Monday, December 17, 2007

এই হচ্ছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি


জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বক্তব্য:

২০০৭
"বিজয় দিবস হচ্ছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার দিন। এ দিবস শুধু দলে দলে ঐক্য করে না, ধর্মে ধর্মে বিশ্বাসে বিশ্বাসেও ঐক্য করে। তাই এই দিনের চেতনায় সবাই মিলে ভেদাভেদ ভুলে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"

"বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের, আমরা একে চালাবো। সব ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সহনশীল হতে হবে। আমাদের এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।" (সুত্র)

১৯৭১

"বাইতুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্র সংস্থার বদর দিবসে রেলীতে পাকিস্তানের একাত্বতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবী জানানো হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের বক্তারা ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে অনুপ্রানিত হয়ে ইসলামের জন্যে যুদ্ধ করার জন্যে আহ্বান জানানো হয় এবং ভারতের ষড়যন্ত্রকে রুখার আহ্বান জানানো হয়।

উক্ত সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আলী আহসান মুজাহিদ বলেছেন যে এটি শুধু পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্যেই যুদ্ধ নয় সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যেও যুদ্ধ। তিনি বলেছেন বায়তুল মুকাদাদস (?) বিজিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

জনাব মুজাহিদ বলেন আজ থেকে কোন লাইব্রেরী হিন্দু লেখক বা হিন্দুদের সপক্ষে মুসলিম লেখকদের বই রাখতে পারবে না। তিনি বলেছেন বদর বাহিনীর লোকেরা এই সব বই পুড়িয়ে ফেলবে যাতে মুসলমানরা অমুসলিম ধারনা দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়।"

কাজেই একদিকে তিনি সব হিন্দু লেখকদের লেখা বই পূড়িয়ে ফেলতে বলেছেন আর এখন বলছেন সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির কথা। তিনি ইসলাম ধর্ম গেল বলে ধুয়া তুলেছেন অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে এটি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোন ব্যাপার ছিল না।
একদিকে পাকিস্তান ও ইসলাম অক্ষুন্ন রাখার জন্যে বদরের যুদ্ধের কথা তিনি একাত্তুরে বলেছেন অপর দিকে এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বলছেন বিষয়টি সবার গুরুত্বপূর্ন সহকারে ভেবে দেখাই উচিৎ।

আরও কিছু তথ্য: -  http://www.nybangla.com/Muktijoddho/Muzahid/Ali

প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যার ইন

Friday, December 14, 2007

তাহাদের কথা

সে বছর দুই আগের কথা। কামা'র ব্লগ পড়ে আৎকে উঠেছিলাম। কামা হচ্ছে একটি বাঙালী হিন্দু মেয়ে যার বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম ও কলকাতা উভয় পরিমন্ডলে

কামা বিলেতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং একজন স্বঘোষিত দেবদাসী। তার মতে পুরুষের সাথে যৌনসংসর্গ হচ্ছে স্বর্গীয় এবং তাকে তার দেবতার কাছে নিয়ে যায়।

দেবদাসী একটি বহুকালের হিন্দু সামাজিক রীতি যেখানে কিশোরীদের দেবতার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। ঐতিহাসিকভাবে দেবদাসীরা ব্রম্হচারী হলেও অনেক স্থানেই তাদের পুস্পিত আচার অনুষ্ঠানের পর একজনের কাছে তুলে দেয়া হয় যে প্রথম রাতের জন্যে তাকে কিছু দক্ষিনাও দিয়ে থাকে। এদের অনেকে পরবর্তীতে মন্দিরে বা আশ্রমেই থাকে এবং পুজারী বা অন্যান্যদের ভোগের সামগ্রী হয় বলে কথিত আছে। ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক সংখক দেবদাসীই পরবর্তীতে দেহব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরে।

কামার গল্প কিছুটা ভিন্ন। ছোটকালে দেবদাসী হিসেবে তার অভিষেক হবার পরে সে সাধারন সমাজেই বসবাস করেছে। পরবর্তীতে সে বিলেতে এসে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করছে এবং সাথে সাথে দেহব্যবসাও শুরু করেছে। তার ওয়েবসাইটটি দেখলেই বুঝবেন কতটা গোছানো তার ব্যবসা। ফি থেকে শুরু করে লোকজনের তার সম্পর্কে অভিমত, ছবি ইত্যাদি বিবিধ কিছু রয়েছে।

ইগো ম্যাগাজিনে এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন:

উদ্ধৃতি
ব্রিটিশদের অত্যাচারে ভারতের দেবদাসীরা আরাধনার স্থান (মন্দির) থেকে সাধারনের সমাজে চলে এসেছে এবং বিয়েসাদী করে সাধারন জীবনযাপন করছেন। তাদের বেশ্যা হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে দাবিয়ে রাখার জন্যে। আমি দেবদাসী জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি অর্থনৈতিক ও যৌন স্বাধীনতা পাবার জন্যে যাতে আমি দক্ষিন এশিয়ার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বলয় থেকে বের হতে পারি।

এখন বিতর্ক হকেই পারে যে সে কোন কারনে এটি করছে এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলো যুক্তিযুক্ত কিনা। হয়ত তার কথা লোকমুখে শুনে তার সম্পর্কে আমাদের ঋণাত্ক ধারনাই হতো শুধু। তবে ব্লগ এবং নিউ মিডিয়া সম্ভব করেছে তার কথা/চিন্তাধারা সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল করতে। ব্লগের মাধ্যমে এটাও সম্ভব তাকে কোন প্রশ্ন করা এবং তার কাছ থেকে উত্তর পাওয়া।

পরিশেষে আপনাদের আরেকটি প্রকল্পের কথা জানাচ্ছি। 'কলম' হচ্ছে কলকাতার প্রান্তিক যুবাদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান যা তাদের সাহিত্য প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেয় ও তাদের লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাইজিং ভয়েসেস এর ক্ষুদ্রঋণ সহায়তায় তারা 'নেইবারহুড ডায়রীজ' নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার মাধ্যমে কলকাতার বউ বাজার এলাকার রেডলাইট এরিয়ার যুবাদের নাগরিক সাংবাদিক (সিটিজেন জার্নালিস্ট) হিসেবে গড়ে তুলবে যাতে তারা তাদের পরিবেশ/ধারনা সম্পর্কে পৃথিবীকে অবহিত করতে পারে। তাদেরও সৃজনশীরতা রয়েছে সাহিত্য সৃষ্টি করার। এখানে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে ।

হয়ত একদিন নিউ মিডিয়ার কল্যানে আমরা এইসব দুরে সরিয়ে রাখা মানুষদের আরও ভালভাবে বুঝতে পারব এবং আমাদের মাঝে আপন করে নেব।

প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন