Friday, March 30, 2007

হিজবুত তাহরীর কি পরবর্তী ঘাতক?

জেএমবির ৬ কর্তাকে ফাসিতে চড়ানো হলো বেশ চুপিসারে। তারপর আজকে থেকে দেশব্যাপি সতর্কাবস্থা, যদি কোন জঙী প্রতিশোধ নিতে চায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে আরেক আশনকার জন্ম দিয়েছে। আজ গ্রেফতার হলো হিজবুত তাহিরের ২২ জন সদস্য। টিভি ফুটেজে দেখা গেল টিন এজার কিছু ছেলে জেলের মধ্যে বসে হাসাহাসি করছে। তারা দেখতে নাগরিক, আমার আপনার ছোট ভাইটির মতই। তাদের কাছে পাওয়া গেল ইরাক যুদ্ধের ভিডিও, বইপত্রাদি এবং পোস্টার যাতে বলা আছে:

"আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আমেরিকা ও ভারত প্রীতির কারনেই দেশের আজ এই অবস্থা।" এক পুলিশ অফিসার বলল এদের মতাদর্শের সাথে জেএমবির কিছু মিল আছে।

হিজবুত তাহরির আন্তর্জাতিক একটি ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশে কয়েকবছর আগে এটি চালু হয় এবং এর মধ্যেই নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলের মেধাবী ছাত্রদের উপর তারা প্রভাব বিসতার করতে সক্ষম হয় (উৎস) । তাদের ওয়েবসাইটটি দেখুন। বাংলাদেশের যে কোন বড় পলিটিকাল পার্টির ওয়েবসাইট থেকে এটি সমৃদ্ধ এবং আপডেটেড।

কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। এটির 'ইসলামি ইসতেহার' অনুযায়ী গত ১৬ বছরের সরকারকে তারা ব্যর্থ গনতন্ত্র হিসাবে অভিহিত করে বাংলাদেশে শরিয়া আইন কায়েমের মাধ্যমে একটি খলিফা রাজ্য (ক্যালিফেট) প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা বিদেশীদের কোন অংশীদারিত্ব বা বিনিয়োগ চায়না এবং যে কোন মুল্যে তা রুখতে প্রস্তুত। তাদের চীফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন তারা বাংলাদেশে ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে।

ুকছুদিন আগে হিজবুত তাহরিরের চার সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে প্রচারনা চালানোর জন্যে জরুরী আইনে গ্রেফতার হয়েছে

হিজবুত তাহরীর পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যনড। জার্মানীতে সহিংস প্রচারনার জন্যে তারা ২০০৩ সালে ব্যন হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদের ইসতেহার এবং কর্মকান্ড বাংলাদেশে তাদের ব্যন হওয়ার জন্যে যথেস্ট নয়কি? তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বরুপ জানতে ইচ্ছে করছে।

Thursday, March 15, 2007

এয়ারপোর্টে বসবাস

আপনাদের "দি টার্মিনাল" ছবিটির কথা মনে আছে? টম হ্যানকস নিউইয়র্কের এক এয়ারপোর্টে বছর খানেকের জন্য আটকে যায় কারন সে ফ্লাইটে ওঠার পর তার দেশে কু হওয়ার পর আমেরিকা তার দেশকে রেকগনাইজ করা থেকে বিরত থাকে। তাকে এক বছর এয়ারপোর্টে বসবাস করতে হয় যতদিন পর্যন্ত না তার দেশে যুদ্ধ থামে। এই ছবির গল্প কিন্তু নেয়া হয়েছিল একটি সত্য ঘটনা থেকে। মেহরান করিম নাসিরি ১৯৮৮ সাল থেকে প্যারিসের দ্যা গল এয়ারপোর্টে বসবাস করে আসছে কারন পাসপোর্ট এবং ভিসা না থাকায় সে ফ্রানসে ঢুকতে পারছে না বা অন্য কোন দেশে যেতে পারছে না।

