খেতে মন্দ নয়। এই বোধহয় ধনী ও গরীব দেশের মধ্যে পার্থক্য। ওখানে লোকে খেতে পায়না। এখানে খাবার পড়ে নষ্ট হয়, খাবার লোক নেই।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Saturday, October 25, 2008

বাংলাদেশের ভোট: পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি ইগভার্নেন্স সাইট

বাংলাদেশের একটি এনজিও সুজন (সুশাসনের জন্যে নাগরিক) বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যে উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছে।

বেশ কয়েক বছর আগে তারা প্রথমে অনলাইনে তুলে ধরে ২০০০ সালের ভোটার তালিকা, যাতে লোকে সার্চ করে তাদের তথ্য সঠিক আছে কিনা নিশ্চিত করতে পারে।


সম্প্রতি হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সংস্থা একটি ব্যতিক্রমী ওয়েবসাইট তৈরি করে যার নাম বাংলাদেশের ভোট। এর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে সেইসব বিষয় তুলে ধরা যা একজন ভোটারকে তাকে ভোট দেবার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে। বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল:

১) প্রার্থীর আয়কর রিটার্নের তথ্য , নির্বাচনের ব্যয়ের উৎস , এফিডেভিট
২) প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের তথ্যাদির তুলনা
৩) একটি দুর্নীতির সংবাদের আর্কাইভ (জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সন্ত্রাস, দুর্নীতি ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের সংকলন) যাতে সার্চ পদ্ধতি যোগ করা আছে, কোন প্রার্থীর প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিনা তা বের করার জন্যে।
৪) একটি আলোচনার ফোরাম
৫) বিভিন্ন দলিল

এ ছাড়াও তারা ভোটাররা কিভাবে আদর্শ প্রার্থী নির্বাচন করবে তা নিয়ে একটি শিক্ষামূলক ভিডিও প্রকাশ করে:



ঝর্ণার গান ব্লগের আফরুজ জানাচ্ছেন যে উল্লিখিত এই Votebd.org সাইটটি সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার মন্থন পুরস্কার পেয়েছে ইগভার্নেন্স ক্যাটেগরীতে।


ছবিতে সামহোয়ারইনের ব্লগার রুবনকে দেখা যাচ্ছে (ছবির উৎস )

এই সাইটটির সাথে যারা জড়িত সবাইকে অভিনন্দন। আশা করব আসন্ন নির্বাচনে এই সাইটটি প্রার্থীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশের ভোটারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Wednesday, October 08, 2008

এ যুগের ফতোয়া: বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা?

সৌদি আরবের সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রধান বিচারপতি সালেহ আল লুহাইদান এক রেডিও অনুষ্ঠানে ফতোয়া দিলেন যেহেতু টিভি চ্যানেলগুলোতে অনৈতিক অনুষ্ঠান দেখানো হয় তাই তাদের মালিকদের মেরে ফেলা জায়েজ আছে। ৭৯ বছরের এই বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ যিনি সৌদি আরবের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠত তার মুখ থেকেই যখন এরকম হুমকি বেরিয়ে আসে তখন অশিক্ষিত মৌলবাদীরা কি করবে তা আল্লাহই মালুম। তিনি অবশ্য রেডিও অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু বলেন নি। নিজে রেডিও অনুষ্ঠানে ছিলেন বলেই কি?

এইখানেই শেষ নয়, সৌদি আরবের আরেক বিশিষ্ট আলেম শেখ মুহাম্মদ আল হাবাদান নতুন এক ফতোয়া দিয়েছেন। কালো নেকাব পরা মেয়েরা যেহেতু চোখে মেকাপ লাগায় তা অনেক পুরুষকে উত্তেজিত করে কুপথে নিয়ে যেতে পারে। তাই তিনি হুকুম দিয়েছেন এখন থেকে মহিলাদের নেকাবের পাশাপাশি এক চোখ ঢাকা থাকবে।

অবশ্য উনি বলেন নি যে কোন চোখ ঢাকা থাকবে, ডান না বাম। এতে একটি সমস্যা দেখা দেবে। কেউ চোখের পাতা ফেললে যেহেতু অপর চোখটি দেখা যাবে না তাই অনেকে মনে করতে পারে যে সে চোখের বিশেষ ভঙ্গী করে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। সেটি আরও কেলেন্কারীর জন্ম দিতে পারে। তাই মনে হয় পরবর্তী ফতোয়া আসবে যে মেয়েরা দুটি চোখই আবৃত থাকবে, কারন কোনক্রমেই মেয়েদের জন্যে পুরুষদের উত্তেজিত হতে দেয়া চলবে না।

বাহরাইনের ব্লগার এস্রা শেখের ফতোয়ার জবাব দিয়েছে :

"আলেমদের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমার একটি প্রস্তাব আছে। আপনারা যদি মহিলাদের চোখ দেখে উত্তেজিত হয়ে পরেন তাহলে আপনারা আপনাদের চোখ দুটি উপড়ে ফেলুন, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মেয়েরা আপনাদের বিকৃত মানসিকতার জন্যে আর কত মূল্য দেবে?"



প্যালেস্টাইনি ব্লগার হাইতাম সাব্বাহ এক চোখ খোলা বোরখায় মহিলাদের কেমন দেখা যাবে তা চিত্রে প্রকাশ করে বোঝার চেষ্টা করছেন শেখ মুহাম্মদ কি বোঝাতে চাইছেন।

সৌদি আরব একটি পরিপূর্ণ ইসলামী শাষনভিত্তিক দেশ। সে দেশে এরকম নাটক সার্কাস হচ্ছে। অথচ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবে না।

বাংলাদেশে এখন ফতোয়া নিষিদ্ধ করা আছে যদিও অনেকে জানেনা বা মানে না। এখন আপনারাই বলেন আমাদের দেশে কি পরিপূর্ণ ইসলামী শাষনভিত্তিক প্রথা এরপরও লোকজন চাইবে?

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন