Tuesday, May 27, 2008

আরিফকে কি সবাই ভুলে গেছে?

আমাদের সমাজে অনেক কিছু বিষয়েই আমরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। কিন্তু আমাদের দৌড় ঐ মৌখিক আস্ফালন পর্যন্তই। কার্যকারনে দেখা যায় যে আমরা আশা করে থাকি যে অন্য কেউ আমাদের হয়ে কাজগুলো করে দেবে।
কার্টুনিস্ট আরিফ নিয়ে যে সব নাটক অনুষ্ঠিত হল আমাদের দেশে এবং এ নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত নেই যে ছেলেটি শুধু শুধু পরিস্থিতির শিকার হয়ে মিথ্যে অপবাদ নিয়ে এতদিন জেলে থাকল। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে আরিফ নিয়ে একটিও উল্লেখযোগ্য রিপোর্ট পড়ি নি। কোন অদৃশ্য কাঠির ইশারায় সবাই তাকে এড়িয়ে গেছেন চাচা আপন বাঁচা বলে।

একমাত্র ব্যতিক্রম আজ দেখলাম। বিশিষ্ট সচল এবং সাংবাদিক অমি রহমান পিয়াল আরিফের একটি স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ইংরেজী ভাষায় এটি প্রকাশিত হয়েছে ই বাংলাদেশে

স্বাক্ষাৎকারটি পড়ে আমার অনেক গুলো অনুভূতি হয়েছে: ছেলেটির অসহায়ত্ব দেখে বুক কান্নায় ভরে উঠেছে, জেলে জেএমবি দ্বারা আক্রান্ত হবার ঘটনা পড়ে ক্রোধে ফেটে পরেছি (এই কি তাকে সেইফ কাস্টডিতে রাখা?), মঈনুল হোসেনের কারনেই কি তার এই ভোগান্তি সে চিন্তায় মগ্ন হয়েছি। তার জেলের সঙ্গী আরাফাত রহমান কোকোর ভণ্ড মুখোশ দেখে হেসেছি। সবচেয়ে কষ্টের কারন এই ছিল অমি রহমান পিয়ালের আগে কোন সাংবাদিক আরিফের স্বাক্ষাৎকার নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।

আমাদের সমাজকে প্রশ্ন করতে হবে কিসের ভয়ে আমরা সব সময় থাকি? কেন আমাদের ধর্মের মুখোশ পড়ে এই ভণ্ডামি গুলো করতে হয়?

আপনারা স্বাক্ষাৎকারটি পড়ে নেবেন। অমি রহমানের প্রতি রইল শ্রদ্ধা আর সহস্র কোটি ধন্যবাদ।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Monday, May 26, 2008

যে যায় লন্কায়

বাংলাদেশের বহুল পঠিত দৈনিক ডেইলি স্টারের স্পষ্টবাদী হিসেবে কিছুটা হলেও যা সুনাম ছিল বর্তমানে তা অবনতির দিকে।

এই বিবর্তনটা যেন আমাদের চোখের সামনেই হল। এই তত্তাবধায়ক সরকার গত বছর এগারই জানুয়ারী এলেন। এর পর ১৫ তারিখের ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তেই মাহফুজ আনাম বাণী দিলেন "আমাদের দমানোর চেষ্টা চালালেও আমরা চুপ করে থাকব না।" তিনি বলে গেলেন গত ১৬ বছরে এই প্রথম তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফোন পেয়েছেন এবং দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।

তারপর জানুয়ারী ১৯, ২০০৭ এ ডেইলি স্টারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদককে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রেস সচিব করা হল। এর পর থেকেই ক্রমান্বয়ে আমরা দেখেছি এই পত্রিকার নতুন চেহারা।

ডেইলি স্টারের তাসনিম খলিল এবং প্রথম আলোর কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানের উপর যে নির্যাতন চলল তার বিপক্ষে তাদের মালিকপক্ষ কোন বলিষ্ঠ অবস্থান নেয় নি। বরং তাদের পানিতেই ফেলে দিয়েছে ও ত্যাজ্য করেছে।

ওদিকে আমরা দেখেছি তাদের "১৭ বছরের নির্ভীক ও স্বজনপ্রীতি ছাড়া সাংবাদিকতার বড়াই করতে।" অথচ ডেইলি স্টারের একজন সাংবাদিক বলছেন:

"প্রচার মাধ্যমের মুখ এখনও বাঁধা। আমরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন মন্তব্যই করতে পারি না। এক বছরেরও বেশী সময় ধরে এটি চলছে। তাসনিম খলিল ও আরিফুর রহমানের কেইস দুটোর পেছনে বড় কারন রয়েছে।"
সম্প্রতি আব্দুল হান্নান (পিচ্চি না জামাতি?) নামে একজন ফ্রিল্যান্স লেখকের একটি মন্তব্য সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারে যেখানে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন (৪র্থ প্যারায়) যে "দেশে জরুরী অবস্থা থাকা সত্বেও প্রচার মাধ্যমের কন্ঠরোধের কোন উদ্যোগ নেই। এই প্রথম কোন সাংবাদিক হয়রানি বা দমন নীতির মুখে পরে নি।"

সেন্সরশীপ নিয়ে নিউ এইজের সাম্প্রতিক বলিষ্ঠ অবস্থানের জন্যে এবং রেহনুমা আহমেদের চোখ খুলে দেয়া আর্টিকেলের জবাবে হান্নান বলেছেন (৭ম প্যারা):
"এক শ্রেনীর সংবাদপত্র, বিশেষ করে একটি প্রধান সারির ইংরেজী দৈনিক তাদের সম্পাদকীয়তে সরকারের প্রতিটি কার্যকারনের প্রতিবাদ ও হেয় করে আসছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করানোর জন্যে।" সরকারের ফোন কল এবং উপদেশকে উনি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মানছেন না।
অসিফ ইউসুফের ঢাকা শহর ব্লগে এই লেখার প্রতিবাদে ডেইলি স্টারের সম্পাদককে গণ ইমেইল করতে বলা হয়
সেই ব্লগে ডেইলি স্টার থেকে জাফর (?) নামে একজন মন্তব্য করেন:
১) এটি ফ্রিল্যান্স কন্ট্রিবিউটরের বক্তব্য, ডেইলি স্টারের নয়।
২) কাজের চাপে এবং লোক স্বল্পতায় এই লেখাটার সত্যতা যাচাই করা যায় নি।
৩) পাঠকরা নিশ্চয়ই জানেন যে এই সেকশনটি সংবাদ নয় তাই এর যথার্থতা আশা করা ঠিক নয়। এবং এই ব্লগারকে উপদেশ দেয়া হয়েছে কিছু ভদ্রচিতভাবে তার বক্তব্য ডেইলি স্টারে পাঠাতে, সেটি ছাপানো হবে।
এটি ভাল যে ডেইলি স্টার তার মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন হয়েছে এবং ব্লগে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটি যদি এমন দুর্বল যুক্তি না দিয়ে তাদের কাজকর্মে প্রতিফলিত হত তাহলে সবারই মঙ্গল হত।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Wednesday, May 14, 2008

বেগুন কি ফল?

ছোট্ট ঈশান ধানমন্ডির এক নামকরা ইংরেজী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তার মা তার পড়াশোনা ও রেজাল্ট নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। এবার সে অন্তর্বর্তী কালীন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে সে নিয়ে তার আক্ষেপের সীমা নেই। ছেলেটি কবে যে ফার্স্ট হবে!

বাসায় যখন খাতা আনা হল তখন দেখা গেল সে অন্য কয়েকটির মধ্যে একটি সহজ প্রশ্ন ভুল করেছে। প্রশ্নটি ছিল "বেগুন কি ফল না সব্জী"। সে লিখেছে সব্জী তাই পেয়েছে শুণ্য। তার মা এতে খুবই বিস্মিত হল। তার মনে পড়ল বইয়ে এরকম কিছু ছিল যে বেগুন ও টমেটো ফল। কিন্তু এ নিয়ে কনফিউশন থাকায় তিনি তা ঈশানকে পড়ান নি। হতচ্ছাড়া ছেলেটা নিশ্চয়ই ক্লাসে এটি মন দিয়ে পড়ে নি। এখন তিনি আক্ষেপ করতে লাগলেন কেন ঈশানকে বলেন নি যে এরকম প্রশ্ন আসলে বেগুন আর টমেটোকে ফল হিসেবে লিখতে।