সম্প্রতি এরুপ আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। ইরানীয়ান বিপ্লবী জাহরা কামালফার জেল থেকে তার দুই সন্তানের সাথে দেখা করার জন্যে ছাড়া পেয়ে জাল বুলগেরিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় ভাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তার প্লেনের রাশিয়া এবং জার্মানীতে বিরতি ছিল। জার্মানী ইমিগ্রেশন অথরিটি জাল পাসপোর্টের ব্যাপারটি ধরে ফেলে এবং তার পূর্ববর্তী আরোহনস্থল মস্কোতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। রাশিয়ান অথরিটি তাদের একটি রিফিউজি হোস্টেলে রাখে যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন তারা তাদের ন'মাস আগে মস্কো এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দেয়। রাশিয়ান ভিসা না থাকায় তারা শহরে ঢুকতে পারে না। জাহরা সন্তানদের নিয়ে এয়ারপোর্টেই খায় দায় ঘুমায়। রাশিয়ান এয়ারলাইনসের দয়ালু কর্মীরা তাদের প্লেনের খাবার এনে দেয়। বিস্তারিত এখানে

তার ভাই ও কানাডার অন্যান্য ইরানীয় অধিবাসীদের সহায়তায় অবশেষে কানাডা রাজী হয়েছে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে। নাসিরি এখন কোথায় সে খবর কেউ জানে না।

Wednesday, March 14, 2007

উত্তীর্ন তিরিশ

শয্যাত্যাগ, প্রাত্যরাশ, বাস, ছ'ঘন্টার কাজ, আড্ডা,
খাদ্য, প্রেম, ঘুম, জাগরণ; সোমবার এবং মঙলবার
বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি আর রবিবার একই
বৃত্তে আবর্তিত আর আকাশ তো মস্ত একটা গর্ত
সেখানে ঢুকবো নেংটি ইঁদুরের মতো। থরথর
হৃদয়ে প্রতিক্ষা করি, স্বপ্ন দেখি আগামী কালের
সারাক্ষন, আনেক আগামীকল্য উজিয়ে দেখেছি
তবু থাকে আরেক আগামী কাল। সহসা আয়নায়
নিজের ছায়াকে দেখি একদিন - উত্তীর্ন তিরিশ।

(শামসুর রাহমান)

ইটালীর সৌন্দর্য

"তুমি পাহাড় ভালবাস না সমুদ্র?" আমি বলি দুটোই। ইচ্ছে ছিল পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর জায়গা আমালফী কোস্ট যাবার। হলনা কারন রোম থেকে তা বেশ দুর। হোষ্ট বলল সবসময় টুরিষ্ট স্পটেই সব সৌন্দর্য জমা আছে এমন ভাবা ঠিক নয়। অতএব সপে দিলাম ভবিষ্যত আমার এক্সপিরিয়েনসড হোষ্টের হাতেই।

আমরা ছুটলাম রোম থেকে থেকে উত্তর দিকে উপকুলীয় রাস্তা ধরে মন্তে আর্জেন্টারিওর দিকে। সংকীর্ন পিচ ঢালা পথে গাড়ী আস্তে চলছিল যা শাপে বর হয়ে দেখা দিল। আঁকাবাকা পথ দিয়ে সমুদ্র দর্শন করতে করতে যাওয়া আর সাথে গজল শ্রবন। কেমন মিলছিল না। চটুল কোন গান জমত ভাল কিন্তু রোমে এসে.... ।

আমরা চলে আসলাম মন্তে আজেন্তারিওর দুটি গ্রামের একটি পোর্ট স্টেফানোতে (প্রথম ছবি দ্রষ্টব্য)। এটি আসলে একটি ছোট পোর্ট। এর সৌন্দর্য আসলে আমার ক্যামেরা ঠিক ধরতে পারেনি। লোকাল পিজ্জা খেলাম, অপুর্ব স্বাদ। এরপর পেচানো রাস্তা ধরে পাহাড়ের ওপর যাত্রা। ক্লিফ এবং সমুদ্র উভয়ের সমাহারে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য পাওয়া গেল। জানলাম আমালফী কোষ্ট এমনই তবে ২৫ মাইল বিস্তৃত। পেচানো রাস্তা পাহাড়ের উপরেই শেষ হয়ে গেল। এরপর ব্যক্তিগত রাস্তা, নিশ্চয়ই বাসিন্দা বড়ই ভাগ্যবান। ফেরার পথে আবার একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি।

রোমের কাছাকাছি এসে বিশাল জ্যামে পড়লাম। এই দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে ইটালীর খুব মিল। মন্তে আর্জেন্টারিওর সৌন্দর্য মনে গেঁথে ছিল তাই স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সময় কেটে গেল।

Friday, March 02, 2007

বাঙালীর চোখে ইটালী

ঘুরে এলাম সাত পাহাড়ের শহর রোম ও স্বপ্নের শহর ভেনিস। ভেবেছিলাম বিস্তারিত ভ্রমন বৃত্মান্ত লিখব। কিন্তু সেটি তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্যে। খুব লিখতে ইচ্ছে করছে ইটালীর সাথে বাংলাদেশের মিল এবং ইটালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের কথা।

বাংলাদেশের কথা মনে পরে গেল রোম এর একটি ঘেটো দিয়ে ঢুকতেই। বিলডিংগুলো রংজ্বলা, বারান্দায় কাপড় শুকোতে দেয়া, রাস্তার পাশে লোহার ব্যারিকেড, গাড়ীর আইন না মানা, সবকিছুতেই ঢাকার গন্ধ পাচ্ছিলাম। আর হাইওয়ে থেকে নেমে একটি ট্রাফিক সিগন্যালে এসেই দেজাভূ! রাস্তায় দুজন বাংলাদেশী খবরের কাগজ বিলি করছে। এরা ইটালীতে অবস্থানরত ১ লাখ বাংলাদেশীরই অংশবিশেষ। বলা হয় এদের মধ্যে অধিকাংশই এসছে বৃহত্তর ফরিদপুর ও নোয়াখালী থেকে এবং অনেক পথ পায়ে হেটে, পাকিসতান-ইরান-তুরস্ক হয়ে। বিদেশে এসে এখন অনেক লোকের ভীড়ে দেশী ভাইদের আরও ভালভাবে চিনতে পারি।

ইটালীতে ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার মাত্র। কিন্তু ১৯৯০ সালের মার্ত্তেল্লী আইনের মাধ্যমে ইটালী সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বৈধ ঘোষনার সুযোগ দিলে ইটালী খুব আকর্ষনীয় যায়গা হয়ে পরে। সাধারনভাবে টুরিষ্ট হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ইটালী আসা খুব কঠিন। ঢাকায় ওদের এমব্যাসিতে ফোন করে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়, যেখানে ফোনটি অধিকাংশ সময়েই কেউই ধরেনা। সম্পদের নিক্তিতে মানুষকে মাপা হয় তাই সাধারন গ্রামের লোকের ভিসা পাওয়া খুব কঠিন। বেশীর ভাগই ইটালীতে এসেছে পরিবারের কারো বদৌলতে বা দালাল ধরে অন্য দেশ ঘুরে।

ত্রেভি ফাউন্টেন দেখতে গেলাম রাত দশটার পরে। চিপা গলি দিয়ে হাটতে হাটতে শুনি এক কোনা থেকে বাংলা লোকসঙীত ভেসে আসছে। কাছে গিয়ে দেখি দেয়ালে হেলান দিয়ে দেশী ভাই। রোদে পোড়া চেহারা, হাতে গোলাপফুল, বিক্রির জন্যে। আরেকটু সামনে হঠাৎ হইচই। পুলিশ একদল হকারকে দৌড়াচ্ছে। ওরা দৌড়ে আমাদের দিকে আসল। আমাদের সাথে শাড়ী পরা মেয়ে, ছোট বাচ্চা। জিগ্গাসু চোখে আমাদেরকে পর্যবেক্ষন। অস্বস্তি লাগছিল তাই সরে এলাম। ট্রেভি ফাউন্টেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টুরিস্টে গিজগিজ করছে। ভীড়ের মধ্যে যুবক যুবতী জড়িয়ে বসে ঝর্নার শব্দ শুনছে ও নিজস্ব ভুবনে থাকার চেষ্টা করছে। যুবতীদের অনেকের হাতে তাজা গোলাপ। বিক্রি ভাল হওয়ার কথা। হঠাৎ দেখি পুলিশের দল সরে গেল এবং গুটি গুটি পায়ে বাঙালী ভাইদের পুন:প্রবেশ। ফুলসহ হাত পেছনে রাখা। আবার ব্যবসা হবে। চলে আসলাম ওখান থেকে তাড়াতাড়ি।

ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটারস স্কোয়ার এবং বিভিন্ন মোড়ে গাড়ী থামিয়ে ছাতা, ব্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন পশরা বিক্রি করতে দেখলাম আরো কিছু দেশী ভাইকে। সারাদিন রোদে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে ফেরী করা নিশ্চয়ই খুব কষ্টের। এই লোকেরা হয়ত একেকজন আট দশ লাখ টাকা খরচ করে এসেছে। তাদের অনেক কষ্ট করেই দেনা শোধ করতে হবে, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কি কঠিন জীবন। পাশাপাশি এক আলবানিজ বুড়োকে দেখলাম ভিক্ষা করতে। জীবনের কি কন্ট্রাস্ট।

ভেনিসের একটি ছোট গ্রাম মেস্ট্রেতে প্রচুর বাঙালীর দেখা পেলাম। রাস্তায় সারি সারি বাংলাদেশী দোকান, বাংলা হরফে লেখা দোকানের নাম। ইউরোপে বিলেতের পর সবচেয়ে বেশী দেশীদের বসবাস ইটালীতে। ইটালীর পুলিশকে বলা হয় ইউরোপের সবচেয়ে ভদ্র। ওরা ক্রাইম না করলে সাধারনত অবৈধদের ধরার কষ্ট করতে চায়না। তাদের গাছাড়া ভাব অনেক অবৈধ বাঙালীকে থাকার ও কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আর ৫-৬ বছর কাটাতে পারলে সুযোগ হয়ে যাচ্ছে বৈধ হয়ে যাওয়ার।

ভেনিসে যে আত্মীয়র বাড়ীতে উঠলাম সে রেস্টুরেন্টে কাজ করে শুনে প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলাম (আমরা জানতাম অন্য চাকরি করে)। কিন্তু তার কাছেই শুনেছি ১৫-১৮ ঘন্টা একাধিক রেস্টুরেন্টে কাজ করে ৪০০০ ইউরো মাসে আয় করে সে যেখানে একজন সরকারী ইনজিনিয়ার ২০০০ ইউরোর বেশী পায় না। শিক্ষিত তিনি, ৬-৭টি ভাষা জানেন, দশ বছর ধরে আছেন এবং বাড়ী গাড়ী করেছেন। তাদের জীবন যাত্রার মানের সাথে সাধারনের চলা মুশকিল।

ইচ্ছে করেই এদের কোন ছবি তুলিনি। এদের কষ্টের কাছে নিজের জীবন খুব অলস মনে হলো। তবে অচিরেই এরা আরও প্রতিষ্ঠিত হবে, তাদের কষ্টের স্বীকৃতি পাবে এবং মাথা তুলে বিশ্বে তাদের অবস্থান জানাবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে কষ্টের বিকল্প নেই। তাদেরকে লাল সালাম।