ঈশান কে ভৎসর্না করায় তার গায়ে লাগল ব্যাপারটি খুব। সে নানীকে এসে জিজ্ঞেস করল, "নানী বলত বেগুন ফল না সব্জি"? নানী বলল "তোদের ব্যাপার স্যাপার কিচ্ছু বুঝি না। সারা জীবন ভাতের সাথেই তো আমরা বেগুন খেলাম। ছোট কাল থেকে এটিকে সব্জি হিসেবেই জানি। এটাকে আবার ফল কে বানাল?" ঈশান উল্লাস করে উঠল "ইয়াইইই!" বাবাকে বিচার দিলো "দেখো বাবা টিচার আমার নাম্বার কেটে দিয়েছে এইজন্যেই তো ফার্স্ট হতে পারলাম না। মা পেছন থেকে বলল "না বইয়ে আছে এটা ফল।" বাবা বলল মাকে "আচ্ছা ও যখন বলছে তুমি একটু টিচারকে জিজ্ঞেস করো।"

পরের দিন স্কুলে গিয়ে মা টিচারের সাথে আলাপ করল এই ব্যাপারটি নিয়ে। টিচার বলল "বইয়ে তো আছে সে অনুযায়ী ও নাম্বার পেয়েছে"। মা বলল "না ছোট বাচ্চা তো অনেক সময় অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাই ওকে কি বুঝিয়ে বলব বলেন"। টিচার বলল "আমি শুনেছি অনেক দেশে এটাকে কাঁচা খায় তাই এটি ফল"।

ঈশানকে বাসায় এসে তা বলতে সে চিৎকার করে উঠল। বাবাকে বলল "তুমি না বলেছ যে বইয়ে ভুল থাকে। এই যে আমাদের সোশ্যাল সাইন্সের বইতে লেখা আছে যে জাতীয় পতাকা ১৯৪৭ সালে তৈরি সেটা শুনে তুমি বলেছিলে যে না আমাদের পতাকা ১৯৭১ সালের।" বাবা বলল হ্যা সেটা তো ঠিকই। কিন্তু পরীক্ষায় নাম্বার পেতে হলে তো বইয়েরটাই লিখতে হবে।

তাহলে কি দাড়াল? বেগুন কি একটি ফল?

(উপরের উদাহরণ গুলো সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। তবে এই লেখকের উদ্দেশ্য বেগুন এবং টম্যাটো কি ফল তা নির্ধারণ করা নয়। গুগল সার্চ দিলেই পাওয়া যায় যে উদ্ভিদবিদ্যা অনুযায়ী এ দুটো ফল। কারন তারা ফুল থেকে হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে বিচি ধারণ করে। তবে এদের সব্জী হিসেবেই খাওয়া হয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে।)

কোন কিছু ফল না সব্জী তা নির্ধারণের সর্বজন স্বীকৃত উপায় হচ্ছে সেগুলোকে কাচা হিসেবে ডেজার্টে খাওয়া যায় কি না তা প্রশ্ন করা। বেগুনকে আমাদের দেশে কাঁচা খেতে নিশ্চয়ই কেউ শোনে নি। তবে এখানে সমস্যা হচ্ছে পাঠ্য বইয়ে (কোন দেশের নকল?) এদেশের চল নিয়ে কোন ধরনের ব্যাখ্যা নেই।

এখন আমরা পরিস্থিতিটির বিশ্লেষণ করব একটু তাত্বিক দিক দিয়ে। আমেরিকান মনস্তত্ববিদ লরেন্স কোহলবার্গ মানুষের নৈতিক জ্ঞানলাভের ধাপগুলো নিয়ে একটি থিওরি আবিস্কার করেছেন (Kohlberg's stages of moral development)। এখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন মানুষের জীবনের বুদ্ধিবৃত্তি উন্নয়নের তিনটি স্তরে (প্রতিটিতে দুটি করে) ছয়টি ধাপের কথা।

প্রথম স্তর হচ্ছে শিশু-কৈশোর স্তর যেখানে মানুষ তার উর্ধ্বতনের কথা শোনে ও শাস্তি এড়াতে চায়। সে কোন কিছু করার আগে দেখে এতে তার পাবার কি আছে। এই সব দিয়েই কোন কিছুর সত্যতা ও নৈতিকতা বিবেচনা করা হয়। কোন শিশুকে ধমকের ভয় দেখিয়ে বা চকলেট দেয়ার লোভ দেখিয়ে কোন কিছু বিশ্বাস করানো যায়, সে এর ভাল মন্দ বিবেচনা করবে সেভাবেই কারন তাকে সেটাই বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক স্তর যেখানে মানুষ তেমনটিই করে যা তার সহযোগী বা ওপরওয়ালা তার কাছ থেকে আশা করে। যেমন বন্ধু বা বস যদি কোন কিছু বলে তাহলে সেটাই মেনে নেয়। এবং এর দ্বিতীয় ধাপে মানুষ তাদের কাছের লোক ছাড়াও সমাজের কথাও বিবেচনা করে। সমাজের অধিকাংশ লোক যেটাকে সত্যি বলে মানে সেটিই মানা হয়।
তৃতীয় স্তর হচ্ছে সেই স্তর যেখানে মানুষ তার বিচার বুদ্ধি, ন্যায় নীতি ও সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী কোন কিছুকে সত্য বলে মানে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। এর আরও একটি চরম ধাপ আছে (ষষ্ঠ ধাপ) যেখানে মানুষ তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিবুত্তি দিয়ে একটি জোড়ালো মূল্যবোধ তৈরি করে নেয় এবং আশা করে যে সেটি সবাই পালন করবে।
এখন আমরা যদি ঈশানের ব্যাপারটি দেখি তাহলে সে প্রথম স্তরেই আছে তবে শিশু সুলভ আচরণে প্রশ্ন করতে গিয়ে অনেকাংশে দ্বিতীয় স্তরের সমাজের অধিকাংশ লোকের কথাকে গুরুত্ব দিয়েছে।

তার বাবা মা প্রাথমিক ভাবে প্রথম স্তর অনুযায়ীই আচরণ করেছে। তারা চিন্তা করেছে ছেলের পরীক্ষা পাশের কথা। দ্বিতীয় স্তর, যেটা অনুযায়ী নানী আচরণ করেছে সেটার ধারে কাছে তারা যায় নি।

এটিই কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবতা। সমাজের অনেক অসমতা ও অনিয়মের পেছনে আমাদের নির্লিপ্ততার পেছনে এই কারন যে আমরা কোন কিছু করার আগে ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতি আগে দেখি। আমরা শাস্তি খুব ভয় পাই। তাই পাছে বস আমাকে বের করে দেয় তাই তার দুর্নীতি চোখ বুজে সহ্য করি।

এরকম অনেক ব্যাখ্যাই দেয়া যায়। এগুলোতে প্রমান হয় আমাদের চিন্তাধারা অনেক সময়ই শিশু স্তরেই থাকে। এই আত্মকেন্দ্রিকতা ও নৈতিকতার অভাবের ফল এই সমাজ ভোগ করছে।

কোহলবার্গ বলেছেন যে এই ধাপগুলো একটির পর একটি অতিক্রম করে যেতে হবে, ডিঙ্গিয়ে যাবার উপায় নেই। তবে তিনি বলেন নি আমরা কি করে এই প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত করতে পারি। আমাদের সমাজের জন্যে তা খুব প্রয়োজন। এরকম কোন থিওরী কারও জানা থাকলে বলবেন।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন

Monday, May 12, 2008

বন্ধু ভাল থেকো

আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই।
বাড়ি ফিরেই খবরটি পেলাম। চ্যানেল আইতে খবরটি দেখিয়েছে। বধু বলল: "তোমাকে ওই সময় ফোন করেছিলাম এটি বলার জন্যেই কিন্তু কষ্ট পাবে বলে বলতে পারি নি। ভালই হয়েছে দেখোনি। আগের জগলুলের সাথে মৃত্যুর পূর্বের জগলুলের কোনই মিল নেই, মনে হচ্ছে বুড়ো কেউ। শুকিয়ে কাঠি, চাপা ভাঙ্গা, চোখগুলো কেমন ঠিকরে বেরিয়ে গেছে,..."। আমার কানে আর কিছু ঢুকছিল না। আমি তখন দশ বছর পূর্বে চলে গিয়েছি।

থিয়েটার স্কুলের কর্মশালায় প্রথম জগলুলের সাথে পরিচয়। তুখোড় আড্ডাবাজ ছেলে; যে কোন গম্ভীর পরিবেশ হালকা করে দিতে পারে নিমিষেই তার হাস্যরসের মাধ্যমে। আর প্রচুর ট্যালেন্টেড। ২৫ বছরের ছেলে, অথচ চুল অধিকাংশই পাকা। আমরা বলতাম ঐটি অভিজ্ঞতালব্ধ। গান গাওয়া, নাটক লেখা, মিউজিক কম্পোজ কিংবা অভিনয় যে কোন কিছুতেই সর্বেসর্বা।

ক্রিয়েটিভ কাজের প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রবল। এর ওর জন্যে প্রথমে বেগার খেটে পরে বিজ্ঞাপন ও নাটকের মিউজিক বানানোই পেশা হিসেবে নিল। মাঝখানে স্কলাস্টিকায় কিছুদিনের জন্যে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি। আর সাথে তো অভিনয় নেশা হিসেবে ছিলই।

শুধু দলের একজন কর্মী হিসেবে নয় তার সাথে বন্ধুত্বের অন্য কারন হচ্ছে আমাদের 'হুইরে' গ্রুপের কার্যক্রম। এক সাথে আমরা রাতভর আড্ডা, গান গাওয়া, ঘুরে বেড়ানো এসব কত কিছুই না করেছি। রিহার্সেল শেষে রাত নটা-বারোটা মধুমিতায় সিনেমা দেখা অথবা কোরাস গান ধরা "তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা"। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল যে অতি সহজেই সবার আপন ও প্রিয় হয়ে যেত এবং এ নিয়ে আমরা হিংসেও করতাম।

সাথী মেহেলীর সাথে তার বিবাহের পর অপার বিস্ময়ে দেখেছি জগলুলকে আলাদা সংসার সামলাতে। বাহবা এই ছন্নছাড়া নিয়ম ভাঙা ছেলে এ পর্বেও হিট।

তার পরেই শোনা গেল সেই শোক সংবাদ। তার দেহে প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বজ্রাহতের মতই আচরণ তখন আমাদের, এ মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। আমি তখন দেশ ছাড়ছি। নানা কাজে ব্যস্ত। জগলুলের সাথে অনেকদিন দেখা নেই। সে পালিয়ে বেড়ায় না আমি, বুঝতে পারি না। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়, স্বাস্থ্য বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে। ওদিকে ফান্ড রেইজিং চলছে তার চিকিৎসার বিশাল খরচ যোগাতে। প্লেনে চড়ার আগে শেষ বার যখন দেখা করতে গেলাম তাদের পেলাম না। মেহেলীকে ফোন করে বললাম চেকটি এখনও প্রেজেন্ট হয় নি কেন? জমা করে নিও।

এরপর দুর থেকে মাঝে মধ্যে তার খবর পেয়েছি। তার শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হয়েই যাচ্ছিল, ডাক্তার বলেছিল আর বেশী দিন নেই। মাঝে বেশ কয়েকদিন খবর নেয়া হয় নি। আমরা যেচে পরে দু:সংবাদ শুনতে চাই না।

৩৫ বছরের একটি উচ্ছল জীবন এভাবে ঝরে পড়ল। অনেক সম্ভাবনার ইতি ঘটল। আমি নিশ্চিত সে স্বর্গে গিয়ে নিশ্চয়ই সবাইকে আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত রাখছে। কিন্তু ধরিত্রী তো বিষাদে ছেয়ে গেল বন্ধু। তোমার স্মরণ যদিওবা মোক্ষণ করে তার কিছুটা।

ডেইলি স্টারের খবর

 প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন